‘মন্ত্রীপুত্রের সঙ্গে মেয়রের বিরোধ’: মনোহরদীতে রাতভর সংঘর্ষ-হামলা
নরসিংদী প্রতিনিধি | ১৪ জানুয়ারি, ২০২১ ১৭:১৪
নরসিংদীর মনোহরদী পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কাউন্সিলর প্রার্থীসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আমিনুর রশিদ সুজনের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে লুটপাটেরও অভিযোগ ওঠে।
তবে মেয়র সুজনের অভিযোগ, প্রতিপক্ষের হামলায় তার দুই ভাইসহ কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার রাত ১১টার দিকে মনোহরদী হিন্দু পাড়াসহ পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে এসব হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বুধবার রাতে মেয়র আমিনুর রশিদ সুজনের কয়েক শ নেতাকর্মী লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে মনোহরদী বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নিলে গোটা পৌর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ, র্যাব ঘটনাস্থলে এলে মেয়রকে বাসস্ট্যান্ড থেকে সরিয়ে দিলে ভোর ৪টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
ক্ষতিগ্রস্তরা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, পৌরসভা নির্বাচনে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রশিদ সুজন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কফিল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ মোল্লা জাদুর নাম প্রস্তাব করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী তালিকার সবাই মনোনয়নপত্র কেনার কথা থাকলেও রহস্যজনক কারণে মেয়র সুজন ছাড়া কেউ মনোনয়নপত্র কেনেননি। এরপর মেয়র সুজন দলীয় মনোনয়ন পান।
তারা বলেন, পৌরসভার নয় ওয়ার্ডে বর্তমানে ছয়টিতে বিএনপির কাউন্সিলর রয়েছেন। যাদের প্রত্যেকের সঙ্গে মেয়র সুজনের সখ্য রয়েছে। তবে চার ওয়ার্ডে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের প্রার্থী করতে চান শিল্পমন্ত্রীর ছেলে মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদী। যা নিয়ে মেয়র সুজনের সঙ্গে মন্ত্রীপুত্র সাদীর মতবিরোধ দেখা দেয়।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, বুধবার রাত ৮টায় মনোহরদী হিন্দুপাড়া সর্বজনীন দুর্গাবাড়িতে মেয়র আমিনুর রশিদ সুজনের উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক বাবু প্রিয়াশীষ রায়, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিল্পমন্ত্রীর ছোট ভাই নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপন এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যকরী সদস্য মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদীসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় কাউন্সিল প্রার্থীরা তাদের সমর্থকদের নিয়ে যোগ দেন।
তাদের অভিযোগ, রাত ১১টার দিকে সভা শেষে ফেরার পথে কাউন্সিলর প্রার্থী হারুন মাঝি ও খোকন রায়ের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে হারুন মাঝির পক্ষে অবস্থান নেয় মেয়র সুজনের সমর্থকরা। আর খোকন রায়ের পক্ষে অবস্থান নেয় সাদীর সমর্থকরা। উভয় পক্ষ সংঘর্ষে মেয়রের দুই ভাইসহ কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়। এ সময় উভয় পক্ষের পাঁচটি মোটরসাইকেল ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুল হকের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মেয়র সুজনের নেতৃত্বে কয়েক শ সমর্থক মনোহরদী বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হয়। সেখান থেকে তারা মনোহরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং নরসিংদী জেলা টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক সুমন বর্মণ, কাউন্সিলর প্রার্থী ও পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খোকন রায়, সুকোমল সাহার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। হামলা চালানো হয় ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিহির রায়ের দোকানে।
তারা বলেন, পরে একে একে চকপাড়া এলাকায় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও উপজেলা যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শরীফ রায়হান ও তার সমর্থকদের বাড়িঘর ও অফিস, ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোতাহার হোসেনের অফিস ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলামের মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানান, হামলায় আহতদের মধ্যে চন্দনবাড়ি এলাকার মেয়র সুজনের বড় ভাই মামুনুর রশিদ (৩৫), ছোট ভাই হাসানুর রশিদ তন্ময় (২৫), ইমতিয়াজ মান্নান (৩০), আল সাঈদী সাম্মী (৩২) শফিকুল আলম (৪৫), সোহেল আকন্দ (২৬) মাঝিপাড়া এলাকার মাসুম হাসান শুভ (৩০), লেবুতলা এলাকার নজরুল ইসলামকে (৪০) মনোহরদী উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এদের মধ্যে মামুনুর রশিদ ও শফিকুল আলমকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
মেয়র সুজন হামলার ঘটনায় মন্ত্রীর ছেলে সাদীকে দায়ী করে তার সহযোগীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। ওই সময় মেয়র সুজন আগামী ১৬ তারিখ নির্বাচনের পর মন্ত্রীর লোকজনকে পৌরসভায় ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন।
