ওটিটিতেই মগ্ন আশফাক নিপুণ
সুদীপ্ত সাইদ খান | ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
গত বছর ২৫ জুন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচইয়ে মুক্তি পায় আশফাক নিপুণ পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘মহানগর’। মুক্তির পর থেকেই বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে আলোচিত ও প্রশংসিত হয় ওয়েব সিরিজটি। মহানগরের পর ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য আরও কাজের পরিকল্পনা করছেন আশফাক নিপুণ। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য বেশকিছু কাজের ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে। এখনো কোনোকিছু চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত হলে জানাতে পারব। আর এই মুহূর্তে লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত আছি। সামনে কী কী কাজ করা যায়। সেগুলো কীভাবে কী করা যায়। সেগুলো নিয়েই পরিকল্পনা করছি।
একটি সিনেমার প্রি-প্রোডাকশনের কাজ করছিলেন এই পরিচালক। সিনেমাটির কাজ কোন পর্যায়ে রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘করোনার আগে সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে অনেক পরিকল্পনায় চেঞ্জ হয়ে গেছে। লোকেশন, অ্যারেঞ্জমেন্ট সবকিছু মিলিয়ে শ্যুট করাটা টাফ হয়ে যাবে। সিনেমাটা হবে অবশ্যই। পরিকল্পনা আছে এ বছরই কাজটা শুরু করার। প্রিপারেশনের ব্যাপার আছে। আবার মাঝখানে ওয়েব সিরিজের কাজ করতে হলো। তো আশা করছি সিনেমার কাজটা শিগগিরই শুরু করতে পারব।’
কলকাতায় আপনার ‘মহানগর’ প্রশংসিত হয়েছে। প্রসেনজিত চট্টোপাধ্যায়ও প্রশংসা করেছেন। সামনের কোনো কাজে কলকাতার কাউকে নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা আছে কি না? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি সবার আগে গল্পটা ঠিক করি। এখন কোনো গল্প সিলেক্ট করার পর যদি গল্পের ডিমান্ডে কলকাতার কাউকে প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই কাজ করব। আর গল্প ঠিক করার আগে কখনোই পরিকল্পনা করি না যে কলকাতার আর্টিস্ট নেব না এখানকার নেব। আর্টিস্ট যেখানকারই হোক- আগে হচ্ছে গল্পটা। কোন গল্পটা বলব, কেন বলতে চাই বা এই সময়ে গল্পটা কেন বলতে চাই। বা গল্পটা বলা টাইম নষ্ট হবে কি না শুরুতে এসবই আমার মাথায় থাকে। কাস্টিংটা থাকে একেবারে শেষের দিকে। তার আগে টেকনিক্যাল ক্রুদের ঠিক করে তারপর আমি কাস্টিংয়ে যাই। তো সব ঠিক করার পর যদি গল্পে ডিমান্ড করে তাহলে তো অবশ্যই কলকাতার কাউকে নেব- শুধু বাংলা ভাষার নয়, ভিন্ন ভাষার কাউকে নিয়ে কাজ করব কি না সেটাও পরে ঠিক করি। গল্পে ডিমান্ডের ওপর নির্ভর করেই আমি আর্টিস্ট ঠিক করি।’
