
সাত বছর ধরে প্রেম করছিলেন তারা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে হয় বাগদান। অবশেষে বিয়েটাও সেরে ফেললেন পরিচালক জেমস গান ও অভিনেত্রী জেনিফার হল্যান্ড। গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিয়ের ঘোষণা দেন পরিচালক। জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোতে হয় বিয়ের অনুষ্ঠান। বিয়ের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে জেমস গান ইন্সটাগ্রামে লিখেছেন, ‘সাত বছর একসঙ্গে কাটানোর পর আমার প্রেম জেনিফার হল্যান্ডকে অবশেষে বিয়ে করেছি। কী অবিশ্বাস্য, সুন্দর আর আশ্চর্য একটা দিন, দুনিয়ার সবচেয়ে অসাধারণ এক পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের উপস্থিতিতে বিয়েটা হলো।’ গত কয়েক বছরে ‘গার্ডিয়ানস অব দ্য গ্যালাক্সি’, ‘দ্য সুইসাইড স্কোয়াড’-এর মতো সুপারহিরো ছবি করে খ্যাতি পাওয়া পরিচালকের বিয়েতে মার্ভেল বনাম ডিসি সফটবল খেলাও হয়। ২০১৫ সালে প্রেম শুরুর পর জেমস গানের পরিচালনায় ‘দ্য সুইসাইড স্কোয়াড’-এ অভিনয় করেন হল্যান্ড। প্রেমিকের পরিচালনায় তাকে চলতি বছর এইচবিওতে মুক্তি পাওয়া ‘পিসমেকার’ ধারাবাহিকেও অভিনয় করতে দেখা যায়। হল্যান্ডের এটা প্রথম বিয়ে হলেও জেমস গানের এটা দ্বিতীয় বিয়ে। এর আগে ২০০০ সালে জিনা ফিশারকে বিয়ে করেন পরিচালক। তবে ২০০৮ সালে সে সম্পর্ক ভেঙে যায়।
দুর্গাপূজা মানেই কাশের বনে সাদা তুলোর নরম ছোঁয়া। শিউলিতলায় সাদা-কমলার মিলনমেলা। নারীর গায়ে সাদা শাড়ি লাল পাড়। আর পাড়ায় পাড়ায় পূজার গানের নতুন ধুন। তাই তো প্রতি বছরই দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রকাশিত হয় একগুচ্ছ নতুন গান। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দুর্গাপূজার নতুন গান নিয়ে এই আয়োজন।
রফিকুল আলম-আবিদা সুলতানার ‘দেবী’
রফিকুল আলম ও আবিদা সুলতানা ‘দেবী’ নামে একটি গান করেছেন। শেখ নজরুলের কথায় গানটির সুর সোয়েব শিবলীর, সংগীতায়োজন করেছেন বিনোদ রায়। ভিডিও বানিয়েছেন সেজাত খান। গানটি প্রকাশ পেয়েছে এইচ এম ভয়েজ ইউটিউব চ্যানেলে।
সিঁথির ‘বলো দুর্গা মা’
সিঁথি সাহার পূজার গানের ভিডিওতে দেখা গেছে কলকাতার আবির চট্টোপাধ্যায়কে। ‘বলো দুর্গা মা’ নামে এই গানে সিঁথি ছাড়াও কণ্ঠ দিয়েছেন উপমহাদেশের নন্দিত শিল্পী ঊষা উত্থুপ ও ঈশান। রাজীব দত্তের কথায় গানটির সুর করেছেন তুবাই রায়। পথিকৃৎ বসুর নির্মাণে গানের ভিডিওতে আবির-সিঁথি জুটির সঙ্গে ঊষা উত্থুপও অভিনয় করেছেন। গানটি প্রকাশ হয়েছে কলকাতার সারেগামা থেকে।
বিপ্লব সাহার ‘পুজোয় ছুটি নাই’
জনপ্রিয় ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা উৎসব পার্বণে শখের বসে গান করেন। এবার দুর্গাপূজায় তিনি নিয়ে আসছেন নতুন মিউজিক ভিডিও ‘পুজোয় ছুটি নাই’। কথা লিখেছেন জীবন ফারুকী। সুর ও সংগীত করেছেন রাজন সাহা। মিউজিক ভিডিওতে করপোরেট লুকে বিপ্লব সাহা ছাড়াও দেখা যাবে চিত্রনায়ক শিপন মিত্রসহ র্যাম্পের এক ঝাঁক মডেলকে।
