
বছরটা খুব ভালো যাচ্ছে আলিয়া ভাটের। ‘গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি’ দিয়ে প্রশংসা আগেই শুনেছেন। ‘আরআরআর’ ও ‘ডার্লিংস’ দিয়ে নজর কেড়েছেন সবার। ভালো ব্যবসা করেছে ব্রহ্মাস্ত্রও। শিগগিরই শুনতে যাচ্ছেন মা ডাক। হলিউডে পা রাখতে যাচ্ছেন ‘হার্ট অব স্টোন’ সিনেমা দিয়ে। এবার খুশি হওয়ার নতুন উপলক্ষ পেলেন এ বলিউড অভিনেত্রী। তবে সঞ্জয় লীলা বানসালির সিনেমা ‘গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি’তে করা তার অভিনয় ‘বছরের সেরা কাজ’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সর্বকালের সবচেয়ে ভালো ও সবচেয়ে খারাপ বড়পর্দার কাজের তালিকা প্রকাশ করে থাকে বিশ^বিখ্যাত ম্যাগাজিন ‘গার্ডিয়ান’। ভালো কাজের তালিকায় টম হ্যাঙ্কস, ক্যামেরন ডিয়াজ, লুপিটা নাইওং’ও এবং জেনিফার লরেন্সের মতো তারকার সঙ্গে উঠে এসেছে আলিয়ার নাম। শুধু গার্ডিয়ান নয়, আলিয়া গত সোমবার তার ইন্সটাগ্রামে একটি ছবি শেয়ার করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি পুরস্কার হাতে দারুণ উচ্ছ্বসিত আলিয়া। তিনি লিখেছেন, ‘ধন্যবাদ টাইমস।’ #টাইম একশ প্রভাবশালী অ্যাওয়ার্ড। অর্থাৎ বিশে^র এই বিখ্যাত ম্যাগাজিনের বিচারেও আলিয়া সেরা ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির একজন।
‘গাঙ্গুবাই’-এ আলিয়া এক যৌনকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি যৌনপল্লী পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন। লেখক মাইক ম্যাককাহিল আলিয়া সম্পর্কে লেখেন, বাস্তব জীবনের চরিত্র গঙ্গা হারজিবনদাস নিজেকে ধীরে ধীরে এতটাই বড় করেন যে তিনি একজন যৌনকর্মী থেকে ১৯৬০ সালের মুম্বাইয়ের রেড লাইট ডিস্ট্রিক্টের রানী হয়ে ওঠেন। উত্থান-পতনে ভরপুর একটি চরিত্রের পরিপূর্ণ আবেগিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন আলিয়া ভাট। আর ঢোলিডা গানের ড্রামের কাজটি চরিত্রের নিজের গল্প শোনায়। সেখানে তিন মিনিটের ছকে সাংস্কৃতিক উদযাপন থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত নির্জনতা প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে এ নারীর সব অর্জন ও ক্ষতিকে প্রকাশ করা হয়েছে।
হুসেইন জাইদির বই মাফিয়া কুইনস অব মুম্বাইয়ের ওপর নির্ভর করে সিনেমাটি বানানো। এ সিনেমায় গাঙ্গুবাইয়ের সফর তুলে ধরা হয়। যিনি একটু একটু করে নিজের পদমর্যাদা তুলে ধরেন, এরপর ধীরে ধীরে যৌনপল্লীর উগ্র ম্যাডাম থেকে হয়ে ওঠেন রাজনৈতিক নেতা। সিনেমায় আরও অভিনয় করেন অজয় দেবগণ, বিজয় রাজ, সীমা পাহওয়া ও ইন্দিরা তিউয়ারি। বছরের শুরুতে মুক্তি পাওয়ার পর বেশ প্রশংসা কুড়ায় সিনেমাটি। বিশ্বব্যাপী আয় করে ২০০ কোটি ডলার। নেটফ্লিক্সের সবচেয়ে বেশিবার দেখা সিনেমাগুলোর একটি হয়ে ওঠে গাঙ্গুবাই।
