
চিত্রনায়ক মামনুন হাসান ইমন। প্রেক্ষাগৃহে চলছে তার অভিনীত সিনেমা ‘বীরত্ব’। ছবিতে ডা. রাজুর চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন তিনি। এই তারকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাসিদ রণ
ব্যস্ততা...
সম্প্রতি কয়েকটি ব্র্যান্ডের ওভিসির কাজ শেষ করেছি। এ ছাড়া মডেলিংও করছি। আপাতত ছবির কাজ করছি না। নতুন ছবি নিয়ে কথাবার্তা চলছে। সব ঠিক থাকলে শিগগির সুখবর দিতে পারব ভক্তদের।
‘বীরত্ব’র অভিজ্ঞতা...
আমরা যখন একটি ছবি করি তখনই কিছুটা বুঝতে পারি, ছবিটি কতদূর যাবে। এই ছবির গল্প নিয়ে যখন পরিচালক সাইফুল ইসলাম রানা আমার কাছে আসেন, তখনই আমি ছবিটি নিয়ে মুগ্ধ হই। কারণ এখন আমি এমন সব ছবি করতে চাই যাতে আমার চরিত্রটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ থাকবে, তেমনি যেন অভিনেতা হিসেবে আমাকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে। এই ছবির ডা. রাজু চরিত্রটি আমার কাছে চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছে। তাই প্রস্তাবটি লুফে নিই। শ্যুটিংয়ের সময় আমরা দৌলতদিয়া নিষিদ্ধপল্লীসহ বেশ কিছু রিয়েল লোকেশনে শ্যুটিং করি। বেশ কষ্টসাধ্য শ্যুটিং ছিল। কিন্তু অভিনেতা আর চরিত্র যখন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়, তখন আসলে কোনো কষ্টই আর কষ্ট মনে হয় না। জার্নিটা খুব উপভোগ্য হয়। এই ছবির ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।
প্রশংসা...
এখন দর্শক আমার ছবিটি পছন্দ করছে, স্পেশালি আমার অভিনয়ের প্রশংসা করছে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু নেই। শুধু দর্শক নয়, আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির অনেক পরিচালক, শিল্পী-কলাকুশলী, এমনকি পোস্ট প্রোডাকশনের সময় ভারতের কলাকুশলীরাও আমার কাজের প্রশংসা করেন। এমন প্রশংসার পর মনে হয় আমি ঠিক পথেই আছি। অনেক অনুপ্রাণিত হয়েছি। আত্মবিশ^াস ফিরে পেয়েছি যে, আমি এর চেয়ে আরও চ্যালেঞ্জিং চরিত্রও ফুটিয়ে তুলতে পারব।
সাড়া ফেলার কারণ...
এই ছবিতে এমন কিছু চরিত্র আছে যা আসলে গণমানুষের কথা বলে। চরিত্রগুলোর সঙ্গে দর্শক নিজেদের দুঃখ-কষ্ট ও স্বপ্নের কথাগুলোর মিল পেয়েছেন। যেমন ডা. রাজুর আত্মত্যাগ, মানবসেবা, কিংবা নিষিদ্ধপল্লীর মেয়ে নিপুণের সংগ্রাম। এ ছাড়া ছবিতে কিছু সামাজিক বার্তা দেওয়া হয়েছে। যেমন : নিষিদ্ধপল্লীর মেয়ে বলে কি তার মানুষের মতো সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার নেই? তার পরবর্তী প্রজন্মের কি অধিকার নেই সমাজে ভালো অবস্থানে যাওয়ার?
ওটিটি...
বড়পর্দার নায়ক বলে ছোটপর্দায় কাজ করব না, এ কথা কখনো ভাবিনি। যখন যেখানে ভালো গল্প ও চরিত্র পাই, সেখানেই কাজ করি। আর ওটিটিকে আমি ছোটপর্দা বলতে রাজি নই। ওটিটি হলো এখনকার ট্রেন্ড, যা আমাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যাচ্ছে। দুই বাংলার শিল্পী-কলাকুশলীদের একত্র করছে। তাই আমিও চাই ওটিটিতে কাজ করতে। তবে প্রস্তাব পেলেই রাজি হব না। দেখতে হবে গল্প কতটা ইউনিক, আমার চরিত্রে নতুনত্ব আছে কি না, কিংবা পরিচালক কে? সব মিলে যেকোনো সময় কাজ করতে প্রস্তুত।
অবশেষে প্রকাশ্যে এলেন শাকিব খান ও বুবলী। তাদের দেখা গেল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে। দীর্ঘদিন পর আবার ক্যামেরার সামনে এলেন এই জুটি। অংশ নিলেন শ্যুটিংয়ে। তপু খান পরিচালিত ‘লিডার : আমিই বাংলাদেশ’ শাকিব খান শবনম বুবলী জুটির ১২তম ছবি। ছবির শ্যুটিং শেষ হলেও বাকি ছিল একটি গানের শ্যুটিং। গতকাল সেই গানটির শ্যুটিং হয়। আর এতে অংশ নিয়েছেন সম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ও সমালোচিত এই জুটি। এরমধ্য দিয়ে ১১ মাস পর শ্যুটিংয়ে ফিরলেন শাকিব।
শনিবার পাঁচ তারকা হোটেলে কঠোর নিরাপত্তায় গানের দৃশ্য ধারণ করা হয়। হোটেলের প্রবেশপথ বন্ধ করেই শ্যুটিং হয়েছে।
‘লিডার : আমিই বাংলাদেশ’ অ্যাকশন, রোমান্টিক ও সামাজিক সচেতনতার সিনেমা। সংলাপ লিখেছেন দেলোয়ার হোসেন এবং যৌথভাবে চিত্রনাট্য করেন দেলোয়ার হোসেন ও পরিচালক তপু খান। সিনেমাটি প্রযোজনা করছে বেঙ্গল মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের পরিচালক সৈয়দ আশিক রহমান।
উল্লেখ্য কয়েক দিন ধরে শাকিব খান ও শবনম বুবলীকে নিয়ে গুঞ্জন চলছিল। এই তারকা জুটির পুত্র সন্তানের বয়স আড়াই বছর। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তারা বিষয়টি নিশ্চিত করে পোস্ট করেন ভক্তদের উদ্দেশে।
এরপর থেকেই তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। বুবলীর বাড়ির সামনে সাংবাদিকেরা ভীড় করলেও দেখা মেলেনি তার। আর তাই শ্যুটিংয়ে একসঙ্গে তাদের দেখে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। জানা গেছে, বুবলী মা হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ড জুইশ মেডিকেল হাসপাতালে। ২০২০ সালের ২১ মার্চ তিনি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। সন্তানের নাম রাখা হয় শেহজাদ খান বীর।