জানতে চাইলে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী খোকন রায় বলেন, মেয়র সুজন ও কাউন্সিলর প্রার্থী হারুন মাঝি আমার বাড়ি ও সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। তারা পরিকল্পিতভাবে এই বিশৃঙ্খলা ঘটিয়েছে যাতে ভোটের পরিবেশ নষ্ট হয়।
মনোহরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াশীষ রায় বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে সাংবাদিক ও হিন্দু বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা দুঃখজনক। আমরা এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
মনোহরদী পৌরসভার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আমিনুর রশিদ সুজন বলেন, হিন্দুপাড়ায় আমি আমার নির্বাচনী উঠান বৈঠক শেষ করে চলে যাওয়ার সময় আমার ওপর অতর্কিতভাবে প্রতিপক্ষরা হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমাকে আঘাত করার সময় আমার দুই ভাই আমাকে বাঁচাতে গেলে তারা গুরুতর আহত হয়েছে। এ ঘটনায় আমার ১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। একই সঙ্গে আমার এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
তার কর্মী-সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে এমন অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যনিবার্হী সদস্য মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদী বলেন, মেয়র নিজের সুবিধার জন্য বিএনপির কাউন্সিলরদের বিজয়ী করতে চান। যেহেতু আমি দলীয় কাউন্সিলরের পক্ষে তাই এটাকে ইস্যু করে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থক ও মেয়রের সমর্থকরা নৌকার উঠান বৈঠক শেষে ফেরার পথে আমার ওপর হামলা চালায়। পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে। তারা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা চালিয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে। থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। বর্তমানে পরিস্থিতিতে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কোথাও আইনশৃঙ্খলার যাতে অবনতি না হয় সে জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এদিকে সাংবাদিক সুমন বর্মণের বাড়িতে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন নরসিংদী জেলা প্রেসক্লাব, টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, মনোহরদী সাংবাদিক ফোরাম, মনোহরদী রিপোর্টার্স ক্লাবসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা। তারা হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নরসিংদী প্রতিনিধি | ১৪ জানুয়ারি, ২০২১ ১৭:১৪

নরসিংদীর মনোহরদী পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কাউন্সিলর প্রার্থীসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আমিনুর রশিদ সুজনের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে লুটপাটেরও অভিযোগ ওঠে।
তবে মেয়র সুজনের অভিযোগ, প্রতিপক্ষের হামলায় তার দুই ভাইসহ কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার রাত ১১টার দিকে মনোহরদী হিন্দু পাড়াসহ পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে এসব হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বুধবার রাতে মেয়র আমিনুর রশিদ সুজনের কয়েক শ নেতাকর্মী লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে মনোহরদী বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নিলে গোটা পৌর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ, র্যাব ঘটনাস্থলে এলে মেয়রকে বাসস্ট্যান্ড থেকে সরিয়ে দিলে ভোর ৪টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
ক্ষতিগ্রস্তরা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, পৌরসভা নির্বাচনে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রশিদ সুজন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কফিল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ মোল্লা জাদুর নাম প্রস্তাব করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী তালিকার সবাই মনোনয়নপত্র কেনার কথা থাকলেও রহস্যজনক কারণে মেয়র সুজন ছাড়া কেউ মনোনয়নপত্র কেনেননি। এরপর মেয়র সুজন দলীয় মনোনয়ন পান।
তারা বলেন, পৌরসভার নয় ওয়ার্ডে বর্তমানে ছয়টিতে বিএনপির কাউন্সিলর রয়েছেন। যাদের প্রত্যেকের সঙ্গে মেয়র সুজনের সখ্য রয়েছে। তবে চার ওয়ার্ডে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের প্রার্থী করতে চান শিল্পমন্ত্রীর ছেলে মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদী। যা নিয়ে মেয়র সুজনের সঙ্গে মন্ত্রীপুত্র সাদীর মতবিরোধ দেখা দেয়।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, বুধবার রাত ৮টায় মনোহরদী হিন্দুপাড়া সর্বজনীন দুর্গাবাড়িতে মেয়র আমিনুর রশিদ সুজনের উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক বাবু প্রিয়াশীষ রায়, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিল্পমন্ত্রীর ছোট ভাই নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপন এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যকরী সদস্য মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদীসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় কাউন্সিল প্রার্থীরা তাদের সমর্থকদের নিয়ে যোগ দেন।
