
কদিন আগেই গাঁটছড়া বাধলেন বলিউড অভিনেতা সিদ্ধার্থ মালহোত্রা ও অভিনেত্রী কিয়ারা আদভানি। এর মধ্যেই জানা গেল বিয়ে করেছেন আরেক অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর। সমাজবাদী পার্টির যুবনেতা ফাহাদ আহমেদকে জীবনসঙ্গী করেছেন স্বরা। জানুয়ারি মাসের ৬ তারিখ কোর্ট ম্যারেজ করেছেন দুজন, যদিও তা প্রকাশ্যে আসে গত বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি)। এদিন হঠাৎ করেই টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করেন স্বরা। তাতেই জানালেন সবটা।
তবে এর মধ্যেই সোশ্যালে ঘুরছে একটি পুরনো টুইট। তাতে দেখা যায়, স্বামী ফাহাদকে ‘ভাই’ সম্বোধন করেছেন স্বরা, যা নিয়ে রসিকতা করছেন অনেকে।
জানা গেছে, সেদিন ছিল ফাহাদের জন্মদিন। টুইটারে তাকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানান স্বরা। তিনি লিখেছিলেন ‘শুভ জন্মদিন ফাহাদ মিয়া। আশা করছি ভাইয়ের আত্মবিশ্বাস অটুট থাকবে। আনন্দে থাক। স্থির হও। যেহেতু বয়স বাড়ছে, এ বার একটা বিয়ে করে নাও। বছর দারুণ কাটুক’।
উত্তরে ফাহাদ বলেন, ‘তোমার ভাইয়ের আত্মবিশ্বাস নিশান ওড়াচ্ছে। ঠিক তো রাখতেই হবে। তুমি কথা দিয়েছিলে আমার বিয়েতে আসবে। সময় বের কর, আমি পাত্রী খুঁজে পেয়েছি!’ স্বরা-ফরহাদের এই কথোপকথনের নমুনা এত দিনে স্পষ্ট হলো সবার কাছে। নাকের ডগায় মজা করছিলেন এই জুটি। কিন্তু কাকপক্ষীও টের পায়নি।
চিত্রনাট্যকার হিমাংশু শর্মার সঙ্গে প্রেম ছিল স্বরার। সেই প্রেম ভেঙে গেছে আগেই। বৃহস্পতিবার টুইটারে পোস্ট করা ভিডিওতে স্বরা লেখেন, ‘অনেক সময় আমরা এমন কিছু খুঁজি যা চোখের সামনেই থাকে। আমরা ভালোবাসা খুঁজছিলাম। কিন্তু খুঁজে পেলাম বন্ধুত্ব। আমার মনে তোমাকে স্বাগত ফাহাদ। এখানে অনেক শোরগোল, কিন্তু এই মন তোমার’।
বলিউডে অভিনয়ের পাশাপাশি বহুদিন ধরেই রাজনীতির মঞ্চে দেখা মিলছে স্বরার। বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন অভিনেত্রী। স্পষ্টবাদী হিসেবে নাম আছে তার। ফলে ফাহাদ-স্বরার বিয়েতে উচ্ছ্বসিত সমাজকর্মী থেকে রাজনৈতিক মহল।
আর দুই দিন পরই মুক্তি পেতে যাচ্ছে সৈকত নাসির পরিচালিত সিনেমা ‘সুলতানপুর’। ইতোমধ্যে সিনেমার একটি গান প্রকাশিত হলে তা লুফে নিয়েছেন দর্শকরা। স্নিগ্ধজিতের গাওয়া ‘জান রে’ শীর্ষক গানটির জনপ্রিয়তা দেখে অবাক হয়েছেন সুলতানপুরের অভিনেত্রী অধরা খান।
অভিনেত্রী বলেন, ‘গানটি এত জনপ্রিয়তা পাবে আমি কল্পনাতেও ভাবিনি। সাধারণ মানুষ গানটিকে নিজেদের করে নিয়েছে। এটা আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। আমি অবাক হয়েছি।’
গানটিতে সাঞ্জু জনের সঙ্গে পারফর্ম করেছেন অধরা। অভিনেত্রী মনে করছেন এই গানে দর্শকেরা নতুন অধরাকে আবিষ্কার করেছে।
তিনি বলেন, ‘এই গান মুক্তির পর থেকে আমি প্রচুর মেসেজ পেয়েছি। সব ইতিবাচক কথাবার্তা। কারো গান ভালো লেগেছে, কারো জুটি পছন্দ হয়েছে, কারো মেকিং ভালো লেগেছে, কারো লুক ভালো লেগেছে। তবে গানটা মানুষজন শুনছে, শুধু এটা ভেবেই ভালো লাগছে আসলে।’