চলচ্চিত্র অঙ্গন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় গত কয়েক দিন দারুণ আলোচনার মধ্যে থাকা বুবলীর নিজের প্রকাশ করা একটি ছবিতে দেখা গেছে শ্যুটিংয়ের প্রস্তুতি নিতে। গত বৃহস্পতিবার লাল ড্রেস পরে সেলফি আপলোড দিয়ে ক্যাপশনে লিখেছেন, “লিডার : আমিই বাংলাদেশ সিনেমার শ্যুটিংয়ের প্রস্তুতির সময়।”
২০২১ সালের ২৫ মে শুরু হয়েছিল লিডার : আমিই বাংলাদেশ সিনেমার শ্যুটিং। ওই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ক্যামেরা ক্লোজ হয়েছিল। শুধু একটি গান বাদে সাড়ে তিন মাসেই সিনেমাটির শ্যুটিং শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে জানান সিনেমা সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর বুবলী নিজের ফেইসবুক পেজে দুটি ছবি প্রকাশ করেছেন। যেখানে নায়িকার বেবিবাম্প দেখা গেছে। ছবির ক্যাপশনে বুবলী লিখেছেন, ‘মি উইথ মাই লাইফ।’ এরপর অনেকগুলো ভালোবাসার ইমোজি। তার ওপরে হ্যাশট্যাগে লেখা ‘থ্রোব্যাক আমেরিকা’।
শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের পুত্র আব্রাম খান জয়ের জন্মদিনে তিনি এ ছবি পোস্ট করেন। ওই দিন অপু ও শাকিব সামাজিক মাধ্যমে জয়কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। জয়কে শাকিবের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টের পরই মূলত বেবিবাম্পের ছবি প্রকাশ করেছেন বুবলী।
এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর হয়েছিল বুবলীর সঙ্গে শাকিব খান প্রেম করছেন। দুজন বিয়ে করছেন বলেও মিডিয়ায় গুঞ্জন আছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢালিউড উত্তাল ছিল বুবলীর মা হওয়ার খবরে। ছড়িয়েছিল, ‘বীর’ সিনেমার শ্যুটিংয়ের সময় অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন তিনি। এ ছবির কিছু গান ও দৃশ্যে বুবলীর রহস্যময় উপস্থিতি সেই খবরের পক্ষেই হাওয়া দিয়েছিল। এরপর বেশ কিছুদিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেকটা আড়ালেই ছিলেন বুবলী। কেন আড়ালে ছিলেন? এ প্রশ্নে গণমাধ্যমকে এড়িয়ে গিয়েছিলেন এ অভিনেত্রী। যদিও সে সময় শোনা যাচ্ছিল মা হতেই যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন বুবলী।
এর আগে শাকিবের সাবেক স্ত্রী অপু বিশ্বাস সন্তানের খবর প্রকাশ্যে নিয়ে আসায় ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর শাকিব অপুর সঙ্গে বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেন। ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এই দম্পতির বিচ্ছেদ হয়। শাকিব-অপুর ১০ বছরের সংসারে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয়।
শাকিব ও বুবলীর বিয়ে ও ছেলের ছবি প্রকাশের ঘটনা শ্যুটিংয়ের ওপরে কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘এটা শিল্পীদের ব্যক্তিগত বিষয়। এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না।’
ওটিটি প্ল্যাটফর্মে অভিষেক হতে যাচ্ছে ঢাকাই সিনেমার শীর্ষ খলনায়ক মিশা সওদাগরের। তানিম পারভেজ পরিচালিত চরকি লিমিটেড সিরিজ ‘যদি আমি বেঁচে ফিরি’তে দেখা যাবে এই অভিনেতাকে।
এক দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকৌশলী তার স্ত্রী ও বান্ধবীর সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাই তিনি বান্ধবীকে উপহার দেন একটি ফ্ল্যাট। এক দিন হঠাৎ বান্ধবীর অ্যাপার্টমেন্টের লিফটে আটকা পড়েন সেই প্রকৌশলী। এমনই গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে মিশার প্রথম ওটিটির কাজ।
কাজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে মিশা সওদাগর বলেন, ‘নতুন জায়গায় গেলে বা নতুন কারও সঙ্গে পরিচয় হলে সেটার অভিজ্ঞতা ভিন্ন রকম থাকে। ওটিটির ক্ষেত্রেও আমার তেমনটা মনে হয়েছে। আর চরকি তো এরই মধ্যে তার কর্মফল দিয়ে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। যতটুকুন পেরেছি আমার সিরিয়াসনেসকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘গল্পটা দারুণ একটা হিউম্যান সাইকোলজির ওপর। আর চরিত্রটা ছিল খুব বাস্তবসম্মত; দেখে মনে হবে খুব কাছের বা আপনার আশপাশের একটা চরিত্র। আরোপিত কোনো চরিত্র না। আর এই গল্পটার মধ্যে অনেক বার্তা আছে যেটা দর্শক দেখলে বুঝতে পারবে।’ ২৯ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়েছে ‘যদি আমি বেঁচে ফিরি’ কনটেন্টটি।
গুপ্তচর পরিণীতি চোপড়া
বলিউডে পরিণীতি চোপড়ার এক দশক হলো; তবে এবার এমন একটি চরিত্র রূপায়ণে তিনি আসছেন, যা নিয়ে নিজেই উচ্ছ্বসিত।
