
দাম্পত্যজীবনে হতাশা নেমেছে লেখকের। যার প্রমাণ মেসেজের ছত্রে ছত্রে। মেসেজগুলো করেছেন উরফি জাভেদকে। দেখা যায়, তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন 'টু স্টেটস', 'হাফ গার্লফ্রেন্ড'-এর জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক। উরফি যদিও পাশ কাটিয়ে গিয়েছেন উত্তরে। তার পাল্টা মেসেজে অসম্মানের লেশমাত্র ছিল না। এদিকে চেতনই যখন সর্বসমক্ষে ছোট করার চেষ্টা করলেন উরফিকে, অবমাননা মেনে নিতে পারেননি বলিউডের 'ফ্যাশনিস্তা'। চেতনের আসল চেহারা সামনে আনতে এবার হোয়াটসঅ্যাপ আলাপের স্ক্রিনশট শেয়ার করলেন উরফি।
উরফিকে দিনের পর দিন এধরনের অন্তরঙ্গ বার্তায় প্রলোভন দেখাতেন তার মতো লেখক? দেখে তাজ্জব চেতন অনুরাগীরা। এবার কি মুখ লুকাতে বাধ্য হবেন স্বনামধন্য লেখক? অনেকেই মন্তব্য করেছেন ধিক্কার দিয়ে। কেউ লিখেছেন, 'সত্যি হোক বা মিথ্যা, আর কোনো সম্মান রইল না।' আবার কেউ লিখলেন, 'বলিউড সিনেমার চিত্রনাট্য দেখছি মনে হচ্ছে।'
কেউ আবার হেসেই খুন, বললেন, 'তলে তলে এত হতাশা চেতনের?'
উরফি জাভেদ এবং চেতন ভগত
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ভারতীয় যুবসমাজ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন চেতন। সেখানেই লেখক টেনে আনেন উরফিকে। চেতন ওই অনুষ্ঠানে বলেন, 'এখনকার ভারতীয় যুবসমাজ কেবল মেয়েদের ছবিতে লাইক দিতে জানে। তাই উরফি জাভেদের ছবিতে কোটি কোটি লাইক পড়ে।' এখানেই থেমে যাননি চেতন। আরও বলেন, 'একদিকে সীমান্তে থাকা জওয়ান যারা কার্গিলে বসে দেশকে রক্ষাকে করছেন। অন্যদিকে, আরেক দল কম্বলের তলায় ঢুকে উরফির ছবি দেখছে।'
লেখকের এমন মন্তব্যের পাল্টা জবাব দেন উরফি। ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী তিনি নন। লেখককে এক হাত নিয়ে মি টু আন্দোলনের সময়কার কথা চেতনকে মনে করিয়ে দেন। মি টু আন্দোলনের সময় চেতনের বিরুদ্ধে একাধিক নারী হেনস্তার অভিযোগ আনেন। তার পর অবশ্য ক্ষমা চেয়ে নেন চেতন। সেই সব স্ক্রিনশট নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে উরফি শেয়ারও করেন।
উরফি বলেন, 'ওর মতো মানুষ সব সময় মেয়েদের দোষই খোঁজেন। একজন নারীকে তার পোশাক দিয়েই বিচার করেন। তুমি বিকৃতমনস্ক বলে এমন নয় যে, মেয়েটার দোষ রয়েছে।' শেষে উরফির সংযোজন, 'উনি খামোকা আমার নাম টানলেন, দুর্ভাগ্যজনক।' এতে নিজেরই যে ভাবমূর্তি নষ্ট করলেন লেখক! নিন্দার ঝড় সমাজমাধ্যম জুড়ে। সূত্র : সিনেটেলস
‘ব্ল্যাক ওয়ার’ সিনেমায় নারী পুলিশ কর্মকর্তা ইরা চরিত্রটি বেশ সাড়া জাগিয়েছে। চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন সাদিয়া নাবিলা। অ্যাকশনধর্মী এই সিনেমায় সাবলীল অভিনয়ের মাধ্যমে নিজের মেধা ও সামর্থ্যরে জানান দিয়েছেন তিনি। দেশ রূপান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই অভিনেত্রী বললেন নিজের কাজ ও স্বপ্ন নিয়ে অনেক কিছু।
‘ব্ল্যাক ওয়ার’ সিনেমায় কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
সাদিয়া নাবিলা: সত্যি বলতে আমি যতটা প্রত্যাশা করেছিলাম, তার চেয়ে অনেক বেশি সাড়া পাচ্ছি। সিনেমায় আমার চরিত্র ইরা। বিশ্বাস ছিল এটা দর্শকদের মনে ধরবে। তবে দর্শকের ভালোবাসা যে এতটা প্রকাশ পাবে, এটা সত্যিই আমার প্রত্যাশার বাইরে ছিল।
‘মিশন এক্সট্রিম’ আপনার প্রথম সিনেমা। সেটিরই সিক্যুয়াল ‘ব্ল্যাক ওয়ার’। যদি নিজের কাজের দিক থেকে দুটি সিনেমার মধ্যে তুলনা করতে বলা হয়, তাহলে কোনটাকে এগিয়ে রাখবেন?
সাদিয়া নাবিলা: অবশ্যই ব্ল্যাক ওয়ার। কারণ ‘মিশন এক্সট্রিম’-এ পার্ট ছিল আমার ধারণা মতে, ১৫ শতাংশ। তাতেই আমি অনেক সাড়া পেয়েছিলাম। এরপর থেকেই আমি অপেক্ষায় ছিলাম, চাচ্ছিলাম ‘ব্ল্যাক ওয়ার’ আগে দর্শকরা দেখুক। ইরার পুরো প্যাকেজটা দেখুক যে ইরা কী কী অফার করতে পারে। এখন মনে হচ্ছে আমার অপেক্ষাটা সার্থক, পরিশ্রম সার্থক। অনেক গুণী লেখক, ডিরেক্টর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন ‘ব্ল্যাক ওয়ার’ দেখার পর।
‘ব্ল্যাক ওয়ার’ মুক্তির পর নতুন কোনো কাজে যুক্ত হয়েছেন?
সাদিয়া নাবিলা: এখনো কোনো কাজ কনফার্ম করিনি। কারণ আমি একটু বুঝে কাজ করতে চাই। কাজ করলেই আসলে হয়ে যায়, কিন্তু সব কাজের জন্য দর্শক যে আমাকে মনে রাখবেন তা নয়। ‘ব্ল্যাক ওয়ার’ ছবিতে যেমন ইরা চরিত্রটা প্রধান নয়। এরপরও ইরা অনেক ইমপ্যাক্ট ফেলেছে। এরকম বুঝে কাজ করতে চাই, যেখানে আমি মনে করি ইমপ্যাক্ট পড়বে। তাই একটু সময় নিচ্ছি। যদি কনফার্ম করে ফেলি, তাহলে আপনাদের মাধ্যমে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়ে দেব।
একটু যদি পেছন ফিরে যাই আপনার অভিনয়ের শুরুটা কীভাবে?
সাদিয়া নাবিলা: আমার যাত্রাটা বলিউডের একটি কাজ দিয়ে শুরু। ‘মিশন এক্সট্রিম’র আগে হয় সেই কাজটা- পারেশান পারিন্দা। ২০১৭ সালে সেটা আমি করি। এরপর ‘মিশন এক্সট্রিম’ টিম আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই বলিউডের কাজটা হুট করেই হয়ে যায়। আমি একটা সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলাম। সেখানে আমি প্রথম রানারআপ হই। এরপর সেই বলিউডের কাজটির জন্য একটি প্রোডাকশন হাউজ আমার খোঁজ করে। এরপর তো লিড রোলের জন্য সিলেক্ট করে ফেলল। এভাবেই আমার সিনেমাজগতে আসা।
এর আগে অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল?
সাদিয়া নাবিলা: সিনেমার প্রতি আমার ঝোঁকটা একদম ছোটবেলা থেকেই। আমি যখন একদম স্কুলে ছিলাম, তখন থেকেই গান-নাচের একাডেমিতে অভিনয়, ছড়া আবৃত্তি, সংস্কৃতি... সবকিছুর সঙ্গেই জড়িত ছিলাম। যখন আমার বয়স ৫ বছর, তখন থেকেই। কলেজের পরপর মডেলিং শুরু করে দিলাম। তবে আমার ভেতরে সিনেমার পোকাটা একদম ছোটবেলা থেকেই।
একটু শুনি সেই গল্পটা...
সাদিয়া নাবিলা: বাসায় আমাকে সবাই নায়িকা বলেই ডাকত। কারণ টিভি দেখলেই আমি পয়েন্ট করে বলতাম, বড় হলে এমন হব। নায়িকা শব্দটা অনেক বলতাম। নানু, খালামণিসহ সবাই নায়িকা বলে ডাকতেন। বলতেন, ‘এই নায়িকা এদিকে আয়’। ঝোঁকটা তাই ছোটবেলা থেকেই ছিল। মাল্টি ট্যালেন্টেড হয়ে যাতে বড় হই, বাবা-মা সেটাই চাইতেন। নাচ-গান করেই আসলে বড় হওয়া। এখন মনে হয়, এগুলো আমার জন্য ট্রেনিং ছিল।
ছোটবেলায় কার মতো হতে চাইতেন?
সাদিয়া নাবিলা: (হেসে) কারও মতো না। যার কাজই ভালো লাগত, যাকে দেখতাম সুন্দর করে সাজগোছ করেছে, তখনই তার মতো হতে চাইতাম। যেন দর্শকরা বলেন- ‘ওয়াও’।
তারপরও যদি প্রিয় অভিনেত্রীর কথা বলতে বলা হয়...
সাদিয়া নাবিলা: আমার ছোটবেলা কেটেছে সৈয়দপুরে। সেখানে একটি হল ছিল। যেটার পরিস্থিতি খুব একটা ভালো ছিল না। আর আমার বাবা ছিলেন আর্মিতে। আমাকে তাই অনেক নিরাপদ পরিবেশের মধ্যেই বড় করা হয়। আমি যখন বড় হচ্ছি, তখন শোনতাম ভালো পরিবারের ছেলেমেয়েরা সিনেমা হলে যায় না। এরকম একটা পরিবেশে আমার বড় হওয়া। আমার জন্য সিনেমা বলতে তখন বিটিভিতে যে সিনেমা দেখানো হতো সেটাই ছিল। বিটিভিতে তখন শাবনূর ম্যাডামদের সিনেমা খুব চলত। নির্দিষ্ট করে একজন কেউ নেই। তবে এখন একজন বলতে বললে মনে পড়ছে, হ্যাঁ তখন বিটিভিতে বেশিরভাগ সিনেমা দেখানো হতো শাবনূর ম্যামের।
আপনার স্কুল-কলেজ সৈয়দপুরে। অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দিলেন কবে?
সাদিয়া নাবিলা: ২০১২ সালে কলেজের পরপর আমি অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাই। আমার ভাইয়া অস্ট্রেলিয়াতে আছেন অনেক বছর ধরে। তার পড়াশোনাও সেখানে। তিনি একদিন জানতে চাইলেন, আমি অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা নিতে চাই কি-না। আমি বলেছি, কেন নয়। এটা বলেই চলে যাওয়া। সেখানে আমি আইটিতে পড়াশোনা করেছি। আমার কাজের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা সাবজেক্ট। আসলে ছোটবেলা থেকেই নিজেকে প্রমাণ করার খুব ইচ্ছে আমার। চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ইচ্ছে। একটা বিষয় খুব মাথায় থাকত। সৈয়দপুরের মতো শহরে আমার বাবা-মা আমাকে এত সাপোর্ট করেছেন, তাদের নিয়ে যেন কেউ কখনো কথা বলতে না পারে। পড়াশোনাতে আলহামদুলিল্লাহ এগিয়ে থাকতাম সবসময়। এসএসসি ও এইচএসসি দুটিতেই গোল্ডেন এ-প্লাস পেয়েছি। সবদিক থেকে যেন এগিয়ে থাকি, এই চেষ্টা ছিল। সবকিছু মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ।
বাবা-মা আপনার সফলতায় কতটা খুশি?
সাদিয়া নাবিলা: তারা খুবই খুশি।
তারা কি এখনো সৈয়দপুরেই থাকেন?
সাদিয়া নাবিলা: কভিডের আগে বছরের অর্থেক সময় অস্ট্রেলিয়ায় এবং অর্ধেক সময় বাংলাদেশে থাকতেন। আমিও যাওয়া-আসার মধ্যে থাকতাম। দেশে থাকলে সৈয়দপুরেই থাকেন।
আপনাদের গ্রামের বাড়ি কোথায়?
