তিনি যাপন করে গেছেন অর্থবহ একটা জীবন: ফারুকী
অনলাইন ডেস্ক | ২৭ নভেম্বর, ২০২০ ১৫:৪৮
নির্মাতা বলেন, আমার এই নাতিদীর্ঘ জীবনেও তাঁর কাছে আছে এক বড় ঋণ
প্রয়াত আলী যাকেরের সঙ্গে কাজের স্মৃতিচারণ করলেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সেখানে বললেন, তিনি যাপন করে গেছেন অর্থবহ একটা জীবন।
শুক্রবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আলী যাকের। তিনি চার বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছিলেন। সম্প্রতি করোনায়ও আক্রান্ত হন।
দুপুরে ফারুকী ফেইসবুকে লেখেন, “খবরটা শোনার পর থেকে স্তব্ধ হয়ে আছি! জানি যাকের ভাইয়ের শরীরটা অনেক দিন ধরেই খারাপ! কিন্তু কিংবদন্তিদের বিদায়ের জন্য আমরা কখনোই প্রস্তুত থাকি না!
তিনি যাপন করে গেছেন অর্থবহ একটা জীবন! বহু মানুষের জীবনকেও করে তুলেছেন অর্থবহ! তাঁর অভিনয়, লেখালেখি, ছবি তোলা- সবকিছু নিয়েই তিনি আমাদের সংস্কৃতি জগতের মহিরুহ!
আমার এই নাতিদীর্ঘ জীবনেও তাঁর কাছে আছে এক বড় ঋণ। কখনো এটা বলার সুযোগ হয় নাই! আজকে লিপিবদ্ধ করে রাখতে চাই! নাখালপাড়া থেকে উঠে আসা বাইশ তেইশ বছরের এক যুবক আমি একদিন তাকে ফোন করে বসলাম! একটা ডকুমেন্টারি বানাচ্ছি দুবলার চরের উপর! তাঁর সাথে দেখা করতে চাই! তখনো আমি কোথাও কিছু নির্মাণ করি নাই!
নওরতন কলোনির তার রুমটায় দুপুরে আমি যখন ঢুকলাম তখন জানালা দিয়ে উনি বাইরের গাছ দেখছিলেন! এমন আগ্রহ ভরে দেখছিলেন যেন খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু! তারপর আমাকে দেখে তার চেয়েও গুরুত্ব নিয়ে তাকালেন, মনোযোগ দিয়ে শুনলেন আমি কী চাই! তিনি তখন বিশাল তারকা! আমার ডকুমেন্টারিতে,আমি চাইলাম, উনি যেন ভয়েস ওভার পাঠ করেন! ছোটলু ভাই সেই অখ্যাত আমার কথায় রাজি হলেন! রাজি হলেন কী, উনি এমন করতে লাগলেন মনে হলো আমি উনাকে নির্বাচন করার মাধ্যমে যেন একটা ফেভার করেছি! তারপর রেকর্ডিংয়ের দিন আধা ঘণ্টা আগে চলে গিয়ে আমার সাথে বসলেন রিহার্সাল করতে! আমি যেভাবে চাই সেটা কীভাবে উনি ডেলিভার করবেন সেটা নিয়ে তার যে প্রাণপণ চেষ্টা! কিছুক্ষণ পর পর জানতে চান পরিচালকের মনমতো হচ্ছে কিনা! এই যে বিনয়, এই যে আমার মতো অখ্যাত লোককে পরিচালকের সম্মান দেয়া, এটা আমার আত্মবিশ্বাস তৈরিতে কত বিশাল কাজ করেছে এটা বোঝাতে পারবো না! আত্মবিশ্বাসের চাকা পাংকচার করে দেয়ার কালচার যে দেশে চলে, সেখানে এই কাজটা যে একটা তরুণকে কতটা শক্তিশালী করে তুলতে পারে, সেটা নিশ্চয়ই বোঝা যায়!
যাকের ভাই, আমি জানি আপনি এরকম আরও বহু মানুষের জীবন অর্থবহ করে তুলেছিলেন!
