এলাকা ছাড়ার আগেও আচরণবিধি লঙ্ঘন এমপি টুকুর
পাবনা প্রতিনিধি | ২৩ নভেম্বর, ২০২১ ২০:৫৭
পাবনার বেড়া পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে ছেলে আসিফ শামস রঞ্জনকে জেতাতে আচরণবিধি লংঘন করে সভা-সমাবেশ, ভোটার ও প্রতিপক্ষের সমর্থকদের হুমকি দেয়াসহ নানা বিতর্ক মাথায় নিয়ে এলাকা ছেড়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু এমপি।
সোমবার বিকেলে কাজীরহাট-আরিচা রুটে ফেরি পার হয়ে ঢাকায় যান তিনি।
এর আগে একই দিন সকালে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে রিটার্নিং কর্মকর্তা চিঠি দেওয়ার পরও পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু নির্বাচনী এলাকা ছেড়েছেন কিনা তা জানাতে, ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে আদেশ দেয় হাইকোর্ট।
তবে ঢাকায় যাওয়ার আগেও সোমবার দুপুরে ছেলের পক্ষে বেড়া উপজেলার মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীরা।
বেড়া পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও সাংসদ টুকুর ছোট ভাই আব্দুল বাতেন অভিযোগ করেন, বেড়া পৌর নির্বাচনে সাংসদ টুকু নিজের ছেলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আসিফ শামস রঞ্জনকে জেতাতে আচরণবিধি লংঘন করে এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।
তার অভিযোগ, সাংসদ পদ ব্যবহার করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি প্রশাসনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। এসব কারণে গত ১৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন তাকে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার অনুরোধ জানালেও তিনি তোয়াক্কা করেন নি। বরং ভোটারদের এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থকদের নৌকার ভোট না করলে ‘পিষে ফেলার’ হুমকি দিয়েছেন।
আব্দুল বাতেন আরো বলেন, আমার রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সোমবার সাংসদ টুকুর কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে বিকেলে এলাকা ছেড়ে যান তিনি। কিন্তু যাওয়ার আগেও বৃশালিখা মহল্লার নিজ বাড়িতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ইমাম মুয়াজ্জিনদের ডেকে পৌর নির্বাচনে ছেলের পক্ষে সমর্থন ও দোয়া চান। আমার ধারণা ২৫ তারিখ হাইকোর্টে রিট শুনানির পর তিনি আবারও এলাকায় ফিরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবেন। আশা করছি নির্বাচন কমিশন এ ব্যপারে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে সাংসদ টুকুর আহ্বানে বেড়া উপজেলার ১২০ ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মাদ্রাসা শিক্ষক সোমবার দুপুরে সাংসদ টুকুর বাড়িতে গিয়েছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন পাবনার উপপরিচালক ইমামুল ইসলাম।
সাংসদ টুকুর অনুসারী একজন জনপ্রতিনিধিও তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে বৈঠকের কয়েকটি ছবি আপলোড করেন।
তবে নির্বাচনী বৈঠক নয় সাংসদের আমন্ত্রণে তার মৃত স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া মাহফিলের অনুষ্ঠানে ইমাম মুয়াজ্জিনেরা গিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন তিনি।
তবে, মৃত মায়ের জন্য দোয়ার অনুষ্ঠানে ছেলের জন্য সাংসদ ভোট ও দোয়া চাওয়ার ভিডিও ও অডিও রেকর্ড আছে জানালে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ইমামুল ইসলাম বলেন, সাংসদ টুকু ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ইমাম মুয়াজ্জিনদের তার বাড়িতে দাওয়াত করলে, আমি কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দোয়া মাহফিলে শরিক হয়েছি। তবে এটি সম্পূর্ণ অনানুষ্ঠানিক সভা, নির্বাচনী বৈঠক নয়। এখন নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে সাংসদপুত্র আসিফ শামস সবার নিকট দোয়া চেয়েছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাংসদ পুত্র ও আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আসিফ শামস রঞ্জনের ফোনে বার বার ফোন করেও সাড়া মেলেনি।
এ বিষয়ে ফোনে বক্তব্য দিতে রাজি হননি সাংসদ শামসুল হক টুকুও।
সাংসদ শামসুল হক টুকু বলেন, সোমবার আমি সংসদীয় কার্যক্রমে অংশ নিয়েছি। মঙ্গলবার সারাদিনেও সংসদে ব্যস্ত সময় কাটছে। বেড়া পৌর নির্বাচন প্রসঙ্গে আমি ফোনে কোনো মন্তব্যই করব না।
নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৮ নভেম্বর পৌরসভাটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে সাংসদ শামসুল হকের পরিবার থেকেই আছেন তিনজন। তারা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাংসদের ছেলে ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা এস এম আসিফ শামস, সাংসদের ছোট ভাই বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান মেয়র আবদুল বাতেন এবং সাংসদের ভাতিজি (বড় ভাই বদিউল আলমের মেয়ে) এস এম সাদিয়া আলম।
এ ছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য এইচ এম ফজলুল হক এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা ও সোনালী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি কে এম আবদুল্লাহ।
আরও পড়ুন... কোটালীপাড়ায় নৌকা প্রতীক পেলেন ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