বাংলা চলচ্চিত্রে এখন সুদিন চলছে। প্রতি মাসেই সিনেমা মুক্তির সংখ্যা বাড়ছে। এই অক্টোবর মাসেই মুক্তির মিছিলে ৮টি সিনেমা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ৭ অক্টোবর মুক্তি পাচ্ছে ‘যাও পাখি বলো তারে’ ও ‘হৃদিতা’। পরের সপ্তাহে ‘বৃদ্ধাশ্রম’ ও ‘রাগী’। ‘রোহিঙ্গা’ ও ‘ডেঞ্জার জোন’ মুক্তি পাবে ২১ অক্টোবর। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ২৮ তারিখ মুক্তি পাবে ‘দামাল’ ও ‘বান্ধব’ সিনেমা।
জানা যায়, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে হৃদিতা চলচ্চিত্রটি। নির্মাণ করেছেন পরিচালক ইস্পাহানি আরিফ জাহান। তিনি বলেন, ‘আমরা যেহেতু উপন্যাস থেকে সিনেমাটি নির্মাণ করেছি, তাই চেষ্টা করেছি একটি সুন্দর ছবি তৈরি করতে। এ কারণে আমাদের প্রত্যাশাটা বেশি। কারণ কিছুদিন আগেও এ দেশের মানুষ সিনেমা নিয়ে নানা রকম নেতিবাচক কথা বলত। তাই ওই নেতিবাচক কথাগুলো মাথায় রেখে একদম মৌলিক ভালো গল্পের সিনেমা হয়েছে হৃদিতা।’ তিনি জানান, হৃদিতায় অভিনয় করেছেন পূজা চেরি, এ বি এম সুমনসহ অনেকেই। সবাই খুব ভালো অভিনয় করেছেন।
সিনেমার হল বুকিং প্রায় শেষ জানিয়ে পরিচালক বলেন, ‘খুব বেশি সিনেমা হলে মুক্তি দিচ্ছি না, তবে বাংলাদেশের যে কটি উল্লেখযোগ্য ভালো সিনেমা হল আছে সেগুলোতে মুক্তি পাবে ‘হৃদিতা’। এখন পর্যন্ত ২০টি হল চূড়ান্ত করা হয়েছে, তবে সংখ্যাটা বাড়তে পারে।’
একই দিনে মুক্তি পাবে মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত ‘যাও পাখি বলো তারে’। এ সিনেমায় জুটি বেঁধেছেন মাহিয়া মাহি ও আদর আজাদ, সঙ্গে আছেন চিত্রনায়ক শিপন মিত্র। ত্রিভুজ প্রেমের গল্পে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। সিনেমাটির গান ও ট্রেলার বেশ সাড়া ফেলেছে বলে জানিয়েছেন পরিচালক।
গায়ক এসডি রুবেলের পরিচালিত ‘বৃদ্ধাশ্রম’ সিনেমাটি মুক্তি পাবে ১৪ অক্টোবর। সিনেমাটিতে পরিচালনার পাশাপাশি নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন এসডি রুবেল নিজেই। তার বিপরীতে আছেন চিত্রনায়িকা ইয়ামিন হক ববি। আরও অভিনয় করেছেন হাসান ইমাম, প্রবীর মিত্র, আফজাল শরীফ, শম্পা রেজা, মাহমুদুল ইসলাম মিঠু প্রমুখ।
মোস্তাফিজুর রহমান মিজানের পরিচালনায় অ্যাকশনধর্মী সিনেমা ‘রাগী’। এই সিনেমাটিও মুক্তি পাবে ১৪ তারিখ। এতে প্রধান চরিত্রে দেখা যাবে পারভেজ আবির চৌধুরী ও অ্যাকশনে দেখা যাবে মুনমুনকে। এ ছাড়া অভিনয় করেছেন মৌমিতা মৌ, ববি, শতাব্দী ওয়াদুদ, মারুফ আকিব, খালেদা আক্তার, কাজী হায়াৎ প্রমুখ।