অধরা আরও বলেন, ‘এই গানই আমাকে সিনেমা মুক্তির পূর্বে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। আমি একটা সিনেমার শুটিং করতে এসেছি টেকনাফে। সাগরতীরে বসে দেখছি কিভাবে মানুষজন গানটা নিয়ে মেতে আছে, এটা আমাকে ভীষণ আনন্দ দিচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, সুলতানপুরে অধরা ছাড়াও অভিনয় করেছেন সাঞ্জু জন ও ফারুক সুমন। সিনেমাটি সীমান্ত এলাকার সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে নির্মিত হয়েছে।
না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’- এর অন্যতম প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করা পিয়ারী বেগম। মঙ্গলবার (৩০ মে) দুপুর ২টায় উত্তরার নিজ বাসায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। খবরটি নিশ্চিত করেন তার ছেলে রবিউল আমিন।
তিনি জানান, আম্মা অনেক দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন। আজ দুপুর ২টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
রবিউল আমিন জানান, এশার নামাজের পর জানাজা শেষে উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে তার মাকে দাফন করা হবে। সেখানে স্বামীর কবরের পাশে সমাহিত হবেন পিয়ারী।
১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট মুক্তি পেয়েছিল ‘মুখ ও মুখোশ’ সিনেমাটি। ৬৭ বছর আগে আবদুল জব্বার খান পরিচালিত সেই সিনেমায় আমিনুল হকের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন পিয়ারী বেগম।
চিত্রনায়ক শরিফুল রাজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মঙ্গলবার মধ্যরাতে অভিনেত্রী সুনেরাহ বিনতে কামালের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ক্লিপস আপলোড করা হয়। যা অন্তর্জালে ভাইরাল, চলছে সমালোচনা।
সুনেরাহ দাবি করছে ভিডিওগুলো পরীমণি নিজেই রাজের ফেসবুক থেকে পোস্ট করেছে। কিন্তু এ প্রসঙ্গে পরীমণি বলছেন ভিন্ন কথা। পরীমণি বলেন, সুনেরাহ কে? ওই মেয়েকে তো আমি চিনিই না। ওর সঙ্গে আমার কখনো কথাই হয়নি। হুট করে কেনো সে আমাকে নিয়ে এমন মন্তব্য করবে? আমার মনে হয় সে আলোচনায় আসতেই আমার নাম নিয়ে এসব বলছে। এখন যদি রাজের সঙ্গে আমার বিচ্ছেদ হয় তাহলে আমি ওই মেয়েকেই দায়ি করব। ওর নামে আমি মামলা করব।
ভিডিও পোস্ট করেননি জানিয়ে তিনি বলেন, আমি কিভাবে ওসব ভিডিও পোস্ট করব? রাজ তো দশদিন আগে থেকেই আমার সঙ্গে নেই। সে রিফ্রেশেমেন্টের জন্য প্রায় চৌদ্দ দিন আগে বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছে। কোথায় কি করছে আমি কিছুই জানিনা। গতকালও আমি ওকে ফোন করেছিলাম। সে ফোন কেটে বন্ধ করে দিয়েছে। এখন কোথায়, কার সঙ্গে কি করছে সে দায় কেনো আমার ওপর আসবে।