আপনার চিরশান্তির জন্য দোয়া করি!”
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ২৭ নভেম্বর, ২০২০ ১৫:৪৮

প্রয়াত আলী যাকেরের সঙ্গে কাজের স্মৃতিচারণ করলেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সেখানে বললেন, তিনি যাপন করে গেছেন অর্থবহ একটা জীবন।
শুক্রবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আলী যাকের। তিনি চার বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছিলেন। সম্প্রতি করোনায়ও আক্রান্ত হন।
দুপুরে ফারুকী ফেইসবুকে লেখেন, “খবরটা শোনার পর থেকে স্তব্ধ হয়ে আছি! জানি যাকের ভাইয়ের শরীরটা অনেক দিন ধরেই খারাপ! কিন্তু কিংবদন্তিদের বিদায়ের জন্য আমরা কখনোই প্রস্তুত থাকি না!
তিনি যাপন করে গেছেন অর্থবহ একটা জীবন! বহু মানুষের জীবনকেও করে তুলেছেন অর্থবহ! তাঁর অভিনয়, লেখালেখি, ছবি তোলা- সবকিছু নিয়েই তিনি আমাদের সংস্কৃতি জগতের মহিরুহ!
আমার এই নাতিদীর্ঘ জীবনেও তাঁর কাছে আছে এক বড় ঋণ। কখনো এটা বলার সুযোগ হয় নাই! আজকে লিপিবদ্ধ করে রাখতে চাই! নাখালপাড়া থেকে উঠে আসা বাইশ তেইশ বছরের এক যুবক আমি একদিন তাকে ফোন করে বসলাম! একটা ডকুমেন্টারি বানাচ্ছি দুবলার চরের উপর! তাঁর সাথে দেখা করতে চাই! তখনো আমি কোথাও কিছু নির্মাণ করি নাই!
নওরতন কলোনির তার রুমটায় দুপুরে আমি যখন ঢুকলাম তখন জানালা দিয়ে উনি বাইরের গাছ দেখছিলেন! এমন আগ্রহ ভরে দেখছিলেন যেন খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু! তারপর আমাকে দেখে তার চেয়েও গুরুত্ব নিয়ে তাকালেন, মনোযোগ দিয়ে শুনলেন আমি কী চাই! তিনি তখন বিশাল তারকা! আমার ডকুমেন্টারিতে,আমি চাইলাম, উনি যেন ভয়েস ওভার পাঠ করেন! ছোটলু ভাই সেই অখ্যাত আমার কথায় রাজি হলেন! রাজি হলেন কী, উনি এমন করতে লাগলেন মনে হলো আমি উনাকে নির্বাচন করার মাধ্যমে যেন একটা ফেভার করেছি! তারপর রেকর্ডিংয়ের দিন আধা ঘণ্টা আগে চলে গিয়ে আমার সাথে বসলেন রিহার্সাল করতে! আমি যেভাবে চাই সেটা কীভাবে উনি ডেলিভার করবেন সেটা নিয়ে তার যে প্রাণপণ চেষ্টা! কিছুক্ষণ পর পর জানতে চান পরিচালকের মনমতো হচ্ছে কিনা! এই যে বিনয়, এই যে আমার মতো অখ্যাত লোককে পরিচালকের সম্মান দেয়া, এটা আমার আত্মবিশ্বাস তৈরিতে কত বিশাল কাজ করেছে এটা বোঝাতে পারবো না! আত্মবিশ্বাসের চাকা পাংকচার করে দেয়ার কালচার যে দেশে চলে, সেখানে এই কাজটা যে একটা তরুণকে কতটা শক্তিশালী করে তুলতে পারে, সেটা নিশ্চয়ই বোঝা যায়!
যাকের ভাই, আমি জানি আপনি এরকম আরও বহু মানুষের জীবন অর্থবহ করে তুলেছিলেন!
আপনার চিরশান্তির জন্য দোয়া করি!”