নির্মাতা অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড পরিচালিত ‘রোহিঙ্গা’ সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে আসছে ২১ অক্টোবর। সিনেমাটির শ্যুটিং করছেন নাফ নদী, শাহপরীর দ্বীপ, উখিয়া ও টেকনাফে। এতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছেন অভিনেত্রী আরশি। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সিনেমাটি নির্মাণ শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে। দীর্ঘ সময় পার করে সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। সিনেমাটি নিয়ে ডায়মন্ড বলেন, ‘এ সময় এই চলচ্চিত্রটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি বলব সবাই সিনেমাটি দেখুক, দেখে তাদের কেমন লাগল, ভালো-মন্দ যেটাই হোক, সেটা নিয়ে কথা বলুক।’
চিত্রনায়ক বাপ্পী চৌধুরী অভিনীত সায়েন্স ফিকশন ও ভৌতিক গল্পনির্ভর সিনেমা ‘ডেঞ্জার জোন’। সিনেমাটির পরিচালক বেলাল সানি। এই পরিচালকের প্রথম সিনেমা এটি। সিনেমাটি ২১ অক্টোবর মুক্তির অপেক্ষায়।
আলোচিত সিনেমা ‘পরাণ’-এর পরে নির্মাতা রায়হান রাফির নতুন সিনেমা ‘দামাল’। যেটি আসছে অক্টোবরের ২৮ তারিখ। এরই মধ্যে ‘দামাল’ সিনেমার ট্রেলার ও গান বেশ সাড়া ফেলেছে। সিনেমাটি নিয়েও বেশ আশাবাদী এই নির্মাতা। ‘দামাল’-এ অভিনয় করেছেন বিদ্যা সিনহা মিম, সিয়াম আহমেদ, শরিফুল রাজ, সুমিত, রাশেদ অপু, সাঈদ বাবু, শাহনাজ সুমি, বৃষ্টি, অথৈ, পূজা প্রমুখ।
একই দিন সুজন বড়ুয়া পরিচালিত ‘বান্ধব’ নামে একটি সিনেমা মুক্তির কথা রয়েছে। জানা গেছে, এর মধ্য থেকে যেকোনো একটি সিনেমা মুক্তির তারিখ পেছালে রফিক শিকদার পরিচালিত ‘বসন্ত বিকেল’ সিনেমাটি মুক্তি পাবে।
জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম। বছরটা তার দারুণ কাটছে। বিয়ের পর ক্যারিয়ারে যেন সুবাতাস বইছে। বছরের অন্যতম আলোচিত ছবি তার অভিনীত ‘পরাণ’। এ মাসেই আসছে ‘দামাল’। এখন ব্যস্ত পূজা উদযাপনে। এসব নিয়ে কথা বলেছেন তিনি
এবারের পূজা...
বিয়ের পর এটি আমার প্রথম পূজা। এবারের পূজা আমার জন্য এক অন্য রকম অনুভূতি। শাখা, সিঁদুর, জামদানি শাড়ি, আলতা পরা হাতে প্রথমবার বরণ করলাম দেবী দুর্গাকে! শরতের কাশফুল আর নিজের নতুন সাজ সবকিছুতেই কেমন যেন একটা স্নিগ্ধতা! পূজার প্রথম দুদিন ঢাকাতেই কেটেছে। সারা বছর কাজের কারণে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয় না। সবাই এ সময়টায় এক হই। এবারও সবার সঙ্গে দেখা হয়েছে। বছরের সব জমানো কথা নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠেছি। এখন আমি কুমিল্লায় শ্বশুরবাড়িতে। নবমী ও দশমী শ্বশুরবাড়িতে কাটছে। যেহেতু বিয়ের পর প্রথম পূজা, তাই শ্বশুরবাড়ির সবার সঙ্গে আনন্দ উদ্যাপন করতে চাই। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের পাশাপাশি মা-বাবার জন্য পাঞ্জাবি, শাড়ি, চুড়ি ও গহনা কিনেছি। স্বামী সনির সঙ্গে এখানে মণ্ডপে ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা আছে। পূজা উপলক্ষে সবাইকে শুভ্র কাশফুলের শুভেচ্ছা। সব জায়গায় শান্তি বিরাজ করুক। সবাই ভালো থাকুন। ভক্তদের বলব, উৎসব সবার জন্য। এই উৎসবের আমেজ সবখানে ছড়িয়ে পড়ুক।
পূজার স্মৃতি...