রাজ এবং পরী বর্তমানে আলাদা থাকছেন জানিয়ে এ নায়িকা বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কত কিছুই তো হয়। তবে বাসা থেকে বের হওয়ার মত তো কিছু হয়নি। অথচ রাজ বাসায় নেই কত দিন। এতো দিন বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি বারও আমার ও বাচ্চার খোঁজ নেয়নি সে। আমি সংসার করার তো কম চেষ্টা করছি না। পারছি কই? একটার পর একটা ইস্যু চলেই আসছে। তারপরও আমি যে রাজকে বিয়ে করেছিলাম সেই রাজকে অনেক ভালোবাসি।
চলতি বছরের মার্চে মুক্তি পেয়েছিল কিয়ানু রিভস অভিনীত ‘জন উইক : চ্যাপ্টার ফোর’, যা এখনও গোটা বিশ্বে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এরমধ্যেই জানা গেল, এবার আসছে সিনেমাটির পঞ্চম কিস্তি।
প্রযোজক জো ড্রেক জানিয়েছেন, জন উইকের পঞ্চম কিস্তির কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তিনি সাক্ষাৎকারে জানান, ‘আমাদের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে বেশ কিছু স্পিন অফ সিরিজ আসতে চলেছে। ইতোমধ্যে অনেকেই জানেন যে, আনা ডি আরমাস অভিনীত বেলারিনা নামে একটি স্পিনঅফ সিরিজ মুক্তি পেতে চলেছে। তবে আমরা আরও তিনটি সিনেমার কাজ শুরু করে দিয়েছি। জন উইক চ্যাপ্টার ফাইভ এ তালিকায় আছে।’
জন উইক-৪ সম্পর্কে জো ড্রেক আরও বলেন, ‘যখন পঞ্চম পর্ব আসবে এটি হবে অর্গানিক। আমরা যেভাবে গল্পগুলো বলতে শুরু করেছি তা থেকে সঠিকভাবে বেড়ে উঠবে এটি। তবে জন উইকের নিয়মিত ছন্দই আপনারা দেখতে পাবেন আগামী চলচ্চিত্রেও।’
জন উইক ফ্র্যাঞ্চাইজিকে বিশ্বের অন্যতম সেরা অ্যাকশন ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রথম সিনেমা মুক্তি পায় ২০১৪ সালে। এরপর ২০১৭ সালে দ্বিতীয়, ২০১৯ সালে তৃতীয় এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালে চতুর্থ সিনেমা মুক্তি পায়। সিনেমাটি বক্স অফিসে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার আয় করে নেয়। এই ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রতিটি সিনেমাই ছিল বক্স অফিসে দারুণ সফল। এরই ধারাবাহিকতায় এবার পঞ্চম পর্ব আনার ঘোষণা দিলেন নির্মাতারা।
দেখতে দেখতে ১০ বছর পার হয়ে গেল। ২০১৩ সালে ঠিক এই দিনেই (৩০ মে) আচমকা বিদায় নিয়েছিলেন ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ। যেতে হয় চিরতরে সবাইকেই একদিন, তবে তার বিদায়ের দিনটা এসেছিল বড়ই আগে। একরাশ কালোমেঘ, একবুক অভিমানকে আড়ালে রেখে, মুখে সোনা রোদের হাসি নিয়েই চিরবিদায় নিয়েছিলেন এই কিংবদন্তি পরিচালক।
ঋতুর জন্ম ১৯৬৩ সালের ৩১ আগস্ট, কলকাতায়। তার বাবা-মা উভয়েই চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাবা সুনীল ঘোষ ছিলেন তথ্যচিত্র-নির্মাতা ও চিত্রকর। ঋতু সাউথ পয়েন্ট হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জন করেন।
তার কর্মজীবন শুরু হয়েছিল একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার ক্রিয়েটিভ আর্টিস্ট হিসেবে। ১৯৮০-র দশকে বাংলা বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় বেশ কিছু জনপ্রিয় এক লাইনের শ্লোগান লিখে দিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় কলকাতায় ইংরেজি ও হিন্দি বিজ্ঞাপনগুলো বাংলায় অনুবাদ করে চালানো হত।
