প্রেক্ষাগৃহে ‘নোনা জলের কাব্য’
আল মাসিদ | ২৬ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০
গত এক বছর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে সাড়া জাগিয়েছে তরুণ নির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের প্রথম চলচ্চিত্র ‘নোনা জলের কাব্য’। লন্ডন, বুসান, গুটেনবার্গ, সাও পাওলো, তুরিন, সিয়াটল, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে ছবিটি। অবশেষে স্বল্প পরিসরে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে আজ। গতকাল আগারগাঁওয়ে ফিল্ম আর্কাইভে হয়ে গেল এর প্রেস-শো, আর সন্ধ্যায় স্টার সিনেপ্লেক্সে হয়েছে প্রিমিয়ার শো। দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক জেলেদের দৈনন্দিন জীবনযাপন, আবহাওয়ার প্রতিকূলতার মুখে টিকে থাকার লড়াই এবং তাদের সামাজিক রীতিনীতি ও সংস্কার এই চলচ্চিত্রের মূল বিষয়। সমাজ, সংস্কৃতির উন্নয়ন এবং পরিবেশের অনাকাক্সিক্ষত পরিবর্তন রোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন বলে জানালেন নির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। তিনি দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত যে, ছবিটির গল্পের কারণে এটি চলচ্চিত্র উৎসবের গন্ডি পেরিয়ে জায়গা করে নিয়েছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে অনুষ্ঠিতব্য এই আসরে এ মাসের ৮ তারিখে আইম্যাক্স থিয়েটারে দেখানো হয় ছবিটি। এই সম্মেলনে পৃথিবীর প্রায় সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা অংশগ্রহণ করেন। ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও। একই শহরে জাতিসংঘের আরেকটি সম্মেলনে অক্টোবরের ২৯ তারিখ দেখানো হয় ছবিটি।’
‘নোনা জলের কাব্য’ ২০১৭ সালে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ছবি। সেইসঙ্গে এর প্রযোজনার সঙ্গে জড়িত আছে বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালের ফান্ড। ছবিটি এরইমধ্যে এতগুলো আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যালে ঘুরেছে। তারপরও লগ্নিকৃত অর্থ উঠে আসেনি বলে জানালেন নির্মাতা। তার ভাষ্য, ‘নির্মাতা হিসেবে এটা এক ধরনের মানসিক চাপ যে প্রথম ছবির অর্থই এখনো প্রযোজকদের ফিরিয়ে দিতে পারিনি। তাই নতুন ছবির কাজ ধরার কথা ভাবতে পারছি না। একটি ছবির টাকা উঠে এলে পরের ছবি করাটা সহজ হয়। তবে এবার বাংলাদেশে মুক্তির মাধ্যমে হয়তো টাকাটা উঠে আসবে।’
ছবিটি নির্মাণের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘ছবিটি নির্মাণ করতে আজ থেকে তিন বছর আগে আমি গিয়েছিলাম পটুয়াখালীর প্রত্যন্ত এক জেলেপাড়ায়। খুবই দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, উপকূলবর্তী সেই গ্রামটির এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। এই অঞ্চলে গত ২-৩ বছর যাবৎ সমুদ্রের পানির উচ্চতা খুব দ্রুতগতিতে বাড়ছে। জোয়ারের তীব্রতা তো রয়েছেই, গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পানও অনেক ক্ষতি করেছে। এসব প্রতিকূলতা বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে তেমন একটা নেতিবাচক প্রভাব না ফেললেও, হারিয়ে যাচ্ছে অনাদিকাল থেকে চলে আসা এসব প্রান্তিক জেলেদের উপার্জনের পন্থা। জেলেরা হারিয়ে ফেলছে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার ক্ষমতা। জীবিকার তাগিদে ধীরে ধীরে তারা পাড়ি জমাতে শুরু করেছে শহরাঞ্চলে। এই সমস্যার প্রধান কারণ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন। কিন্তু বিষয়টি শহরে থাকা মানুষ টের পাচ্ছে না বলে কোনো উপলব্ধিও নেই। ছবিটি মানুষের ভেতর সেই উপলব্ধি তৈরি করবে। ছবিটি নির্মাণের সময় গবেষণা করে দেখলাম, সমুদ্র উপকূলবর্তী এই পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ যে সব দেশ বহু বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনে ব্যাপকভাবে কাজ করছিল তারাই দায়ী। তবে বুঝতে পারেনি এর প্রভাব এত ভয়াবহ হবে। এখন তারা অনেক সচেতন হয়েছে। কিন্তু এখন ভারত, চীন এমনকি বাংলাদেশেরও কিছু মানুষ বিষয়টি জানার পরও ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের সেই পন্থাই অবলম্বন করতে চাচ্ছে। এমন হতে থাকলে আমাদের বিশাল ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’
ছবির অন্যতম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু। তিনি বলেন, “একটি চমৎকার আবহে, আমরা ‘নোনাজলের কাব্য’তে কাজ করেছি। আমি বিশ্বাস করি, সততার এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে, একটা সিনেমা মানসম্মত হয়। ‘নোনাজলের কাব্য’ আমাদের দেশের চলচ্চিত্র আঙিনায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আমার বিশ্বাস।” ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন শতাব্দী ওয়াদুদ, তিতাস জিয়া, তাসনোভা তামান্না প্রমুখ। আবহ সংগীত পরিচালনা করেছেন জনপ্রিয় তারকা সায়ান চৌধুরী অর্ণব।
আজ থেকে ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্স-এর সকল শাখা, শ্যামলী সিনেমাস, যমুনা ব্লকবাস্টার, চট্টগ্রামের সিলভারস্ক্রিন ও সুগন্ধা সিনেমা এবং বগুড়ার মধুবনের সকল প্রেক্ষাগৃহে চলছে ছবিটি।