পূজা এলে অতীতের কথা খুব মনে পড়ে। অনেক আগে একবার পূজার সময় নৌকায় উঠেছিলাম বেড়ানোর জন্য। খুব বিপদ হয়েছিল। অতিরিক্ত মানুষের কারণে নৌকা প্রায় ডুবুডুবু। পাড়ে ভেড়ানোর আগ পর্যন্ত আতঙ্কে ছিলাম। বেড়ানোর চেয়ে ভয়টাই বেশি কাজ করেছিল সেদিন। প্রতি বছর পূজা এলে ওই ঘটনার কথা খুব মনে পড়ে। পূজায় নতুন পোশাকের ব্যাপারটি এখনো আছে। পূজায় ঘুরে বেড়ানো, মজাদার খাবার খাওয়া সে তো আছেই। ছোটবেলায় নানাবাড়ি রাজশাহী, কখনো ভোলায় পূজা কাটত। রাজশাহীতে অনেক মজা হতো। সারা দিন ঘুরে বেড়াতাম। এলাকার প্রায় সব মণ্ডপে যেতাম। আরতি দিতাম। ওই কয়েকটা দিন কোনো নিয়মের বেড়াজাল ছিল না। অনেক খাওয়া-দাওয়া হতো। শৈশব-কৈশোরের সেসব দিন খুব মিস করি।
ব্যস্ততা...
পূজার পর আবার শুরু হয়ে যাবে দৌড়ঝাঁপ। কারণ আমার সিনেমা ‘দামাল’ আসছে এ মাসের শেষের দিকে। আমরা এরই মধ্যে প্রচার শুরু করেছি। পূজা শেষে আবার প্রচারের কাজে সারা দেশে ছুটব। এই কাজটি আমি উপভোগ করি। কারণ একটি সিনেমা দর্শকের কাছে পৌঁছাতে গেলে প্রচারের বিকল্প নেই। আমার ‘পরাণ’ ছবিটির যে সফলতা সেটি অনেকটাই প্রচারের জন্যই হয়েছে। সেই একই টিমের সঙ্গে আসছে ‘দামাল’। সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন সিয়াম আহমেদ। আশা করছি এই ছবিটিও দর্শকের মন জয় করবে।
বড়পর্দায় পরীক্ষিত নির্মাতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন রায়হান রাফী। চিত্রপরিচালক হিসেবে তৈরি করেছেন আলাদা ইমেজ! আলোচিত এই চিত্রপরিচালক ওটিটির পাশাপাশি সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি পরাণের মাধ্যমে মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। এতে দর্শকরা যেমন আনন্দিত হয়েছেন, তেমনি প্রযোজক পেয়েছেন কাক্সিক্ষত সাফল্যের চেয়ে কয়েক গুণ লগ্নি ফেরত। এ কারণে বাংলা ছবির নিয়মিত দর্শকরা প্রায়ই চাইতেন শাকিব খানকে নিয়ে রাফী ছবি বানাক! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে লেখালেখি চোখে পড়ত। অবশেষে তাই হতে যাচ্ছে, যা শাকিবভক্তরাও চাইতেন। শাকিব খান তার আগামীর ছবি পরিচালনার দায়িত্ব দিচ্ছেন রায়হান রাফীকে। এরই মধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। রাফীর পরিচালনায় শাকিবের এই ছবিটি প্রযোজনা করবে বিগ স্ক্রিন। প্রযোজক টপি খান, যিনি ‘বসগিরি’র প্রযোজক। এই ছবিতে শাকিব খানের এসকে ফিল্মসও যুক্ত থাকবে। খবরটি নিশ্চিত করে রাফী বলেন, শাকিব ভাইকে নিয়ে আগামীর ছবিটি বানাতে যাচ্ছি এটা কনফার্ম। ছবির নাম চূড়ান্ত হয়নি। নায়িকা কে হবেন সেটি প্রাথমিকভাবে ঠিক করলেও যেহেতু লিখিত চুক্তি হয়নি, তাই আগেই জানাতে চাইলেন না রায়হান রাফী। তিনি বলেন, দামাল মুক্তির পর নভেম্বরের শেষে আমরা শ্যুটিংয়ে নামব। বর্তমানে চিত্রনাট্যের কাজ চলছে। নাম ও নায়িকা দুটোই শ্যুটিংয়ের আগে জানাব। রায়হান রাফী বলেন, দর্শকরা নিশ্চয়ই অবগত আগের কাজগুলোতে আমি আর্টিস্টদের কীভাবে ব্যবহার করেছি। এবার শাকিব ভাইকে পেলাম। অনুভূতি অনেকটা ড্রিমস কাম ট্রু। তা ছাড়া শাকিব ভাই ও আমার দর্শকরা সব সময় চাইতেন একসঙ্গে ছবি হোক। এবার তাই হতে যাচ্ছে। গল্প ও চরিত্র তাকে দিয়ে কীভাবে প্রেজেন্ট সেটা আসলে দেখার জন্য জাস্ট অপেক্ষা করতে হবে। প্রযোজক টপি খান বলেন, ২০২৩ সালের যেকোনো একটি ঈদে ছবিটি মুক্তি পাবে।
‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’ দিয়ে বেশ ভালোই আলোচনায় ছিলেন নায়ক বাপ্পি চৌধুরী ও নায়িকা অপু বিশ্বাস। দেবাশীষ বিশ্বাস পরিচালিত ছবিটি মুক্তি পায় চলতি বছরেই। সেটি দর্শক খরার সময়েও একপশলা বৃষ্টি হয়ে এসেছিল ঢালিউডে। এই দুই তারকা আবারও জুটি হয়ে নতুন চমক নিয়ে আসছেন। তাদের দেখা যাবে এবার উপস্থাপনায়। প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলাদেশ টেলিভিশন আয়োজন করেছে দুর্গাপূজার বিশেষ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘শারদ আনন্দ’। সেখানেই সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করবেন বাপ্পি-অপু। অনুষ্ঠানে থাকবে নাচ, গান, সেলিব্রিটি আড্ডা, ফ্যাশন শো ও তথ্যচিত্র। এমনটিই জানিয়েছেন অনুষ্ঠানটির প্রযোজক এল রুমা আকতার। জগদীশ এষের পরিকল্পনায় এটি গ্রন্থনা করেছেন সুমন সাহা। পূজা উপলক্ষে একটি নতুন গান তৈরি করা হয়েছে, গেয়েছেন সন্দীপন দাস, সুস্মিতা সাহা, সপ্নীল রাজীব ও অনন্যা আচার্য্য। এ ছাড়া দ্বৈত গান গাইবেন প্রিয়াংকা গোপ ও সমরজিৎ। আরতি নৃত্য পরিবেশন করবেন প্রান্তিক দেব ও তার দল। থাকছে বিশেষ আয়োজন ‘শিবের গাজন’। পরিবেশন করবেন প্রিয়াংকা সরকার ও তার দল। পূজার আরেকটি বিশেষ আয়োজন আবীর খেলা। অনুষ্ঠানে আবীর খেলা নিয়ে আসবেন অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী ভাবনা। দলীয় এ নৃত্যটির নৃত্য পরিচালনা করেছেন অনিক বোস। রয়েছে সেলিব্রিটি আড্ডাও। যেখানে অংশ নিয়েছেন নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী, সাংবাদিক মুন্নী সাহা। সবশেষে থাকছে বাউলা ব্যান্ডের পরিবেশনায় একটি জীবনমুখী গান। ‘শারদ আনন্দ’ প্রচারিত হবে আগামীকাল বিজয়া দশমীতে রাত ১০টার ইংরেজি সংবাদের পর বিটিভিতে।
গত সেপ্টেম্বরে স্বামীর সঙ্গে মডেল-অভিনেত্রী এমিলি রাতাজকাওস্কির বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। তার আগে থেকেই হলিউডের প্রখ্যাত তারকা ব্র্যাড পিটের সঙ্গে তার প্রেমের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। দুই তারকার কেউ যদিও স্বীকার করেননি, তবে তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, দুজনের কেউই এখনো সিরিয়াস নন, শুধু একে অন্যের সান্নিধ্যে সময় কাটাচ্ছেন। এই