সাদিয়া নাবিলা: আমাদের বাড়ি মূলত শরীয়তপুরে। তবে বাবার চাকরিসূত্রে আমার পুরো শৈশব কেটেছে সৈয়দপুরে। সেখানেই এখন আমাদের স্থায়ী নিবাস। এখানে আরেকটা ব্যাপার বলি। আমার পুরো লাইফ জার্নিটাই আসলে ইন্টারেস্টিং। আমি ছোটবেলায় এই যে এত একাডেমির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, বাবার অফিসে যে কমান্ডার আঙ্কেল ছিলেন, আমার কথা চিন্তা করে বাবার পোস্টিং কখনো অন্য কোথাও করেননি। কারণ আমার পড়াশোনা বা সাংস্কৃতিক কাজের ব্যাঘাত ঘটবে। এখন চিন্তা করলে মনে হয়, সবার কাছ থেকে অনেক সাপোর্ট আমি পেয়েছি।
অভিনয় নিয়ে কি স্বপ্ন দেখেন? কোথায় নিয়ে যেতে চান নিজেকে?
সাদিয়া নাবিলা: আমার মনে হয় স্বপ্নের শুরুটা এরই মধ্যে হয়ে গেছে। বিশেষ করে যেদিন থেকে আমি নিজের কাজ বড় পর্দায় দেখেছি। এখন স্বপ্ন হচ্ছে- এমন সব কাজ করতে চাই, যা দর্শকের মনে থাকবে। তারা যাতে বিশ্বাস করে, সাদিয়া নাবিলার কাজ ভালো বা সাদিয়া নাবিলা ভালো একজন অভিনেত্রী। দর্শকরা আমাকে ভালোবাসবে, এমন একটা জায়গা তৈরি করতে চাই।
'স্পাই ইউনিভার্স' তৈরি করছে যশরাজ ফিল্মস। ছবির শুরুতেই তা স্পষ্ট। মানে এমন এক ব্রহ্মাণ্ড যেখানে বলিউডের বিপরীত মেরুও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বক্স অফিসের স্তম্ভ হয়ে দাঁড়ায়। যেখানে ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধ নেই। যেখানে নায়ক সুপারহিরো। অমর। অপরাজেয়। ছুরি, কাঁচি, বন্দুক, মিসাইল, কিচ্ছুতে তার চুলও ব্যাঁকাতে পারবে না। সে নিজের কাজ ঠিক মতো করে দেশকে বাঁচাবেই। আর নায়িকা? বিকিনি আর হিল পরেই অবলীলায় দুষ্টের দমন করবে। গুলি খেয়েও মেকআপ আর হেয়ার থাকবে টিপটপ!
'পাঠান' সেই ব্রহ্মাণ্ডের ছবি। আদ্যোপান্ত অ্যাকশন। গল্প-ইমোশন-প্রেম সবই অলঙ্কার মাত্র। স্পাই ফিল্ম, একগুচ্ছ বিদেশের লোকেশন, কুহকিনী নায়িকা। কিন্তু বন্ড ছবি হতে হতেও যেন হলো না। তাতে চিত্রনাট্যের দুর্বলতা ছাড়াও দায়ী আরও অনেক কারণ। যার মধ্যে অন্যতম অবশ্যই সেন্সর বোর্ডের ছুরি-কাঁচি।
জানা গেছে, ছবিতে ১০টিরও বেশি অংশ বাদ পড়েছে। তার বেশির ভাগই অবশ্য সংলাপ। কিছু গালিগালাজ বাদ দেওয়া হয়েছে। তাতে ছবি সংশাপত্র পেলও, ছবির স্বাদ ফিকে হলো। আন্তর্জাতিক মানের গুপ্তচর যখন তার আর্চএনিমির মুখোমুখি হয়, তখন তারা কি এত মার্জিত ভাবে কথা বলে? কে জানে? বন্ডের দর্শক খুব একটা অভ্যস্ত নন। বাদ পড়া সংলাপ হয়তো ছবির গল্পে আরও খানিকটা বিশ্বাসযোগ্যতা এনে দিতে পারত। কিংবা হয়তো ছবিতে আরও বেশি হিউমার যোগ করতে পারত। দু'বছর ধরে করোনাকালে ওটিটিতে দর্শক যখন এসবে অভ্যস্ত, তখন বড় পর্দায় আর এসব ভনিতা কেন! 'পাঠান'-এর স্বাদ ফিকে করা কেন?
সেন্সরের কোপে আর কি হারাল 'পাঠান'? না, হাজার বিতর্ক হলেও বাদ পড়েনি গেরুয়া বিকিনি। দীপিকা পাড়ুকোন সেটি দিব্যি পরেছেন। কয়েক সেকেন্ডের পর সেটির ওপর একটি স্যারং চাপালেও সেই গেরুয়া বিকিনিতেই কিন্তু ছবির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিকোয়েন্স শুট করেছেন। 'বেশরম রং' গানের পরও অনেকক্ষণ তিনি এই বেশেই ছিলেন। এবং বুঝিয়ে দিয়েছেন গেরুয়া বিকিনিতে তিনি শুধু দেশের তরুণদের 'বিপথে' নিয়ে যাওয়ার উসকানি দেন না, বরং নায়ককে বাঁচাতেও পারেন, দেশের রক্ষাও করতে পারেন। তাই শেষে জয় হয় গেরুয়া বিকিনিরই! সূত্র : আনন্দবাজার
কর্মঠ তিনি, আবার বিদ্রোহীও বটে। পান থেকে চুন খসলে বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন কঙ্গনা রানাউত। যার জেরে বন্ধ করে দিতে হয় তার টুইটার হ্যান্ডল। তবে কিছুতেই তার কোনো ভয় নেই। ২০ মাস পর আবার রাজপাট ফিরে পেয়েছেন সদ্য। টুইটারে ব্লক খুলতেই ফের এসে পড়েছেন জমে থাকা কথার বোঝা নিয়ে। 'পাঠান' দেখার আগে বক্স অফিসে যে হইহই হচ্ছে, শুরুতে তা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ছবিটি দেখে প্রশংসায় ভরিয়েছেন অভিনেত্রী।
তবে কঙ্গনা শুধু অভিনেত্রী নন আর। সদ্য শেষ করেছেন 'ইমার্জেন্সি' ছবির শুটিং। 'মণিকর্ণিকা : দ্য কুইন অফ ঝাঁসি'র পর ফের পরিচালকের চেয়ারে কঙ্গনা রানাউত। সঙ্গে ছবির প্রযোজনায় কঙ্গনারই প্রযোজনা সংস্থা 'মণিকর্ণিকা ফিল্মস'। ছবির শুটিং শেষ হওয়ার পর নিজের নানা অভিজ্ঞতার কথা সোশালে শেয়ার করেন 'কুইন' খ্যাত অভিনেত্রী।সোশালে পোস্ট করেন সেটের কিছু ছবিও। বিবরণীতে কঙ্গনা জানান, এই ছবি করতে গিয়ে বার বার বাধার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। ডেঙ্গুতে ভুগেছেন, শরীর অসুস্থ থাকাকালীনও শুটিং করতে হয়েছে তাকে। এমনকি, ছবির খরচ বহন করতে গিয়ে তাকে নিজের সব সম্পত্তি বন্ধক রাখতে হয়েছে বলেও দাবি পদ্মশ্রী পাওয়া অভিনেত্রীর। যদিও লড়াইটা বজায় ছিল শুরু থেকেই।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে কঙ্গনা বলেন, প্রতি মুহূর্তেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে গিয়েছি। যখন মুম্বাইয়ে পা রেখেছিলাম, সঙ্গে ছিল মাত্র ৫০০ টাকা। তাই যদি সর্বস্বান্তও হয়ে যাই, আবার শক্তি সঞ্চয় করে ঘুরে দাঁড়াতে পারব, সেই সাহস আছে। টাকাপয়সা, সম্পত্তি আমার কাছে বড় নয়। এ সবের কোনো অর্থ নেই।
২০২১-এ 'ইমার্জেন্সি' ছবির ঘোষণা করেন কঙ্গনা রানাউত। ছবিতে দেশের অন্যতম আলোচিত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন 'গ্যাংস্টার' খ্যাত অভিনেত্রী। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন অনুপম খের, শ্রেয়স তলপড়ে, মহিমা চৌধুরী ও মিলিন্দ সোমন। চলতি বছরে মুক্তি পেতে চলেছে এই ছবি।
চার বছর পর বড়পর্দায় ফিরেছেন বলিউড 'বাদশা' শাহরুখ খান। তার প্রত্যাবর্তন যে রাজকীয় হবে, তা নিয়ে বিশেষ সন্দেহ ছিল না। কিন্তু 'পাঠান' প্রত্যাশা ছাপিয়ে গেল। এমনটাই বলছে সংবাদমাধ্যম।
বলিউডে করোনা মহামারীর পর থেকে বক্স অফিসের সাফল্য হাতেগোনা। প্রায় নেই বললেও চলে। ফিকে হয়ে আসা সেই বলিউডপ্রীতি দর্শকের মনে জাগিয়ে তুলেছেন শাহরুখ। তার ছবির প্রথম দিনের রোজগার থেকেই তা পরিষ্কার।
তবে প্রত্যাশার মাত্রা অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে 'পাঠান'। ছবিটি দ্বিতীয় দিনে ৭০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। একে প্রজাতন্ত্র দিবসের ছুটি, তার ওপর বাংলায় সরস্বতী পূজা, দলে দলে শাহরুখ, দীপিকা আর জন আব্রাহামের অ্যাকশন দেখতে গেছেন মানুষ।
সংবাদমাধ্যমে বলছে, দ্বিতীয় দিনের শেষে দেশে 'পাঠান' ছবির মোট রোজগার ১২৫ কোটি টাকার বেশি। কিং খানের হাত ধরেই বলিউডের ছবি দেখতে আবার হলমুখী জনতা।
করোনা মহামারীর পর বক্স অফিসে একচেটিয়া সাফল্য পাচ্ছিল দক্ষিণী ছবি। 'পুষ্পা : দ্য রাইস', 'আরআরআর', 'কেজিএফ ২' নজির গড়েছিল বক্স অফিসে। বলিউডের ছবি আর হলে গিয়ে দেখছিলেন না অনেকেই। তবে ৫৭ বছর বয়সে নায়করূপে শাহরুখের চেনা কারিশমা দেখতে সিনেমা হলে ভিড় উপচে পড়েছে। দেশ, বিদেশে সমস্ত নজির ছাপিয়ে যাচ্ছে 'পাঠান'।
'পাঠান'-এর মতো আর কোন হিন্দি ছবি দেখতে দর্শক এত ভিড় করেছিলেন? আর কোন কোন ছবি প্রেক্ষাগৃহে নজির গড়েছিল? প্রথম দু'দিনেই ১২৫ কোটি পার করার মতো নজির আর কোনো ছবিতে আছে কি?
পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত ভারতে মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি ছবিগুলির মধ্যে 'পাঠান'-এর প্রথম দু'দিনের রোজগারই সবচেয়ে বেশি। মাত্র দু'দিনে ১২৫ কোটির গণ্ডি ছোঁয়ার নজির আর কোনো হিন্দি ছবির নেই।
দক্ষিণী ছবির ব্যবসায়িক আয়কেও ছাপিয়ে গিয়েছে 'পাঠান'। গত বছর মুক্তি পেয়েছিল 'কেজিএফ ২'। এতদিন পর্যন্ত ভারতীয় ছবির প্রথম দিনের ব্যবসার নিরিখে শীর্ষে ছিল এই ছবি। প্রথম এবং দ্বিতীয়, দু'দিনেই 'কেজিএফ ২'-কে হারিয়ে দিয়েছে 'পাঠান'।
প্রথম দু’দিনের আয়ের নিরিখে হিন্দি ছবির তালিকায় শীর্ষে ছিল হৃতিক রোশন এবং টাইগার শ্রফ অভিনীত 'ওয়ার'। ২০১৯ সালের এই ছবি প্রথম দিনে ৫৩ কোটি, দ্বিতীয় দিনে ২৩ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল। দু'দিনের মোট আয় হয়েছিল প্রায় ৭৫ কোটি টাকা।
২০১৮ সালে অমিতাভ বচ্চন, আমির খান অভিনীত 'ঠগস অব হিন্দুস্তান' ছবিটিও বক্স অফিসে জমিয়ে ব্যবসা করে। মুক্তির দিনেই এই ছবির আয় ছিল ৫২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। দ্বিতীয় দিনে ২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা রোজগারের পর দু'দিনের মোট আয় দাঁড়ায় ৮১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
২০১৪ সালে মুক্তি পায় 'হ্যাপি নিউ ইয়ার'। শাহরুখ খান, দীপিকা পাডুকোন, অভিষেক বচ্চন অভিনীত ছবিটি প্রথম দিনে ৪৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকার ব্যবসা করেছিল। দ্বিতীয় দিনে এই ছবি বক্স অফিস থেকে রোজগার করে ৩১ কোটি টাকা। দু'দিনের মোট আয় ৭৬ কোটি টাকার বেশি।
২০১৯ সালে সলমন খান, ক্যাটরিনা কাইফ অভিনীত 'ভারত' ছবিটিও বক্স অফিসে ভালো ব্যবসা করেছিল। ছবিটি প্রথম দিনে ৪২ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যবসা করে। দ্বিতীয় দিনে 'ভারত'-এর আয় ছিল ৩১ কোটি টাকা। দু'দিনে ছবিটি মোট ৭৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
দক্ষিণের 'বাহুবলী ২' বক্স অফিসে নজির গড়েছিল। তবে 'পাঠান'-এর আয়ের ধারেকাছে নেই সেই ছবির রোজগার। দু'দিনে 'বাহুবলী ২' মোট ৮৭ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল।
ব্যবসার নিরিখে একের পর এক বলিউড ছবিকে ছাপিয়ে গিয়েছে 'পাঠান'। কিং খানের 'রাজকীয়' প্রত্যাবর্তন ফিকে করে দিয়েছে দক্ষিণী ছবির সাফল্যকেও। প্রথম দু'দিনের রোজগার দেখে অনেকে আন্দাজ করছেন, এই ছবি প্রথম সপ্তাহের শেষে ২৬০ কোটি টাকার ব্যবসা করে ফেলতে পারে।
কেউ বলছেন- ‘জয় শাহরুখ’, আবার সিনেমা হলেই কেউ চিৎকার করে বলছেন- ‘হিন্দুস্তান কি শান, শাহরুখ খান’। চার বছর ধরে অপেক্ষার পর নতুন সূর্যোদয় শাহরুখের ক্যারিয়ারে। ‘পাঠান’-এর বক্স অফিস রিপোর্ট দেখে নিঃসন্দেহে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন শাহরুখ খান। গতকাল (বুধবার) বিশ্বের প্রায় ৮০০০ স্ক্রিনে মুক্তি পেয়েছে যশ রাজ ফিল্মসের ‘পাঠান’। প্রথম দিন একাধিক রেকর্ড গুঁড়িয়ে দিল পরিচালক সিদ্ধার্থ আনন্দের এই ছবি। প্রথম দিন কেবলমাত্র ভারতের বক্স অফিসেই ৫৩ কোটি টাকা কামাই করেছে এই ছবি।
হিন্দি, তামিল ও তেলুগু সংস্করণ মিলিয়ে মোট ৫৩ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে শাহরুখ খানের ছবি। এর সুবাদেই আমির খানের ‘ঠগস অফ হিন্দুস্তান’-এর রেকর্ড ভেঙে দিল বাদশার ছবি। প্রথম দিনের আয়ের নিরিখে বলিউডি ছবির মধ্যে এতদিন এক নম্বরে ছিল ‘ঠগস অফ হিন্দুস্তান’ (৫০ কোটি), এবার সেই রেকর্ড গেল ‘পাঠান’-এর ঝুলিতে।
শুধু ভারতের বক্স অফিসেই নয়, বিদেশের বক্স অফিসেও শাহরুখ খানের ধুম! ট্রেড অ্যানালিস্ট রমেশ বালা জানিয়েছেন প্রথম দিনই বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে ১০০ কোটির বেশি গ্রস কালেকশন করেছে ‘পাঠান’। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুরে পুরোনো সব বলিউডি ছবির রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন কিং খান। প্রথমদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১ মিলিয়ন ডলার কামিয়েছে এই ছবি।
বক্স অফিস বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেছিলেন পাঠান-এর প্রথম দিনের কালেকশন থাকবে ৩৫-৪০ কোটির আশেপাশে। তাদের ধারণাতীত পারফর্ম করে চমকে দিলেন শাহরুখ-দীপিকারা।
ফিল্ম এক্সবিটর অক্ষয় রাঠি জানিয়েছেন, ‘পাঠান কেবলমাত্র ইন্ডিয়াতেই প্রথম দিন ৫৩ কোটির ব্যবসা করেছে। ছবির প্রথম শো শেষ হওয়ার আগে থেকে আশ্চর্যজনকভাবে ছবির অ্যাডভ্যান্স বুকিং-এর মাত্রা দেশজুড়ে বেড়েছে। এটা একটা ঐতিহাসিক কামব্যাক, এই প্রত্যাবর্তনটা শুধু শাহরুখের নয়, সার্বিকভাবে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির।’
শুধু ঠগস অফ হিন্দুস্তানই নয়, হৃতিকের ‘ওয়ার’-এর প্রথম দিনের আয়ের রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছে ‘পাঠান’। কেবলমাত্র কেজিএফ টু-র হিন্দি ভার্সনের কালেকশনকে অল্পের জন্য পার করতে পারেননি শাহরুখ।
ছবির স্ক্রিনিং শুরুর পর টিকিটের চাহিদা দেখে আরও ৩০০টি অতিরিক্ত শো যোগ করা হয় প্রথম দিন। শাহরুখ ভক্তদের চাপে মধ্যরাতের পরেও থিয়েটারে ‘পাঠান’-এর শো চলছে।
একের পর এক ফ্লপের ভারে জর্জরিত শাহরুখ খান ‘জিরো’র (ডিসেম্বর, ২০১৮) পর লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের দুনিয়া থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। দীর্ঘ তিন বছর পর ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে ‘পাঠান’-এর শ্যুটিং শুরু করেন শাহরুখ। ছবির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করতে আরও লম্বা সময় লাগিয়েছেন কিং খান। শাহরুখের রাজকীয় প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় ছিল ভক্তরা, সমালোচকরা আগেই বলেছিলেন ‘পাঠান’ শাহরুখের ক্যারিয়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছবি হতে চলেছে, প্রত্যাশার পারদ শুরু থেকেই চড়ছিল এই ছবিকে ঘিরে। সেই প্রত্যাশা পূরণে পুরোপুরি সফল শাহরুখ, এমনটা বলাই যায়।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
ঝালকাঠির রাজাপুরে ট্রাকচাপায় অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যসহ দুই মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার ঝালকাঠি-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের নৈকাঠি পালেরবাড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত দুই মোটরসাইকেল আরোহী হলেন- উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব রাজাপুর এলাকার মৃত আব্দুল করিম হাওলাদারের ছেলে মো. আলী হায়দার মহারাজ (৫৩) ও একই ইউনিয়নের আংগারিয়া গ্রামের মৃত নাজেম আলী তালুকদারের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন শাহিন (৫৬)। নিহতরা একে অপরের মামাতো ও ফুপাতো ভাই।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, মংলা বন্দর থেকে ছেড়ে আসা একটি কাভার্ডভ্যান বরিশালের দিকে যাচ্ছিলো। এসময় রাজাপুর থেকে পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল মোটরসাইকেল আরোহীরা। পথিমধ্যে নৈকাঠি পালের বাড়ি এলাকায় ট্রাকটি মোটরসাইকেল আরোহীদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে রাজাপুর থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে এবং লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
এ ঘটনার পর চালক ট্রাক নিয়ে পালিয়ে গেলেও রাত ১১টার দিকে রাজাপুর সদর হাসপাতালের সামনে থেকে ট্রাকটি জব্দ করে পুলিশ।
রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলক চন্দ্র রায় বলেন, চালক পালিয়ে গেলেও ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। পরিবারের কোন আপত্তি না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হবে।
আইন অনুযায়ী তরল জ্বালানির মূল্য নির্ধারণের একক ক্ষমতা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) হলেও তাদের তা করতে দেওয়া হয় না। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের একক এখতিয়ার কমিশনের থাকলেও সম্প্রতি সেটিও খর্ব হয়েছে।
সরকারের নির্বাহী আদেশ আর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের হস্তক্ষেপের কারণে লাইসেন্সসংক্রান্ত কাজের পাশাপাশি সীমিত পরিসরে বিরোধ মীমাংসা ছাড়া আর কিছুই এককভাবে করতে পারছে না জ্বালানি খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফলে ভোক্তার মতোই কমিশনও অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে কমিশনের মোট জনবল সংখ্যা ৮৪। প্রতি বছর বেতনভাতা ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। দিনে দিনে ক্ষমতা খর্ব হওয়ায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ কী বা এ কমিশনের কোনো প্রয়োজন আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জানতে চাইলে বিইআরসির সদস্য মোহাম্মদ মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী গত সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, “এখন শুধু লাইসেন্সসংক্রান্ত কিছু কাজ আর ‘আরবিট্রেশনটা’ (বিরোধ মীমাংসা) কমিশনের হাতে আছে। দরকার হলে দুদিন পর সরকার সেটাও ‘উইথড্র’ (প্রত্যাহার) করবে। যখন দেখবে আরবিট্রেশনগুলো সুবিধাভোগীদের বিপক্ষে যাচ্ছে তখন এটাও উইথড্র হবে। সরকারের নির্বাহী ক্ষমতায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সুযোগ রেখে যে আইন হলো তা করা হয়েছে তাদের মোটাতাজা করার জন্য।” তিনি বলেন, ‘নতুন এ আইন করার ফলে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের কাছ থেকে দূরে গেল না কাছে এলো সেই বিষয়টা অনুধাবন করা দরকার।’
খানিকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বিইআরসির এ সদস্য বলেন, ‘আমার মেয়াদ আছে আর কয়েক দিন। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করিনি। কারণ আমার বাবা আমাকে শিখিয়েছেন যেটা তোমার পছন্দ হবে না সেই কাজ তুমি করবে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছি।’
বিইআরসির কার্যাবলির প্রথমেই জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি, জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করা, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিশ্চিত এবং এনার্জি অডিটের মাধ্যমে জ্বালানি ব্যবহারের খরচের হিসাব যাচাইয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে এগুলোর বাস্তবায়ন নেই বললে চলে। অন্যদিকে জ্বালানি খাতে প্রতিযোগিতামূলক বাজার নিশ্চিত করা এবং সরকারকে সুপারিশ করা কমিশনের কার্যাবলির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও এর বাস্তবায়ন তেমন একটা চোখে পড়ে না।
উচ্চ আদালতের আদেশে কমিশন প্রতি মাসে এলপি গ্যাসের মূল্য সমন্বয় শুরু করেছে। কিন্তু বাজারে কখনই বিইআরসি ঘোষিত মূল্যহার অনুযায়ী এলপি গ্যাস পাওয়া যায় না। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গ্যাস বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানির সামান্য সিস্টেম লস কমাতে পারে না কমিশন। সেখানে অন্যান্য কাজ কীভাবে করবে? বিইআরসি নির্দেশ দেয়। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয় না। এ জন্য কিছু করারও সক্ষমতা নেই কমিশনের।’
