মঞ্চে ‘জনকের অনন্তযাত্রা’
মাসিদ রণ | ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
আজ এবং আগামীকাল সন্ধ্যায় জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির নিজস্ব প্রযোজনা ‘জনকের অনন্তযাত্রা’ মঞ্চস্থ হবে একাডেমির মূল হলে। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন মাসুম রেজা। অভিনয় করেছেন দেশের প্রথমসারির বেশ কয়েকটি নাটকের দলের সদস্যরা। এর মধ্যে আছেন আজিজুল হাকিম, মুনিরা ইউসুফ মেমী, কামাল বায়েজিদ, সায়েম সামাদ, শামছি আরা সায়েকা, রামিজ রাজু প্রমুখ। নাটকের নাম শুনেই অনেকে বুঝতে পারছেন এটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কেন্দ্র করে। মূলত বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে সরকারি অর্থায়নে নাটকটি নির্মিত হয়েছে। এর গল্প ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারের ওপর ঘটে যাওয়া ইতিহাসের নির্মমতার পর তাকে সমাধিস্থ করার ঘটনা নিয়ে। ‘জনকের অনন্তযাত্রা’র নাট্যকার ও নির্দেশক মাসুম রেজা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটি জাতির পিতার শতবর্ষ পূর্তিতে আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য। তাকে নিয়ে নানা ধরনের কাজ হয়েছে। কিন্তু আমি একেবারেই ভিন্ন একটি ঘটনা নিয়ে কাজ করতে চেয়েছি। কারণ, আমার কাছে মনে হয়, ইতিহাস বিকৃতির চেয়ে ভয়ংকর ইতিহাসের বিস্মৃতি। ‘বঙ্গবন্ধুর দাফনের বিষয়টি সামনে এলেই মানুষের মনে শুধু ৫৭০ সাবান দিয়ে গোসলের বিষয়টি আসে। কিন্তু তাকে দাফনের জন্য যখন টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন এতসব ঘটনা ঘটেছিল যা আমি গবেষণা না করলে জানতেও পারতাম না। আড়ালে থেকে যাওয়া সেই ঘটনাটিই সবার সামনে নিয়ে আসার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’
এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়কে নাট্যমঞ্চে তুলে ধরা কতখানি চ্যালেঞ্জিং ছিল? জানতে চাইলে মাসুম রেজা বলেন, ‘নাটকটিকে আমি বলছি, সত্যাশ্রয়ী গল্প, গল্পাশ্রয়ী সত্য। ফলে আমাকে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করতে হয়েছে। এ ঘটনায় যারা সরাসরি উপস্থিত ছিলেন তাদের অনেকের ভিডিও ও লিখিত সাক্ষাৎকার দেখেছি। বঙ্গবন্ধুকে দাফনের দায়িত্ব পড়েছিল মেজর হায়দার আলীর কাঁধে। একটি বইয়ে তার লেখা আছে। তবে নাটক লেখার চেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল মঞ্চে আনা। এমন রিয়েলিস্টিক গল্পকে মঞ্চের ভাষায় উপস্থাপন করা দুরূহ কাজ। ঘটনাটি দুই-তিনটি জায়গায় ঘটেছিল। সেগুলোর জন্য আমাকে সেভাবে সেট তৈরি করতে হয়েছে। সেই সঙ্গে চেয়েছি প্রত্যেক শিল্পী যেন রিয়েলিস্টিক অভিনয় করেন। সব মিলিয়ে দীর্ঘদিনের মহড়ার পর কাজটি অবশেষে দর্শকের সামনে আসছে। আজ ও আগামীকাল ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে শো হচ্ছে। নাটকটি নিয়ে আমরা সারা দেশে ঘোরার পরিকল্পনা করছি। দর্শক যাতে দেখার সুযোগ পায় তাই সাপ্তাহিক বন্ধের দিন অর্থাৎ শুক্র ও শনিবার শোগুলো হবে। পরের সপ্তাহ যাচ্ছি পাবনা ও রাজশাহী।’