পাবনা প্রতিনিধি | ২৩ নভেম্বর, ২০২১ ২০:৫৭

পাবনার বেড়া পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে ছেলে আসিফ শামস রঞ্জনকে জেতাতে আচরণবিধি লংঘন করে সভা-সমাবেশ, ভোটার ও প্রতিপক্ষের সমর্থকদের হুমকি দেয়াসহ নানা বিতর্ক মাথায় নিয়ে এলাকা ছেড়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু এমপি।
সোমবার বিকেলে কাজীরহাট-আরিচা রুটে ফেরি পার হয়ে ঢাকায় যান তিনি।
এর আগে একই দিন সকালে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে রিটার্নিং কর্মকর্তা চিঠি দেওয়ার পরও পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু নির্বাচনী এলাকা ছেড়েছেন কিনা তা জানাতে, ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে আদেশ দেয় হাইকোর্ট।
তবে ঢাকায় যাওয়ার আগেও সোমবার দুপুরে ছেলের পক্ষে বেড়া উপজেলার মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীরা।
বেড়া পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও সাংসদ টুকুর ছোট ভাই আব্দুল বাতেন অভিযোগ করেন, বেড়া পৌর নির্বাচনে সাংসদ টুকু নিজের ছেলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আসিফ শামস রঞ্জনকে জেতাতে আচরণবিধি লংঘন করে এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।
তার অভিযোগ, সাংসদ পদ ব্যবহার করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি প্রশাসনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। এসব কারণে গত ১৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন তাকে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার অনুরোধ জানালেও তিনি তোয়াক্কা করেন নি। বরং ভোটারদের এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থকদের নৌকার ভোট না করলে ‘পিষে ফেলার’ হুমকি দিয়েছেন।
আব্দুল বাতেন আরো বলেন, আমার রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সোমবার সাংসদ টুকুর কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে বিকেলে এলাকা ছেড়ে যান তিনি। কিন্তু যাওয়ার আগেও বৃশালিখা মহল্লার নিজ বাড়িতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ইমাম মুয়াজ্জিনদের ডেকে পৌর নির্বাচনে ছেলের পক্ষে সমর্থন ও দোয়া চান। আমার ধারণা ২৫ তারিখ হাইকোর্টে রিট শুনানির পর তিনি আবারও এলাকায় ফিরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবেন। আশা করছি নির্বাচন কমিশন এ ব্যপারে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে সাংসদ টুকুর আহ্বানে বেড়া উপজেলার ১২০ ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মাদ্রাসা শিক্ষক সোমবার দুপুরে সাংসদ টুকুর বাড়িতে গিয়েছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন পাবনার উপপরিচালক ইমামুল ইসলাম।
সাংসদ টুকুর অনুসারী একজন জনপ্রতিনিধিও তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে বৈঠকের কয়েকটি ছবি আপলোড করেন।
তবে নির্বাচনী বৈঠক নয় সাংসদের আমন্ত্রণে তার মৃত স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া মাহফিলের অনুষ্ঠানে ইমাম মুয়াজ্জিনেরা গিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন তিনি।
তবে, মৃত মায়ের জন্য দোয়ার অনুষ্ঠানে ছেলের জন্য সাংসদ ভোট ও দোয়া চাওয়ার ভিডিও ও অডিও রেকর্ড আছে জানালে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ইমামুল ইসলাম বলেন, সাংসদ টুকু ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ইমাম মুয়াজ্জিনদের তার বাড়িতে দাওয়াত করলে, আমি কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দোয়া মাহফিলে শরিক হয়েছি। তবে এটি সম্পূর্ণ অনানুষ্ঠানিক সভা, নির্বাচনী বৈঠক নয়। এখন নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে সাংসদপুত্র আসিফ শামস সবার নিকট দোয়া চেয়েছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাংসদ পুত্র ও আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আসিফ শামস রঞ্জনের ফোনে বার বার ফোন করেও সাড়া মেলেনি।
এ বিষয়ে ফোনে বক্তব্য দিতে রাজি হননি সাংসদ শামসুল হক টুকুও।
সাংসদ শামসুল হক টুকু বলেন, সোমবার আমি সংসদীয় কার্যক্রমে অংশ নিয়েছি। মঙ্গলবার সারাদিনেও সংসদে ব্যস্ত সময় কাটছে। বেড়া পৌর নির্বাচন প্রসঙ্গে আমি ফোনে কোনো মন্তব্যই করব না।
নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৮ নভেম্বর পৌরসভাটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে সাংসদ শামসুল হকের পরিবার থেকেই আছেন তিনজন। তারা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাংসদের ছেলে ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা এস এম আসিফ শামস, সাংসদের ছোট ভাই বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান মেয়র আবদুল বাতেন এবং সাংসদের ভাতিজি (বড় ভাই বদিউল আলমের মেয়ে) এস এম সাদিয়া আলম।
এ ছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য এইচ এম ফজলুল হক এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা ও সোনালী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি কে এম আবদুল্লাহ।
আরও পড়ুন... কোটালীপাড়ায় নৌকা প্রতীক পেলেন ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’