সূত্রমতে, অভিযোগের ভিত্তিতে বিইআরসি আইন অনুযায়ী লাইসেন্সি প্রতিষ্ঠান ও ভোক্তার মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করে কমিশন। কিন্তু গত ১০ বছরে কমিশনে ৩৭৮টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে ২১০টি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তির হার কম হওয়া এবং জনসচেতনার অভাবে ভোক্তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ কম করা হয় বলে অনেকে মনে করেন।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিইআরসির ক্ষমতা খর্ব করতে করতে প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা ভোক্তার জন্য এবং বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত তথা সামগ্রিক দেশের জন্য অশনিসংকেত।’ তিনি বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত পুরোপুরি কারিগরি। এর সঙ্গে আইনের নানারকম বিষয় জড়িত। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের এসব বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সই করা ছাড়া তারা কিছুই করে না। এভাবে তো সাধারণ মানুষের কল্যাণ সম্ভব নয়। বিইআরসি গণশুনানির মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করত বলে সেখানে কিছুটা হলেও বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতা করতে হতো। তাদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার সুযোগ ছিল। সেখানে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল বলে কোম্পানিগুলোও যেনতেন হিসাব উপস্থাপন করে মূল্যহার বাড়ানোর ব্যাপারে কঠিন চ্যালেঞ্জর সম্মুখীন হয়। কিন্তু আইন সংশোধনের কারণে সেই সুযোগ আর থাকল না। তড়িঘড়ি করে করা এ সংশোধন অসাধু ব্যবসাকে সুরক্ষা দেবে বলে তিনি দাবি করেন।
শামসুল আলম মনে করেন, বিইআরসি আইন সংশোধন করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিয়ে ক্ষমতার সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে সরকার। অন্যদিকে বিইআরসি আইন অনুযায়ী তরল জ্বালানির মূল্য নির্ধারণের একক ক্ষমতা বিইআরসির হলেও তারা তা করতে পারে না। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ আইন লঙ্ঘন করে অনেক আগে থেকেই অবৈধভাবে তরল জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করে আসছে।
খাতসংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) নিজে তরল জ্বালানি ব্যবসায়ী তথা বিইআরসির লাইসেন্সি হওয়া সত্ত্বেও ফার্নেস অয়েলের মূল্য বিপিসিই নির্ধারণ করে। আর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাইরে অন্যসব কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি তেলের ক্রয়-বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়। এসব ক্ষেত্রে সিস্টেম লসের নামে তেল চুরি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেল ও কয়লার ব্যবহার বেশি দেখানো হয়। ফলে উৎপাদন ব্যয় বাড়ে।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন কোম্পানি এবং সংস্থার পরিচালনা বোর্ডে পদাধিকারবলে মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্য কর্মকর্তা কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যান ও পরিচালক। ফলে ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় বিইআরসি এসব প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সময়ে নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়ন হয় না।
সরকারের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রবল চাপে ২০০৩ সালের মার্চ মাসে বিইআরসি আইন করা হয়। এরপর ২০০৫, ২০১০ ও ২০২০ সালে এ আইন সংশোধন করা হয়। এর মধ্যে আইনের ৩৪ ধারার উপধারা-৫-এ উল্লেখযোগ্য সংশোধনী আনা হয় ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর। এর আগে বছরে সর্বোচ্চ একবার বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম সমন্বয় বা পুনর্নির্ধারণের সুযোগ থাকলেও নতুন ওই সংশোধনীতে একাধিকবার দাম পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হয়। এর ফলে গ্রাহকের কাঁধে এক বছরেই একাধিকবার দাম বৃদ্ধির খড়গ নেমে আসে।
সম্প্রতি বিইআরসির পাশাপাশি সরকারকে ভোক্তাপর্যায়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম পুনর্র্নির্ধারণ ও সমন্বয় করার ক্ষমতা দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। এরপরই গণশুনানি ছাড়াই চলতি মাসে এক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাহী আদেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।
সরকারের ওই আদেশ জারির আগে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর আবেদন নিয়ে গত ৮ জানুয়ারি গণশুনানি করেছিল বিইআরসি। চলতি মাসে মূল্যসংক্রান্ত নতুন আদেশ দেবে বলে জানিয়েছিল কমিশন। কিন্তু এর মধ্যেই গত ১২ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সরকার। এরপর বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে বিইআরসির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
বিইআরসির আইন অনুযায়ী, গণশুনানির মাধ্যমে দাম সমন্বয় হবে। এ ক্ষেত্রে বাড়তেও পারে কমতেও পারে। কিন্তু বিইআরসির দাম কমানোর কোনো নজির নেই। গণশুনানিতে ভোক্তারা দাম কমানোর বিষয়টি যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করলেও তা আমলে না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। দাম বাড়ানোর সময় অবশ্য সংস্থাগুলোকে সাশ্রয়ী ও দক্ষ হওয়ার পরামর্শসহ নানারকম শর্ত জুড়ে দেয় কমিশন।
তবে বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানির প্রস্তাব অনুসারে, কখনই দাম বাড়ায়নি বিইআরসি। এর আগে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৬৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব এলেও বিইআরসি বাড়িয়েছে ২০ শতাংশ। গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব এলে বিইআরসি বাড়িয়েছে প্রায় ২৩ শতাংশ।
চলতি বিপিএলে দারুণ খেলছেন পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার ওয়াহাব রিয়াজ। ৬ ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে এখনও পর্যন্ত আসরের সর্বাধিক উইকেট শিকারি খুলনা টাইটান্সের এই তারকা। মাঠে দারুণ সময় কাটানো ৩৭ বছর বয়সী এবার মাঠের বাইরে থেকে পেলেন দারুণ এক সুখবর। বিপিএল চলাকালেই মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পেলেন তিনি।
পাকিস্তান জাতীয় দলের সাবেক পেসারকে পাঞ্জাব তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্রীড়া মন্ত্রী করা হয়েছে। দেশটির খেলাধুলা বিষয়ক জনপ্রিয় চ্যানেল ‘এ’ স্পোর্টস এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মহসীন নাকভির অধীনে ক্রীড়া মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ওয়াহাব। সব সংস্করণ মিলিয়ে যিনি দেশের হয়ে ১৫৬ ম্যাচ খেলেছেন। উইকেট নিয়েছেন ২৩৭টি।
২০১৭ সালে পাকিস্তানের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ী দলের সদস্য ছিলেন ওয়াহাব। জাতীয় দলের হয়ে সবশেষ খেলেছেন তিনি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে।
চলতি বিপিএলে বিশ্বের ষষ্ঠ বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে ৪০০ উইকেটের মাইলফলকও ছুঁয়েছেন ওয়াহাব। সব মিলিয়ে মাঠ ও মাঠের বাইরে দারুণ সময় কাটছে তার।
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মিক্সড ডাবলসে হেরে গিয়ে গ্র্যান্ড স্ল্যামকে বিদায় জানিয়েছেন সানিয়া মির্জা। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকালে শেষ হয় সেই ম্যাচ। যে ম্যাচের প্রায় দশ ঘণ্টা পর স্ত্রী সানিয়াকে শুভেচ্ছা জানান শোয়েব মালিক। এই মুহূর্তে বিপিএলে ব্যস্ত সময় কাটানো পাকিস্তানের ক্রিকেটার জানিয়েছেন, স্ত্রীর কৃতিত্বে তিনি গর্বিত।
গ্র্যান্ড স্ল্যামে সানিয়া শেষ ম্যাচ খেলার পর থেকেই দেশ-বিদেশ জুড়ে অগণিত বার্তা পেয়েছেন। কিন্তু শোয়েবের বার্তা কিছুতেই পাওয়া যাচ্ছিল না। দু’জনের মধ্যে তৈরি হওয়া সাম্প্রতিক দূরত্বের জল্পনা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল এই নৈঃশব্দ্য। অবশেষে শুক্রবার সন্ধ্যার পর টুইট করেন শোয়েব।
সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক লিখেছেন, ‘খেলাধুলোর জগতে সব নারীদের কাছেই তুমি আশার প্রতীক ছিলে। গোটা টেনিস জীবনে যা যা অর্জন করেছ, তার জন্য অত্যন্ত গর্বিত। তুমি অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা। এ ভাবেই শক্তিশালী হয়ে আগামী দিনে এগিয়ে যাও। অবিশ্বাস্য টেনিস জীবনের জন্যে অনেক শুভেচ্ছা।’
আরও পড়ুন
বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে আজও শীর্ষ অবস্থানে রাজধানী ঢাকা। এনিয়ে টানা আটদিন শীর্ষে রয়েছে ঢাকা।
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) স্কোর ২২১ রেকর্ড করা হয়েছে। যার অর্থ হলো জনবহুল এ শহরের বাতাসের মান ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে রয়েছে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার এ তালিকা প্রকাশ করেছে।
২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে একিউআই স্কোর 'খুবই অস্বাস্থ্যকর' বলা হয়, যেখানে ৩০১ থেকে ৪০০ এর স্কোর ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
এ তালিকায় ২১৬ একিউআই স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে পাকিস্তানের লাহোর; ১৯০ নিয়ে তৃতীয় ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাই। এরপর চতুর্থ স্থানে থাকা মঙ্গোলিয়ার উলানবাটোরের স্কোর ১৮৭ এবং পঞ্চম স্থানে থাকা উজবেকিস্তানের তাসখন্দের স্কোর ১৭১।
মেগাসিটি ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে ভুগছে বায়ুদূষণে। এর বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদফতর ও বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঢাকার বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো: ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলা।
বর্তমানে শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে নির্মাণকাজ, রাস্তার ধুলা ও অন্যান্য উৎস থেকে দূষিত কণার ব্যাপক নিঃসরণের কারণে ঢাকা শহরের বাতাসের গুণমান দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে।
রাজপথে খালি পায়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে স্লোগান দিচ্ছে এক পথশিশু। পেছনে বিক্ষুব্ধ মিছিল। শিশুটির পরনে চার পকেটের হাফপ্যান্ট; গেঞ্জিটা কোমরে বাঁধা। কণ্ঠে স্বৈরতন্ত্রের কবর রচনার হুঙ্কার। দৃঢ় চোয়ালে অগ্নিস্পর্ধী সাহসিকতার বহিঃপ্রকাশ। পাঁজরগুলো যেন শরীরের ভেতর থেকে তীরের ফলার মতো বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। মিছিলের অগ্রভাগে থাকা অপ্রতিরোধ্য শিশুটি সেদিন সবার নজর কাড়ে। ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সকালে বাংলাদেশের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনের এ প্রতিবাদী মুহূর্তটি ক্যামেরায় বন্দি করেছিলেন প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদার।
সেই সময়ে দৈনিক সংবাদের নিজস্ব সংবাদচিত্রী ছিলেন তিনি। ছবিটি ফ্রেমবন্দি করে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি ইতিহাসের মূর্ত সাক্ষীর আলোকচিত্রী। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের আইকনিক আলোকচিত্র হিসেবে ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠে এ ছবি। ছবিটি আমাদের সংগ্রামী অতীতকে স্মরণ করিয়ে দে য়। এর কেন্দ্রীয় চরিত্র শিশুটির চোখ-মুখের ভাষা মানুষকে মনে করিয়ে দেয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের কথা। ছবিটির দৃশ্য-ভাষা এতই শক্তিশালী যে, এখনো মানুষের মনে শিহরন জাগায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আহ্বান জানায়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : ছাত্রসমাজের ১১ দফা মুক্তিসনদকে সামনে নিয়ে ঊনসত্তরের ২০ জানুয়ারি দাবানলের মতো জ্বলে উঠে পূর্ব বাংলা ও তার রাজধানী ঢাকা। এর ধারাবাহিকতায় ২৪ জানুয়ারি কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে ঢাকার রাজপথে নামে জনতার ঢল। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালাকেও ম্লান করে দেয় সেদিনের জনসমুদ্রের বিক্ষুব্ধ ঊর্মিদল। অধিকার-সচেতন জনতার হুঙ্কারে কেঁপে ওঠে অত্যাচারীর আসন। সেই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য গর্জে উঠে স্বৈরাচারের বন্দুক। বুলেটের আঘাতে রাজপথে ঝরে পড়ে কয়েকটি প্রাণ। শহীদের লাশ নিয়ে রাজপথে মিছিলের ঢল নামে। রাত ৮টায় কারফিউ জারির মাধ্যমে জনতাকে নিবৃত্ত করার সর্বশেষ প্রয়াসকে ব্যর্থ করে দিয়ে রাতের নৈঃশব্দ্যকে প্রকম্পিত করে মুক্তিপাগল জনতা। এর কয়েক দিন পর জনতার অদম্য আন্দোলনের মুখে অত্যাচারী সরকারকে পালাতে হয়। সমাধি রচিত হয় আইয়ুব-মোনায়েমের রাজত্বের।
