চিরনিদ্রায় শায়িত টুটুল
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১৯:১৩
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধায় সাইদুল আনাম টুটুল। ছবি: রুবেল রশীদ
‘অলৌকিক আনন্দের ভার বিধাতা যাহাকে দেন, তার বক্ষে বেদনা অপার’- লাইনটি বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুলের স্ত্রী মোবাশ্বেরা খানম বুশরা। এভাবেই বৃহস্পতিবার স্বামীর মরদেহের সামনে দাঁড়িয়ে চিরবিদায় জানান তিনি।
সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয় এই মুক্তিযোদ্ধাকে।
শহীদ মিনারে দুই মেয়ের সঙ্গে আসেন বুশরা। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘টুটুল আপাদমস্তক শিল্পী ছিলেন। নৈতিকতার প্রশ্নে আপোষ করেননি, শিল্পের চর্চা করেছেন। টুটুলের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা স্বামী-স্ত্রীর ছিল না, ছিল বন্ধুত্বের।’
গুণী এই নির্মাতাকে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে এসেছিলেন মুস্তাফা মনোয়ার, সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, মামুনুর রশীদ, মসিহউদ্দিন শাকের, ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, ইয়াসমিন হক, তারিক আনাম খান, নিমা রহমান, গাজী রাকায়েত, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, আতাউর রহমান, লিয়াকত আলী লাকী, ফরিদুর রেজা সাগর, সালাউদ্দিন লাভলু, আজাদ আবুল কালাম, সেলিম মাহবুব, আলী ইমাম প্রমুখ।
মসিহউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলী পরিচালিত ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ সিনেমার চিত্র সম্পাদক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন টুটুল।
শাকের বলেন, ‘টুটুল মুক্তিযুদ্ধ করেছে, স্বাধীন বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে।’
চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, ‘শিশুদের নিয়ে কাজ করতে গিয়েই টুটুলের সঙ্গে পরিচয়। টুটলের এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।’
অভিনেতা তারিক আনাম খান বলেন, ‘সাইদুল আনাম টুটুল আমার চাচাতো ভাই। আমাদের পরিবারের যারা এখন শিল্প-সংস্কৃতিতে যুক্ত আছে, তাদের প্রায় সবাই তাকে দেখেই অনুপ্রাণিত হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয়সহ সবার কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, টুটুলের নির্মাণাধীন চলচ্চিত্র কালবেলা যেন সম্পন্ন করা হয়।’
শ্রদ্ধা নিবেদনের শেষ ভাগে মরদেহের উপর জাতীয় পতাকা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ, রাইসুল ইসলাম আসাদসহ সবাই জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে বিদায় জানান টুটুলকে। এর আগে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে। সেখানে জানাজার পর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাইদুল আনাম টুটুল। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর।
টুটুল ২০০৩ সালে ‘আধিয়ার’ নামের একটি সিনেমা নির্মাণ করে প্রশংসিত হন। ‘ঘুড্ডি’, ‘দহন’, ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘দুখাই’র মতো সিনেমার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের টেলিভিশন নাট্য পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টর’স গিল্ডের প্রথম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১৯:১৩

‘অলৌকিক আনন্দের ভার বিধাতা যাহাকে দেন, তার বক্ষে বেদনা অপার’- লাইনটি বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুলের স্ত্রী মোবাশ্বেরা খানম বুশরা। এভাবেই বৃহস্পতিবার স্বামীর মরদেহের সামনে দাঁড়িয়ে চিরবিদায় জানান তিনি।
সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয় এই মুক্তিযোদ্ধাকে।
শহীদ মিনারে দুই মেয়ের সঙ্গে আসেন বুশরা। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘টুটুল আপাদমস্তক শিল্পী ছিলেন। নৈতিকতার প্রশ্নে আপোষ করেননি, শিল্পের চর্চা করেছেন। টুটুলের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা স্বামী-স্ত্রীর ছিল না, ছিল বন্ধুত্বের।’
গুণী এই নির্মাতাকে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে এসেছিলেন মুস্তাফা মনোয়ার, সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, মামুনুর রশীদ, মসিহউদ্দিন শাকের, ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, ইয়াসমিন হক, তারিক আনাম খান, নিমা রহমান, গাজী রাকায়েত, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, আতাউর রহমান, লিয়াকত আলী লাকী, ফরিদুর রেজা সাগর, সালাউদ্দিন লাভলু, আজাদ আবুল কালাম, সেলিম মাহবুব, আলী ইমাম প্রমুখ।
মসিহউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলী পরিচালিত ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ সিনেমার চিত্র সম্পাদক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন টুটুল।
শাকের বলেন, ‘টুটুল মুক্তিযুদ্ধ করেছে, স্বাধীন বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে।’
চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, ‘শিশুদের নিয়ে কাজ করতে গিয়েই টুটুলের সঙ্গে পরিচয়। টুটলের এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।’
অভিনেতা তারিক আনাম খান বলেন, ‘সাইদুল আনাম টুটুল আমার চাচাতো ভাই। আমাদের পরিবারের যারা এখন শিল্প-সংস্কৃতিতে যুক্ত আছে, তাদের প্রায় সবাই তাকে দেখেই অনুপ্রাণিত হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয়সহ সবার কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, টুটুলের নির্মাণাধীন চলচ্চিত্র কালবেলা যেন সম্পন্ন করা হয়।’
শ্রদ্ধা নিবেদনের শেষ ভাগে মরদেহের উপর জাতীয় পতাকা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ, রাইসুল ইসলাম আসাদসহ সবাই জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে বিদায় জানান টুটুলকে। এর আগে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে। সেখানে জানাজার পর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাইদুল আনাম টুটুল। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর।
টুটুল ২০০৩ সালে ‘আধিয়ার’ নামের একটি সিনেমা নির্মাণ করে প্রশংসিত হন। ‘ঘুড্ডি’, ‘দহন’, ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘দুখাই’র মতো সিনেমার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের টেলিভিশন নাট্য পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টর’স গিল্ডের প্রথম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন।