
জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান শিক্ষা বান্ধব শেখ হাসিনা সরকার সম্মানিত শিক্ষকের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় বদ্ধ পরিকর বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি।
তিনি বলেন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন দীর্ঘদিন যাবৎ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালনের দাবি জানিয়ে আসলেও কোন সরকারই এই দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেয়নি।
কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার শিক্ষকদের মর্যাদার কথা বিবেচনা করে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রী পরিষদের সভায় এবার ৫ অক্টোবর থেকে সারা বিশ্বের সাথে একই দিনে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
শিক্ষক সমাজের সুদীর্ঘকালের দাবি ৫ অক্টোবর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়ায় মঙ্গলবার বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে গিয়ে ডাঃ দীপু মনি এমপিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ (স্বাশিপ) নেতৃবৃন্দ।
স্বাশিপ সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোঃ ড. শাহজাহান আলম সাজু ছাড়াও এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রোফেসর সাজিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষ সলিম উল্লাহ সেলিম, তেলোয়াত হোসেন খান, অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান, আকলিমা জাহান, নাসরিন সুলতানা, সঙ্গীতা বিশ্বাস, অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান, আলী আশরাফ শামীম প্রমুখ।
এ সময় অধ্যক্ষ ড.শাহজাহান আলম সাজু শিক্ষক সমাজের দীর্ঘ দিনের দাবি ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষা মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপিসহ মন্ত্রী পরিষদের সকল সদস্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ইউজিসির উপপরিচালক (জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগ) মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানের সই করা এক অফিস আদেশে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আদেশে বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন-ক্যাম্পাস স্নাতক প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তিসহ সব কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশনা দেওয়া হলো। গতকাল সোমবার ইউজিসির এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে অন-ক্যাম্পাস স্নাতক প্রোগামে শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ কেন নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়েছে ইউজিসি।
কমিশন বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে স্নাতক প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২ এর লঙ্ঘন।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে চলতি বছরের ২০ জুলাই একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে এলএলবি, বিবিএ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিটি কমিশনের নজরে এসেছে উল্লেখ করে নির্দেশনায় আরও বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২ অনুযায়ী, দেশের কলেজ শিক্ষার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচির আধুনিকীকরণ ও উন্নতিসাধন, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও যোগ্যতা বৃদ্ধিসহ কলেজের যাবতীয় বিষয় ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয় হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয় এবং এ আইনের ধারা ৬ অনুযায়ী 'এই আইন ও অর্ডারের বিধান সাপেক্ষে' বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতা নির্ধারিত।
ধারা ২ (গ) অনুযায়ী, ডিগ্রি, ডিপ্লোমা এবং সার্টিফিকেট প্রদান সংক্রান্ত সব স্বীকৃত শিক্ষাদান সাধারণত কলেজ, স্কুল ও কেন্দ্র দ্বারা এককভাবে বা পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় অথবা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল অনুমোদিত অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় পরিচালিত হবে।
আইনের এসব ধারার উল্লেখ করে ইউজিসি বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে স্নাতক প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এ অবস্থায় কীসের ভিত্তিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অন-ক্যাম্পাস স্নাতক প্রোগামে শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য কমিশনে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়।
সারা দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জলাতঙ্ক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এ বিষয়ে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে এ রোগ সম্পর্কে আলোচনার নির্দেশ দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) মাউশি থেকে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে জলাতঙ্কমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা, সিডিসি অপারেশনাল প্ল্যানের জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম দেশব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, জলাতঙ্ক একটি ভয়ংকর মরণব্যাধি, এ রোগে মৃত্যুর হার শতভাগ।
পৃথিবীতে প্রতি বছরে প্রায় ৫৯ হাজার মানুষ জলাতঙ্ক রোগে মারা যায়। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ মানুষ কুকুর, বিড়াল, শিয়ালের কামড় বা আঁচড়ের শিকার হয়ে থাকে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। মরণব্যাধি জলাতঙ্ক রোগের ভয়াবহতা উপলব্ধি, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রতিরোধ ও নির্মূলের লক্ষ্যে ২০০৭ সাল থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়- জলাতঙ্কের অবসান, সবে মিলে সমাধান।
আরও বলা হয়, এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে দিবসটি জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে পালনের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে রোগটি নির্মূলের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। এই জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমে মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জলাতঙ্ক নির্মূলে করণীয় শীর্ষক আলোচনাসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।.
আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ দেশের সব মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে জলাতঙ্ক রোগ সম্পর্কিত তথ্য শিক্ষার্থীদের মাঝে উপস্থাপন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এ কার্যক্রম সফলভাবে আয়োজনের জন্য আপনাকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
শিক্ষার্থীদের স্বার্থে দেশের উচ্চশিক্ষাস্তরের পাঠ্যপুস্তক ও গবেষণাগ্রন্থ বাংলা ভাষায় প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর। এছাড়া, বাংলা ভাষায় মানসম্মত পাঠ্যপুস্তক ও গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের এগিয়ে আসারও তিনি আহ্বান জানিয়েছেন ।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) উচ্চশিক্ষাস্তরে ৬টি মৌলিক গ্রন্থ প্রকাশ উপলক্ষ্যে পাণ্ডুলিপি প্রণেতা ও ইউজিসি’র মধ্যে পৃথক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
কমিশনের রিসার্চ সাপোর্ট এন্ড পাবলিকেশন ডিভিশনের পরিচালক ড. ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। কমিশনের পক্ষে সচিব ড. ফেরদৌস জামান সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর আলমগীর বলেন, উচ্চশিক্ষা স্তরে পাঠ্যপুস্তক নিজ ভাষায় প্রকাশ করা উচিত। উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষা বাংলার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য, আমাদেরকে বাংলা ভাষায় পাঠ্যপুস্তক ও গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশে অধিক মনোযোগ দিতে হবে। জাপান, জার্মানী, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনসহ উন্নত বিশ্বের দেশসমূহ মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষা প্রদান করে থাকে। যোগাযোগে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করলেও উচ্চশিক্ষা প্রদান ও প্রকাশনায় তারা নিজ ভাষা ব্যবহার করে থাকেন। তবে, জ্ঞান অর্জনে তিনি মাতৃভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় সমৃদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, মানসম্মত গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশে ইউজিসি’র আর্থিক সহযোগিতা প্রদান অব্যহত রাখবে। গবেষক ও লেখকদের সৃজনশীল কাজ ও মেধার যথাযথ মূল্যায়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ইউজিসি বদ্ধকর।
তিনি বলেন, কমিশন আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগ্রন্থ ও পুস্তক প্রকাশে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। পাঠ্যপুস্তক ও গবেষণা গ্রন্থের লেখকেরা শিক্ষার মানোন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ইউজিসি’র রিসার্চ সাপোর্ট এন্ড পাবলিকেশন ডিভিশনের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শাহীন সিরাজ-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ৫টি গ্রন্থের লেখক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রকাশিতব্য গ্রন্থসমূহ হলো- কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. জিএম মনিরুজ্জামানের ‘ত্রিপুরা জনজাতির রূপকথা, লোককাহিনি ও কিংবদন্তিতে জীবন ও সমাজ’, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের ‘বাঙালির উৎসব ও সম্প্রীতি’, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. দেবাশীষ বেপারীর ‘সমকালীন বাংলা গানের ধারায় কাজী নজরুল ইসলামের আধুনিক গান’, একই বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আশিক সরকারের ‘কাজী নজুরুল ইসলামের ভাঙা গান’, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক এসএম আকবর ইমামের ‘বাস্তুবিদ্যা’ এবং চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হোসেনের ‘দীনবন্ধু মিত্র ও মীর মশাররফ হোসেনের নাটক: উত্তর-ঔপনিবেশিক পাঠ’।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেছেন, পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষার পরিবর্তে অলিম্পিয়াড জাতীয় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতা করা যেতে পারে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বৃত্তি পরীক্ষার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের ভিন্নভাবে উৎসাহিত করতে বাংলা ও গণিত অলিম্পিয়াডের মতো আরও অন্যান্য অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা যেতে পারে।
শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান বাস্তাবায়নের কাজ চলছে। সেখানে শিক্ষার্থীদের কোচিংবিমুখ ও পরীক্ষায় নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ বাড়াতে এবং আর্থিক সহযোগিতা দিতে নানা ধরনের অলিম্পিয়াডের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বৃত্তির পরিবর্তে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, তা নিরূপণে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে তারা এই পদ্ধতি নিরূপণ করবেন।
এদিকে আগামী বছর ১ জানুয়ারি থেকে নিবন্ধন ও পাঠদান স্বীকৃতি ছাড়া কোনো বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এসব বিদ্যালয়কে আইনের আওতায় আনতে নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ। তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহে নীতিমালা প্রকাশ করা হবে। নীতিমালা প্রকাশের তিন মাসের মধ্যে নিবন্ধন ও পাঠদান স্বীকৃতির আবেদন না করা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে জিপিএ-৫ পেয়েও প্রথম ধাপে পছন্দের কলেজ পায়নি ৮ হাজার ৫৫৮ জন। কলেজে ভর্তিতে প্রথম ধাপে ১৩ লাখ ৬ হাজার ৯৮০ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে পছন্দের কলেজ পেয়েছে ১২ লাখ ৬১ হাজার ৭৯৭ জন। সে হিসাবে পছন্দের কলেজ পায়নি ৪৫ হাজার ১৮৩ জন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে একাদশে ভর্তির প্রথম ধাপের এই ফল প্রকাশ করা হয়।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক আবু তালেব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যারা কলেজ পায়নি তাদের শঙ্কার কোন কারণ নেই। দ্বিতীয় ও তৃতীয়বারও সুযোগ রয়েছে। এতে তারা কলেজ পেয়ে যাবে। তবে পছন্দের কলেজ না পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবার অনেক কম। শিক্ষার্থীরা অনেক হিসাব নিকেশ করে আবেদন করেছে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতীতের বছরগুলোতে বেশিরভাগ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা নামি কয়েকটি কলেজে আবেদন করতো। আর ১০টি কলেজে আবেদনের সুযোগ থাকলেও ৫টি কলেজে আবেদন করতো। এতে জিপিএ-৫ পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হতো। ফলে অনেক বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী প্রথমবারে পছন্দের কলেজ পেতো না।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের আগামী ৭ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর রাত ১২ টার মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং চার্জ বাদে রেজিস্ট্রেশন ফি-এর ৩৩৫ টাকা জমা দিয়ে ভর্তির প্রাথমিক নিশ্চায়ন সম্পন্ন করতে হবে। যেসব শিক্ষার্থী প্রথম ধাপে কলেজে ভর্তির আবেদন করেননি তারা দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে আবেদন করতে পারবেন। যারা প্রথম ধাপে কলেজ পায়নি তারা ফি ছাড়াই তাদের পছন্দ পরিবর্তন করতে পারবেন।
একাদশে ভর্তির দ্বিতীয় ধাপের আবেদন গ্রহণ করা হবে ১২ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর এবং দ্বিতীয় ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে ১৬ সেপ্টেম্বর। প্রথম মাইগ্রেশন ফল প্রকাশ করা হবে ১৬ সেপ্টেম্বর। ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর নির্বাচন নিশ্চায়নের সুযোগ পাবেন দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচিতরা। আর ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর তৃতীয় পর্যায়ের আবেদন নিয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর ফল প্রকাশ করা হবে। ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর তৃতীয় ধাপের নির্বাচন নিশ্চায়ন চলবে। আর ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তি চলবে। ক্লাস শুরু হবে ৮ অক্টোবর।
২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষা ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এবং উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষা জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
এতে বলা হয়, ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষা ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এবং এইচএসসি পরীক্ষা জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।
স্বাভাবিক সময়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হতো বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে। আর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হতো এপ্রিল মাসের শুরুতে। কিন্তু করোনার সংক্রমণের পর থেকে পুরো শিক্ষাপঞ্জি এলোমেলোভাবে চলছে। চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষা গত ৩০ এপ্রিল শুরু হয়েছিল।