সেদিন ছিল আধাবেলা হরতাল। ঢাকায় সেক্রেটারিয়েটের ভেতর থেকে পুলিশ দুই দফা গুলিবর্ষণ করে। প্রথম দফা গুলিবর্ষণ সকাল ১১টা ৫ মিনিটে। দুপুরে দ্বিতীয় দফা। গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় নবকুমার ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক ও নোয়াখালীর নান্দিয়াপাড়া হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সৈয়দ রুস্তম আলী। প্রেস ট্রাস্ট অফিসের সামনে পুলিশের গুলিতে আরও একজন নিহত হয়। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ-ইপিআরের গুলিবর্ষণ ও লাঠিচার্জে আহত হয় ২১ জন। পরদিন সব দৈনিক পত্রিকা হতাহতদের নাম, বাবার নাম, বয়স, পেশা, কার-কোথায় গুলি লেগেছে, কীভাবে ঘটনা ঘটেছে তার বিস্তারিত বিবরণ ছাপায়। বেশিরভাগ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় শহীদ মতিউর ও রুস্তমের মৃত মুখের ছবি ছাপা হয়। সেদিন কোনো পত্রিকায় কোনো পথশিশুর মৃত্যুর খবর ছাপা হয়নি।
আইকনিক ফটো : রশীদ তালুকদারের তোলা পথশিশুর ছবিটি প্রথম ছাপা হয় ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি দৈনিক সংবাদের বিশেষ ক্রোড়পত্রে। এরপর থেকে প্রতি বছর ২৪ জানুয়ারি ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক ঘটনার লেখনীর সঙ্গে ছবিটি দৈনিক সংবাদ প্রকাশ করে। রশীদ তালুকদার ১৯৭৫ সালে সংবাদ ছেড়ে ইত্তেফাকে যোগদান দেন। এরপর ইত্তেফাকও ছবিটি প্রতি বছর প্রকাশ করে। অনেক দিন এ ছবির নেপথ্য ঘটনার অনুসন্ধান হয়নি। কোনো পত্রিকায় ছবিটি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন, ফিচার, প্রবন্ধ-নিবন্ধও লেখা হয়নি। রশীদ তালুকদারও এই ছবি সম্পর্কে কোথাও কিছু লিখে যাননি। দীর্ঘ ৫৪ বছর শিশুটির কথা অজানাই রয়ে গেছে। খোঁজ মেলেনি বলে সবাই ধরে নিয়েছে শিশুটি সেদিন বুলেটবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে শিশুটির পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটির নাম মো. হোসেন আলী। সেই সূত্রেই পাওয়া যায় হোসেন আলীর খোঁজ।
হোসেন আলীর কথা : ৬৪ বছর বয়সী হোসেন আলী বলেছেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটি তিনিই। তার বক্তব্য, ‘ঊনসত্তরে আমার বয়স আছিল দশ বছর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমারে ডাকতেন পালোয়ান বইলা। ওই দিন জগন্নাথ কলেজের দিক থাইক্যা ছাত্রলীগের একটা মিছিল আইতেছিল। আমি তখন ফুলবাড়িয়া ইস্টিশনে থাকি। “জেলের তালা ভাঙবো, মুজিব ভাইকে আনবো” স্লোগান শুইন্যা আমিও যোগ দিলাম ওই মিছিলে। মিছিলে আমার মতো কয়েকটি শিশুও আছিল। রেগওলা (স্ট্রাইপ) হাফশার্ট গায়ে ছেলেডা আমার পেছনে আছিল। মিছিল পলাশী ব্যারাক হইয়া শাহবাগের দিকে আইলো। আমি কিন্তু মিছিলের সামনে। গরমে ঘামাইয়া গেছি। তাই গেঞ্জিটা খুইলা কোমরে বাঁধলাম। শাহবাগের সামনে আইসা দেখি, রেডিও অফিসের সামনে ইপিআর পজিশন লইয়া আছে। দুইবার মাইকিং করছে “চল যাও, চল যাও”। কে কার কথা শুনে? আমি জয় বাংলা বলে স্লোগান দিচ্ছি। তিন-চারজন ছবি তুলতাছে। তিনবার বলার পর দেখি বন্দুক রেডি করতাছে। সাথে সাথে একটা গুলির আওয়াজ পাইলাম। দৌড়াইয়া তারের ঘের দেওয়া রেসকোর্স ময়দানে ঢুকলাম। এরপর মন্দির, হাইকোর্ট, সেক্রেটারিয়েট হয়ে জিন্নাহ অ্যাভিনিউর রুচিতা হোটেলে আইলাম। কাঙালি হিসেবে আমারে তখন জিন্নাহ অ্যাভিনিউর অনেকে চিনতো। একদিন কয়েকজন আমারে পত্রিকার ছবি দেখাইয়া কইলো ‘তোরে তো পাঞ্জাবিরা মাইরালাইবো।’
হোসেন আলী বলেন, ‘আমি বহুদিন বহু লোকরে কইছি ওই শিশুটা আমি। আমি তো কাঙাল মানুষ, তাই আমার কথা কেউ শোনে না, পাত্তা দেয় না। আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, বঙ্গবন্ধুর বডিগার্ড মহিউদ্দীন ভাই তো এখনো বাঁইচা আছে। আমারে তাগো কাছে লইয়া যান।’ বুকে একটা কালো দাগ দেখিয়ে বললেন, ‘আসল ছবিটার সঙ্গে মিলাইয়া দ্যাখেন। সবকিছু পরিষ্কার হইয়া যাইবো।’ হোসেন আলীর ছেলে উজ্জ্বল হোসেন বাবু বলেন, ‘ছোটবেলা বেলা থেকে বাবার মুখে এই কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি। বাবার চুলের শেপটা দেখেন, মিল পাবেন।’
হোসেন আলীর গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চান্দেরকান্দিতে। মফিজ উদ্দিন ও ফাতেমা বেগমের একমাত্র সন্তান তিনি। পথশিশু পরিচয়ে শৈশব কাটে ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় থাকতেন আওয়ামী লীগ অফিসের নিচে। ৭৭ সালে ২২ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শুরু করেন টোকানো কাগজের ব্যবসা। আটাশির বন্যায় দোকান তলিয়ে গেলে আবার নিঃস্ব হয়ে পড়েন। অনেক দিন রিকশা চালিয়েছেন। এখন আট হাজার টাকা বেতনে নৈশপ্রহরীর চাকরি নিয়েছেন। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বেকার ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন মান্ডার কদমতলী এলাকার ঝিলপাড়ে।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে : ছবিটি কেমন করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেই গল্প বলেন ভারতের পদ্মশ্রী খেতাবপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী টি কাশীনাথ। বাহাত্তরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ফেয়ারে অংশ নেয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের ছবির নেগেটিভগুলো ফটোসাংবাদিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দিল্লিতে যান ফটোসাংবাদিক মোহাম্মদ জহিরুল হক। বঙ্গবন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে একটি চিঠি লিখে দেন। জহিরুল হক সেই চিঠি পৌঁছান ভারতের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর হাতে। তথ্যমন্ত্রী ফটোগ্রাফি বিভাগের পরিচালক টি কাশীনাথকে ডেকে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করতে বলেন। কাশীনাথের তত্ত্বাবধানে ২০ ফুট বাই ৩০ ফুট সাইজে ছবিগুলো পরিবর্ধিত (এনলার্জ) করা হয়। রশীদ তালুকদারের তোলা ঊনসত্তরের পথশিশুর ছবি ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ছবিটি প্রদর্শন করা হয় স্টলের প্রবেশমুখে। ছবি দুটি দেখার জন্য মেলায় আসা লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বাংলাদেশের স্টলের সামনের ভিড় সরাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করতেও বাধ্য হয়। বাংলাদেশের শিল্পকলার এই চমকপদ তথ্যটি অনেক দিন এ দেশের মানুষের অজানা ছিল। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) রিসোর্স পারসন হিসেবে টি কাশীনাথ বাংলাদেশে এসে এ গল্পটি করেন।
নীরব অভিমান : ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদারের তোলা ছবিগুলো আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। ১৯৫৯ সালে রশীদ তালুকদারের কর্মজীবন শুরু। বাষট্টিতে দৈনিক সংবাদে আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার আগে তিন বছর ৮০ টাকা বেতনে ফটো টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন পিআইডিতে। সংবাদে কাজ করেছেন টানা ১৩ বছর। এরপর তিনি যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে। বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার ঘটনা প্রভৃতির অসংখ্য ছবি তুলে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অল রোভস প্রোগ্রামে প্রতি বছর বিশ্বের একজন সেরা ফটোসাংবাদিককে পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এ পদক পান রশীদ তালুকদার। তার তোলা ছবি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া এনসাইক্লোপিডিয়ায় যুক্ত হয়েছে। এত কিছুর পরও আমাদের রাষ্ট্র তাকে ঠিক বুঝে উঠতে সক্ষম হয়নি। রাষ্ট্রের অন্যমনস্কতায় নীরব অভিমানে ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর ৭২ বছর বয়সে পরলোকে চলে গেলেন বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মাণকালের এই রূপকার।
লেখক : দেশ রূপান্তরের আলোকচিত্র সম্পাদক
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে গড়ে উঠছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। এই সমুদ্রবন্দরে প্রবেশ করতে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ নীল পানির চ্যানেল (জাহাজ চলাচলের পথ) দেখে মনে হবে যেন উন্নত কোনো দেশের বন্দর। এই নীল জলরাশির তীরেই গড়ে উঠবে উপমহাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। কিন্তু এই নীল পানি দেখে আশাবাদী হওয়ার বদলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের (চবক) কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। যার কারণ হলো কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত চ্যানেলের জন্য খরচ হওয়া প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার দায় পড়তে যাচ্ছে চবকের কাঁধে।
গত রবিবার মাতারবাড়ী ঘুরে দেখা যায়, ৩৫০ মিটার চওড়া ও ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল নির্মাণের কাজ শেষ। কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় জেটি নির্মাণও হয়ে গেছে, সেই জেটিতে ইতিমধ্যে ১১২টি জাহাজ ভিড়েছেও। কিন্তু চ্যানেলের জন্য চবককে পরিশোধ করতে হবে ৯ হাজার ৩৫০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ হিসেবে রয়েছে ৭ হাজার ৯২২ কোটি ১৬ লাখ এবং বাংলাদেশ সরকারের ১ হাজার ৪২৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এই টাকা কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় খরচ করা হয়েছিল। আর কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্যই চ্যানেলটি নির্মাণ হয়েছিল। এখন যেহেতু এই চ্যানেলকে ব্যবহার করে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠছে, তাই তা নির্মাণের সব খরচ চবককে পরিশোধ করতে হবে বলে গত ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবকে প্রধান করে একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়, যে কমিটি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাছ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের কাছে চ্যানেলটি ও তা নির্মাণের ব্যয় হস্তান্তরের পদ্ধতি নির্ধারণ করবে।
কিন্তু এই টাকা পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়েছে চবক। এ বিষয়ে বন্দর কর্র্তৃপক্ষের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এই সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার মধ্যে জাইকার ৭ হাজার ৯২২ কোটি ১৬ লাখ ঋণের পরিশোধ শুরু হবে আগামী বছর থেকে। সেই হিসাবে প্রথম বছরে পরিশোধ করতে হবে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা এবং পরবর্তী বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। শুধু কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় ঋণ নয়, মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণের জন্য জাইকা থেকে ৬ হাজার ৭৪২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে চবক। এই টাকার বিপরীতে ২০২৯ সালে জাইকাকে দিতে হবে ১ হাজার ৮১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা, পরে প্রতি বছর ঋণ ও সুদ বাবদ দিতে হবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া মাতারবাড়ী বন্দরের ড্রেজিং বাবদ বছরে খরচ হবে প্রায় ৫০ কোটি এবং এই বন্দর পরিচালনায় প্রতি বছর ভর্তুকি দিতে হবে প্রায় ৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে শুধু ঋণ শোধ বাবদ চবককে পরিশোধ করতে হবে ৪ হাজার ৪২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগামী বছর লাগবে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। বাকি টাকা পর্যায়ক্রমে ২০২৬ সাল থেকে প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া বে টার্মিনালের ব্রেক ওয়াটার ও চ্যানেল নির্মাণের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে চবক। অন্যদিকে চবকের বার্ষিক গড় আয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। তাহলে চবক এত টাকা কীভাবে পরিশোধ করবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