প্রভু দাশগুপ্তের নতুন সিনেমা ‘কোড নেম : তিরাঙ্গা’য় পরিণীতিকে ভারতের গোয়েন্দা ‘র’-এর এজেন্টের ভূমিকায় দেখা যাবে বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। প্রকাশ পাওয়া সিনেমাটির ৩ মিনিটের ট্রেইলারটি দেখেই বোঝা যায়, মূল কেন্দ্রবিন্দু দেশপ্রেম হলেও অ্যাকশন আর আবেগের মিশেলে সিনেমাটি বানিয়েছেন প্রভু। আগামী ১৪ অক্টোবর মুক্তি পেতে যাওয়া এই স্পাই থ্রিলারে গুপ্তচর হয়ে গোপন অভিযানে গিয়ে সন্ত্রাসীদের কয়েদ করবেন পরিণীতি।
ট্রেইলারটি শুরু হয় কেলকারের ভিলেনের পরিচয়ের মধ্য দিয়ে, পরিণীতি যাকে ধরতেই গোপন অভিযানে নামেন। সেখানে তিনি সান্ধুর প্রেমে পড়েন, যা তাকে কর্তব্যবোধ এবং প্রেমের দ্বন্দ্বে ফেলে দেয়। পরিণীতি বলেন, ‘একজন অভিনেতা হিসেবে ক্যারিয়ারে সব সময় নতুন কিছু ঘটার জন্য আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। চলচ্চিত্রে আমার একাদশ বছরে প্রথম পূর্ণাঙ্গ একটি অ্যাকশননির্ভর সিনেমা করতে পেরে ভীষণ উচ্ছ্বসিত আমি।; এ সিনেমায় পরিণীতির সঙ্গে আছেন হার্ডি সান্ধু, গত বছরই ‘৮৩’ সিনেমার মধ্য দিয়ে হিন্দি সিনেমায় তার অভিষেক। পরিণীতি এর আগে প্রভু দাশগুপ্তের ‘দ্য গার্ল অন দ্য ট্রেন’র হিন্দি রূপান্তরে ছিলেন। ২০১৯ সালে নেটফ্লিক্সে প্রভুর স্পাই থ্রিলার ‘বার্ড অব ব্লাড’র সঙ্গে ‘কোড নেম : তিরাঙ্গা’র ট্রেইলারে অনেক মিল পাওয়ার কথা বলছেন দর্শকরা।
১৭ শহরে অমিতাভ উৎসব
১১ অক্টোবর অমিতাভ বচ্চনের জন্মদিন। ৮০ বছরে পা দেবেন ভারতের কিংবদন্তি এই অভিনেতা। তার ৮০তম জন্মদিনটি স্মরণীয় করে রাখতে আয়োজন করা হচ্ছে চলচ্চিত্র উৎসব ও প্রদর্শনীর। নাম দেওয়া হয়েছে ‘বচ্চন ব্যাক টু বিগিনিং’। মুম্বাইয়ের ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশন এবং একটি মাল্টিপ্লেক্স চেন উদ্যোগ নিয়েছে এই চলচ্চিত্র উৎসবের। ৮ থেকে ১১ অক্টোবর ভারতের ১৭টি শহরে অমিতাভ অভিনীত বাছাই করা ১১টি সিনেমা দেখানো হবে। সিনেমাগুলো হলো ‘ডন’, ‘কালা পাথর’, ‘কালিয়া’, ‘কাভি কাভি’, ‘শাহেনশাহ’, ‘অমর আকবর অ্যান্থনি’, ‘নমক হালাল’, ‘অভিমান’, ‘দিওয়ার’, ‘মিলি’, ‘সত্তে পে সত্তা’ এবং ‘চুপকে চুপকে’। কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরুর পাশাপাশি কানপুর, ইন্দোর, প্রয়াগরাজ, বরোদার মতো শহরের বচ্চনপ্রেমীরা সিনেমাগুলো দেখার সুযোগ পাবেন।
‘বচ্চন ব্যাক টু বিগিনিং’ নিয়ে অমিতাভ নিজেও বেশ উৎসাহী। তিনি বলেন, ‘দেশজুড়ে আমার অভিনীত এতগুলো পুরনো সিনেমা দেখা যাবে, এটা আমি কল্পনা করিনি। বড় পর্দায় দেখার অভিজ্ঞতা সব সময়ই অন্য রকম। এগুলো শুধু আমার সিনেমা নয়, সেই সময়ের পরিচালক ও কলাকুশলীদেরও সিনেমা। বড় পর্দায় সিনেমাগুলোর প্রদর্শন মানে এমন একটা সময়কে ফিরিয়ে আনা, যে সময়টা হয়তো হারিয়ে গিয়েছে, কিন্তু আমরা সেটা ভুলিনি। আমাদের সিনেমার ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে বড় পর্দায় এ রকম আরও চলচ্চিত্র উৎসবের দরকার আছে।’ জুহুর বিশেষ প্রদর্শনীতে থাকছে পুরনো সিনেমাগুলোর অরিজিনাল পোস্টার, ‘শাহেনশাহ’ সিনেমাতে ব্যবহৃত অমিতাভের পোশাক, সিনেমাতে অদেখা বেশ কয়েকটি শ্যুটিং স্টিল ইত্যাদি।
সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে প্রকাশিত হয়েছে শানিয়া টোয়েনের ডকুমেন্টারি ‘নট জাস্ট আ গার্ল।’ এর একটি দৃশ্যে কানাডার এই মেগাস্টারকে লন্ডনে তার ষষ্ঠ অ্যালবামটি নিয়ে কাজ করতে দেখা গেছে। চুলে খোঁপা বাঁধা শানিয়া একটি কালো গাড়ি চেপে হাজির হন, আর তারপরই সোফায় বসে একটি গান রেকর্ড করতে শুরু করেন। গানের নাম ‘হোয়াট ইউ গনা ডু উইথ দ্যাট এয়ার?’ যার বাংলায় অর্থ করলে দাঁড়ায় বাতাসটুকু দিয়ে কী করবে তুমি? ঝকঝকে এই পপ গানের কোরাস গাইতে গিয়ে আকাশে মুষ্টি ছুড়তে থাকেন তিনি; কিন্তু জানা যায়, গানের অনুপ্রেরণার জায়গাটি ছিল অন্ধকারে ঘেরা। ‘গানটা নিঃশ্বাস নেওয়ার বাতাস ফুরিয়ে যাওয়ার ভয় নিয়ে লেখা’, বলেই জানালেন শানিয়া। বললেন, ‘খুব বাজেভাবে করোনায় ভুগেছি আমি, আর সেই সঙ্গে করোনা, নিউমোনিয়া, খুব অনিশ্চিত সময় ছিল সেটা। আমার মনে হচ্ছিল, আমাকে শুধু শ্বাস নিয়ে যেতে হবে।’ এই অবস্থাটা আরও বেশি ভীতিকর হওয়ার কারণ, শানিয়া এর আগেও গলা নিয়ে ভুগেছেন। ২০০৩ সালে তিনি যখন খ্যাতির শীর্ষে, তখনই লাইম রোগে আক্রান্ত হন এবং সে সময় ভোকাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রায় এক যুগ গাইতে পারেননি। অস্ত্রোপচার থেকে সুস্থ হয়ে সামান্য পরিবর্তিত গলা নিয়ে ২০১২ সালে লাস ভেগাসে দুটো ব্লকবাস্টারের প্রথমটিতে গান গাওয়ার মাধ্যমে তার পুনরুত্থান ঘটে।
করোনার পর তিনি পুরোদমে ফিরে আসেন। এই নতুন গানটি দিয়ে শানিয়া জীবনকে উদযাপন করেন, সেই সঙ্গে নিজের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন, ‘তোমাকে যে অতিরিক্ত সময়টুকু দেওয়া হলো, তা দিয়ে তুমি কী করবে?’