আসিফ-লগ্নজিতার ‘প্রেমে পড়ি’
বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিশীল সংগীতশিল্পী আসিফ আলতাফ ও কলকাতার জনপ্রিয় গায়িকা লগ্নজিতা গেয়েছেন ‘প্রেমে পড়ি’। গানটির কথা, সুর ও সংগীত পরিচালনা শিল্পী আসিফ নিজেই। সংগীতায়োজনে ছিলেন পাভেল আরিন। গানটির গল্প ধরে একটি দৃষ্টিনন্দন ভিডিও নির্মাণ করেছেন কায়সার আল রাব্বী। গানচিত্রটি উন্মুক্ত হয়েছে আসিফ আলতাফ অফিশিয়াল নামে ইউটিউব চ্যানেলে। লগ্নজিতার সঙ্গে এটি আসিফের দ্বিতীয় গান।
সমরজিৎ ও প্রিয়াংকার ‘রাইকিশোরী’
প্রকাশ হয়েছে সমরজিৎ রায় ও প্রিয়াংকা গোপের দ্বৈত কণ্ঠে আধুনিক বাংলা গান ‘রাইকিশোরী’। গানটির কথা লিখেছেন নবারুণ বিশ্বাস। সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন সমরজিৎ নিজেই। গানটির ভিডিও নির্দেশনা দিয়েছেন পিজিত। গানটি প্রকাশ হয়েছে সমরজিৎ রায়ের ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেইসবুক পেজে।
জয়-প্রিয়াঙ্কার ‘দুর্গা মায়ের জয়’
জয় ও প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাসের কণ্ঠে মিউজিক ভিডিও ‘দুর্গা মায়ের জয়’। প্রকাশ পেয়েছে সাউন্ড বিডির ইউটিউব চ্যানেলে। অরুণ সরকারের লেখা গানটির সুর করেছেন অপু আমান। ভিডিওটিতে মডেল হয়েছেন ইভান শাহরিয়ার সোহাগ ও রুহি। জয় এবং প্রিয়াঙ্কাকেও দেখা যাবে তাদের সঙ্গে।
আট শিল্পীর ‘দেখা দাও মা’
‘দেখা দাও মা’ গানের ভিডিও প্রকাশ করেছে দ্রুব মিউজিক স্টেশন। গানটি লিখেছেন ওপার বাংলার গীতিকার প্রসেন। সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন কিশোর দাস। কণ্ঠ দিয়েছেন সন্দীপন দাস, ধ্রুব গুহ, কিশোর দাস, কেশব রায় চৌধুরী, প্রিয়াংকা বিশ্বাস, সুকন্যা মজুমদার, অনন্যা আচার্য ও অনিন্দিতা সাহা অথি। রমনা কালীমন্দিরে চিত্রায়ণ করে গানটির ভিডিও নির্মাণ করেছেন শুভব্রত সরকার।
শ্রীপর্ণার ‘কন্যা আইল’
‘কন্যা আইল’ শিরোনামের গান প্রকাশ করেছেন সংগীতশিল্পী রায় শ্রীপর্ণা। সংগীতায়োজন করেছেন দেবদীপ বণিক। কথা ও সুর শিল্পীর নিজেরই। ভারতের ওআরবি ক্রিয়েশন স্টুডিওতে গানটি রেকর্ড করা হয়েছে। বাঁশিতে ছিলেন স্বরূপ মুখার্জি। গিটারে অরিন্দম সরকার।
পাঁচ শিল্পীর কণ্ঠে ‘মহাদেব’
‘মহাদেব’ গানটি লিখেছেন প্রসেনজিৎ ওঝা, সুর ও সংগীত করেছেন শোভন রায়। এতে কণ্ঠ দিয়েছেন শিল্পী বাঁধন সরকার পূজা, মৌমিতা বড়ুয়া, জি এম জন, শোভন রায় ও অজয় রায়। গানটি প্রসঙ্গে প্রসেনজিৎ ওঝা বলেন, ‘গত শিবরাত্রিতে এই গানের ভাবনাটা মাথায় আসে। এবার দুর্গাপূজা উপলক্ষে শোভন আগ্রহ প্রকাশ করায় গানটি তৈরি হলো।’
শুভর কণ্ঠে ‘প্রেম বিরহ’
সাইফ শুভর ‘প্রেম বিরহ’ গানটি লিখেছেন গীতিকবি নবীন আহমেদ, সুর ও সংগীত আয়োজন করেছেন রাজন সাহা। গানটির ভিডিও নির্দেশনা দিয়েছেন শুভ নিজেই। শুভ বলেন, ‘সত্য গল্প অবলম্বনে নির্মিত গান এবং গানচিত্রটি আশা করি সব ধরনের দর্শক-শ্রোতার মনেই দাগ কাটবে।’ গানটি আগামীকাল প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান স্টুডিও জয়ায় সব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ হবে।