চবকের দাবি, চ্যানেল নির্মাণের খরচ যাতে তাদের কাঁধে দেওয়া না হয়। কিন্তু এই টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন কয়লাবিদ্যুৎ (কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড সিপিজিসিবিএল) প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। এ প্রসঙ্গে তিনি গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই চ্যানেল কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নিমির্ত হয়েছে। এখন যেহেতু বন্দর কর্র্তৃপক্ষ চ্যানেল ব্যবহার করবে, তাহলে তো তাদের টাকা দিতেই হবে। আর এই টাকা তো ৪০ বছরে পরিশোধ করতে হবে।’
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। জাইকার অর্থায়নে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে মাতারবাড়ী পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৬ মিটার ড্রাফট (গভীরতা) এবং ২৫০ মিটার চওড়া চ্যানেল নির্মাণ হয় বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায়। কয়লাবিদ্যুতের চ্যানেলের ওপর ভিত্তি করে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলা যায় বলে জাইকা একটি প্রস্তাবনা দেয়। সেই প্রস্তাবনা ও পরে সমীক্ষার পর ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়। আর এরই আওতায় চ্যানেলের প্রশস্ততা ১০০ মিটার বাড়ানোর পাশাপাশি গভীরতাও ১৮ মিটারে উন্নীত করা হয়। এ জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষ ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকার বাজেট একনেক থেকে অনুমোদন করে। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার টাকা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের (নিজস্ব তহবিল) ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। মাতারবাড়ীতে ৩৫০ মিটার দীর্ঘ ও ১৬ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের গভীরতা) জাহাজ ভিড়তে পারবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ২০০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে। মাতারবাড়ী চালু হলে এর সঙ্গে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রাবন্দরের নেটওয়ার্ক আরও বাড়বে। ফলে গভীর সমুদ্রবন্দরের অভাব পূরণ করবে মাতারবাড়ী বন্দর।
প্রণয় রায়কে কোথায় পাব? ২০০০ সালের শুরুতে এরকম একটা জিজ্ঞাসা নিয়ে আমি তখন ফোন করেছিলাম এনডিটিভিরই এক স্পোর্টস রিপোর্টারকে, যে প্রণয় রায়কে ব্যক্তিগতভাবে বহু বছর খুব ভালো চেনে, তার প্রতিষ্ঠানে বহু বছর চাকরি করেছে। মনে রাখতে হবে, এমন একটা সময় তখন, যখন সেলফোন সবে এসেছে বা আসেনি, সেই সময় কাউকে ধরার জন্য, এখন যেরকম একটা যন্ত্রই সতেরো সেকেন্ডে কাউকে ধরিয়ে দেয়, তখন তা সম্ভব ছিল না। আর প্রণয় রায়ের মতো বিখ্যাত কেউ হলে তো সেটা প্রায় অসম্ভব। আমি এনডিটিভিতে কয়েকবার ফোন করে নিষ্ফল চেষ্টার পর এই রিপোর্টারের শরণ নেই। তখন সে খোঁজটোজ নিয়ে জানাল, প্রণয় রায় এখন ট্রেনে করে দিল্লি থেকে বোম্বে যাচ্ছেন। আমি সে সময় একটা বই লিখি, যে বইটা ছিল অনেক প্রফেশনালের লেখার সংকলন। বইটার নাম ছিল সেলিব্রেটি এখন আপনিও। আমার কোথাও মনে হয়েছিল যে, এই বইটা যেহেতু টেলিভিশন দুনিয়ায় কী করে সফল হতে হবে এবং সফল হয়ে কীভাবে চলতে হবে তার ওপর একটা কম্পাইলেশন, সেখানে প্রণয় রায়ের কোনো কিছু থাকবে না এটা হতেই পারে না এবং সেই বইটাতে অনেকেই লিখেছিলেন। রাজদীপ, অর্ণব গোস্বামী, রজত শর্মা, তখন খুব বিখ্যাত আরজে রুবি ভাটিয়া, প্রিয়া টেন্ডুলকার। আমার মনে হয়েছিল যে, এই বইটার মুখবন্ধ, তারই করা উচিত, যিনি ভারতীয় টেলিভিশনের জনক এবং সেই কাজটা প্রণয় রায় ছাড়া আর কে করতে পারেন! কিন্তু আমি খুব আশ্চর্য শুনে, যে এনডিটিভির মালিক, তিনি কি না দিল্লি থেকে মুম্বাই যাচ্ছেন ট্রেনে করে! এবং শুনলাম ট্রেন থেকে তিনি মুম্বাইতে নেমে, আবার নাকি ট্রেনে উঠবেন। অর্থাৎ সারমর্ম হচ্ছে, আগামী তিন দিনের মধ্যে আমি তাকে ধরতে পারব না। আমার জন্য যেটা তখনকার মতো সবচেয়ে অবাক লেগেছিল যে, টানা তিন দিন ট্রেনে চড়ে ভারতবর্ষ ঘুরছেন, এত বড় এমন একজন মানুষ যার কাছে প্রত্যেকটা সেকেন্ড দামি। তখন আমায় ওর সহকর্মীরা বললেন যে, উনি এরকমই মাঝেমধ্যে ট্রেনে করে ভারত দেখতে বেরিয়ে পড়েন। বহুকষ্টে প্রণয় রায়কে তারপর ধরা গিয়েছিল। মুখবন্ধটা উনিই লিখেছিলেন আমার বইয়ের। কিন্তু আমার বিস্ময় এখনো কাটেনি। এরকম একজন মিডিয়া ব্যারেন কী করে তার ব্যস্ততার মধ্যে ট্রেন ট্রাভেলের মতো একটা ইচ্ছাকৃত ঝুঁকি নিতে পারেন, ঝক্কি নিতে পারেন, যেখানে তিনি সহজেই দুই ঘণ্টায় মুম্বাই থেকে দিল্লি প্লেনে পৌঁছে যেতে পারেন। প্রণয় রায় নামটার সঙ্গে প্রথম পরিচয় আর সবার মতোই অনেক দূর থেকে। ‘ওয়ার্ল্ড দিস উইক’ বলে একটা অনুষ্ঠান থেকে এবং তখন দেখেই মনে হয়েছিল যে, ফেলুদার কখনো ইংলিশ ভার্সন হলে, সেখানে তার রোলটা করার পক্ষে সবচেয়ে উপযুক্ত প্রণয় রায়। ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, হাইট; ফেলুদা অবশ্য কখনো ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি রাখেননি, কিন্তু তিনি যে বাঙালি, ইন্টেলেকচুয়াল, যে মননের সঙ্গে ফেলুদাকে দেখতে অভ্যস্ত বা বাঙালি এক করে ফেলেছে, সেই পুরো ফেলুদার ভাবধারাটাই যেন প্রণয় রায় তার মধ্যে বহন করেন। অর্থাৎ তিনি অকুতোভয়। তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান। তিনি শিক্ষিত এবং তিনি খুব সচল, খুব অ্যালার্ট। ওয়ার্ল্ড দিস উইক-এ তাকে দেখে যেরকম সারা ভারতবর্ষ মোহাবিষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তারপর আমরা তাকে দেখলাম ইলেকশন অ্যানালাইসিস করতে এবং তখনই একটা নতুন টার্মের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটল। যার নাম হচ্ছে সেফোলজিস্টস অর্থাৎ যিনি ইলেকশন ট্রেন্ডস এবং স্ট্যাটিসটিকস বিশ্লেষণ করেন। ভারতবর্ষে তার আগে, প্রাক-প্রণয় রায় যুগে যেমন পেশাদার টেলিভিশন ছিল না, তেমনি সেফোলজিস্ট শব্দটাও শোনা যায়নি। যাই হোক, প্রণয় রায় তারপর আমাদের সঙ্গে, নির্বাচনের আগে প্রাক-নির্বাচনী সিট পোল করা শুরু করলেন। নির্বাচনের পর বিশ্লেষণ শুরু করলেন এবং নতুন একটা ঘরানা নিয়ে এলেন যেটা এর আগে ভারতীয় টেলিভিশনে কেউ দেখেনি। এবং যেটার মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিতে অসম্ভব একটা আন্তর্জাতিকতা আছে। আমার তখন থেকেই মনে হতো যে, এই ভদ্রলোকের সঙ্গে যে করে হোক, আলাপ করতে হবে, আবার একই সঙ্গে মনে হতো যে, আলাপ হলে যদি মুগ্ধতা কেটে যায় তাহলে আলাপ না হওয়াই ভালো। দূর থেকে তাকে দেখাটাই ভালো। দুরকম একটা, স্ববিরোধী একটা ভাবনা নিজের মনের মধ্যে ঘুরত। এরপর প্রণয় রায় দেখালেন যে, তিনি শুধু এককভাবে স্টার নন। অর্থাৎ তার শুধু স্টার হলেই চলছিল। স্টার প্রণয় রায়ই যথেষ্ট ছিলেন ভারতবর্ষের জন্য যেভাবে তিনি বিল গেটসকে ইন্টারভিউ করেছেন, যেভাবে তিনি নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে কথা বলেছেন, যেভাবে তার শোগুলো বিশ্লেষণ করেছেন, কখনো কখনো বড় শো করতে এসেছেন লাইভ শো, সেটাই যথেষ্ট ছিল টেলিভিশনের পৃথিবীতে, তাকে পাকাপাকিভাবে রেখে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি ঠিক করলেন যে, তাকে শুধু ভারতীয় টেলিভিশনের অমিতাভ বচ্চন হলেই চলবে না, তাকে একই সঙ্গে হতে হবে ভারতীয় টেলিভিশনের রাজ কাপুর। তাই এনডিটিভি প্রতিষ্ঠা করে নিলেন, তার আগপর্যন্ত তিনি অনুষ্ঠানগুলো স্টারে করছিলেন, অন্য চ্যানেলে করছিলেন, এবার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান নিয়ে এলেন এবং সেই প্রতিষ্ঠানে একটা, যেটাকে লেফট লিবারেল সেন্টিমেন্ট আমরা বলি, সেটার তো ধারক এবং বাহক হয়ে গেলেন গোটা ভারতবর্ষে, একই সঙ্গে অনেক তারার জন্ম দিলেন।
এ তারার জন্ম দেওয়া নিয়ে ভারতবর্ষের মিডিয়া জগতে দুই রকম মতবাদ আছে। বেশিরভাগ মিডিয়া ব্যারেন, তারা মনে করেন যে স্টার তৈরি করাটা বিপজ্জনক, কারণ স্টার আজ আছে, কাল অন্যের হয়ে তারাবাজি করবে। আমাকে ছেড়ে দেবে। তখন সেই তারাবাজির আলোটা আমাকে সহ্য করতে হবে। তার চেয়ে বাবা সবচেয়ে ভালো হচ্ছে, আমি যদি কিছু স্ক্রিন প্রফেশনাল তৈরি করি যাদের বাহ্যিক সেরকম কোনো পরিচিতি নামডাক থাকবে না, কিন্তু যারা খুব এফিশিয়েন্ট হবে। যেটাকে আমরা অনেক সময় ক্রিকেটের ভাষায় বলি লাইন অ্যান্ড লেন বোলার। অর্থাৎ তার ফ্ল্যামবয়েন্স থাকবে না, সে অত্যন্ত পেশাদার হবে, মানে কাজটা তুলে দেবে। যদি সেরকম করি তাহলে সুবিধা হচ্ছে যে, সেই ধরনের পেশাদার সে যদি অন্য জায়গায় চলে যায় আমি আরেকটা পেশাদারকে নিয়ে আসতে পারব। কিন্তু যদি আমার এখান থেকে একটা রাজদীপ চলে যায়, কী অর্ণব চলে যায়, তাহলে আমার সমস্যা যে লোকে প্রতিনিয়ত জিজ্ঞেস করবে যে, ও চলে গেল কেন? ও নেই কেন? তখন অনেক রকম আমার সমস্যা দেখা দিতে পারে। বেশিরভাগ ভারতীয়, আবার বলছি, বেশিরভাগ ভারতীয় মিডিয়া ব্যারেন আজও তাই মনে করেন, ভারতের সবচেয়ে বড় খবরের কাগজ টাইমস অব ইন্ডিয়া তারা আজও ওই ঘরানায় বিশ্বাসী যে, স্টার তোলার দরকার নেই, তোলার দরকার আছে এফিশিয়েন্ট প্রফেশনাল, প্রণয় রায় এখানেও ইউনিক, তিনি এই ধারণাটা কমপ্লিটলি ভেঙে দিয়েছেন, এত সব স্তর তিনি তুলেছেন, যে ভারতীয় টেলিভিশনে সেকেন্ড কোনো নমুনাও নেই বোধহয়। এক থেকে দশ, দিকে দিকে কতগুলো নাম বলব? অর্ণব গোস্বামী, বরখা দত্ত, রাজদীপ, নিধি, রাজদান, রবিশ কুমার, শ্রীনিবাসন জৈন, বিক্রম চন্দ প্রত্যেকে একেকজন স্টার ভারতীয় মিডিয়া জগতের এবং ওদের প্রত্যেককে কিন্তু তুলেছেন প্রণয় রায়। অনেকেই ছেড়ে গেছেন, তাতে তার কিছু এসে যায়নি। তিনি স্টার তৈরির কারখানাতে একইরকমভাবে মনোনিবেশ করেছেন। পরের লোকটাকে বের করে আনার জন্য ইভেন এই চাপের মুখে অচঞ্চলতা এটাও প্রণয় রায়ের একটা হিউজ ট্রেডমার্ক। আমি কখনো দেখিনি কোনো ছবিতে, কখনো শুনিনি যে তিনি অত্যন্ত স্ট্রেসড হয়ে আছেন, নিশ্চয়ই স্ট্রেসড হয়েছেন গত কিছুদিন, কয়েক মাসের ঘটনা যে রকম যখন তিনি এনডিটিভি ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন, অবশ্যই স্ট্রেসের মুখে ছিলেন, কিন্তু কোথাও কখনো পাবলিকলি স্ট্রেসের ভাবটা দেখাননি, যাতে তার ডিগনিটিটা অক্ষুন্ন থাকে, এই পাবলিক লাইফে প্রচ- স্ট্রেসের মধ্যে ডিগনিটি বজায় রাখাটাও প্রণয় রায়ের একটা হিউজ হিউজ ট্রেডমার্ক এবং এটা অনুকরণযোগ্য। আমার একটা সময় বারবার মনে হতো যে প্রণয় রায়ের সঙ্গে কাজ করছি না কেন? কেন প্রণয় রায়ের কোম্পানিতে কাজ করার চেষ্টা করছি না? তারপর সবাই বলত যে, একটু প্রণয় রায়ের সঙ্গে কাজ করতে হলে অক্সফোর্ড বা কেমব্রিজ থেকে পাস করতে হবে অথবা তাদের বাবাদের হতে হবে আইএফএস কিংবা আইএস, প্রণয় যাদের রিক্রুট করেন তাদের যদি আমরা দেখি তারা কোথা থেকে এসেছে, তাহলে দেখা যাবে তারা অত্যন্ত উচ্চবিত্ত সমাজ থেকে এসেছে।
প্রণয় রায়ের ওখানে একেবারে লোয়ার মিডল ক্লাস কেউ নেই, হয়তো কথাটা কতটা অসত্য, হয়তো কথাটা কিছুটা সত্য। কিন্তু আমি সাম হাউ আর কখনো চেষ্টা করিনি। দূর থেকে সবসময় একটা অদ্ভুত রেসপেক্ট এনডিটিভি গ্রুপ সম্পর্কে আমার এবং অন্য অনেক সাংবাদিককুলের বজায় ছিল যে, এরা হয়তো চাপের মুখে তাদের টেকনিক চেঞ্জ করেনি। তারা হয়তো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলছে না, অনেকে বলত যে এনডিটিভিতে ডিসকাশনগুলো খুব বোরিং হয়ে যাচ্ছে। হতে পারে কিন্তু তারা সাবেকি যে ছাঁচটা সাংবাদিকতার, সেটা টেলিভিশনের ঢঙ্কানিনাদে এসেও কিন্তু বজায় রেখেছিল। এবং এই চিৎকার-চেঁচামেচি, মারদাঙ্গা যেটা আধুনিক ভারতীয় টেলিভিশনের ট্রেডমার্ক হয়ে গেছে, সেটা থেকে বরাবর এনডিটিভি দূরে থেকেছে।
