নির্বাচনে আঘাত আসলে পরিণতি ভয়াবহ: ড. কামাল
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১৭:৩৪
দেশে নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। নির্বাচনে কোনো আঘাত আসে পরিণতি ভয়াবহ হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ড. কামাল হোসেন।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৪৭তম বার্ষিকী ও ‘বিশ্ব মানবাধিকার দিবস’ উপলক্ষে ‘মানবাধিকার, সুশাসন ও ভোটাধিকার’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার ফেডারেশন’।
ড. কামাল তার বক্তৃতায় বলেন, দেশে নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে। সরকার পুলিশকে মানুষের ওপর লেলিয়ে দিয়েছে। পুলিশকে ব্যবহার করে যেভাবে হয়রানি, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তা সংবিধান পরিপন্থী। তফসিল ঘোষণার পরও পুলিশ যেভাবে গ্রেপ্তার করছে সেটি লজ্জার।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচনের আর যে ১০ দিন বাকি আছে, এই সময়ে দেশের মানুষ ও স্বাধীনতার জন্য ক্ষমতার পুরোপুরি ব্যবহার করুন, নিজেদের ক্ষমতাকে কাজে লাগান। পুলিশকে সরান।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন বলেন, পুলিশ যেভাবে ভয়ভীতির সৃষ্টি করছে, এটা থেকে মানুষকে রক্ষা করা অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি।
তিনি আরো বলেন, পুলিশকে কি আপনারা রাস্তায় রাস্তায় আক্রমণ করতে, বাধা দিতে দায়িত্ব দিয়েছেন? রাস্তায় রাস্তায় কেন এত পুলিশ, কিসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে? প্রবীণ এ আইনজীবী বলেন, পুলিশ রাস্তায় রাস্তায় হয়রানি করছে। বিনা কারণে গ্রেপ্তার করছে। কোনো নির্বাচনের আগে এমন অবস্থা দেখিনি। এমন শাসন আগে দেখিনি।
নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে সাবেক এ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন বলেন, ভোটাররা স্বাধীনভাবে ভোট দেবে, এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। এগুলো আপনাদের (ইসি) অবশ্যই জানা আছে। আপনাদের ক্ষমতা কাজে লাগান।
সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছেন উল্লেখ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, যদি নির্বাচনকে আঘাত দেওয়া হয়, ভয়াবহ পরিণতি হবে। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।
সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে জোট গঠন করে আবার আলোচনায় আসা এ নেতা সরকারের উদ্দেশে বলেন, দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে থাকলে, পুলিশকে অপব্যবহার করতে থাকলে আপনাদের শাস্তি হবে, এটি মনে রাখবেন।
‘আইনের শাসনের অনুপস্থিতি মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অমান্য করে দেশ চলতে পারে না।‘
ড. কামাল আরো বলেন, লাখ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন সংবিধান পেয়েছি। এটা ভুলে গেলে চলবে না। আপনারা (আওয়ামী লীগ) বলেছেন, অসম্পন্ন কাজ করতে আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে চান।
‘এরপর ৫ বছর পর আবার বলবেন, আরও কিছু কাজ অসমাপ্ত আছে, আবার ক্ষমতায় আনলে করে দেব। এভাবে চলতে পারে না।‘
ড. কামাল হোসেন বলেন, আমি যা দেখছি, ভোটাধিকার নিয়ে শঙ্কা দিন দিন বাড়ছে। মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক, নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করুক এসব সংবিধানের কথা, স্বাধীনতার কথা। এখন স্বাধীন দেশে মানুষ যদি স্বাধীনভাবে ভোট দিতে ব্যর্থ হয়, তবে এটা স্বাধীনতার ওপরে আঘাত।
আলোচনাসভায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, সুশাসন ও মানবাধিকার নির্ভর করে শক্তিশালী বিচার ব্যবস্থার ওপর। কিন্তু দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না।
বাংলাদেশ মানবাধিকার ফেডারেশনের সভাপতি ড. মো. শাহজাহানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন জানিপপ’র (জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি ড. গোলাম রহমান ভূঁইয়া।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১৭:৩৪