কলকাতার গান
কলকাতায় প্রকাশ হয়েছে একাধিক গান। কুমার শানু ‘এভাবেই গানে গানে’, অমিত কুমার ‘এসে গেছি সেই আমি’, অলকা ইয়াগনিক ‘অজানা সেই দুচোখে’, অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী ‘আমাদের পুজোর গান’, বাবুল সুপ্রিয় ‘জয় মা দুর্গা’, কুমার শানুপুত্র জান কুমার ‘ভালোবাসার সুরে ঠিকানা’ গান গেয়েছেন। এ ছাড়া ইমন চক্রবর্তী, শোভন গঙ্গোপাধ্যায়, তৃষা চট্টোপাধ্যায়, ঋতি টিকাদার, অর্ণব চক্রবর্তী, নির্মাল্য রায়ের মতো শিল্পীরা গেয়েছেন ‘আবার এলে মাগো’ শিরোনামের একটি গান।
নন্দিত সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ ক্যারিয়ারের ৪০ বছর পূর্ণ করেছেন। পাঁচটি দেশে স্টেজ অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছেন। সমসাময়িক বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি
পূজা উদযাপন...
আমি ঢাকাতেই আছি। কিন্তু আমার পরিবারের একাংশ বিদেশে। তাই যেকোনো আনন্দ পরিপূর্ণতা পায় না। তারপরও শুভাকাক্সক্ষী, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো সময় কাটে। এখন দুর্গাপূজা একরকম কাটলেও আসল মজা ছিল ছেলেবেলায়। মনে পড়ে যায় সেই চট্টগ্রামের পূজার স্মৃতিগুলো। বিশেষ করে কানে বাজে ঢাকের শব্দ। আমি ঢাকের শব্দে এতটাই আবিষ্ট হয়ে পড়তাম যে, সারাদিন ঢাকীদের পেছনেই ছুটতে থাকতাম। একটু বড় হতেই নিজেই ঢাক বাজানো শিখে ফেলি। মনে হয়, সংগীতের প্রতি আকর্ষণ সেই ছোটবেলা থেকেই। নয়ত এত খাবারদাবার, ঘোরাঘুরি, সাজ-পোশাক, আনন্দ উল্লাস ছেলে কেন ঢাকের বাজনা আমাকে এত টানবে?
পাঁচ দেশে কনসার্ট...
চলতি বছরের শেষ দিক থেকে আগামী বছরের শুরু পর্যন্ত বিশ্বের ৫টি দেশে অনুষ্ঠান করব। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও কানাডায় হবে শোগুলো। এসব অনুষ্ঠানে পারফরম করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। স্টেজ অনুষ্ঠানে গান গাওয়া সব সময়ই উপভোগ করি। দেশের বাইরে হলে তো আরও উপভোগ্য হয়। প্রবাসে কঠিন জীবনযাপনে অভ্যস্ত বাংলাদেশিরা বেশ উৎসাহ নিয়েই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন, আনন্দ নিয়ে গান শোনেন। আমিও তাদের সামনে গান গাওয়াটা উপভোগ করি, দেশের কথা বলি।
অন্য ব্যস্ততা...
দেশেও এখন নিয়মিত স্টেজ অনুষ্ঠান করছি। এ ছাড়া নিজের সংগীতজীবন ৪০ বছরপূর্তি নিয়ে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। যেখানে আমার গাওয়া দশটি গান পরিবেশন করব নতুন আঙ্গিকে। এগুলোর কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অনুষ্ঠানটি হবে আগামী ডিসেম্বরে। এ ছাড়া নতুন মৌলিক গানে প্রতিনিয়ত কণ্ঠ দিচ্ছি। সম্প্রতি এনামুল করিম নির্ঝরের কথা ও সুরে একটি একক গানে কণ্ঠ দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে আরও গানে কণ্ঠ দেব।
‘হৃদিতা’র গান প্রকাশনায়...