বিদেশি ওটিটিগুলো দেশের মার্কেট দখল করলেও দেশীয় ওটিটিগুলো মার্কেট ধরতে পারছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশফাক নিপুণ বলেন, ‘ওটিটির বিষয়টাই বাংলাদেশের জন্য নতুন। আমরা হয় টেলিভিশন বা বড় পর্দার জন্য কাজ করে অভ্যস্ত। ওটিটির বিষয়টা টোটালই ডিফরেন্ট, এর মার্কেটিং ডিফরেন্ট, এর গ্রামারই ডিফরেন্ট, এটার স্ট্র্যাটেজি ডিফরেন্ট, এটার বানানোর যে প্রক্রিয়া সেটাও ডিফরেন্ট। তো গ্লোবাল ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো যেভাবে এগিয়ে গেছে ওই জায়গায় যেতে আমাদের ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর তো একটু সময় লাগবেই। আমাদের নির্মাতাদের যেমন সময় লাগবে ওই মানের কনটেন্ট বানাতে তেমনি আমাদের ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোরও সময় লাগবে রেগুলার কনটেন্ট নিয়ে হাজির হতে। আমাদের এখানে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কথা বলছি, এক দুই বছর ধরে। কিন্তু হইচই বা অ্যামাজন প্রাইমের মতো ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো মিনিমাম চার পাঁচ বছর কাজ করে আজকের এই জায়গায় আসতে পেরেছে। আমাদের ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোকেও মিনিমাম ওই সময়টা দিতে হবে। আমাদের ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোকে আরেকটা জায়গা ঠিক করতে হবে- তা হলো বাজেট মেইনটেইন করা। আমার জানামতে চরকি হয়তো কিছুটা চেষ্টা করছে যদিও তাদের সঙ্গে আমি কাজ করিনি। বাজেট একটা বড় ফ্যাক্টর। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের টেন্ডেনসিটাই এরকম যে আপনি লগ্নিটা সঙ্গে সঙ্গে ফেরত আনতে পারবেন না- এর জন্য সময় দিতে হবে। রাতারাতি ইনভেস্ট করে রিটার্ন আনা সম্ভব নয়। আমাদের এখানে যেটা হয় যে, অল্প বাজেটে একটা নাটক বানিয়ে বিজ্ঞাপন এনে টিভিতে চালিয়ে বাজেটের রিটার্নটা ফেরত আনা যায় কিন্তু এই ফরম্যাট ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কাজ করবে না। আপনার বাজেটটা বাড়াতে হবে। যাতে বিদেশি কনটেন্টের পাশাপাশি আমাদেরটাও দেখতে পারে। আমি হলিউডের কনটেন্টের কথা বাদই দিলাম, আমাদের পার্শ্ববর্তী তামিল, মালয়ালাম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গেও পাল্লা দিতে হলে আমাদের যে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো আছে তাদের বাজেটটা বাড়াতে হবে। এটা একদম প্রাথমিক শর্ত। আর রিটার্ন অবশ্যই আসবে। কিন্তু সময় লাগবে। কারণ এটার ব্যাকরণটাই আলাদা। এখানে কোয়ালিটি মেইনটেইন করতে পারবে যেসব ওটিটি তারাই টিকে থাকবে।
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে সরকার নীতিমালা করতে যাচ্ছে। এই নীতিমালা স্বাধীন নির্মাতাদের জন্য ভয়ের কিনা? জানতে চাইলে আশফাক নিপুণ বলেন, ‘যেকোনো ধরনের নীতিমালাই নির্মাতাদের স্বাধীন সত্তার ওপর বাধা তৈরি করে। আমি মেকারদের বলি বা সরকারকে বলি আমাদের আসলে দর্শকদের রুচিবোধের ওপর নির্ভর করতে হবে। যেই কনটেন্টটা ভালো হবে না। সেই কনটেন্টটা দর্শকই রিজেক্ট করে দেবে। এর ধর্মটাই হচ্ছে এটা। তো আমাদের দর্শকদের রুচির ওপর নির্ভর করবে। এসব নীতিমালা বা আইন তৈরি করা নির্মাতাদের রুচিতে বিশ্বাস না করা বা দর্শকদের রুচিতে বিশ্বাস না করার কারণে হয়। আমরা যত বেশি কন্ট্রোল করতে যাব তত বেশি বিষয়গুলো খারাপের দিকে যায়। তাই কন্ট্রোল করতে যাওয়া ঠিক না। সবশেষে বলব, আরোপিত কিছু না করে দর্শক ও নির্মাতাদের রুচির ওপর ভরসা রাখা।’
