ভোটের প্রচারে রূপ নিল ঐক্যফ্রন্টের বিজয় শোভাযাত্রা
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১৮:৩৮
ঐক্যফ্রন্টের বিজয় র্যালি।
পুলিশের বেঁধে দেওয়া সংক্ষিপ্ত সময় ও ক্ষুদ্র সীমানার মধ্যে রোববার রাজধানীতে শোভাযাত্রা করেছে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত সরকারবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিজয় দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা হলেও নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন প্রার্থীর ছবি, পোস্টার ও বিএনপির প্রতীক ধানের শীষসহ অংশ নেওয়ায় তা অনেকটা নির্বাচনী প্রচারে রূপ নেয়। শোভাযাত্রার আগে সমাবেশ থেকে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি না করার আহ্বান জানানো হয়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নয়া পল্টন থেকে শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে না ফেরার কারণে সেটি পিছিয়ে দুপুর ১২টার দিকে শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি ১২টা ৪ মিনিটে শান্তিনগর মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চ থেকে শোভাযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল। দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রতিকৃতির ছাড়াও নেতা-কর্মীদের হাতে ছিল কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিসম্বলিত প্ল্যাকার্ড।
ঢাকা-৬ আসনের প্রার্থী সুব্রত চৌধুরী কর্মী-সমর্থকদের মিছিল নিয়ে নয়া পল্টনে আসেন। তাদের ব্যানারে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেনের ছবি ছিলো। ঢাকা-৯ আসনের প্রার্থী আফরোজা আব্বাস ধানের ছড়া দিয়ে সাজানো একটি ট্রাকে চড়ে বিশাল মিছিল নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। তার ট্রাকেও জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড় প্রতিকৃতি ছিলো।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি ঢাকা-৬ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা-১৪ আসনের প্রার্থী আবদুস সালাম, ঢাকা-১ আসনের প্রার্থী আবু আশরাফ খন্দকার, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেনসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
ঐক্যফ্রন্টের শোভাযাত্রা যখন শান্তিনগরের কাছে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের সামনে পৌঁছায়, তখন সেখানে মাইকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রচার চলছিল। সেখানে মোতায়েন ছিল বিপুল পুলিশ। কলেজের সামনের রাস্তা বিএনপি নেতা-কর্মীরা ধানের শীষ প্রতীকের স্লোগান দিতে দিতেই পেরিয়ে যান। বিজয় শোভাযাত্রায় ব্যান্ড দলও ছিল, যারা মুক্তিযুদ্ধের গান পরিবেশন করে। শান্তিনগর মোড়ে পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে শোভাযাত্রার সমাপ্তি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। সেখান থেকে স্লোগান দিতে দিতে নেতাকর্মীরা আবার নয়া পল্টন ফিরে যান।
শোভাযাত্রার উদ্বোধনী বক্তব্য মির্জা ফখরুল মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জনকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “আজকের এই বিজয় দিবস হওয়া উচিত ছিল আমাদের আনন্দের-উৎসবের। কিন্তু আমরা অত্যন্ত ভারাক্রান্ত, আমরা আতঙ্কিত, উৎকণ্ঠিত এই দেশে গণতন্ত্র টিকে থাকবে কি থাকবে না। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনে সব রকমের পক্ষপাতিত্ব শুরু করেছে সরকার এবং আমরা কখনো এই ধরনের নির্বাচন দেখিনি।
“নজিরবিহীনভাবে তারা বিরোধী দলের নেতাকর্মী এবং প্রার্থীদেরকেও গ্রেপ্তার করছে, মিথ্যা মামলা দিচ্ছে এবং প্রার্থীদেরকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে। আমরা সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি, গ্রেপ্তার বন্ধ করুন। না হলে এর দায়দায়িত্ব সবকিছু আপনাদের নিতে হবে। এই দেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার দায়িত্ব নিতে হবে।”
নির্বাচনের প্রচারের সময় ঢাকা-৮ আসনে ধানের শীষ প্রার্থী মির্জা আব্বাসের ওপর হামলার ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন’ উল্লেখ বিএনপি মহাসচিব বলেন, “একজন প্রার্থীর ওপর এই ধরনের হামলা হওয়ার পরও নির্বাচন কমিশন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, সরকার কিছুই করে না। নোয়াখালী-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মাহবুবউদ্দিন খোকনকে গুলি করা হয়েছে। তিনি আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। ঢাকা-৬ আসনের প্রার্থী সুব্রত চৌধুরীর ওপরে গতকাল হামলা হয়েছে, তাকে প্রচার করতে দেয়নি। ঢাকা-৪ আসনে সালাহ উদ্দিন আহমেদের নির্বাচনী এলাকায় একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, এই নির্বাচন দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে যে বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরতন্ত্রে থাকবে, নাকি গণতন্ত্রে থাকবে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের স্বাধীনতার ফল ভোগ করবে কি ভোগ করবে না। বাংলাদেশের মানুষ নির্যাতিত হয়ে একটি ‘স্বৈরতন্ত্রের’ মধ্যে, একটি ‘একদলীয়’ শাসনব্যবস্থার মধ্যে যাবে, নাকি বহুমাত্রিক গণতন্ত্রের দিকে যাবে; এই বিষয়গুলো আজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে, বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়াকে এই ‘অন্যায়’, ‘অত্যাচার’, ‘অবিচার’ থেকে তাকে মুক্ত করা সম্ভব হবে কি না।
বিজয় শোভাযাত্রাও বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আজকে আমাদের এই র্যালিও বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। গতকাল বহু নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের র্যালি ছিল ২টায়। সেটাকে তারা (পুলিশ) পরিবর্তন করে সকাল ১০টায় নিয়ে এসেছে। এজন্য এটা করা আমাদের জন্য অসম্ভব ছিল। তারপরও নানা বাধার মধ্যে যারা এই র্যালিতে যোগ দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