যখন অবস্থা, তখনই কথিত প্রেমিক প্রযোজিত ছবিকে একহাত নিলেন অভিনেত্রী। ঘটনার সূত্রপাত মেরিলিন মনরোর বায়োপিক ‘ব্লন্ড’ নিয়ে। গত মাসে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত ছবিটি। ‘ব্লন্ড’-এর অন্যতম প্রযোজক ব্র্যাড পিট। ছবিটির বিরুদ্ধে নারীদের যন্ত্রণাকে আবেদনময়ীভাবে তুলে ধরা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এই সুপার মডেল। গত শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় রাতাজকাওস্কি বলেন, ‘আরেকটি সিনেমায় নারীদের যন্ত্রণাকে এমনকি তার মৃত্যুকেও আবেদনময়ীভাবে তুলে ধরা হয়েছে এটা জেনে আমি বিস্মিত নই। এটা আমরা নানাভাবে বারবারই করেছি কিন্তু আমি এটার বদল চাই। আমরা নারীদের যন্ত্রণাকাতর হিসেবে দেখাতে পছন্দ করি। একজন নারী হিসেবে আমি নিজের কথাও বলতে পারি কীভাবে নিজের যন্ত্রণাকে আবেদনময়ীভাবে তুলে ধরতে হয় সেটা শিখে গেছি।’ গণমাধ্যমে মনরোকে যেভাবে তুলে ধারা হয় তার কঠোর সমালোচনা করে রাতাজকাওস্কি আরও বলেন, ‘এমি ওয়াইনহাউজকে দেখুন, ব্রিটনি স্পিয়ার্সকে দেখুন, ভাবুন প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু নিয়ে আমরা কতটা আগ্রহী।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’
'স্যার নয় আপা ডাকলেই চলবে' রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীনের এমন বক্তব্যের পর রাত ৯ টার দিকে আন্দোলন সমাপ্ত করে ক্যাম্পাসে ফিরে গেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এর আগে চিত্রলেখা নাজনীনের বিরুদ্ধে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে বুধবার (২২ মার্চ) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে একাই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন উমর ফারুক। এর পর তার সাথে একাত্মতা জানিয়ে আন্দোলনে যুক্ত হন বেরোবির বাংলা বিভাগের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা।
তুহিন ওয়াদুদ তার ফেসবুক পোস্টে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসক চিত্রলেখা নাজনীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, বেরোবির একটা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে উমর ফারুক আমার কাছে এসেছিলেন। এ সময় আমি বাইরে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি দিয়ে নামছিলাম। তখন ওই শিক্ষক আমাকে দেখে আপা বলে ডাক দেন। আমি তাকে স্যার না বলে আপা কেন ডাকছেন জানতে চাই। আমার জায়গায় একজন পুরুষ দায়িত্বে থাকলেও কি তিনি স্যার না বলে ভাই ডাকতেন?
জেলা প্রশাসক জানান, রাতে তিনি ওই শিক্ষক ও আন্দোলনকারীদের স্যার ডাকতে হবে না, আপা ডাকলেই চলবে বলে জানান। এরপর তারা আন্দোলন বন্ধ করে দেন এবং ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে চলে যান।