বুধবার বগুড়া-৪ আসনের উপনির্বাচনে মাত্র ৮৩৪ ভোটে হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম। এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, স্যার ডাকতে হবে এ জন্য কিছু শিক্ষিত মানুষ আমাকে হারিয়ে দিয়েছে।
হিরো আলম বলেন, এমপি হলে আমাকে স্যার বলতে হবে। এ জন্য কিছু শিক্ষিত মানুষ আমাকে আগে থেকেই মানতে পারছিলো না। আমাকে স্যার বলতে কষ্ট হবে এমন লোকেরাই ফলাফল পাল্টে আমাকে পরাজিত করেছেন। তারা আমাকে ইভিএম কারসাজিতে হারিয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া আমি এমপি হলে নাকি বাংলাদেশের সম্মানহানী হবে। এমন ভাবনা থেকেও আমাকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে। মশাল মার্কার অস্তিত্ব ছিল না। আমি কাহালু-নন্দীগ্রাম আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছি। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের জোগসাজশে গণনায় আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি এ ফলাফল মানি না।
হিরো আলম বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় বগুড়া সদরের এরুলিয়া নিজ বাড়িতে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব বলেন।
তিনি আরো বলেন, সারাদিন মাঠে ভোটারের উপস্থিতি তেমন ছিল না। হঠাৎ এত ভোট কোথা থেকে এল বুঝতে পারছি না। মশাল মার্কার অস্তিত্ব ছিল না। তাদের নির্বাচনী প্রচার ছিল না। মানুষের তাদের আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে। তারপর কীভাবে আমার চেয়ে বেশি ভোট পেল বিষয়টি পরিস্কার নয়।বগুড়া সদর আসন সম্পর্কে তিনি বলেন, সেখানে অনেক কেন্দ্রে তার এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তার কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। ফলে সকালেই ওই আসনের ভরসা ছেড়ে দিই।
ফলাফল নিয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখন কোনো কথা বলব না। পরে জানান হবে।
তিনি ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা আমাকে নির্বাচনে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি ভোটে হারলেও সারাজীবন মানুষের পাশে ছিলাম, শেষ পর্যন্ত থাকব।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধে এমনটা যে ঘটবে তার আলামত কিন্তু যুদ্ধের সময়েই টের পাওয়া গিয়েছিল। এই যুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ ঘটেছে। নেতৃত্ব ছিল নির্বাচনে-জেতা জাতীয়তাবাদীদের হাতে। ভারত সরকার তাদের সাহায্য করেছে। জাতীয়তাবাদীরা ক্ষমতার হস্তান্তর চেয়েছে, রূপান্তর চায়নি। তারা লড়ছিল হস্তান্তরের লক্ষ্যেই। জনগণ কিন্তু তত দিনে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে, তারা শুধু যে ক্ষমতার হস্তান্তর চেয়েছে তা নয়, চেয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার বিচূর্ণকরণ। বস্তুত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের অভ্যুত্থান এবং একাত্তরের যুদ্ধ এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে যে চেতনাটি অগ্রসর হচ্ছিল সেটা ছিল সমাজবিপ্লবী। এই চেতনা ঠিকই বুঝেছে যে পুরাতন রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রেখে মুক্তি আসবে না। রাষ্ট্রকে ভাঙতে হবে, যাতে করে রাষ্ট্র জনগণের শত্রু না হয়ে মিত্র হয়; শুধু মিত্রও নয়, জনগণের সেবক হয়। ঊনসত্তরের অভ্যুত্থানের মূল আকাক্সক্ষাটা ছিল ওই রকম রাষ্ট্রের। কথা ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ওই আকাক্সক্ষাটাকে বাস্তবায়িত করবে।
কিন্তু যুদ্ধ সেদিকে এগোয়নি। নেতৃত্বে রয়ে গেছে জাতীয়তাবাদীই। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের জায়গায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ স্থাপিত হয়েছে। এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। দুই জাতীয়তাবাদের ভেতর পার্থক্যটাও সুস্পষ্ট, কিন্তু দুয়ের ভেতর মিল এইখানে যে, উভয়েই পুঁজিবাদী। এই মিলটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। জাতীয়তাবাদী নেতারা ব্যক্তিমালিকানার বিরোধী ছিলেন না, যেমন ছিলেন না তারা সামাজিক মালিকানার পক্ষে। বস্তুত পুরাতন ধ্যানধারণাই নতুন রাষ্ট্রে কার্যকর হয়েছে। সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যাভিমুখী যাত্রার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু সেদিকে যাবে কী, রাষ্ট্র অচিরেই তার পুরাতন পথে ফিরে গেছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যক্তিমালিকানায় চলে গেছে। রাষ্ট্রীয়করণ ছিল ব্যক্তিমালিকানা স্থাপনের মধ্যবর্তী ধাপ। আদমজী জুট মিলস পাকিস্তান আমলে ছিল, এখন নেই। এটা কেবল ঘটনা নয়, একটা প্রতীকও বটে।
যুদ্ধের শুরুতেই কিন্তু বোঝা গিয়েছিল যে বিপ্লবী উপাদান থাকা সত্ত্বেও এ যুদ্ধ বিপ্লবী হবে না। ধরা যাক স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ঘটনা। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে প্রান্তিকভাবে যুক্ত তিনজন দুঃসাহসী তরুণ স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ নিয়ে ওই গোপন বেতার কেন্দ্রটি স্থাপন করেন, কালুরঘাট ট্রান্সমিটার কেন্দ্রটিকে ব্যবহার করে। নাম দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র। ২৬ মার্চ ওই নামেই বেতার কেন্দ্রটি চালু হয়। কিন্তু তার বিপ্লবী নামটি ধরে রাখা যায়নি। বিপ্লবী নাম ধরে রাখবে কী, ৩০ তারিখ দুপুরে কেন্দ্রটিই সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংসের কাজটি করে পাকিস্তানি হানাদাররা। তারা বিমান আক্রমণ চালায়। ওটিই ছিল বাংলাদেশে তাদের যুদ্ধবিমানের প্রথম আক্রমণ। বেতার কেন্দ্রটি ধ্বংস না করে তাদের স্বস্তি ছিল না, কারণ সেখান থেকে প্রতিরোধ যুদ্ধের সংবাদ সম্প্রচারিত হয়েছিল। তারা লড়ছে, বিশ্ববাসী জেনেছিল, সবচেয়ে বেশি করে জেনেছিল বাঙালিরা, দেশে যেমন, বিদেশেও তেমনি। তারা উদ্দীপ্ত হয়েছে, ভরসা পেয়েছে, সাহস পেয়েছে রুখে দাঁড়ানোর। হানাদাররা অস্থির হয়েছে। খুঁজে খুঁজে বের করেছে বেতার কেন্দ্রের ঠিকানা, বোমাবর্ষণ করেছে মহোৎসাহে।