জিয়াউর রহমানকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ সম্বোধন করে গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেন, “স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। আপনারা সকলে অবগত আছে, এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে আমরা নির্বাচনে যেতে রাজি হয়েছি। যারা ক্ষমতাসীন আছেন, তারা জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে আবার ক্ষমতায় থাকার জন্য নীল-নকশার ষড়যন্ত্র, নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।
“আমাদের পুলিশ বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় কাজে ব্যবহার করে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছে যাতে আমরা নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে দিই। ১৬ কোটি মানুষ ও ১০ কোটি ভোটারের ওপর নির্ভর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিএনপি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। ৩০ ডিসেম্বর জনগণ ধানের শীষ প্রতীকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে রায় দিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে এই হলে আজকের বিজয় দিবসের আহ্বান।”
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “এটা বিজয়ের দিন আর আমরা একটা লড়াইয়ের মধ্যে আছি। এই লড়াই ভোটের লড়াই। নতুন যখন নির্বাচন আসলো তারা মনে করেছিল যে এই নির্বাচনটাতেও বোধহয় তারা ওয়াকওভার নিতে পারবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবার ওয়াকওভার দেব না, আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি, প্রার্থী দিয়েছি এবং সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।”
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের বক্তব্যের পর নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি নাইটিঙ্গেল মোড়, কাকরাইল মোড় হয়ে শান্তিনগর মোড় ঘুরে আবার নয়াপল্টনে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় ঢাকা মহানগর বিএনপির বিভিন্ন ইউনিট, মহিলা দল, ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন; সামনে-পেছনে বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি ছিল।
বিএনপি নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আশরাফউদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, হারুনুর রশীদ, অর্পনা রায়, আনোয়ার হোসেইন, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, শাহ নেসারুল হক, হেলাল খান, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, দেবাশীষ রায় মধু, প্রদীপ কুমার সরকার ও সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১৮:৩৮

পুলিশের বেঁধে দেওয়া সংক্ষিপ্ত সময় ও ক্ষুদ্র সীমানার মধ্যে রোববার রাজধানীতে শোভাযাত্রা করেছে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত সরকারবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিজয় দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা হলেও নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন প্রার্থীর ছবি, পোস্টার ও বিএনপির প্রতীক ধানের শীষসহ অংশ নেওয়ায় তা অনেকটা নির্বাচনী প্রচারে রূপ নেয়। শোভাযাত্রার আগে সমাবেশ থেকে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি না করার আহ্বান জানানো হয়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নয়া পল্টন থেকে শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে না ফেরার কারণে সেটি পিছিয়ে দুপুর ১২টার দিকে শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি ১২টা ৪ মিনিটে শান্তিনগর মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চ থেকে শোভাযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল। দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রতিকৃতির ছাড়াও নেতা-কর্মীদের হাতে ছিল কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিসম্বলিত প্ল্যাকার্ড।
ঢাকা-৬ আসনের প্রার্থী সুব্রত চৌধুরী কর্মী-সমর্থকদের মিছিল নিয়ে নয়া পল্টনে আসেন। তাদের ব্যানারে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেনের ছবি ছিলো। ঢাকা-৯ আসনের প্রার্থী আফরোজা আব্বাস ধানের ছড়া দিয়ে সাজানো একটি ট্রাকে চড়ে বিশাল মিছিল নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। তার ট্রাকেও জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড় প্রতিকৃতি ছিলো।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি ঢাকা-৬ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা-১৪ আসনের প্রার্থী আবদুস সালাম, ঢাকা-১ আসনের প্রার্থী আবু আশরাফ খন্দকার, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেনসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
ঐক্যফ্রন্টের শোভাযাত্রা যখন শান্তিনগরের কাছে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের সামনে পৌঁছায়, তখন সেখানে মাইকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রচার চলছিল। সেখানে মোতায়েন ছিল বিপুল পুলিশ। কলেজের সামনের রাস্তা বিএনপি নেতা-কর্মীরা ধানের শীষ প্রতীকের স্লোগান দিতে দিতেই পেরিয়ে যান। বিজয় শোভাযাত্রায় ব্যান্ড দলও ছিল, যারা মুক্তিযুদ্ধের গান পরিবেশন করে। শান্তিনগর মোড়ে পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে শোভাযাত্রার সমাপ্তি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। সেখান থেকে স্লোগান দিতে দিতে নেতাকর্মীরা আবার নয়া পল্টন ফিরে যান।