শেয়ার করুন
আল মাসিদ | ২৬ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০

গত এক বছর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে সাড়া জাগিয়েছে তরুণ নির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের প্রথম চলচ্চিত্র ‘নোনা জলের কাব্য’। লন্ডন, বুসান, গুটেনবার্গ, সাও পাওলো, তুরিন, সিয়াটল, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে ছবিটি। অবশেষে স্বল্প পরিসরে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে আজ। গতকাল আগারগাঁওয়ে ফিল্ম আর্কাইভে হয়ে গেল এর প্রেস-শো, আর সন্ধ্যায় স্টার সিনেপ্লেক্সে হয়েছে প্রিমিয়ার শো। দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক জেলেদের দৈনন্দিন জীবনযাপন, আবহাওয়ার প্রতিকূলতার মুখে টিকে থাকার লড়াই এবং তাদের সামাজিক রীতিনীতি ও সংস্কার এই চলচ্চিত্রের মূল বিষয়। সমাজ, সংস্কৃতির উন্নয়ন এবং পরিবেশের অনাকাক্সিক্ষত পরিবর্তন রোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন বলে জানালেন নির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। তিনি দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত যে, ছবিটির গল্পের কারণে এটি চলচ্চিত্র উৎসবের গন্ডি পেরিয়ে জায়গা করে নিয়েছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে অনুষ্ঠিতব্য এই আসরে এ মাসের ৮ তারিখে আইম্যাক্স থিয়েটারে দেখানো হয় ছবিটি। এই সম্মেলনে পৃথিবীর প্রায় সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা অংশগ্রহণ করেন। ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও। একই শহরে জাতিসংঘের আরেকটি সম্মেলনে অক্টোবরের ২৯ তারিখ দেখানো হয় ছবিটি।’
‘নোনা জলের কাব্য’ ২০১৭ সালে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ছবি। সেইসঙ্গে এর প্রযোজনার সঙ্গে জড়িত আছে বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালের ফান্ড। ছবিটি এরইমধ্যে এতগুলো আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যালে ঘুরেছে। তারপরও লগ্নিকৃত অর্থ উঠে আসেনি বলে জানালেন নির্মাতা। তার ভাষ্য, ‘নির্মাতা হিসেবে এটা এক ধরনের মানসিক চাপ যে প্রথম ছবির অর্থই এখনো প্রযোজকদের ফিরিয়ে দিতে পারিনি। তাই নতুন ছবির কাজ ধরার কথা ভাবতে পারছি না। একটি ছবির টাকা উঠে এলে পরের ছবি করাটা সহজ হয়। তবে এবার বাংলাদেশে মুক্তির মাধ্যমে হয়তো টাকাটা উঠে আসবে।’
ছবিটি নির্মাণের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘ছবিটি নির্মাণ করতে আজ থেকে তিন বছর আগে আমি গিয়েছিলাম পটুয়াখালীর প্রত্যন্ত এক জেলেপাড়ায়। খুবই দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, উপকূলবর্তী সেই গ্রামটির এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। এই অঞ্চলে গত ২-৩ বছর যাবৎ সমুদ্রের পানির উচ্চতা খুব দ্রুতগতিতে বাড়ছে। জোয়ারের তীব্রতা তো রয়েছেই, গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পানও অনেক ক্ষতি করেছে। এসব প্রতিকূলতা বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে তেমন একটা নেতিবাচক প্রভাব না ফেললেও, হারিয়ে যাচ্ছে অনাদিকাল থেকে চলে আসা এসব প্রান্তিক জেলেদের উপার্জনের পন্থা। জেলেরা হারিয়ে ফেলছে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার ক্ষমতা। জীবিকার তাগিদে ধীরে ধীরে তারা পাড়ি জমাতে শুরু করেছে শহরাঞ্চলে। এই সমস্যার প্রধান কারণ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন। কিন্তু বিষয়টি শহরে থাকা মানুষ টের পাচ্ছে না বলে কোনো উপলব্ধিও নেই। ছবিটি মানুষের ভেতর সেই উপলব্ধি তৈরি করবে। ছবিটি নির্মাণের সময় গবেষণা করে দেখলাম, সমুদ্র উপকূলবর্তী এই পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ যে সব দেশ বহু বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনে ব্যাপকভাবে কাজ করছিল তারাই দায়ী। তবে বুঝতে পারেনি এর প্রভাব এত ভয়াবহ হবে। এখন তারা অনেক সচেতন হয়েছে। কিন্তু এখন ভারত, চীন এমনকি বাংলাদেশেরও কিছু মানুষ বিষয়টি জানার পরও ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের সেই পন্থাই অবলম্বন করতে চাচ্ছে। এমন হতে থাকলে আমাদের বিশাল ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’
ছবির অন্যতম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু। তিনি বলেন, “একটি চমৎকার আবহে, আমরা ‘নোনাজলের কাব্য’তে কাজ করেছি। আমি বিশ্বাস করি, সততার এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে, একটা সিনেমা মানসম্মত হয়। ‘নোনাজলের কাব্য’ আমাদের দেশের চলচ্চিত্র আঙিনায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আমার বিশ্বাস।” ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন শতাব্দী ওয়াদুদ, তিতাস জিয়া, তাসনোভা তামান্না প্রমুখ। আবহ সংগীত পরিচালনা করেছেন জনপ্রিয় তারকা সায়ান চৌধুরী অর্ণব।
আজ থেকে ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্স-এর সকল শাখা, শ্যামলী সিনেমাস, যমুনা ব্লকবাস্টার, চট্টগ্রামের সিলভারস্ক্রিন ও সুগন্ধা সিনেমা এবং বগুড়ার মধুবনের সকল প্রেক্ষাগৃহে চলছে ছবিটি।