এরপরও কেন্দ্রটি চালু ছিল। প্রথমে গেছে সে আগরতলায়, সেখান থেকে কলকাতায়। কিন্তু ‘বিপ্লবী’ আর থাকেনি। ওই পরিচয় বিলুপ্ত করা হয়েছিল কিন্তু মেজর জিয়ার নির্দেশেই। পরে আওয়ামী লীগের প্রবাসী সরকার যে বিপ্লবীকে ফেরত এনেছে তা মোটেই নয়, বেতার কেন্দ্রটি বিপ্লবহীন ‘স্বাধীন’ অবস্থায় রয়ে গেছে। যুদ্ধটা তো ছিল পুরোপুরি জনযুদ্ধ, কিন্তু ওই শব্দটি একবার মাত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তারপর নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ‘জনযুদ্ধ’ মাওবাদের গন্ধ আছে বলে। বেতার অনুষ্ঠানের শেষে একটি সিগনেচার টিউন বাজানো হতো, সে গানটির শুরু ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ দিয়ে, শেষে ছিল ভুখা বেকার মানুষদের কথা, আপত্তিকর বিবেচনায় গানটি বাদ দেওয়া হয়। বেকারদের দায়িত্ব স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র কেন নিতে যাবে? স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ওপর চাপ ছিল আওয়ামী লীগের খবরকে বেশি বেশি প্রচার করার, পারলে মুক্তিযুদ্ধকে একদলীয় ঘটনা হিসেবে চিত্রিত করার। কলকাতায় কেন্দ্রটি সম্পূর্ণরূপে প্রবাসী সরকারের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। শেষের দিকে ভারত সরকারের একজন প্রতিনিধিও অনুষ্ঠানসূচির ওপর চোখ রাখতেন। স্বাধীনতার পরপর ইনি ঢাকাতেও এসেছিলেন, বাংলাদেশ বেতারের দেখভাল করার জন্য। ডিসেম্বরের ৬ তারিখে ভারত সরকার যখন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় সেই ক্ষণ থেকেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র তার নাম বদলে ফেলে বাংলাদেশ বেতার হয় অর্থাৎ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়ে যায়। বিপ্লবীত্ব আগেই গিয়েছিল এবার গেল স্বাধীনতাটুকুও। যেন বাংলাদেশেরই প্রতীক। পাকিস্তানি বেতারের মতোই স্বাধীন বাংলা বেতারের অনুষ্ঠানও কিন্তু কোরআন পাঠ ও ব্যাখ্যা দিয়েই শুরু হতো। সপ্তাহে ছয় দিন ইসলামের দৃষ্টিতে বলে একটি অনুষ্ঠান থাকত।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা; ওই ঘটনার ভেতরে আমাদের মুক্তিসংগ্রামের মোড়বদলের কালে সংগ্রামের শক্তি ও সীমা দুটোই প্রতিফলিত হয়েছে। কেন্দ্রের গঠনে উদ্যোগী তিন তরুণের সঙ্গে বেগম মুশতারী শফীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। যুদ্ধের শুরুতেই তিনি তার স্বামী এবং সহোদর একমাত্র ভাইটিকে হারান; তার বড় বোনের স্বামীও শহীদ হয়েছেন। অবিশ্বাস্য কষ্টের ভেতর দিয়ে সাত সন্তানের ছয়জনকে সঙ্গে নিয়ে ভাসতে ভাসতে সম্পূর্ণরূপে সর্বহারা দশায় আগরতলায় উপস্থিত হয়ে কোনো মতে প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরে তার অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তিনি ‘স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন’ (১৯৮৯) নামে একটি বই লিখেছেন, তার অভিজ্ঞতার ভেতর ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন হবে তার লক্ষণ বিলক্ষণ ফুটে উঠেছিল। আগরতলায় গিয়ে যেসব ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন তাতে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ সম্পর্কে ভরসা রীতিমতো বিচলিত রয়েছে। আগরতলা পৌঁছে তিনি জানতে পেরেছেন যে চট্টগ্রামের এমএনএ এমপিএরা একটি ভবনে রয়েছেন। শুনে আশান্বিত হয়ে তিনি গেছেন তাদের খোঁজে। ভবনে গিয়ে পৌঁছান সকাল সাড়ে দশটায়। নেতাদের সন্ধান পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু দরজার সামনে কাজের ছেলেটি বলেছে দেখা করা যাবে না। কেন? কারণ ওনারা একটু বেসামাল আছেন। দরজাটা ভেজানো ছিল। মুশতারী শফী লিখেছেন, ‘আমি যেখানে বসেছি সেখান থেকে দরজার ফাঁক দিয়ে আরেকটি রুম দেখা যায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে চিৎ হয়ে উপুড় হয়ে মেঝেতেই দু-তিনজন শুয়ে আছে।’ তিনি ভেবেছিলেন ঘুমোচ্ছে। পরে জানলেন নেতারা রাতে ড্রিংক করেছেন, সেজন্য সকালে তাদের ওই করুণদশা। মুশতারী শফীর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া : ‘আমি অবাক। এখানে ড্রিংক? এরাই না জাতীয় নেতা? মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করছেন?’ (পৃ. ১৩৭-৩৮)
অবাক হওয়াটা ওখানেই শেষ হয়নি। তার জন্য আরও একটি ‘বিস্ময়-মহাবিস্ময়’ অপেক্ষা করছিল। তিনি লিখেছেন, ‘এখানে এসে একটা বিষয় লক্ষ করলাম, ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির রিক্রুট-করা মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা প্রবাসী সরকার করছে না। যেমন আওয়ামী লীগের যে কেউ যে-কাউকে রিক্রুট করলে তার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি খরচে ট্রেনিং এবং থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, বামপন্থি দলের কাউকেই সে রকমটি করা হচ্ছে না। কোথাও পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কোথাও সরাসরি নাকচ করা হচ্ছে। ফলে বামপন্থিরা ভারত সরকারের দুয়ারে দুয়ারে ধাক্কা দিয়ে এবং নিজেদের পার্টির খরচে সম্পূর্ণ আলাদা ট্রানজিট ক্যাম্প এবং যুবকদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ (পৃ. ১৫৪)
তার মনে প্রশ্ন জেগেছে জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম যেখানে চলছে, সেখানে বাম-ডান আবার কী, সবাই তো মুক্তিযোদ্ধা। তার মতো মানুষদের কাছে সব মুক্তিযোদ্ধাই যে এক, এটা ঠিক, কিন্তু নেতৃত্ব তো ছিল পুঁজিবাদী ঘরানার, তারা বামপন্থির গন্ধ পেলেই সতর্ক হতো। ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির মতো নরম বামদের তবু সহ্য করত, তাড়িয়ে দিত না। শক্ত বামপন্থিদের দেখা মাত্র ধাওয়া করত। শক্ত বামপন্থিদের কাউকে কাউকে তাই প্রাণ ভয়ে আগরতলার মুক্তভূমি থেকে আবার হানাদারকবলিত পাকিস্তানে পালিয়ে আসতে হয়েছে। কেউ কেউ নিহতও হয়েছে, আগরতলাতেই। মুশতারী শফীর আরেক মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোনো-মতো তৈরি করা ফিল্ড হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসক, স্বেচ্ছাসেবক সবাই কাজ করছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। আহত যোদ্ধারা দিন গুনছেন কখন উঠে দাঁড়াতে পারবেন, এবং পুনরায় যুদ্ধে যাবেন। স্বেচ্ছাসেবকদের ভেতর মুশতারী শফীও ছিলেন।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ভারতের কর্নাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে বান্ধবীর সাড়ে তিন বছর বয়সী মেয়েকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে উঠেছে এক ব্যক্তির (২৬) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) এ খবর জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