শোভাযাত্রার উদ্বোধনী বক্তব্য মির্জা ফখরুল মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জনকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “আজকের এই বিজয় দিবস হওয়া উচিত ছিল আমাদের আনন্দের-উৎসবের। কিন্তু আমরা অত্যন্ত ভারাক্রান্ত, আমরা আতঙ্কিত, উৎকণ্ঠিত এই দেশে গণতন্ত্র টিকে থাকবে কি থাকবে না। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনে সব রকমের পক্ষপাতিত্ব শুরু করেছে সরকার এবং আমরা কখনো এই ধরনের নির্বাচন দেখিনি।
“নজিরবিহীনভাবে তারা বিরোধী দলের নেতাকর্মী এবং প্রার্থীদেরকেও গ্রেপ্তার করছে, মিথ্যা মামলা দিচ্ছে এবং প্রার্থীদেরকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে। আমরা সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি, গ্রেপ্তার বন্ধ করুন। না হলে এর দায়দায়িত্ব সবকিছু আপনাদের নিতে হবে। এই দেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার দায়িত্ব নিতে হবে।”
নির্বাচনের প্রচারের সময় ঢাকা-৮ আসনে ধানের শীষ প্রার্থী মির্জা আব্বাসের ওপর হামলার ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন’ উল্লেখ বিএনপি মহাসচিব বলেন, “একজন প্রার্থীর ওপর এই ধরনের হামলা হওয়ার পরও নির্বাচন কমিশন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, সরকার কিছুই করে না। নোয়াখালী-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মাহবুবউদ্দিন খোকনকে গুলি করা হয়েছে। তিনি আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। ঢাকা-৬ আসনের প্রার্থী সুব্রত চৌধুরীর ওপরে গতকাল হামলা হয়েছে, তাকে প্রচার করতে দেয়নি। ঢাকা-৪ আসনে সালাহ উদ্দিন আহমেদের নির্বাচনী এলাকায় একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, এই নির্বাচন দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে যে বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরতন্ত্রে থাকবে, নাকি গণতন্ত্রে থাকবে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের স্বাধীনতার ফল ভোগ করবে কি ভোগ করবে না। বাংলাদেশের মানুষ নির্যাতিত হয়ে একটি ‘স্বৈরতন্ত্রের’ মধ্যে, একটি ‘একদলীয়’ শাসনব্যবস্থার মধ্যে যাবে, নাকি বহুমাত্রিক গণতন্ত্রের দিকে যাবে; এই বিষয়গুলো আজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে, বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়াকে এই ‘অন্যায়’, ‘অত্যাচার’, ‘অবিচার’ থেকে তাকে মুক্ত করা সম্ভব হবে কি না।
বিজয় শোভাযাত্রাও বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আজকে আমাদের এই র্যালিও বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। গতকাল বহু নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের র্যালি ছিল ২টায়। সেটাকে তারা (পুলিশ) পরিবর্তন করে সকাল ১০টায় নিয়ে এসেছে। এজন্য এটা করা আমাদের জন্য অসম্ভব ছিল। তারপরও নানা বাধার মধ্যে যারা এই র্যালিতে যোগ দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
জিয়াউর রহমানকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ সম্বোধন করে গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেন, “স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। আপনারা সকলে অবগত আছে, এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে আমরা নির্বাচনে যেতে রাজি হয়েছি। যারা ক্ষমতাসীন আছেন, তারা জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে আবার ক্ষমতায় থাকার জন্য নীল-নকশার ষড়যন্ত্র, নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।
“আমাদের পুলিশ বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় কাজে ব্যবহার করে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছে যাতে আমরা নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে দিই। ১৬ কোটি মানুষ ও ১০ কোটি ভোটারের ওপর নির্ভর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিএনপি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। ৩০ ডিসেম্বর জনগণ ধানের শীষ প্রতীকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে রায় দিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে এই হলে আজকের বিজয় দিবসের আহ্বান।”
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “এটা বিজয়ের দিন আর আমরা একটা লড়াইয়ের মধ্যে আছি। এই লড়াই ভোটের লড়াই। নতুন যখন নির্বাচন আসলো তারা মনে করেছিল যে এই নির্বাচনটাতেও বোধহয় তারা ওয়াকওভার নিতে পারবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবার ওয়াকওভার দেব না, আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি, প্রার্থী দিয়েছি এবং সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।”
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের বক্তব্যের পর নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি নাইটিঙ্গেল মোড়, কাকরাইল মোড় হয়ে শান্তিনগর মোড় ঘুরে আবার নয়াপল্টনে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় ঢাকা মহানগর বিএনপির বিভিন্ন ইউনিট, মহিলা দল, ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন; সামনে-পেছনে বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি ছিল।
বিএনপি নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আশরাফউদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, হারুনুর রশীদ, অর্পনা রায়, আনোয়ার হোসেইন, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, শাহ নেসারুল হক, হেলাল খান, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, দেবাশীষ রায় মধু, প্রদীপ কুমার সরকার ও সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ শোভাযাত্রায় অংশ নেন।