সম্প্রতি সরকারি অনুদানের সিনেমা ‘হৃদিতা’র দুটি গানের প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয় একটি রেস্টুরেন্টে। আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। ‘ঠিকানা’ ও ‘শুধু একবার ছুঁবো’ গান দুটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন চন্দন সিনহা। ‘ঠিকানা’ গানটির সুর ও সংগীত করেছেন ইমরান মাহমুদুল। ‘শুধু একবার ছুঁবো’ গানটির সুর ও সংগীত করেছেন অমিত ইশান। এই গানটিতে চন্দন সিনহার সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠ দিয়েছেন সিঁথি সাহা। ‘হৃদিতা’ ছবির প্রকাশিত গান দুটি অসাধারণ লিখেছেন কবির বকুল। গানের মধ্যে কাব্য ও অন্ত্যমিল আমাকে ছুঁয়ে গেছে। সুরও অসাধারণ। সবকিছু মিলে পরিপূর্ণ গান হয়েছে। যার মধ্যে অতিরঞ্জন নেই, আছে মাধুর্য। গান দুটি শ্রোতা-দর্শকের হৃদয়ে স্থান পাবে। অনেক আগে কবির বকুলের লেখা ‘ঘুম মানে আমি বলি চোখ বুজে থাকা, ঘুম তো একবারেই আসে সাদা কাফনে ঢাকা’ গানটি যখন আমি করি, তখন সংস্কৃতির ধারকবাহকরা বলা শুরু করলেন, এসব গান চলবে না। বাণিজ্যিক গান বানান। তখন আমি বাণিজ্যিক বুঝি না। আমি মনে করি, আমার হৃদয়ে যে গান ছুঁয়ে গেছে, যার রিফ্লেকশন শ্রোতাদের কাছে যাবে। এটাই আমার পাওয়া। এখনো সেটা আমি রক্ষা করে চলেছি।
হিট শব্দে অনীহা...
অনেক সময় গান ‘হিট’, শব্দটা বেশি শুনি। কিন্তু আমি ‘হৃদিতা’ সিনেমার গান এক সপ্তাহ আগেই শুনেছি। হিট বড় কথা নয়, এই গান শ্রোতা-দর্শকদের প্রাণে শীতলতা দেব। এ গান আমাকেও শীতল করেছে। গান শুনে উত্তপ্ত নয়, শ্রোতাদের মন শীতল হোক এটাই আমি চাই। কারণ, সংগীত শুধুই বিনোদন নয়, অনুভূতি ও উপলব্ধির বিষয়।
এই প্রথমবারের মতো এশিয়ান অ্যাকাডেমি ক্রিয়েটিভ অ্যাওয়ার্ডে বাংলাদেশ এন্ট্রি পেয়েই চরকি বিশাল সাফল্য অর্জন করেছে। তিনটি ক্যাটাগরিতে চরকি জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ী হয়েছে। সেরা ফিচার ফিল্ম : খাঁচার ভেতর অচিন পাখি, সেরা ড্রামা সিরিজ : জাগো বাহে ও সেরা পরিচালক (ফিকশন) : মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম (শাটিকাপ)। ক্যাটাগরিগুলোতে চরকির সঙ্গে অন্যান্য দেশ থেকে জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ীদের তালিকায় রয়েছে নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম, ডিজনি হটস্টার, ক্যানাল+ এর মতো প্ল্যাটফর্মের কনটেন্ট। চরকির প্রধান পরিচালক কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য এটা বড় সাফল্য। এত দিন ধরে বাংলাদেশ থেকে এ পুরস্কারের দ্বার উন্মুক্ত ছিল না। চরকির হাত ধরেই প্রথমবারের মতো এ আয়োজনে বাংলাদেশের নাম যুক্ত হলো। বাংলাদেশ যে আন্তর্জাতিকমানের কনটেন্ট বানাতে পারে সেটা চরকি প্রমাণ করে দিয়েছে।’ এশিয়ান অ্যাকাডেমি ক্রিয়েটিভ অ্যাওয়ার্ডে প্রত্যেক বছরের ডিসেম্বরে দেওয়া হয় সিঙ্গাপুরে। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ১৬টি দেশের চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির শ্রেষ্ঠ কাজগুলোকে সম্মাননা দেয়।