তাদের অভিযোগ, রাত ১১টার দিকে সভা শেষে ফেরার পথে কাউন্সিলর প্রার্থী হারুন মাঝি ও খোকন রায়ের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে হারুন মাঝির পক্ষে অবস্থান নেয় মেয়র সুজনের সমর্থকরা। আর খোকন রায়ের পক্ষে অবস্থান নেয় সাদীর সমর্থকরা। উভয় পক্ষ সংঘর্ষে মেয়রের দুই ভাইসহ কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়। এ সময় উভয় পক্ষের পাঁচটি মোটরসাইকেল ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুল হকের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মেয়র সুজনের নেতৃত্বে কয়েক শ সমর্থক মনোহরদী বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হয়। সেখান থেকে তারা মনোহরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং নরসিংদী জেলা টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক সুমন বর্মণ, কাউন্সিলর প্রার্থী ও পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খোকন রায়, সুকোমল সাহার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। হামলা চালানো হয় ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিহির রায়ের দোকানে।
তারা বলেন, পরে একে একে চকপাড়া এলাকায় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও উপজেলা যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শরীফ রায়হান ও তার সমর্থকদের বাড়িঘর ও অফিস, ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোতাহার হোসেনের অফিস ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলামের মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানান, হামলায় আহতদের মধ্যে চন্দনবাড়ি এলাকার মেয়র সুজনের বড় ভাই মামুনুর রশিদ (৩৫), ছোট ভাই হাসানুর রশিদ তন্ময় (২৫), ইমতিয়াজ মান্নান (৩০), আল সাঈদী সাম্মী (৩২) শফিকুল আলম (৪৫), সোহেল আকন্দ (২৬) মাঝিপাড়া এলাকার মাসুম হাসান শুভ (৩০), লেবুতলা এলাকার নজরুল ইসলামকে (৪০) মনোহরদী উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এদের মধ্যে মামুনুর রশিদ ও শফিকুল আলমকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
মেয়র সুজন হামলার ঘটনায় মন্ত্রীর ছেলে সাদীকে দায়ী করে তার সহযোগীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। ওই সময় মেয়র সুজন আগামী ১৬ তারিখ নির্বাচনের পর মন্ত্রীর লোকজনকে পৌরসভায় ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন।
জানতে চাইলে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী খোকন রায় বলেন, মেয়র সুজন ও কাউন্সিলর প্রার্থী হারুন মাঝি আমার বাড়ি ও সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। তারা পরিকল্পিতভাবে এই বিশৃঙ্খলা ঘটিয়েছে যাতে ভোটের পরিবেশ নষ্ট হয়।
মনোহরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াশীষ রায় বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে সাংবাদিক ও হিন্দু বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা দুঃখজনক। আমরা এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
মনোহরদী পৌরসভার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আমিনুর রশিদ সুজন বলেন, হিন্দুপাড়ায় আমি আমার নির্বাচনী উঠান বৈঠক শেষ করে চলে যাওয়ার সময় আমার ওপর অতর্কিতভাবে প্রতিপক্ষরা হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমাকে আঘাত করার সময় আমার দুই ভাই আমাকে বাঁচাতে গেলে তারা গুরুতর আহত হয়েছে। এ ঘটনায় আমার ১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। একই সঙ্গে আমার এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
তার কর্মী-সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে এমন অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যনিবার্হী সদস্য মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদী বলেন, মেয়র নিজের সুবিধার জন্য বিএনপির কাউন্সিলরদের বিজয়ী করতে চান। যেহেতু আমি দলীয় কাউন্সিলরের পক্ষে তাই এটাকে ইস্যু করে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থক ও মেয়রের সমর্থকরা নৌকার উঠান বৈঠক শেষে ফেরার পথে আমার ওপর হামলা চালায়। পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে। তারা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা চালিয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে। থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। বর্তমানে পরিস্থিতিতে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কোথাও আইনশৃঙ্খলার যাতে অবনতি না হয় সে জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এদিকে সাংবাদিক সুমন বর্মণের বাড়িতে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন নরসিংদী জেলা প্রেসক্লাব, টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, মনোহরদী সাংবাদিক ফোরাম, মনোহরদী রিপোর্টার্স ক্লাবসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা। তারা হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।