নাটোর-৪ আসনে হ্যাট্রিক নাকি অভিষেক
মো. রাশিদুল ইসলাম | ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ২২:২৮
আবদুল কুদ্দুস ও আলাউদ্দিন মৃধা। ছবি: দেশ রূপান্তর
রোববার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট। এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলেও নানা নাটকীয়তার পর ভোটের মাত্র তিন আগে নাটোর-৪ আসনের বিএনপির প্রার্থী আবদুল আজিজের প্রার্থীতা বাতিল ঘোষণা করেন উচ্চ আদালত। এ আসনের নির্বাচনে আজ বিএনপির কোনো প্রার্থী থাকছে না। তারপরেও নির্বাচনের আগাম ফলাফল অনুমান করাটা এত সহজ হচ্ছে না।
জাতীয় নির্বাচনের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (বৃহত্তর রাজশাহী জেলার রাজশাহী-১৭ আসন: বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর অন্তর্ভূক্ত) আওয়ামী লীগের প্রার্থী রফিক উদ্দিন সরকার বিজয়ী হন। তিনি বড়াইগ্রামের কৃতি সন্তান। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে নাটোর-৪ নামে বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত নতুন সংসদীয় আসনে জাতীয় পার্টির আবুল কাশেম সরকার বিজয়ী হন। ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি।
১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার গঠন করলেও এ আসনে জয়ী হতে পারেনি। জয়ী হন বর্তমান সাংসদ আবদুল কুদ্দুস। তারপর থেকে এ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হিসেবে তিনি একক আধিপত্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী একরামুল আলম। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ বেশ কয়েকটি বড় দল অংশগ্রহণ করেনি। এরপর ১৯৯৬ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে আসে। জয়ী হন আবদুল কুদ্দুস। সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে তিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাাপ্ত হন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে আসনটি পুনরুদ্ধার করে বিএনপি। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোজাম্মেল হক।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি পুনরুদ্ধার করে। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবদুল কুদ্দুস। বিএনপি প্রার্থী মোজাম্মেল হক পরাজিত হন। এরপর এলাকায় তার কম উপস্থিতি ও দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রমে অনুপস্থিতির কারণে দলের নেতাকর্মীদের থেকে এক রকম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তিনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপিবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবদুল কুদ্দুস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় সেই নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি।
এরই মধ্যে এ আসনের বিএনপির দুইজন জনপ্রিয় নেতার মৃত্যূ হয়। বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি একরামুল আলম ও বনপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি সানাউল্লাহ নূর বাবুর মৃত্যুর পর অভিভাবকশূণ্য হয়ে পড়ে বিএনপি। এরপর বিনয়ী ও নম্র স্বভাবগুণে খুব অল্প সময়েই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে নিজের শক্ত ভিত গড়ে তুলেন গুরুদাসপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক লাভ করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান পদ ও পদত্যাগ সংক্রান্ত জটিলতায় প্রথমে জেলা রিটার্নিং অফিস তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল করে প্রার্থীতা ফিরে পেলেও গত ২৬ ডিসেম্বর আবদুল আজিজের প্রার্থীতা বাতিল করেন হাইকোর্ট। দলীয় বিভেদ না থাকায় ভাল অবস্থানে ছিলেন বিএনপির এই উদীয়মান নেতা।
নাটোর-৪ আসনে এবারের ভোটের আলোচনায় প্রসঙ্গত উঠে আসে আরও একটি নাম। বর্তমান সাংসদ কন্যা কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুরের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গিয়ে নৌকার পথসভা করে তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। গণমুখী নির্বাচনি প্রচার ও সাংগঠনিক দক্ষতা গুণে আগামীর রাজনীতির মাঠে অনেকটাই এগিয়ে থাকবনে তিনি।
অবস্থাপর্যবেক্ষণে মহাজোট ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ আবদুল কুদ্দুস আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন- এমনটা ধারণা করা যেতেই পারে। তবে বিএনপির প্রার্থী না থাকার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন মহাজোটের শরীক জাতীয় পাটির প্রার্থী আলাউদ্দিন মৃধা। বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা ভোটকেন্দ্র গেলে তাকেই ভোট দেবেন- এটাই রাজনৈতিক বাস্তবতা। তবে দলীয় প্রার্থী না থাকায় বিএনপির অনেক ভোটারই যে ভোটকেন্দ্রে যাবেন না- এমন ধারণাও অমূলক নয়। এমন পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটে ভোটের আগাম সমীকরণ মেলানো দূরহ বটে। তবে এ আসনে যিনিই নির্বাচিত হন না কেন- নতুন এক ইতিহাসের জন্ম হবে। হয় হ্যাট্রিক নয়তো অভিষেক।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