গত শুক্রবার সকালে শাকিব খান ও বুবলীর আড়াই বছর বয়সী সন্তান শেহজাদ খানের খবর প্রথম প্রকাশ্যে আসে। এরপর থেকেই আলোচনার তুঙ্গে এই দুই তারকা। ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দুজনে তাদের সন্তানের খবরটি প্রকাশ্যে আনেন। তবে সরাসরি কোনো সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি তারা। এরই মধ্যে গত শনিবার একসঙ্গে শ্যুটিং করেন তারা। কিন্তু এদিনও শাকিব-বুবলীর কেউই সংবাদমাধ্যমের কাছে কিছুই বলেননি। ‘লিডার : আমিই বাংলাদেশ’ ছবির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কড়া নিরাপত্তার মধ্যে শ্যুটিং শুরু করেন। এই ছবির পরিচালক তপু খান। তিনি বললেন, ‘শ্যুটিংয়ে দুজন ভীষণ আন্তরিক ছিলেন। সময়ের আগে তারা সেটে আসেন। আমরাও সুন্দরভাবে শ্যুটিং করেছি। রাত সাড়ে ৯টার দিকে শাকিব ভাই তার অংশের শ্যুটিং শেষ করেছেন। আর রাত ১১টায় শেষ হয় বুবলীর শ্যুটিং।’ তবে জানা গেছে, শাকিব খান ও বুবলী দুজনে শ্যুটিং করছেন ঠিকই, কিন্তু শ্যুটিংয়ের বাইরে তারা কেউ কারও দিকে একবারের জন্যও তাকাননি। এমনকি দৃশ্য ধারণ শেষে দুজনে দুজনের মতো করে আলাদা জায়গায় বসেছিলেন। লম্বা বিরতি যখন ছিল, তখন তারা যার যার রুমে চলে যান। এমনকি যে পাঁচতারকা হোটেলে শ্যুটিং হয়েছে সেখানে তাদের দুজনের জন্য আলাদা দুটি কক্ষ ভাড়া করা হয়। দৃশ্যধারণ শেষ হতে না হতেই দুজনেই আলাদা দুই জায়গায় গিয়ে বসেন। পরিচালকের ডাক পড়লে আবার তারা ক্যামেরার সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাই তো ভিন্ন ধরনের পরিকল্পনায় রোমান্টিক ধাঁচের এই গানের শ্যুটিং করতে হয়েছে। নায়ক-নায়িকা দুজনের সিদ্ধান্তের কারণেই এমন বদল আনতে হয়েছে বলে জানান শ্যুটিং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’
'স্যার নয় আপা ডাকলেই চলবে' রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীনের এমন বক্তব্যের পর রাত ৯ টার দিকে আন্দোলন সমাপ্ত করে ক্যাম্পাসে ফিরে গেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এর আগে চিত্রলেখা নাজনীনের বিরুদ্ধে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে বুধবার (২২ মার্চ) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে একাই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন উমর ফারুক। এর পর তার সাথে একাত্মতা জানিয়ে আন্দোলনে যুক্ত হন বেরোবির বাংলা বিভাগের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা।
তুহিন ওয়াদুদ তার ফেসবুক পোস্টে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসক চিত্রলেখা নাজনীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, বেরোবির একটা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে উমর ফারুক আমার কাছে এসেছিলেন। এ সময় আমি বাইরে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি দিয়ে নামছিলাম। তখন ওই শিক্ষক আমাকে দেখে আপা বলে ডাক দেন। আমি তাকে স্যার না বলে আপা কেন ডাকছেন জানতে চাই। আমার জায়গায় একজন পুরুষ দায়িত্বে থাকলেও কি তিনি স্যার না বলে ভাই ডাকতেন?
জেলা প্রশাসক জানান, রাতে তিনি ওই শিক্ষক ও আন্দোলনকারীদের স্যার ডাকতে হবে না, আপা ডাকলেই চলবে বলে জানান। এরপর তারা আন্দোলন বন্ধ করে দেন এবং ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে চলে যান।