তরুণ প্রজন্মকে ভবিষ্যতের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দক্ষ ও সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মূল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর।
সোমবার বিকেলে ইউজিসি অডিটরিয়ামে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ২৯তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে সমাপন ও সনদ বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বাইরের দেশের শিক্ষকরা বলেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা অনেক মেধাবী। যথাযথ দিক নির্দেশনা প্রদান করা হলে তারা অনেক ভালো করবে। কাজেই, শিক্ষকদেরকে মেন্টরের ভূমিকা অবতীর্ণ হতে হবে। কেবলমাত্র শিক্ষকরাই পারে শিক্ষার্থীদের সঠিকপথে পরিচালনা করতে।
ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র অপারেশন্স অফিসার ড. মোখলেছুর রহমান বিশেষ অতিথি এবং জিটিআই এর পরিচালক অধ্যাপক ড. বেন্তুল মাওয়া স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
দেশের ২০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ জন নবীন শিক্ষক ম্যাসবাপী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (জিটিআই) এই প্রশিক্ষণ আয়োজন করে। ইউজিসি বুনিয়াদি এই প্রশিক্ষণের অর্থায়ন ও সহযোগিতা করে আসছে।
অনুষ্ঠানে প্রফেসর আলমগীর বলেন, ৪র্থ শিল্প বিপ্লব ও কোভিডের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিকুলাম ও শিক্ষাদান পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। এজন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। এ লক্ষ্যে ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি প্রতিষ্ঠায় ইউজিসি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
ড. মোখলেছুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ইন্টারেক্টিভ ক্লাসরুম কার্যক্রম ও শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী মূল্যায়নে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষাদান ও প্রশিক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দেন এবং জাতি গঠনে শিক্ষকদের বলিষ্ট ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
ফেরদৌস জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসম্পন্ন শিক্ষক তৈরির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ বিশেষ করে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ তরুণ শিক্ষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকদেরকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেদের তৈরি করা এবং স্নাতকেরা যেন বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানান।
ইন্টার্নশিপ বহাল রেখে কোর্স কারিকুলাম সংশোধন ও স্বতন্ত্র মেডিকেল বোর্ড গঠনসহ চারদফা দাবিতে ময়মনসিংহে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা।
রবিবার সকালে নগরীর চরপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে গাঙ্গিনারপাড়ে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ‘রক্ত লাগলে রক্ত নিন, উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিন’ লেখা ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় তাদের।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, যেকোনো কারিগরি শিক্ষার প্রাণ হচ্ছে ইন্টার্নশিপ বা হাতে কলমে শেখা। অথচ চিকিৎসা পেশার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিপ্লোমা কোর্স থেকে কীভাবে ইন্টার্নশিপ বাদ দেওয়ার কথা চিন্তা করা হয়? শুধুমাত্র ক্লাসে বসে চার বছরে কী শেখা যাবে? কী চিকিৎসা দেওয়া হবে মানুষকে? কয়েকযুগ ধরে এসব বিবেচনা করে ম্যাটস শিক্ষার্থীরা বিনা পারিশ্রমিকে একবছর গাধারখাটুনি দিয়ে ইন্টার্নশিপ করে আসছে। তারপরেও কোর্স কারিকুলাম থেকে ইন্টার্নশিপ বাতিলের সিন্ধান্ত দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
তারা বলেন, দেশের প্রান্তিক জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ডিপ্লোমা চিকিৎসকের বিকল্প নেই। মেধার ভিত্তিতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষার সুযোগ এ দেশের চিকিৎসা খাতে এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করবে।
তারা আরও বলেন, দেশে অন্যান্য সকল ডিপ্লোমা সেক্টরে সরকারি চাকরির নিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকলেও ম্যাটস ডিপ্লোমাধারীদের বিগত একযুগেও সরকারি নিয়োগ বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়নি। তাই সকল সরকারি, বেসরকারি ম্যাটস শিক্ষার্থীদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলানোসহ কঠোর আন্দোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকালিটি (ডিএমএফ) গঠন করে। আর ডিএমএফ শিক্ষার্থীদের মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) বঙ্গবন্ধুর পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী উচ্চ শিক্ষার সুযোগ প্রদানসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও নিয়োগদানের দাবিতে এ চার দফা দাবি জানান।