শেয়ার করুন
সুদীপ্ত সাইদ খান | ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

গত বছর ২৫ জুন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচইয়ে মুক্তি পায় আশফাক নিপুণ পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘মহানগর’। মুক্তির পর থেকেই বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে আলোচিত ও প্রশংসিত হয় ওয়েব সিরিজটি। মহানগরের পর ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য আরও কাজের পরিকল্পনা করছেন আশফাক নিপুণ। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য বেশকিছু কাজের ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে। এখনো কোনোকিছু চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত হলে জানাতে পারব। আর এই মুহূর্তে লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত আছি। সামনে কী কী কাজ করা যায়। সেগুলো কীভাবে কী করা যায়। সেগুলো নিয়েই পরিকল্পনা করছি।
একটি সিনেমার প্রি-প্রোডাকশনের কাজ করছিলেন এই পরিচালক। সিনেমাটির কাজ কোন পর্যায়ে রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘করোনার আগে সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে অনেক পরিকল্পনায় চেঞ্জ হয়ে গেছে। লোকেশন, অ্যারেঞ্জমেন্ট সবকিছু মিলিয়ে শ্যুট করাটা টাফ হয়ে যাবে। সিনেমাটা হবে অবশ্যই। পরিকল্পনা আছে এ বছরই কাজটা শুরু করার। প্রিপারেশনের ব্যাপার আছে। আবার মাঝখানে ওয়েব সিরিজের কাজ করতে হলো। তো আশা করছি সিনেমার কাজটা শিগগিরই শুরু করতে পারব।’
কলকাতায় আপনার ‘মহানগর’ প্রশংসিত হয়েছে। প্রসেনজিত চট্টোপাধ্যায়ও প্রশংসা করেছেন। সামনের কোনো কাজে কলকাতার কাউকে নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা আছে কি না? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি সবার আগে গল্পটা ঠিক করি। এখন কোনো গল্প সিলেক্ট করার পর যদি গল্পের ডিমান্ডে কলকাতার কাউকে প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই কাজ করব। আর গল্প ঠিক করার আগে কখনোই পরিকল্পনা করি না যে কলকাতার আর্টিস্ট নেব না এখানকার নেব। আর্টিস্ট যেখানকারই হোক- আগে হচ্ছে গল্পটা। কোন গল্পটা বলব, কেন বলতে চাই বা এই সময়ে গল্পটা কেন বলতে চাই। বা গল্পটা বলা টাইম নষ্ট হবে কি না শুরুতে এসবই আমার মাথায় থাকে। কাস্টিংটা থাকে একেবারে শেষের দিকে। তার আগে টেকনিক্যাল ক্রুদের ঠিক করে তারপর আমি কাস্টিংয়ে যাই। তো সব ঠিক করার পর যদি গল্পে ডিমান্ড করে তাহলে তো অবশ্যই কলকাতার কাউকে নেব- শুধু বাংলা ভাষার নয়, ভিন্ন ভাষার কাউকে নিয়ে কাজ করব কি না সেটাও পরে ঠিক করি। গল্পে ডিমান্ডের ওপর নির্ভর করেই আমি আর্টিস্ট ঠিক করি।’