জানা গেছে, একটি তৈরি পোশাক কারখানার কর্মী ওই নারী বাড়িতে তার তিন বছরের মেয়েকে রেখে কাজে যেতেন। সেই সময় শিশুটিকে দেখভাল করতেন তার প্রেমিক। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বান্ধবীর অনুপস্থিতিতে ওই ব্যক্তি বাড়ি এসে শিশুটিকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ।
পুলিশ বলছে, শিশুটির মায়ের সঙ্গে অভিযুক্তের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কাজ শেষে শিশুটির মা বাড়ি ফিরলে তার মেয়েকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। এরপর তিনি এবং ওই ব্যক্তি মেয়েটিকে কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ সময় ওই নারী মেয়ের মৃত্যু নিয়ে প্রেমিককে প্রশ্ন করলে তিনি তাকে মারধর করেন। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেয়। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই ব্যক্তি শিশুটিকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা হয়েছে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
তার কলাম মানেই সেদিন বাংলার বাণী অফিস সরগরম। সকাল থেকেই ফোন আসত। বিভিন্ন আড্ডায়ও আলোচনা হতো সেই কলাম নিয়ে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়-আশয় এবং দেশের সমসাময়িক বিষয়গুলো আকর্ষণীয় এবং সহজ করে পাঠকের কাছে তুলে ধরতেন এই সাংবাদিক। এর বাইরে প্রকৃতি, পাহাড়, নদী ও দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে লিখতেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের লাল পাহাড়ের মানুষের জীবনের গল্পও তুলে আনতেন। প্রায় দেড় দশক নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি সাংবাদিকতা করেছেন। লিখেছেন অসংখ্য কলাম।
যখন সাংবাদিকতা করতেন তখন তার কাজের জায়গাটিতে তিনি ছিলেন সেরা। ছাত্ররাজনীতির জন্য যেমন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন, ছাত্রনেতা হিসেবেও পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়। সফল হয়েছেন প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রী হিসেবে। দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং ইতিহাসসমৃদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তিনি সফল। তৃতীয়বারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বাইরে তার আরও অনেক পরিচয়ের মধ্যে সাংবাদিক পরিচয়টাও অনেক বেশি উজ্জ্বল।
ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন স্পষ্টবাদী, সাহসী ও দেশপ্রেমিক। পাকিস্তান আমলে ছাত্র ও গণআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা এ নেতা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক ছিলেন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। ওই ভয়াল রাতে নিহত হন তার ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি। তিনি তখন দৈনিক বাংলার বাণীর সম্পাদক। ফলে পত্রিকাটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ১৯৮১ সালে পত্রিকাটি আবার ছাপার অনুমতি পায়। ওই সময় ওবায়দুল কাদের জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। সেই সঙ্গে লেখালেখি। দ্বিতীয়বার শেখ ফজলুল করিম সেলিমের (বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য) সম্পাদনায় বাংলার বাণী পত্রিকার ছাপা শুরু হওয়ার পর যুক্ত হন ওবায়দুল কাদের। তিনি পত্রিকাটির সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য ও পরে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আগপর্যন্ত তিনি সাংবাদিকতা করেছেন।
টানা ১৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে ওবায়দুল কাদের অসংখ্য কলাম লিখেছেন বাংলার বাণীতে। ‘ও কাদের’ নামে তিনি কলাম লিখতেন। প্রতিদিন সকালে অফিসে আসতেন। সম্পাদকীয় বিভাগ ও অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে মিটিং করতেন। সম্পাদকীয় বিভাগের বাইরে সেই সময় তিনি বাংলার বাণীর আন্তর্জাতিক পাতাটি নিজের দায়িত্বে বের করতেন। আন্তর্জাতিক বিষয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সমসাময়িক বিষয়ে তিনি খুব বেশি সচেতন ও আগ্রহী ছিলেন।
ওবায়দুল কাদেরের সেই সময়কার সহকর্মীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সহকর্মী হিসেবে তিনি চমৎকার ছিলেন। তাছাড়া সাংবাদিক হিসেবেও খুব পেশাদার ছিলেন। তিনি যদি রাজনীতি না করে সাংবাদিক থাকতেন, তার অনেক লেখা এবং অসংখ্য বই আমরা পেতাম। যদিও তিনি এখন রাজনীতিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন। কিন্তু আমরা যারা তাকে পেয়েছি, তারা তার লেখা মিস করছি। তার লেখার জন্য অপেক্ষা করতাম। যেহেতু বাংলার বাণী ছিল বিরোধী ঘরানার পত্রিকা, তাই সাধারণ মানুষেরও আগ্রহ থাকত।
ওবায়দুল কাদেরের লেখালেখি ও তার কলাম সম্পর্কে জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত কবীর চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘যখনি সংকট, যখনই এক অপয়া অন্ধকার ওঁৎ পেতে আসে, যখনই সমাজ ধূসরতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, যখনই মিথ্যা ও ইতিহাস বিকৃতির গোলকধাঁধায় নয়া প্রজন্মকে দিগভ্রান্ত করার অপচেষ্টা, যখনই রাজনীতির গৌরব কলুষতায় ঢেকে দেওয়ার অপপ্রয়াস তখনই ওবায়দুল কাদেরের এই জীবন ঘনিষ্ঠ, সত্য ও সুন্দরের আরাধনাময় সাহসী রচনা সমাজকে আলোর ইতিহাস শোনাতে পারে।’
ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকতা জীবনে সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয়, রাজনৈতিক কলাম লিখেছেন অসংখ্য। কবি নির্মলেন্দু গুণ তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাংলার বাণী পত্রিকায় সম্পাদকীয় বিভাগে আমার সহকর্মী ছিলেন, কলাম লেখক হিসেবেও জনপ্রিয় হয়েছিলেন।... আমি তার অলংকৃত কাব্যিক ভাষায় বক্তৃতার একজন ভক্তশ্রোতা।’
প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মূল্যায়ন ছিল, ‘ওবায়দুল কাদের শুধু রাজনীতিক নন, তিনি সাংবাদিক, তিনি বাগ্মী, তিনি লেখক। বক্তৃতায় বাংলা শব্দ উচ্চারণ, ছন্দের ব্যবহারে চারণকবি তিনি। নিবন্ধ লেখক হিসেবে যুক্তি ও বিশ্লেষণে তীব্র লক্ষ্যভেদী তিনি।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন বাংলার বাণীতে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯৮৯ সালে বাংলার বাণীতে যখন জয়েন করি তখন সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাদের ভাইকে পাই। আমরা বার্তাকক্ষে বসতাম আর তিনি তখন অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটরদের রুমে বসতেন। ওনাদের আলাদা রুম ছিল। তিনি রুম থেকে বের হয়ে সবসময় আমাদের খোঁজখবর নিতেন। মাঝেমধ্যে আমাদের এখানে এসে গল্প করতেন। তিনি সহকর্মী হিসেবে খুবই আন্তরিক ও সহকর্মীবান্ধব ছিলেন।’
সেই সময়ে বাংলার বাণীতে ওবায়দুল কাদেরের আরেক সহকর্মী ও পাক্ষিক ক্রীড়াজগৎ পত্রিকার সম্পাদক দুলাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি তাকে ১৯৮৫ সালে পেয়েছি। আমি তখন সহ-সম্পাদক হিসেবে জয়েন করেছি বাংলার বাণীতে। ওবায়দুল কাদের তখন সহকারী সম্পাদক ছিলেন। তিনি কলাম লিখতেন। তার কলাম পাঠকের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তার লেখার মধ্যে সাহিত্য ছিল। লেখা খুব আকর্ষণীয় ছিল। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন জায়গায় যেতেন, সেসব বিষয় নিয়েও লিখতেন। তার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা ছিল চট্টগ্রাম, পাহাড়-সমুদ্র খুব পছন্দ করতেন এবং এসব নিয়েও তিনি লেখালেখি করতেন। তিনি খুব আবেগী লোক ছিলেন এবং লেখার মধ্যে সেটা ফুটে উঠত। তার লেখা পাঠক পড়তে বাধ্য হতেন।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতির মানুষ হলেও অফিসে ঢুকলে একজন সংবাদকর্মী হিসেবেই থাকতেন ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বিষয়টা বাইরে রাখতেন। বরাবরই তিনি শৌখিন টাইপের লোক ছিলেন। ভালো কাগজ-কলম ব্যবহার করতেন লেখার সময়। লেখার সময় আলাদা একটা মেজাজে থাকতেন। তখন খুব জরুরি না হলে কোনো বিষয় অ্যালাউ করতেন না। লেখা শেষ করলে বেশ ফুরফুরে থাকতেন। তখন আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, গল্প করতেন। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তার মনোভাব আমরা দেখতে পেয়েছি।’
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাংবাদিক সুভাষ চন্দ বাদল বাংলার বাণী পত্রিকায় ওবায়দুল কাদেরের সহকর্মী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কাদের ভাইকে ছাত্ররাজনীতি থেকেই চিনতাম। ১৯৭৫ সালের পর যখন তিনি কারাগারে যান তখন আমিও কারাগারে। তাকে কারাগারে দেখেছি বই নিয়ে ডুবে থাকতে। বাংলার বাণীতে এসে তাকে নতুন করে পেয়েছি। সেই সময় আজিজ মিসির ও তার কলাম ছিল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তিনি সাংবাদিকবান্ধব। বাংলার বাণী অফিসেও সহকর্মীদের সবসময় সহযোগিতা করতেন। আমি রিপোর্টার হিসেবে যদি কখনো কোথাও আটকে যেতাম তিনি সহযোগিতা করতেন। কাদের ভাই সাংবাদিক হিসেবে ছিলেন মেধাবী ও জ্ঞানী। তার সাহসের ঘাটতি ছিল না। তার কলামেও এর প্রভাব দেখেছি।’
ওবায়দুল কাদের ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্ম নেন। বাবা মোশারফ হোসেন সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা শুরু করেন। মা ফজিলাতুন্নেছা। ওবায়দুল কাদের বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও নোয়াখালী কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কলেজজীবন থেকে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন।
১৯৭৫-এর পর একনাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর দুবার সভাপতি ছিলেন।
তার সেই সময়ের সহকর্মীরা বলেন, সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের তথা কাদের ভাই মানেই অন্যরকম। তিনি ছিলেন খুব সংবেদনশীল। সবাইকে মেনে নেওয়ার একটা ক্ষমতা ছিল। তিনি যে এত বড় একজন রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা, এত বড় ছাত্রনেতা, তা কখনই সাংবাদিকদের কাছে মনে হতো না। মনে হতো, কাদের ভাই যেন সাংবাদিকতার মধ্যেই ডুবে আছেন। কোনো রিপোর্টার বা সাব-এডিটর অনুবাদ করতে সমস্যায় পড়েছেÑ কাদের ভাইয়ের কাছে গেলেই সমাধান। নিজের রুমে, ডেস্কে বসিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। আর তার টেবিলে ছিল সবসময়ই গাদা গাদা বই।
বাংলার বাণীর সেই সময়ের একাধিক সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাদের ভাই ছিলেন সাংবাদিকতার প্রতি পুরো নিষ্ঠাবান। তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। তিনি দীর্ঘক্ষণ কোথাও বসে থাকতেন না। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই তিনি রুম থেকে বেরিয়ে অন্য সহকর্মীদের টেবিলে টেবিলে আড্ডা দিতেন। সেখানে হয়তো আমরা চায়ের অর্ডার দিয়েছি। চা আসতে না আসতেই তিনি উঠে যেতেন। তারপর আবার তাকে চায়ের কাপ নিয়ে খুঁজতে হতো কাদের ভাই কই...।