রঙে হোক কিংবা শব্দে, তার ছবির নামকরণেও ছিল তুলির টান। ‘দোসর’ ছবি বানিয়ে তিনি এক্সপেরিমেন্ট করেছিলেন। সাদা কালো ছবি থেকে মনের গভীরে কী রঙ ছড়ায়, কোথায় দাঁড়িয়ে সম্পর্ক, তার ফ্রেমে তুলে ধরেছিলেন। বিদেশ বিভুঁইয়ে শ্যুটিং নয়, বরং শহরের অলিগলিতে বা কখনও উত্তরবঙ্গের নিবিড় ছায়াতলেই তার ছবির বুনন ধরা পড়ত। সম্পর্কের খুঁটিনাটি বিষয়, যা আপাত অর্থে খেয়াল করা হয় না, সেই দিকগুলো বরাবরই প্রাধান্য পেত তার ছবিতে।
কেন ফেরা যায় না, অথবা না ফিরেও কি থেকে যাওয়া যায়? এসব প্রশ্ন-উত্তরের মধ্য দিয়েই তার ছবির চরিত্ররা এগিয়েছে। ছবিতে যেভাবে গানের প্রয়োজন থাকে, ঠিক তেমনভাবেই বাঙালি কবিদের কবিতা তার ছবিতে কোনও অমোঘ টানে অদ্ভুতভাবে সিঙ্ক্রোনাইজড করেছে বরাবর।
পাশাপাশি তার লেখনিতেও উঠে এসেছে পাশে বসে গল্প বলার মতো সাবলীলতা। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, কঙ্কণা সেনশর্মা, দীপঙ্কর দে–এরা তিনজনই বারবার ঋতুর একাধিক ছবিতে ফিরে এসেছেন। তবে কখনই কোনও গল্পের ছায়া অন্য গল্পে পড়েনি। অভিনেতা-অভিনেত্রীরা প্রতিবারই অচেনা চরিত্রে ধরা দিয়েছেন।
একসময় টলিপাড়ায় অনেকেই অপেক্ষা করেছেন তার একটা ফোনের জন্য। তবে শুধু টলি পাড়াতেই নয়, বলিউডের হেভিওয়েট অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও মুখিয়ে থাকতেন তার ছবিতে অভিনয় করার জন্য।
তার পরিচালনায় প্রথম ছবি ‘হিরের আংটি’ ১৯৯২ সালে মুক্তি পায়। ১৯৯৪ সালে তার দ্বিতীয় ছবি ‘উনিশে এপ্রিল’ মুক্তি পায়। তার আরও কিছু উল্লেখযোগ্য সিনেমা- ‘তিতলি’, ‘দহন’, ‘বাড়িওয়ালি’, ‘অসুখ’, ‘উৎসব’, ‘চোখের বালি’, ‘অন্তরমহল’, ‘দোসর’, ‘রেইনকোট’, ‘শুভ মহরত’, ‘নৌকাডুবি’, ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’, ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’ ইত্যাদি।
দুই দশকের কর্মজীবনে ১২টি জাতীয় পুরস্কারের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন ঋতু। আসলে নিজের সৃষ্টির ভাবনাকে বিজাতীয় করে ফেলেননি তিনি। ছিলেন অস্বাভাবিক রকমের বাঙালিমনস্ক। তার সৃষ্টির পরতে পরতে তা অনুভব করা যেত। রবীন্দ্রনাথ ছিল তার প্রাণে। ঋতু বলেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ আমার দেখা শ্রেষ্ঠ নারী।’ তার বহু ছবিতে রবি ঠাকুরের ছাপ রয়েছে।
আসলে বাংলা সিনেমায় ঋতুর বিচরণ একেবারে বীরের মতো। হঠাৎ একদিন আবির্ভাব ঘটল, ঠিক ততটাই হঠাৎ করে চলে গেলেন। অনেকটা বলে এক ঋতু আসে আর এক ঋতু যায়। কিন্তু এই ঋতু চলে গেলেও মনের মাঝে আষ্টেপৃষ্টে ঠিক এক চিলতে জায়গা নিয়ে সারাজীবন থেকে যায়। তাই ঋতু আসে, ঋতু যায়–কিন্তু ঋতুপর্ণ রয়ে যান।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।