মো. রাশিদুল ইসলাম | ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ২২:২৮

রোববার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট। এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলেও নানা নাটকীয়তার পর ভোটের মাত্র তিন আগে নাটোর-৪ আসনের বিএনপির প্রার্থী আবদুল আজিজের প্রার্থীতা বাতিল ঘোষণা করেন উচ্চ আদালত। এ আসনের নির্বাচনে আজ বিএনপির কোনো প্রার্থী থাকছে না। তারপরেও নির্বাচনের আগাম ফলাফল অনুমান করাটা এত সহজ হচ্ছে না।
জাতীয় নির্বাচনের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (বৃহত্তর রাজশাহী জেলার রাজশাহী-১৭ আসন: বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর অন্তর্ভূক্ত) আওয়ামী লীগের প্রার্থী রফিক উদ্দিন সরকার বিজয়ী হন। তিনি বড়াইগ্রামের কৃতি সন্তান। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে নাটোর-৪ নামে বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত নতুন সংসদীয় আসনে জাতীয় পার্টির আবুল কাশেম সরকার বিজয়ী হন। ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি।
১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার গঠন করলেও এ আসনে জয়ী হতে পারেনি। জয়ী হন বর্তমান সাংসদ আবদুল কুদ্দুস। তারপর থেকে এ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হিসেবে তিনি একক আধিপত্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী একরামুল আলম। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ বেশ কয়েকটি বড় দল অংশগ্রহণ করেনি। এরপর ১৯৯৬ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে আসে। জয়ী হন আবদুল কুদ্দুস। সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে তিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাাপ্ত হন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে আসনটি পুনরুদ্ধার করে বিএনপি। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোজাম্মেল হক।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি পুনরুদ্ধার করে। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবদুল কুদ্দুস। বিএনপি প্রার্থী মোজাম্মেল হক পরাজিত হন। এরপর এলাকায় তার কম উপস্থিতি ও দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রমে অনুপস্থিতির কারণে দলের নেতাকর্মীদের থেকে এক রকম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তিনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপিবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবদুল কুদ্দুস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় সেই নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি।
এরই মধ্যে এ আসনের বিএনপির দুইজন জনপ্রিয় নেতার মৃত্যূ হয়। বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি একরামুল আলম ও বনপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি সানাউল্লাহ নূর বাবুর মৃত্যুর পর অভিভাবকশূণ্য হয়ে পড়ে বিএনপি। এরপর বিনয়ী ও নম্র স্বভাবগুণে খুব অল্প সময়েই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে নিজের শক্ত ভিত গড়ে তুলেন গুরুদাসপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক লাভ করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান পদ ও পদত্যাগ সংক্রান্ত জটিলতায় প্রথমে জেলা রিটার্নিং অফিস তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল করে প্রার্থীতা ফিরে পেলেও গত ২৬ ডিসেম্বর আবদুল আজিজের প্রার্থীতা বাতিল করেন হাইকোর্ট। দলীয় বিভেদ না থাকায় ভাল অবস্থানে ছিলেন বিএনপির এই উদীয়মান নেতা।
নাটোর-৪ আসনে এবারের ভোটের আলোচনায় প্রসঙ্গত উঠে আসে আরও একটি নাম। বর্তমান সাংসদ কন্যা কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুরের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গিয়ে নৌকার পথসভা করে তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। গণমুখী নির্বাচনি প্রচার ও সাংগঠনিক দক্ষতা গুণে আগামীর রাজনীতির মাঠে অনেকটাই এগিয়ে থাকবনে তিনি।
অবস্থাপর্যবেক্ষণে মহাজোট ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ আবদুল কুদ্দুস আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন- এমনটা ধারণা করা যেতেই পারে। তবে বিএনপির প্রার্থী না থাকার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন মহাজোটের শরীক জাতীয় পাটির প্রার্থী আলাউদ্দিন মৃধা। বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা ভোটকেন্দ্র গেলে তাকেই ভোট দেবেন- এটাই রাজনৈতিক বাস্তবতা। তবে দলীয় প্রার্থী না থাকায় বিএনপির অনেক ভোটারই যে ভোটকেন্দ্রে যাবেন না- এমন ধারণাও অমূলক নয়। এমন পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটে ভোটের আগাম সমীকরণ মেলানো দূরহ বটে। তবে এ আসনে যিনিই নির্বাচিত হন না কেন- নতুন এক ইতিহাসের জন্ম হবে। হয় হ্যাট্রিক নয়তো অভিষেক।