দাবিগুলো হলো ইন্টার্নশিপ বহাল রেখে কোর্স কারিকুলাম সংশোধন, অ্যালাইড হেলথ বোর্ড বাতিল করে অনতিবিলম্বে ‘মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড অব বাংলাদেশ’ নামের স্বতন্ত্র বোর্ড গঠন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অনতিবিলম্বে নিয়োগদান এবং বঙ্গবন্ধুর পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রদান। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ম্যাটস শিক্ষার্থী প্রভাকর সাহা, নাঈম আহমদ, কাউসার আহমদ ও মো. আব্দুল্লাহ আল প্রমুখ।
আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য (ভিসি) পদ দীর্ঘদিন ধরেই শূন্য। গত বছর তারা তিনজনের একটি ভিসি প্যানেল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। কিন্তু গত বছরের ২৯ নভেম্বর সে ফাইলটি মন্ত্রণালয় থেকে ফিরে আসে। তারপর গত ৯ মাসেও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোনো ভিসি নিয়োগ হয়নি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রো-ভিসির পদটিও শূন্য রয়েছে।
সে সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছিল, আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য নিয়োগের জন্য প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের মধ্যে অধ্যাপক ড. নিলুফার বেগম নিলুর প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকায় তার পরিবর্তে বিকল্প প্রস্তাবসহ নতুন করে তিনজনের প্যানেল প্রস্তাব পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।
একইভাবে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চিটাগংয়ের উপাচার্য নিয়োগের ফাইলটি ফেরত আসে। মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছিল, প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের মধ্যে অধ্যাপক ড. মো. জাহিদ হোসেন শরীফের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকায় তার পরিবর্তে বিকল্প প্রস্তাবসহ নতুন করে তিনজনের প্যানেল প্রস্তাব পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। এখনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির পদটি শূন্য রয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের (ইউডা) প্রো-ভিসি নিয়োগের ফাইল ফেরত আসে এ বছরের ৯ এপ্রিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রো-ভিসি পদে নিয়োগের জন্য প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের মধ্যে ড. এএফএম নাজমুস সাদাত সহযোগী অধ্যাপক হওয়ায় তার পরিবর্তে নতুন প্যানেল পাঠাতে বলেছে।
গত বছরের ১০ নভেম্বর প্রাইম ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার নিয়োগের ফাইল ফেরত আসে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ট্রেজারারের পাশাপাশি প্রো-ভিসি পদও শূন্য রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রাইম ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার নিয়োগের জন্য প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের মধ্যে মু. হুমায়ূন কবীর লস্কর এবং ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার বিএন (অব.)-এর অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা না থাকায় তাদের পরিবর্তে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুসারে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নতুন করে তিনজনের প্যানেল প্রস্তাব পাঠানোর অনুরোধ করা হলো।
প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকায় গত বছরের ৯ নভেম্বর সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার নিয়োগের ফাইলও ফেরত আসে। মন্ত্রণালয় এই বিশ্ববিদ্যালয়কে পুনরায় ট্রেজারার নিয়োগের প্যানেল পাঠানোর অনুরোধ করেছে। কিন্তু ১০ মাস পার হলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেজারার নিয়োগ হয়নি। এখন প্রো-ভিসি পদটিও খালি রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার খুঁজে পেতে গলদঘর্ম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ প্রতিটি পদের জন্য তিনজনের প্যানেল পাঠাতে হয়। আর তিনজনকেই সমযোগ্যতাসম্পন্ন হতে হয়। কিন্তু সাধারণভাবে যেহেতু এক নম্বরে থাকা ব্যক্তিকেই ওই পদের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়। তাই দ্বিতীয় ও তৃতীয় নম্বরে থাকতে কেউ নাম দিতে আগ্রহী হন না। আবার অবসরপ্রাপ্ত অনেক ভালো শিক্ষক থাকলেও ট্রাস্টি বোর্ডের কর্তৃত্বের কারণে তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে অনীহা দেখান।
ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার পদে তিনজনের প্যানেল পাঠাতে হবে। এখন যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যোগ্য প্রার্থী খুঁজে না পায়, তাহলে তারা ইউজিসির সহায়তা নিতে পারে। তারা প্যানেলের চিঠিতে লিখতে পারে, তাদের প্যানেলে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে মন্ত্রণালয় বা ইউজিসি থেকে যে প্যানেল দেওয়া হবে তারা সেটা মেনে নেবে। তাহলে আমরাই প্যানেল করে দেব। আসলে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইচ্ছে করেই কালক্ষেপণ করে।’
শিক্ষকরা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রো-ভিসিদের তেমন কোনো কাজ থাকে না। দু-চারটি ব্যতিক্রম ছাড়া ভিসি নিজেই প্রশাসনিক, অ্যাকাডেমিক সব ধরনের দায়িত্ব পালন করতে চান। ফলে প্রো-ভিসিদের বসে বসে সময় কাটানো ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো দায়িত্ব থাকে না। এতে এই পদে আসতে সবচেয়ে বেশি অনীহা দেখা যায়। এজন্যই ৮৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি পদ শূন্য রয়েছে।
সূত্র জানায়, ভিসি হিসেবে নিয়োগের জন্য প্রথম শ্রেণি বা সমমানের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অথবা পিএইচডি ডিগ্রি এবং কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যূন ১০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। এর সঙ্গে গবেষণা ও প্রশাসনিক কাজে অভিজ্ঞতা মিলিয়ে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। প্রো-ভিসি পদে ভিসি পদের মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হলেও ১৫ বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। তবে ট্রেজারার পদে নিয়োগের জন্য ন্যূনপক্ষে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিসহ অন্যূন ১৫ বছরের অধ্যাপনা, প্রশাসনিক বা আর্থিক ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়।
শিক্ষকরা বলেছেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগে প্রথমে ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে ইউজিসিতে প্যানেল পাঠাতে হয়। এরপর তারা তা যাচাই-বাছাই শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে তা রাষ্ট্রপতি দপ্তরে যায়। এরপর তা ফিরে এলে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রণালয়। কিন্তু এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে চললেও কয়েক মাস সময় লেগে যায়। তবে একটু ধীরগতি হলে তা বছর গড়িয়ে যায়।
বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সহসভাপতি ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক ইউনিভার্সিটি। সেগুলোর প্রতিটিতেই ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার পদে তিনজনের প্যানেল পাঠাতে হয়। তাদের প্রত্যেকের যোগ্যতা প্রায় কাছাকাছি। এত নাম পাওয়া যাচ্ছে না। আর তিনজনের মধ্যে একজন হবেন, যেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিশ্চিত থাকে। তাই বাকি দুজন কোনোভাবেই নাম দিতে চান না। এজন্য যদি একটা নাম সাজেস্ট করা যায়, তাহলে সমস্যার সমাধান হবে। তাকে যদি যোগ্য মনে না হয়, তাহলে দ্রুত যেন ফাইল ফেরত পাঠানো হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্র জানায়, দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৩টি। গত ২৮ আগস্টের তথ্যানুযায়ী, ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, ৮৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি ও ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেজারের পদ শূন্য রয়েছে। এমনকি অনেক বড় বিশ্ববিদ্যালয়েও দীর্ঘদিন ধরে পদগুলো শূন্য রয়েছে।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে প্রো-ভিসি, ট্রেজারার নেই, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশে ভিসি নেই, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে ট্রেজারার নেই, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে প্রো-ভিসি-ট্রেজারার দুটোই নেই, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ট্রেজারার নেই, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে ভিসি নেই, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে ভিসি নেই। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে ট্রেজারার নেই, উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে ট্রেজারার-প্রো-ভিসি দুটোই নেই, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস ও প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভিসি নেই। প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটিতে ট্রেজারার-প্রোভিসি নেই, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের ভিসি-প্রোভিসি নেই। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, মানিকগঞ্জের এনপিআই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এবং চট্টগ্রামের ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটিতে ভিসি-প্রোভিসি-ট্রেজারার কোনোটিই নেই।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী, একটি বিশ^বিদ্যালয়ে ৯ ধরনের কমিটি থাকতে হয়। এর মধ্যে তিনটি কমিটির সভাপতি থাকেন ভিসি। তিনটি কমিটিতে ভিসি মনোনীত শিক্ষক সভাপতি হন। আর বাকি তিনটি কমিটিতে সভাপতি থাকেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যরা। এই তিন কমিটিতেও সদস্য হিসেবে থাকেন ভিসি আর একটিতে ট্রেজারারের থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আর্থিক লেনদেন পরিচালিত হয় ভিসি ও ট্রেজারারের স্বাক্ষরে। অথচ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার না থাকলেও তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে আর্থিকসহ নানা বিষয়ে অস্বচ্ছতা দেখা দিয়েছে।
ইউজিসি বলছে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি ও ট্রেজারার পদ শূন্য থাকলেও তারা সে ব্যাপারে তেমন কোনো তাগিদ বোধ করছে না। বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যরা নিজেদের ইচ্ছেমতো কাউকে ভারপ্রাপ্ত রেখে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে প্যানেল পাঠানো হয়। তাই বাতিল হয়ে যায়। তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যানেল প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারের মেয়াদ পূর্তির তিন-চার মাস আগে তাদের প্যানেল প্রস্তাব প্রস্তুত করে তাহলে কোনো পদই শূন্য থাকবে না।
তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, প্যানেল পাঠানোর পর সব প্রক্রিয়া শেষে প্রজ্ঞাপন জারি হতে অনেক ক্ষেত্রে এক বছরও সময় লেগে যায়। ফাইল পাঠানোর পর দীর্ঘসময় কেন অপেক্ষা করতে হয় এবং এত দীর্ঘসূত্রতা কোথায় সেটাও চিহ্নিত করা দরকার। যদি সমযোগ্যতাসম্পন্ন না পাওয়ায় তাহলে কালক্ষেপণ না করে দ্রুতই যেন তা ফেরত পাঠানো হয়।
দেশের বেসরকারি স্কুল-কলেজগুলোতে অতিমাত্রায় টিউশন ফি আদায়ের অভিযোগে একটি যৌক্তিক টিউশন ফি নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতাধীন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি সংক্রান্ত একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। নীতিমালাটি পর্যালোচনার জন্য বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিউটে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে।
অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য টিউশন ফি নির্ধারণে পৃথক কোনো নীতিমালা না থাকায় অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে ইংলিশ মিডিয়াম বা ইংলিশ ভার্সন পরিচালনাকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্বাভাবিক হারে টিউশন ফি আদায় করে থাকে। শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালায় ভর্তি ফি নির্ধারিত হওয়ায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেই ফি টিউশন ফির সঙ্গে ভাগ করে নিয়ে থাকে।
আবার পুনঃভর্তি ফি বাতিল করা হলেও বিভিন্ন নামে এই ফি আদায় করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এভাবে শিশুদের শিক্ষা ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে চাপে পড়ছেন অভিভাবকরা।
জানা যায়, টিউশন ফি নীতমালা পর্যালোচনার সভায় সভাপতিত্ব করবেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) মো. রবিউল ইসলাম। সভায় উপস্থিত থাকবেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর-মাউশি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড-ঢাকার কর্মকর্তাসহ মাউশির ঢাকা আঞ্চলিক উপপরিচালক।