আজ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম। আর অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন যুবলীগ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা, মানবাধিকারের কথা মানায় না। আপনাদের হিংসাত্মক রাজনীতি আর সন্ত্রাসের কারণে নতুন প্রজন্ম রাজনীতি করতে চায় না। যারা একুশে আগস্ট ঘটিয়েছে, নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে, কৃষকের বুকে গুলি চালিয়েছে, জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটিয়েছে, তাদের সকল অপকর্মের মেডেল আছে। আমি বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপির প্রধান শত্রু এ দেশের সাধারণ জনগণ। যারা একাত্তরে হাতিয়ার তুলে নিয়েছিল দেশকে স্বাধীন করার জন্য, একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আপনারা বার বার তাদেরকেই আক্রমণ করেন। আওয়ামী লীগ আপনাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে আসে বলেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপনাদের বিরোধ ঘটে। সব সময় এ দেশের সাধারণ মানুষকে আপনাদের ষড়যন্ত্রের শিকার বানান, হত্যার শিকার বানান এবং আপনাদের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের শিকার বানান।
পরশ আরও বলেন, এ বছরটা নির্বাচনের বছর। আমাদের রাজপথে থাকতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। শুধু নেতাকর্মী দ্বারা আবর্ত থাকলে চলবে না, আমাদের চলে যেতে হবে সাধারণ মানুষের কাছে। গত ১৪ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অর্জনের কথা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। যদি সাধারণ মানুষ উন্নয়নের সুফল না পায় তাহলে সেই উন্নয়নের কোনো মূল্য থাকে না। যখন আমাদের সকল উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারব তখনই জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
তিনি যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, যুবলীগের ভাই ও বোনেরা- আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, আপনারা ধৈর্যশীল থাকবেন। ওদের কৌশল আমাদের সন্ত্রাসী হিসাবে উপস্থাপন করা। ওরা পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চাইবে। আপনারা ওদের ফাঁদে পা দেবেন না। কিন্তু রাজপথ আমরা ছেড়ে দেব না। ভুলে যাবেন না, ওরা কিন্তু দিনকে রাত এবং রাতকে দিন বানাতে পারদর্শী। মিথ্যার ওপরই দলটার সৃষ্টি। ওরা জাতির পিতার নাম মুছে ফেলেছিল, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছিল। সুতরাং মিথ্যা চর্চার ক্ষেত্রে এই দলকে দুর্বল ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, যখন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যখন বাংলাদেশের জিডিপি সিংগাপুর, মালয়েশিয়ার উপরে, যখন বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ঠিক সেই মুহূর্তে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে পেছনের দিকে নেওয়ার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক তারা সবাই ভবিষ্যদ্বণী করছে, বাংলাদেশ যেভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যদি এভাবে এগিয়ে যায় তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৭তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। আর এটা সম্ভব শুধুমাত্র রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে।
তিনি যুবলীগের উদ্দেশে বলেন, বিএনপি-জামায়াত আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা নানা মিথ্যা প্রচারণা ও গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রতিটি জেলায়, উপজেলায়, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং ইউনিটে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। বলতে হবে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়নি, বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আপনারা শেখ হাসিনার পাশে থাকুন, নৌকার পাশে থাকুন, নৌকায় ভোট দিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম বলেন, যারা স্যাংশন নিয়ে কথা বলেন তাদের দলের প্রধান খালেদা জিয়া তৎকালীন আমেরিকার পরারাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্যাংশন চেয়েছেন। যাতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ভাবে ভেঙে পড়ে, দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়, খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়, বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পায়, মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। এটাই হলো বিএনপির আসল চেহারা। তারা কখনোই এ দেশের মানুষের ভালো চায় না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞতা আছে কিভাবে অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে তোলা যায়। সামনের যে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কথা বলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ তা কাটিয়ে উঠতে পারবে। আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিলে বঙ্গবন্ধুকন্যা তার দূরদর্শী নেতৃত্বে একটি উন্নত-সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবে।
সঞ্চালকের বক্তব্যে যুবলীগ সম্পাদক নিখিল বলেন, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঢাকার রাজপথে আপনারা পোস্টার হয়েছেন। নুর হোসেন, ফাত্তাহ বাবুল হয়েছেন। তারপরেও দেশের স্বার্থে সংগঠনের স্বার্থে, বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার প্রশ্নে যুবলীগ আপস করেনি, যুবলীগ আপস করতে জানে না। তিনি যুবলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেমনি করে বিগত দিনে কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথ আগলে রেখে প্রিয় নেত্রীর নির্দেশিত পথে মানুষের কল্যাণে, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আপনারা সব সময় কাজ করেছেন। আগামী নির্বাচনেও সেই সাহসিকতা আর বীরত্বের সাথে রাজপথে থাকবেন। বিএনপি-জামায়াতের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আবারও রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে ঘরে ফিরবেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. হাবিবুর রহমান পবন, মো. নবী নেওয়াজ প্রমুখ।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।