তাতে তাদের টিআরপি পড়েছে। তারা কেয়ারও করেনি। তারা মনে করেছে, আমরা এভাবে করতে চাই। এভাবেই করব। বাকি পৃথিবী যা ইচ্ছে বলুক, কিছু আসে যায় না। রাষ্ট্রপতি ভবনে এনডিটিভির একটা বিশাল অনুষ্ঠান হয়েছিল যখন প্রণব মুখার্জি রাষ্ট্রপতি, সেটাতে অমিতাভ বচ্চন, শচীন টেন্ডুলকার, আশা ভোঁসলেসহ অনেকে এসেছিলেন। সেই অনুষ্ঠানটা দেখতে দেখতে আমার মনে হচ্ছিল যে, একজন মানুষের কতটা হোল্ড থাকলে তিনি রাষ্ট্রপতি ভবনে তার চ্যানেলের এরকম একটা অনুষ্ঠান করতে পারেন। পরবর্তীকালে সেটা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল।
প্রশ্ন উঠেছিল কী করে রাষ্ট্রপতি একটা প্রাইভেট চ্যানেলকে সেখানে অনুষ্ঠান করতে দিতে পারেন। কিন্তু আমার বারবার মনে হচ্ছিল যে, শ্রদ্ধার কোন পর্যায়ে গেলে, কন্টাক্টস কোন পর্যায়ে থাকলে, তিনি রাষ্ট্রপতি ভবনে তার ব্যক্তিগত চ্যানেলের এরকম একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারেন! মহেন্দ্র সিং ধোনি একটা সময় এনডিটিভির সঙ্গে ছিলেন এবং তখন এনডিটিভির দু-একটা অনুষ্ঠান করেছিলেন। আমার মনে আছে, ধোনি একবার সাউথ আফ্রিকায় বললেন, আরে এনডিটিভি কী করে করছে! এটাই প্রণয় রায়ের সবচেয়ে বড় সাফল্য এ কথাটা যে মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো মানুষ বলছেন! এটা ঠিক শোভা পায় না অর্থাৎ সবসময় এনডিটিভির একটা নির্দিষ্ট বেঞ্চমার্ক ছিল। সেটা হচ্ছে শাসকের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই। প্রশ্ন তোলা। সাহসী প্রশ্ন তোলা। আবার চাপের মুখে মাথা না নামানো, ওই যে বললাম একটা বামপন্থি লেফট লিবারেল দৃষ্টিভঙ্গি।
অনেকেই বলত যে, প্রণয়ের স্ত্রী রাধিকা রায়ের বোন যেহেতু বৃন্দা কারাত, সেজন্যই এ দৃষ্টিভঙ্গি। আমার কখনো তা মনে হয়নি। আমার মনে হয়েছিল প্রণয় রায়ের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি। একেবারে তিনি কলকাতায় হয়তো খুব বেশি সময় কাটাননি। কিন্তু কলকাতার ওই উদার বামপন্থি যে দৃষ্টিভঙ্গি, সেই উদার বামপন্থার সঙ্গে তার মনোভাব একেবারে একরকম। এবং সে জন্যই, বদলে যাওয়া ভারতবর্ষে তার বারবার করে সমস্যা হচ্ছিল এবং সমস্যা হওয়ার বোধহয় কথাও ছিল। কারণ তিনি যেটা বলছিলেন, শাসকরা বলছিলেন কমপ্লিটলি তার বিপরীত কিছু। এখনকার ভারতবর্ষের মিডিয়ায় বিপরীতমুখী আওয়াজটা আর কিছুদিন বাদে আমার ধারণা একমাত্র ফিল্মেই দেখা যাবে, ভারতবর্ষের টেলিভিশনে দেখা যাবে না।
আমার তো মনে হয় যখন এই ছবিগুলো দেখানো হবে যে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস কী রকম লড়াই করেছিল, এককালে আনন্দবাজার গ্রুপ কী লড়াই করেছিল, টাইমস নিয়ে মাঝখানে গিয়ে লড়াই করেছে, এনডিটিভি দীর্ঘদিন ধরে কী লড়াই করেছে সেগুলো বোধহয় ইতিহাসের পাতাতেই চলে গেল। তাই বলে প্রণয় রায়! যিনি কখনো ইতিহাসের কথায় যাবেন না। প্রণয় রায় ইতিহাস হয়ে ইতিহাসের পাতায় থাকবেন। আমার মনে হয়েছে যখন একটা সময় জগমোহন ডালমিয়া রবি শাস্ত্রীকে ইন্ডিয়ান টিমের কোচ হতে বলছিলেন এবং তিনি কোচ হব কি হব না এটা নিয়ে নানান কথা বলছিলেন। তখন আমায় শাস্ত্রী বলেছিলেন যে, আমি তিনটে শর্ত দিয়েছি, একটা শর্ত যে টিম সিলেকশনের ভার আমাকে দিতে হবে। দুই, টিম সিলেকশনের ভার আমার যদি না থাকে, আমার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মত থাকবে। তিন, চূড়ান্ত এগারোর ব্যাপারে আমার মতামত থাকবে। ফোর্থ, টিমের ফিটনেসের ব্যাপারে আমি কিছু কথা বলব। আমি তখন বলেছিলাম যে, আপনি ম্যানেজার হয়তো হবেন। কিন্তু আপনি থাকতে পারবেন না। কারণ আজাহারউদ্দিন। আপনি যদি এসব কথা বলেন তাহলে আজহারউদ্দিন আপনাকে ম্যানেজার রাখবেন না। উনি যেরকম পাওয়ারফুল, ডালমিয়ার সঙ্গে যেরকম সম্পর্ক, আপনাকে চলে যেতে হবে। তখন শাস্ত্রী বলেছিলেন যে, চলে যেতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু গোটা ড্রেসিংরুম জানবে, আমায় কেন চলে যেতে হয়েছিল। ওই রেসপেক্টটাই আমার পাওনা হবে। শাস্ত্রী সেই সময় ভারতীয় দলের কোচ হননি এবং হন অনেক পরে, কিন্তু আজ কোথাও মনে হচ্ছে যে, প্রণয় রায়ের এনডিটিভি থেকে চলে যাওয়া তার অসম্মান, তার অমর্যাদা এসবকিছু ইতিহাসে থেকে গেল, এভাবে ইতিহাস জানল লোকটাকে কেন চলে যেতে হয়েছিল। আমি ইমরান খানকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনাকে এই যে জেলে পুরে অসম্মান করা হলো, আপনার কী মনে হয়েছিল সেই সময়? উনি বলেছিলেন, আমার কিছুই মনে হয়নি, আমার মনে হয়েছিল, গবেটগুলো যে ভুল করেছিল, সেগুলো ইতিহাসের পাতায় চলে গেল।
প্রণয় রায়ের কাহিনী সম্পর্কে আবার তাই মনে হয় যে, গবেটগুলো কী করে জানবে যে ওরা নিজেদেরও ইতিহাসের পাতায় নিয়ে চলে গেল। কিন্তু এটা নিশ্চয়ই সাময়িক। আর তাই বলছি, প্রণয় রায় চলে যাবেন নতুন প্রণয় রায় নিশ্চয়ই ফেরত আসবেন, তাই এটা দীর্ঘকালীন হতে পারে না। এটা সাময়িক। তাই লেখাটার হেডিং বললাম, মেরুদণ্ডের টাইম আউট।
শ্রুতিলিপি : শিমুল সালাহ্উদ্দিন
প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার তালিকাভুক্ত। কিন্তু বাস্তবে অস্তিত্ব নেই। অথচ সরকারি শুল্ক সুবিধার আওতায় বিদেশ থেকে রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। এমন ৫৩টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থার প্রাথমিক তদন্তে ব্যাংকিং চ্যানেলে এসব প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচারের তথ্যও মিলেছে। এ ছাড়া আরও ৭১টি প্রতিষ্ঠান একই সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করার মাধ্যমে আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ পাচারে যুক্ত বলে এনবিআরের তদন্তে জানা গেছে।
চিহ্নিত এই ১২৪টি প্রতিষ্ঠানের হিসাব জব্দ করা হয়েছে। তদন্ত শেষে পর্যায়ক্রমে গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাব জব্দ করা হয়। এ ছাড়া ব্যবসার লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। আমদানি-রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই তৈরি পোশাক শিল্প ও এর সহযোগী শিল্পের প্রতিষ্ঠান। তাদের পাচার করা অর্থের পরিমাণ চিহ্নিত করতে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সদস্য এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, একেকটি প্রতিষ্ঠান একাধিক চালানে কম করেও ৫ কোটি থেকে ২৫ কোটি টাকার পণ্য এনে খোলাবাজারে বিক্রি করেছে। অন্যদিকে একেকটি প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচারের পরিমাণও ৮ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকা বা তার বেশি। এই হিসাবে ১২৪ প্রতিষ্ঠান প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার পণ্য এনে অবৈধভাবে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে এবং আরও প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পাচার করেছে। প্রাথমিক তদন্তে এসব পাওয়া গেলেও চূড়ান্ত হিসাবের কাজ চলছে। চূড়ান্ত হিসাবে অর্থের পরিমাণ বাড়তে বা কমতে পারে।
এভাবে শুল্ক সুবিধায় কাঁচামাল এনে খোলাবাজারে বিক্রি করে দেওয়ার কারণে দেশি শিল্পে কী ধরনের প্রভাব পড়ে জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশি শিল্প সব ধরনের রাজস্ব পরিশোধ করে পণ্য উৎপাদন করে বলে তাদের উৎপাদন খরচ বেশি। অন্যদিকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য আমদানিতে শুল্ক দেওয়া লাগে না বলে খরচ কম হয়। তাই দাম কম থাকে। কম দামে পণ্য পাওয়ায় ক্রেতারা এসব পণ্য বেশি কেনে। অন্যদিকে দেশি পণ্য ন্যূনতম লাভ রেখে বিক্রি করলেও এর সঙ্গে পেরে ওঠে না। ফলে দেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান লোকসানে পড়ছে।
এনবিআর কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত ১৭ সদস্যের টাস্কফোর্স কমিটি ১২৪ প্রতিষ্ঠানের পাঁচ বছরের (২০১৭-২০২১) আমদানি-রপ্তানিসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য খতিয়ে দেখেছে। বিশেষভাবে কী পরিমাণ কাঁচামাল আমদানি হয়েছে, কতটা উৎপাদন করা হয়েছে, রপ্তানির পরিমাণ কত, ব্যাংকে এলসি বা ঋণপত্রের মাধ্যমে কী পরিমাণ অর্থ কোন কোন দেশের অনুকূলে পাঠানো হয়েছে, তদন্তে এসব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে। টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যে ৭১ প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে আছে, তারা কাঁচামাল আমদানি ও রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আর্থিক অনিয়ম করেছে। যে পরিমাণের কাঁচামাল প্রয়োজন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। অন্যদিকে যা রপ্তানি করার কথা তার চেয়ে কম পরিমাণ এবং নামসর্বস্ব পণ্য উৎপাদন করে রপ্তানি করেছে। অন্যদিকে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানগুলোও বাইরে থেকে কিনে নামমাত্র পণ্য রপ্তানি করেছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তৈরি পোশাক ও সহযোগী শিল্প কারখানা ছাড়াও ইলেকট্রিক, প্লাস্টিক খাতের প্রতিষ্ঠান আছে। কাঁচামাল হিসেবে তারা আর্ট কার্ড, ডুপ্লেক্স বোর্ড, মিডিয়াম পেপার, লাইনার পেপার, পলিপ্রোপাইলিন (পিপি), বিএপিপি ও এডহেসিভ টেপ, প্লাস্টিক দানা, হ্যাঙ্গার, পলিথিন, সুতা, কাপড়, তারসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম আমদানি করেছে। কিন্তু সেসব কাঁচামাল কারখানায় না নিয়ে রাজধানীর নয়াবাজার, বংশাল, বকশীবাজার, হাতেম টাওয়ার, ধোলাইখাল, টঙ্গীতে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিরপুর ২ নম্বরের বেলুকুচি নিট ওয়্যার, আদাবরের ঠিকানায় কভারস অ্যান্ড কভার ইন্ডাস্ট্রি, শ্যামপুর কদমতলীর ইমপেকস প্যাকেজিং লিমিটেড, টঙ্গীর এম এম ওয়াশিং প্ল্যান্ট লিমিটেড, বনানীর বিমানবন্দর সড়কের পারসা লিমিটেড, বনানী জি ও এইচ ব্লকে রাইন ফ্যাশন লিমিটেড, টঙ্গীর ওয়েলড ড্রেসেস লিমিটেড, মিরপুর পল্লবী সেকশন ৭-এর মারকাভ ডিজাইনারস লিমিটেড, ঢাকার কোতোয়ালির ঠিকানায় ম্যানিলা পলিমার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডসহ ১২৪ প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকানায় গিয়ে ৫৩টির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাস্তবে কোথাও দোকান, আবাসিক ভবন, শপিং মল, ছাত্রী হোস্টেল, স্কুল পাওয়া গেছে। মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার ঠিকানায় আফট্যাকস লিমিটেড অবস্থিত বলা হলেও বাস্তবে সেখানে রয়েছে দোকান।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, শতভাগ রপ্তানিমুখী হিসেবে ১২৪টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত। উৎপাদনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা পরিচালক হিসেবে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে, তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন। তাদের দাবি, কাঁচামাল আমদানি ও পণ্য রপ্তানিসংক্রান্ত একটি কাগজেও তাদের স্বাক্ষর নেই। তবে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, এসব ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানীর বাবুবাজারে বিক্রি করতে নেওয়ার সময় ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তারা বন্ড সুবিধা বা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিকৃত কাগজসহ একটি কাভার্ড ভ্যান আটক করে। এসব কাগজ এবি প্যাকেজিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান বন্দর থেকে খালাস করে এনেছিল। আটক পণ্যের বাজারমূল্য প্রায় ১৪ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে শুল্ক-করসহ দাম হয় প্রায় ২৬ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন চালানে এক বছরে প্রায় ১২ কোটি টাকার পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করেছে।
শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের পণ্য উৎপাদনে সরকার কাঁচামাল আমদানিতে ‘বন্ড সুবিধা’ নামে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। এই সুবিধা নেওয়া প্রতিষ্ঠানকে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক দিতে হয় না। এই সুবিধা পেতে হলে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে কিছু শর্ত মেনে চলতে হয়। শর্তগুলোর অন্যতম হলো, শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামালের সবটা উৎপাদনে ব্যবহার করতে হবে। উৎপাদিত সব পণ্য রপ্তানি করতে হবে এবং সামান্য কাঁচামালও খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে না। এসব শর্ত ভঙ্গ করলে শাস্তি হিসেবে বন্ড সুবিধা বাতিল এবং ব্যবসায়ের লাইসেন্স স্থগিত হবে। আর্থিক অনিয়মের সমপরিমাণ অর্থ, রাজস্ব এবং জরিমানাসহ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। প্রয়োজনে কারখানার জমি, যন্ত্রপাতি জব্দ করা হবে। আমদানিকারকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার আইনি সুযোগ আছে। শাস্তি হিসেবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও এর সঙ্গে জড়িতদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা যাবে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১২৪টি প্রতিষ্ঠান আমদানিকৃত কাঁচামালের যে দাম উল্লেখ করে ঋণপত্র বা এলসি খুলে অর্থ পাঠিয়েছে, প্রকৃতপক্ষে আমদানি করেছে তার চেয়ে কম দামের ও কম পরিমাণের পণ্য। আমদানিকারকরা গোপনে বিদেশে নিজস্ব মালিকানাধীন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান খুলে তার অনুকূলে দাম হিসেবে অর্থ পাঠিয়েছে। এ অবৈধ কারবারে ব্যাংক, বন্দর ও এনবিআরের কিছু অসাধু ব্যক্তিকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের সাবেক কমিশনার এবং এনবিআর সদস্য ড. শহিদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারীদের চিহ্নিত করতে এনবিআর নজরদারি বাড়িয়েছে। তবে আইনি প্যাঁচে অনেক সময় তাদের শাস্তির আওতায় আনতে সময় লেগে যায়। এ বিষয়ে আরও কাজ করার সুযোগ আছে।
বন্ড দুর্নীতি চিহ্নিত করতে প্রিভেন্টিভ, নিয়মিত ও বিশেষ অডিট করা হয়। এসব অডিটে প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের পর চূড়ান্ত তদন্ত করা হয়। তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহে মাস থেকে বছরও পার হয়ে যায়। এরপর শুনানির জন্য অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের তলব করা হয়। তারপর মামলা হয় এনবিআরের আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলা নিষ্পত্তিতে পার হয়ে যায় বছরের পর বছর। রায় হওয়ার পর যেকোনো পক্ষের উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে। আটকে থাকা মামলার সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে।
এনবিআর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার কারণে বন্ড দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আইন সংশোধনসহ এনবিআরকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
আর কখনো রাজনীতিতে জড়াবে না হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। মুচলেকা দিয়ে এ কথা বলেছে তারা। সংগঠনটির নেতারা আরও বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের অংশও হবেন না তারা। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রকাশ্য বা গোপন কোনো সম্পর্কেই জড়াবে না হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজতে ইসলাম বেশ কিছু শর্তও দিয়েছে। শর্তে তারা বলেছে, হেফাজত নেতা মামুনুল হকসহ যেসব নেতা কারাবন্দি রয়েছেন তাদের সবাইকে ছেড়ে দিতে হবে এবং মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। আওয়ামী লীগ ও হেফাজতে ইসলাম গত বছর ১৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে এ মুচলেকা দেয় এবং এসব শর্ত বা দাবি জানায়।
আগে হেফাজত নেতারা তিন মন্ত্রীর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেন। তারপর দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে মুচলেকা দেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা হেফাজতের মুচলেকা দেওয়ার কথা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন। সরকারের সহযোগী হিসেবে থাকার অঙ্গীকার করেছে হেফাজত।
১৪ দলের অন্যতম শরিক তরিকত ফেডারেশনের নেতা নজিবুল বশর মাইজভা-ারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, হেফাজতে ইসলামের চেয়ারম্যান তাকে জানিয়েছেন তারা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়; তারা রাজনীতি করবে না। কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে তারা জোটবদ্ধও হবে না।
হেফাজতে ইসলাম আরও কিছু শর্ত দিয়েছে, যেমন কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে এবং বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর বৃহত্তম বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশকে (বেফাক) সরকারি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে থেকে হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে মামুনুল হক এবং আরও কয়েকজনকে এখনই মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে সরকারি মহল। একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মামুনুলকে ছাড়তে হবে, যা সময়সাপেক্ষ।
সূত্রে আরও জানা গেছে, কাদিয়ানি সম্প্রদায় বিষয়ে হেফাজতের দাবি আপাতত আমলে নেওয়া হয়নি। কারণ, তাদের অমুসলিম ঘোষণা করা হলে বিদেশি চাপ আসবে। যে চাপ সামলানো প্রায় অসম্ভব। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন ঝামেলায় জড়ানো যাবে না বলে হেফাজত নেতাদের বলা হয়েছে। বেফাক ইস্যুতেও আপাতত কোনো উদ্যোগ নিতে চায় না সরকার। বেফাককে সরকারি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি মানাও আপাতত অসম্ভব, জানিয়েছে সরকার। তবে হেফাজত নেতাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, অন্য শর্তগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আরও বৈঠক হবে।
হেফাজত নেতাদের বলা হয়েছে, ধর্মীয় বিভিন্ন অপপ্রচার চলছে সরকারের বিরুদ্ধে; এসব ব্যাপারে কথা বলতে হবে তাদের। জামায়াতবিরোধী অবস্থান নিয়ে কাজ করতে হবে হেফাজতকে। হেফাজত নেতারা বলেছেন, জামায়াত ইস্যুতে তারা কোনো ছাড় দেবে না। জামায়াতকে তারা ইসলামের ধারক-বাহক মনে করে না।
বলা যায়, হেফাজতের সঙ্গে সরকারের রাজনৈতিক বোঝাপড়া হয়েছে। এটা একটা ‘পলিটিক্যাল ডিল অর আন্ডারস্ট্যান্ডিং’। জানা গেছে, এ সমঝোতার ভিত্তিতেই হেফাজতের বিরুদ্ধে ২০৩টি মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে এবং নেতারা জামিন পেতে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে পুলিশকে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। হেফাজত ইসলামী বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার।
২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় এখনো তদন্ত হচ্ছে ২০৩টি মামলার। অনেক দিন ধরেই তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু সুরাহা করতে পারছে না তদন্তকারী সংস্থাগুলো। হেফাজত নেতাকর্মীদের অনেকে কারাগারেও আছেন। তবে বেশিরভাগ আসামি প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন।
পুলিশের পাশাপাশি হেফাজত নেতারা মামলাগুলো নিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত। তারা এগুলোর নিষ্পত্তি চান। এ নিয়ে কয়েক দফা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন হেফাজত নেতারা। সর্বশেষ গত ১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে হয়েছে। বৈঠকে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির অনুরোধ জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীও তাদের অনুরোধ বিবেচনায় নিয়ে সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
সরকারের নির্দেশনা পেয়ে পুলিশও কাজ শুরু করে দিয়েছে। গত এক মাসে অন্তত ১০ জন নেতা জামিন পেয়েছেন। তারা যেকোনো সময় কারামুক্ত হবেন। তবে মামুনুল হক আপাতত মুক্ত হচ্ছেন না।
হেফাজত নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তারা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারাও ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন। তারা বলেন, এসবের জন্যই সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় গিয়েছি আমরা। তবে সমঝোতার কথা সবিস্তারে প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, হেফাজতের মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে মৌখিক নির্দেশনা পাওয়া গেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। হেফাজত নেতারা সরকারের অঙ্গীকার করেছে, তারা রাজনৈতিক কর্মকা- চালাবেন না। শুধু ইসলাম নিয়ে কথা বলবেন। জামায়াতে ইসলামীর কর্মকা-ের সমালেচনাও করবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকদের আশ্বস্ত করেছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।
নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন তদন্তকারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পুলিশ সদর দপ্তর নির্দেশনা এসেছে। আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। মামলাগুলোর অনেক আসামি জামিনে আছে, কেউ কেউ জামিন ছাড়াই প্রকাশ্যে ঘুরছে। দীর্ঘদিন ধরে মামলাগুলোর নিষ্পত্তি না হওয়ায় সমালোচনাও হচ্ছে সবখানে। এগুলোর দ্রুত সুরাহা চাচ্ছি আমরাও।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলাকালে কথিত নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছিল হেফাজতে ইসলাম। ওই বছরের ৫ মে ঢাকার ছয়টি প্রবেশমুখে অবরোধ করে তারা। একপর্যায়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। সে সময় হেফাজতের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। তারা রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে যানবাহন ভাঙচুর করে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়। সহিংসতায় হতাহতের ঘটনাও ঘটে।
২০২১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসেন। তার সফরের বিরোধিতা করে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম। ২৬ মার্চ রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় তাদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সংঘর্ষে ১৯ জনের মৃত্যু হয় এবং পুলিশসহ সহস্রাধিক হেফাজত নেতাকর্মী আহত হয়। হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয় সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায়। এসব ঘটনায় সারা দেশে ১৫৪টি মামলা হয়। ওইসব মামলার কোনোটাতেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি।
হেফাজত ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মাসখানেক আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। বৈঠকে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সবাই ছিলেন। বৈঠকে আমরা বলেছি, আমরা কোনো ধরনের রাজনীতি করি না। ইসলাম নিয়ে কাজ করি। একটি মহল আমাদের নামে অপবাদ দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি, আমরা রাজনীতি করছি না, আর করবও না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। আমরাও চাচ্ছি মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। হেফাজতের কেন্দ্রীয় এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারপ্রধানের সঙ্গে আমরা গত ১৭ ডিসেম্বর বৈঠক করেছি। তাতে সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। প্রায় ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট বৈঠক হয়েছে। অনেক কথা হয়েছে। আমাদের শর্তও তাকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, সমঝোতা ছাড়া কোনো কিছুরই সমাধান হয় না। আমরা চাই না সরকারের সঙ্গে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হোক। আমরা কথা বলেছি। সরকারপ্রধান ইতিবাচক হিসেবে বিষয়টি আমলে নিয়েছেন।