পুলিশ নিয়ে বিতণ্ডায় ইসি-ঐক্যফ্রন্ট বৈঠক পণ্ড
বিশেষ প্রতিনিধি | ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ২০:৫৫
মঙ্গলবার ইসির সঙ্গে বৈঠক মাঝপথে বর্জন করে বের হয় আসেন ড. কামাল হোসেনসহ অন্যরা। ছবি: মহুবার রহমান
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে বাগবিতণ্ডা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ড. কামাল হোসেন পুলিশকে ‘জানোয়ার’ বলায় এ তা আরো তীব্র হয়। যার জের ধরে ঐক্যফ্রন্ট বৈঠক শেষ না করেই বের হয়ে আসে।
মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাচন ভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি প্রতিনিধি দল ইসির সঙ্গে বৈঠক করতে যান।
পরে ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকের শুরুতে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন। এ সময় ড. কামাল হোসেন পুলিশের গ্রেপ্তার, হয়রানি বিষয়ে কমিশনকে অবহিত করেন। বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় পুলিশি নির্যাতনের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, জবাবে সিইসি ড. কামালের কাছে জানতে চান, কোথায় নির্যাতন হচ্ছে দেখান। চলেন আমাকে নিয়ে যান সেখানে। এর জবাবে কামাল হোসেন বলেছেন, আমাদের লোকজন আইসিইউতে, মারধর করা হচ্ছে নেতাকর্মীদের।
জাফরুল্লাহ আরো জানান, তখন সিইসি বলেছেন, পুলিশ এত খারাপ না, আপনাদের কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়, আপনি দেখান। এ সময় ক্ষেপে যান ড. কামাল। তিনি সিইসিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি আমাদের কথা বিশ্বাস করছেন না। এটা অপমানজনক’।
এরপর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় বলে জানান জাফরুল্লাহ। একপর্যায়ে সভা বর্জন করে বের হয়ে যান ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।
বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাচন কমিশনার দেশ রূপান্তরকে জানান, এ সময় ড. কামাল সিইসিকে উদ্দেশ করে বলেন, সিইসি বর্তমানে প্রধান বিচারপতির চেয়েও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারেন। আপনি ইচ্ছা করলে ‘জানোয়ার লাঠিয়াল পুলিশ বাহিনী’কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আপনার এই ‘লাঠিয়াল’ পুলিশ বাহিনী আমাদের মিটিং-মিছিল কিছু করতে দিচ্ছে না।
ওই নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, ড. কামাল তার অভিযোগে বলেন, পুলিশ এমনকি বেলা দুইটার পর মাইক ব্যবহারের জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটের লোকজন নিয়মকানুন না মেনে পুলিশের সহায়তায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের গুন্ডাবাহিনী আমাদের ওপর হামলা করছে। তাদের রক্ষা করতে হবে।
এ সময় সিইসি ক্ষুব্ধ হয়ে ড. কামাল হোসেনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি নিজেকে কী মনে করেন। আপনি এমন কী হয়েছেন- যে পুলিশকে ‘লাঠিয়াল, জানোয়ার’ বলছেন। এ সময় অন্য দুই নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ও রফিকুল ইসলাম চুপ ছিলেন’।
ওই কমিশনার আরো জানান, এরপর বিএনপি নেতা মঈন খান সিইসিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘নির্বাচনের কোনো পরিবেশ যদি সৃষ্টি করতে না পারেন, তাহলে বলে দেন, আমরা আজকেই প্রেসক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের বিষয়ে ঘোষণা দেব’।
পরে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সিইসির ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সভা বর্জন করেন। তবে কমিশনের কেউ তাদের সভা বর্জন না করার অনুরোধ জানাননি বলেও জানা গেছে।
বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, সিইসি আমাদের কোনো কথাই শোনেননি। আমরা সারা দেশে পুলিশের হাতে ধরপাকড়, হয়রানির বিষয়ে কথা বলতে চেয়েছি, তিনি তা শোনেননি। তিনি পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করেছেন।
তবে বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি বৈঠকে উপস্থিত নির্বাচন কমিশনাররা। বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, ইসি সচিব হেলালুদ্দীন ছিলেন।
ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে আরো ছিলেন মোস্তফা মহসীন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস প্রমুখ।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
বিশেষ প্রতিনিধি | ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ২০:৫৫

মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে বাগবিতণ্ডা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ড. কামাল হোসেন পুলিশকে ‘জানোয়ার’ বলায় এ তা আরো তীব্র হয়। যার জের ধরে ঐক্যফ্রন্ট বৈঠক শেষ না করেই বের হয়ে আসে।
মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাচন ভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি প্রতিনিধি দল ইসির সঙ্গে বৈঠক করতে যান।
পরে ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকের শুরুতে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন। এ সময় ড. কামাল হোসেন পুলিশের গ্রেপ্তার, হয়রানি বিষয়ে কমিশনকে অবহিত করেন। বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় পুলিশি নির্যাতনের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, জবাবে সিইসি ড. কামালের কাছে জানতে চান, কোথায় নির্যাতন হচ্ছে দেখান। চলেন আমাকে নিয়ে যান সেখানে। এর জবাবে কামাল হোসেন বলেছেন, আমাদের লোকজন আইসিইউতে, মারধর করা হচ্ছে নেতাকর্মীদের।
জাফরুল্লাহ আরো জানান, তখন সিইসি বলেছেন, পুলিশ এত খারাপ না, আপনাদের কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়, আপনি দেখান। এ সময় ক্ষেপে যান ড. কামাল। তিনি সিইসিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি আমাদের কথা বিশ্বাস করছেন না। এটা অপমানজনক’।
এরপর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় বলে জানান জাফরুল্লাহ। একপর্যায়ে সভা বর্জন করে বের হয়ে যান ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।
বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাচন কমিশনার দেশ রূপান্তরকে জানান, এ সময় ড. কামাল সিইসিকে উদ্দেশ করে বলেন, সিইসি বর্তমানে প্রধান বিচারপতির চেয়েও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারেন। আপনি ইচ্ছা করলে ‘জানোয়ার লাঠিয়াল পুলিশ বাহিনী’কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আপনার এই ‘লাঠিয়াল’ পুলিশ বাহিনী আমাদের মিটিং-মিছিল কিছু করতে দিচ্ছে না।
ওই নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, ড. কামাল তার অভিযোগে বলেন, পুলিশ এমনকি বেলা দুইটার পর মাইক ব্যবহারের জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটের লোকজন নিয়মকানুন না মেনে পুলিশের সহায়তায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের গুন্ডাবাহিনী আমাদের ওপর হামলা করছে। তাদের রক্ষা করতে হবে।
এ সময় সিইসি ক্ষুব্ধ হয়ে ড. কামাল হোসেনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি নিজেকে কী মনে করেন। আপনি এমন কী হয়েছেন- যে পুলিশকে ‘লাঠিয়াল, জানোয়ার’ বলছেন। এ সময় অন্য দুই নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ও রফিকুল ইসলাম চুপ ছিলেন’।
ওই কমিশনার আরো জানান, এরপর বিএনপি নেতা মঈন খান সিইসিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘নির্বাচনের কোনো পরিবেশ যদি সৃষ্টি করতে না পারেন, তাহলে বলে দেন, আমরা আজকেই প্রেসক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের বিষয়ে ঘোষণা দেব’।
পরে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সিইসির ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সভা বর্জন করেন। তবে কমিশনের কেউ তাদের সভা বর্জন না করার অনুরোধ জানাননি বলেও জানা গেছে।
বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, সিইসি আমাদের কোনো কথাই শোনেননি। আমরা সারা দেশে পুলিশের হাতে ধরপাকড়, হয়রানির বিষয়ে কথা বলতে চেয়েছি, তিনি তা শোনেননি। তিনি পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করেছেন।
তবে বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি বৈঠকে উপস্থিত নির্বাচন কমিশনাররা। বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, ইসি সচিব হেলালুদ্দীন ছিলেন।
ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে আরো ছিলেন মোস্তফা মহসীন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস প্রমুখ।