দেশের উচ্চ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের নারী শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থী কোনো ধরনের হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হলে অভিযোগ দ্রুত আমলে নেওয়া এবং তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা কর্মপরিকল্পনার বার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও ফিডব্যাক প্রদান সংক্রান্ত একটি কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান কোনো স্থানে স্বচ্ছ অভিযোগ বাক্স স্থাপন এবং অভিযোগ পড়ছে কি না সেটি নিয়মিত তদারকি করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন। তিনি অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রাখা ও ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান।
কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামান- এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন কমিশনের উপপরিচালক ও বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির ফোকাল পয়েন্ট বিষ্ণু মল্লিক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর আলমগীর বলেন, দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে এটি দ্রুততার সাথে আমলে নিতে হবে। অভিযোগকারীর গোপনীয়তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এর বিষয়বস্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নস্থানে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রফেসর আলমগীর আরও বলেন, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিয়ে অভিযোগ করলে তার প্রতিকার পেতে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়। অনেকক্ষেত্রে কার্যকর প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না দেখে অনেকেই অভিযোগ করতে উৎসাহিত হন না বলে তিনি মনে করেন। বিশ্ববিদ্যালয় সবার জন্য একটি উন্মুক্ত পরিবেশ, তাই এখানে সব কিছু স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। নারীর প্রতি কোনো বৈষম্য, নিপীড়ন ও হয়রানি করা যাবে না বলে অভিমত প্রকাশ করেন।
প্রফেসর আবু তাহের বলেন, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিচালনা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
ড. ফেরদৌস জামান বলেন, উচ্চ শিক্ষাস্তরে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও চাকরিক্ষেত্রে নারীরা পিছিয়ে রয়েছে। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে সমাজে লিঙ্গ বৈষম্য কমানো এবং পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা পরিহার করতে হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যথার্থ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হতে হবে।
ইউজিসি’র উপ-পরিচালক ও অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার ফোকাল পয়েন্ট মৌলি আজাদের উপস্থাপনায় কর্মশালায় ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার ফোকাল ও বিকল্প ফোকাল পয়েন্টগণ অংশগ্রহণ করেন।
এসএসসি পরীক্ষার খাতা পুর্ননিরীক্ষণে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছেন ১০৪ জন শিক্ষার্থী। আর নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩৬২ জন পরীক্ষার্থী।
সোমবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার খাতা পুর্ননিরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডগুলোও তাদের স্ব স্ব ওয়েবসাইটে পুর্ননিরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে।
ঢাকা বোর্ডের ফলে দেখা যায়, এ বোর্ডের মোট ৩ হাজার ৮৫ জন পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। তবে ফেল করা কোনো শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পাননি। এ বোর্ডের ৭৩ হাজার ৪৬ পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৯১ হাজারটি খাতা পুর্ননিরীক্ষার আবেদন করেছিলেন।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড: দাখিল পরীক্ষার খাতা পুর্ননিরীক্ষণে ফেল থেকে পাস করেছেন ১ হাজার ৫৩৪ জন শিক্ষার্থী। আর নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫৯৭ জন পরীক্ষার্থী। মোট ৪ হাজার ১৯৫ জন পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে।
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ফলে দেখা যায়, ২৩ হাজার ৬৬৫ জন দাখিল পরীক্ষার্থী খাতা পুর্ননিরীক্ষার আবেদন করেছিলেন। তারা ৪৭ হাজার ৬৯৯টি খাতা চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২৮ জুলাই এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করা হয়। এ বছর ১১ শিক্ষাবোর্ডে গড় পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন। ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানে পাস করেছিলেন। তবে অনেকেই কাঙ্খিত ফল বা জিপিএ না পেয়ে স্ব স্ব বোর্ডে ফল পুর্ননিরীক্ষার আবেদন করেছিলেন।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।