এই নাটকের মাধ্যমে অনেক দিন পর মঞ্চে ফিরেছেন আজিজুল হাকিম, মুনিরা ইউসুফ মেমী ও কামাল বায়েজিদ। বঙ্গবন্ধুর দাফন যেন শরিয়ত মোতাবেক হয়, তার জন্য প্রথম প্রতিবাদ করেন টুঙ্গিপাড়ার মাওলানা আবদুল হালিম। সেই চরিত্রে অভিনয় করছেন আজিজুল হাকিম। তার স্ত্রীর চরিত্রে থাকছেন মেমী। আর বায়েজিদ হয়েছেন খন্দকার মোশতাক। নাটকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র কর্নেল রউফ। তিনি তৎকালীন ডিজিএফআই প্রধান ছিলেন। সেই চরিত্রে অভিনয় করছেন মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের মেধাবী অভিনেতা সায়েম সামাদ। সায়েম বলেন, ‘আমি শুরু থেকে নাটকটির সঙ্গে ছিলাম না। তবে যখনই আমার কাছে সুযোগটি আসে তা লুফে নিই। কারণ বঙ্গবন্ধু ও তার আদর্শের প্রতি আমার বিশ্বাস ছোটবেলা থেকেই। এজন্য চরিত্রটি ধারণ করতে আমিও নানা ধরনের গবেষণা করেছি। যার ফলে অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছি। তাই অভিনয়ের সময় নির্দেশকের কমান্ড ফলো করলেও চরিত্রের সাইকোলজি বোঝার পর তা প্রকাশ করা আমার জন্য সহজ হয়েছে।’
নাটকের আরও দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন পদাতিক নাট্য সংসদের অভিনেত্রী সায়েকা। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিজ এলাকায় একটি হাসপাতাল স্থাপন করেছিলেন। সেই হাসপাতালের খবরাখবর তিনি নিজেই রাখতেন। সে সময় তার সঙ্গে ওই হাসপাতালের একজন সেবিকা দিপালী রানীর জানাশোনা হয়। বঙ্গবন্ধুর দাফনের সময় সেই সেবিকার ভূমিকা ছিল। আমি সেই চরিত্রটি করেছি। এ ছাড়া অভিনয় করেছি একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর ভূমিকায়। আমি নির্দেশক মাসুম রেজার প্রতি কৃতজ্ঞ। দেশের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ একটি নাটকে আমাকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আমরা প্রথমে অনলাইনে মহড়া করেছি দীর্ঘদিন। এরপর করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে সরাসরি দুই মাস রিহার্সেল করেছি। আমার বিশ্বাস নাটকটি দর্শকের খুব ভালো লাগবে। এই নাটকের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ হবে। অভিনেত্রী হিসেবেও সেটি পরম পাওয়া।’
শেয়ার করুন
মাসিদ রণ | ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

আজ এবং আগামীকাল সন্ধ্যায় জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির নিজস্ব প্রযোজনা ‘জনকের অনন্তযাত্রা’ মঞ্চস্থ হবে একাডেমির মূল হলে। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন মাসুম রেজা। অভিনয় করেছেন দেশের প্রথমসারির বেশ কয়েকটি নাটকের দলের সদস্যরা। এর মধ্যে আছেন আজিজুল হাকিম, মুনিরা ইউসুফ মেমী, কামাল বায়েজিদ, সায়েম সামাদ, শামছি আরা সায়েকা, রামিজ রাজু প্রমুখ। নাটকের নাম শুনেই অনেকে বুঝতে পারছেন এটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কেন্দ্র করে। মূলত বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে সরকারি অর্থায়নে নাটকটি নির্মিত হয়েছে। এর গল্প ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারের ওপর ঘটে যাওয়া ইতিহাসের নির্মমতার পর তাকে সমাধিস্থ করার ঘটনা নিয়ে। ‘জনকের অনন্তযাত্রা’র নাট্যকার ও নির্দেশক মাসুম রেজা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটি জাতির পিতার শতবর্ষ পূর্তিতে আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য। তাকে নিয়ে নানা ধরনের কাজ হয়েছে। কিন্তু আমি একেবারেই ভিন্ন একটি ঘটনা নিয়ে কাজ করতে চেয়েছি। কারণ, আমার কাছে মনে হয়, ইতিহাস বিকৃতির চেয়ে ভয়ংকর ইতিহাসের বিস্মৃতি। ‘বঙ্গবন্ধুর দাফনের বিষয়টি সামনে এলেই মানুষের মনে শুধু ৫৭০ সাবান দিয়ে গোসলের বিষয়টি আসে। কিন্তু তাকে দাফনের জন্য যখন টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন এতসব ঘটনা ঘটেছিল যা আমি গবেষণা না করলে জানতেও পারতাম না। আড়ালে থেকে যাওয়া সেই ঘটনাটিই সবার সামনে নিয়ে আসার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’
এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়কে নাট্যমঞ্চে তুলে ধরা কতখানি চ্যালেঞ্জিং ছিল? জানতে চাইলে মাসুম রেজা বলেন, ‘নাটকটিকে আমি বলছি, সত্যাশ্রয়ী গল্প, গল্পাশ্রয়ী সত্য। ফলে আমাকে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করতে হয়েছে। এ ঘটনায় যারা সরাসরি উপস্থিত ছিলেন তাদের অনেকের ভিডিও ও লিখিত সাক্ষাৎকার দেখেছি। বঙ্গবন্ধুকে দাফনের দায়িত্ব পড়েছিল মেজর হায়দার আলীর কাঁধে। একটি বইয়ে তার লেখা আছে। তবে নাটক লেখার চেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল মঞ্চে আনা। এমন রিয়েলিস্টিক গল্পকে মঞ্চের ভাষায় উপস্থাপন করা দুরূহ কাজ। ঘটনাটি দুই-তিনটি জায়গায় ঘটেছিল। সেগুলোর জন্য আমাকে সেভাবে সেট তৈরি করতে হয়েছে। সেই সঙ্গে চেয়েছি প্রত্যেক শিল্পী যেন রিয়েলিস্টিক অভিনয় করেন। সব মিলিয়ে দীর্ঘদিনের মহড়ার পর কাজটি অবশেষে দর্শকের সামনে আসছে। আজ ও আগামীকাল ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে শো হচ্ছে। নাটকটি নিয়ে আমরা সারা দেশে ঘোরার পরিকল্পনা করছি। দর্শক যাতে দেখার সুযোগ পায় তাই সাপ্তাহিক বন্ধের দিন অর্থাৎ শুক্র ও শনিবার শোগুলো হবে। পরের সপ্তাহ যাচ্ছি পাবনা ও রাজশাহী।’
এই নাটকের মাধ্যমে অনেক দিন পর মঞ্চে ফিরেছেন আজিজুল হাকিম, মুনিরা ইউসুফ মেমী ও কামাল বায়েজিদ। বঙ্গবন্ধুর দাফন যেন শরিয়ত মোতাবেক হয়, তার জন্য প্রথম প্রতিবাদ করেন টুঙ্গিপাড়ার মাওলানা আবদুল হালিম। সেই চরিত্রে অভিনয় করছেন আজিজুল হাকিম। তার স্ত্রীর চরিত্রে থাকছেন মেমী। আর বায়েজিদ হয়েছেন খন্দকার মোশতাক। নাটকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র কর্নেল রউফ। তিনি তৎকালীন ডিজিএফআই প্রধান ছিলেন। সেই চরিত্রে অভিনয় করছেন মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের মেধাবী অভিনেতা সায়েম সামাদ। সায়েম বলেন, ‘আমি শুরু থেকে নাটকটির সঙ্গে ছিলাম না। তবে যখনই আমার কাছে সুযোগটি আসে তা লুফে নিই। কারণ বঙ্গবন্ধু ও তার আদর্শের প্রতি আমার বিশ্বাস ছোটবেলা থেকেই। এজন্য চরিত্রটি ধারণ করতে আমিও নানা ধরনের গবেষণা করেছি। যার ফলে অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছি। তাই অভিনয়ের সময় নির্দেশকের কমান্ড ফলো করলেও চরিত্রের সাইকোলজি বোঝার পর তা প্রকাশ করা আমার জন্য সহজ হয়েছে।’
নাটকের আরও দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন পদাতিক নাট্য সংসদের অভিনেত্রী সায়েকা। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিজ এলাকায় একটি হাসপাতাল স্থাপন করেছিলেন। সেই হাসপাতালের খবরাখবর তিনি নিজেই রাখতেন। সে সময় তার সঙ্গে ওই হাসপাতালের একজন সেবিকা দিপালী রানীর জানাশোনা হয়। বঙ্গবন্ধুর দাফনের সময় সেই সেবিকার ভূমিকা ছিল। আমি সেই চরিত্রটি করেছি। এ ছাড়া অভিনয় করেছি একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর ভূমিকায়। আমি নির্দেশক মাসুম রেজার প্রতি কৃতজ্ঞ। দেশের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ একটি নাটকে আমাকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আমরা প্রথমে অনলাইনে মহড়া করেছি দীর্ঘদিন। এরপর করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে সরাসরি দুই মাস রিহার্সেল করেছি। আমার বিশ্বাস নাটকটি দর্শকের খুব ভালো লাগবে। এই নাটকের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ হবে। অভিনেত্রী হিসেবেও সেটি পরম পাওয়া।’