বিদেশি ওটিটিগুলো দেশের মার্কেট দখল করলেও দেশীয় ওটিটিগুলো মার্কেট ধরতে পারছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশফাক নিপুণ বলেন, ‘ওটিটির বিষয়টাই বাংলাদেশের জন্য নতুন। আমরা হয় টেলিভিশন বা বড় পর্দার জন্য কাজ করে অভ্যস্ত। ওটিটির বিষয়টা টোটালই ডিফরেন্ট, এর মার্কেটিং ডিফরেন্ট, এর গ্রামারই ডিফরেন্ট, এটার স্ট্র্যাটেজি ডিফরেন্ট, এটার বানানোর যে প্রক্রিয়া সেটাও ডিফরেন্ট। তো গ্লোবাল ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো যেভাবে এগিয়ে গেছে ওই জায়গায় যেতে আমাদের ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর তো একটু সময় লাগবেই। আমাদের নির্মাতাদের যেমন সময় লাগবে ওই মানের কনটেন্ট বানাতে তেমনি আমাদের ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোরও সময় লাগবে রেগুলার কনটেন্ট নিয়ে হাজির হতে। আমাদের এখানে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কথা বলছি, এক দুই বছর ধরে। কিন্তু হইচই বা অ্যামাজন প্রাইমের মতো ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো মিনিমাম চার পাঁচ বছর কাজ করে আজকের এই জায়গায় আসতে পেরেছে। আমাদের ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোকেও মিনিমাম ওই সময়টা দিতে হবে। আমাদের ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোকে আরেকটা জায়গা ঠিক করতে হবে- তা হলো বাজেট মেইনটেইন করা। আমার জানামতে চরকি হয়তো কিছুটা চেষ্টা করছে যদিও তাদের সঙ্গে আমি কাজ করিনি। বাজেট একটা বড় ফ্যাক্টর। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের টেন্ডেনসিটাই এরকম যে আপনি লগ্নিটা সঙ্গে সঙ্গে ফেরত আনতে পারবেন না- এর জন্য সময় দিতে হবে। রাতারাতি ইনভেস্ট করে রিটার্ন আনা সম্ভব নয়। আমাদের এখানে যেটা হয় যে, অল্প বাজেটে একটা নাটক বানিয়ে বিজ্ঞাপন এনে টিভিতে চালিয়ে বাজেটের রিটার্নটা ফেরত আনা যায় কিন্তু এই ফরম্যাট ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কাজ করবে না। আপনার বাজেটটা বাড়াতে হবে। যাতে বিদেশি কনটেন্টের পাশাপাশি আমাদেরটাও দেখতে পারে। আমি হলিউডের কনটেন্টের কথা বাদই দিলাম, আমাদের পার্শ্ববর্তী তামিল, মালয়ালাম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গেও পাল্লা দিতে হলে আমাদের যে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো আছে তাদের বাজেটটা বাড়াতে হবে। এটা একদম প্রাথমিক শর্ত। আর রিটার্ন অবশ্যই আসবে। কিন্তু সময় লাগবে। কারণ এটার ব্যাকরণটাই আলাদা। এখানে কোয়ালিটি মেইনটেইন করতে পারবে যেসব ওটিটি তারাই টিকে থাকবে।
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে সরকার নীতিমালা করতে যাচ্ছে। এই নীতিমালা স্বাধীন নির্মাতাদের জন্য ভয়ের কিনা? জানতে চাইলে আশফাক নিপুণ বলেন, ‘যেকোনো ধরনের নীতিমালাই নির্মাতাদের স্বাধীন সত্তার ওপর বাধা তৈরি করে। আমি মেকারদের বলি বা সরকারকে বলি আমাদের আসলে দর্শকদের রুচিবোধের ওপর নির্ভর করতে হবে। যেই কনটেন্টটা ভালো হবে না। সেই কনটেন্টটা দর্শকই রিজেক্ট করে দেবে। এর ধর্মটাই হচ্ছে এটা। তো আমাদের দর্শকদের রুচির ওপর নির্ভর করবে। এসব নীতিমালা বা আইন তৈরি করা নির্মাতাদের রুচিতে বিশ্বাস না করা বা দর্শকদের রুচিতে বিশ্বাস না করার কারণে হয়। আমরা যত বেশি কন্ট্রোল করতে যাব তত বেশি বিষয়গুলো খারাপের দিকে যায়। তাই কন্ট্রোল করতে যাওয়া ঠিক না। সবশেষে বলব, আরোপিত কিছু না করে দর্শক ও নির্মাতাদের রুচির ওপর ভরসা রাখা।’