দেশে নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। নির্বাচনে কোনো আঘাত আসে পরিণতি ভয়াবহ হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ড. কামাল হোসেন।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৪৭তম বার্ষিকী ও ‘বিশ্ব মানবাধিকার দিবস’ উপলক্ষে ‘মানবাধিকার, সুশাসন ও ভোটাধিকার’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার ফেডারেশন’।
ড. কামাল তার বক্তৃতায় বলেন, দেশে নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে। সরকার পুলিশকে মানুষের ওপর লেলিয়ে দিয়েছে। পুলিশকে ব্যবহার করে যেভাবে হয়রানি, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তা সংবিধান পরিপন্থী। তফসিল ঘোষণার পরও পুলিশ যেভাবে গ্রেপ্তার করছে সেটি লজ্জার।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচনের আর যে ১০ দিন বাকি আছে, এই সময়ে দেশের মানুষ ও স্বাধীনতার জন্য ক্ষমতার পুরোপুরি ব্যবহার করুন, নিজেদের ক্ষমতাকে কাজে লাগান। পুলিশকে সরান।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন বলেন, পুলিশ যেভাবে ভয়ভীতির সৃষ্টি করছে, এটা থেকে মানুষকে রক্ষা করা অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি।
তিনি আরো বলেন, পুলিশকে কি আপনারা রাস্তায় রাস্তায় আক্রমণ করতে, বাধা দিতে দায়িত্ব দিয়েছেন? রাস্তায় রাস্তায় কেন এত পুলিশ, কিসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে? প্রবীণ এ আইনজীবী বলেন, পুলিশ রাস্তায় রাস্তায় হয়রানি করছে। বিনা কারণে গ্রেপ্তার করছে। কোনো নির্বাচনের আগে এমন অবস্থা দেখিনি। এমন শাসন আগে দেখিনি।
নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে সাবেক এ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন বলেন, ভোটাররা স্বাধীনভাবে ভোট দেবে, এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। এগুলো আপনাদের (ইসি) অবশ্যই জানা আছে। আপনাদের ক্ষমতা কাজে লাগান।
সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছেন উল্লেখ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, যদি নির্বাচনকে আঘাত দেওয়া হয়, ভয়াবহ পরিণতি হবে। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।
সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে জোট গঠন করে আবার আলোচনায় আসা এ নেতা সরকারের উদ্দেশে বলেন, দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে থাকলে, পুলিশকে অপব্যবহার করতে থাকলে আপনাদের শাস্তি হবে, এটি মনে রাখবেন।
‘আইনের শাসনের অনুপস্থিতি মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অমান্য করে দেশ চলতে পারে না।‘
ড. কামাল আরো বলেন, লাখ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন সংবিধান পেয়েছি। এটা ভুলে গেলে চলবে না। আপনারা (আওয়ামী লীগ) বলেছেন, অসম্পন্ন কাজ করতে আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে চান।
‘এরপর ৫ বছর পর আবার বলবেন, আরও কিছু কাজ অসমাপ্ত আছে, আবার ক্ষমতায় আনলে করে দেব। এভাবে চলতে পারে না।‘
ড. কামাল হোসেন বলেন, আমি যা দেখছি, ভোটাধিকার নিয়ে শঙ্কা দিন দিন বাড়ছে। মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক, নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করুক এসব সংবিধানের কথা, স্বাধীনতার কথা। এখন স্বাধীন দেশে মানুষ যদি স্বাধীনভাবে ভোট দিতে ব্যর্থ হয়, তবে এটা স্বাধীনতার ওপরে আঘাত।
আলোচনাসভায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, সুশাসন ও মানবাধিকার নির্ভর করে শক্তিশালী বিচার ব্যবস্থার ওপর। কিন্তু দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না।
বাংলাদেশ মানবাধিকার ফেডারেশনের সভাপতি ড. মো. শাহজাহানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন জানিপপ’র (জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি ড. গোলাম রহমান ভূঁইয়া।