মার খেয়ে হজমের কৌশল বিএনপির
রেজাউল করিম লাবলু | ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
সারা দেশে একের পর এক বিএনপির নির্বাচনী প্রচারে হামলার ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিনই প্রার্থীসহ দলের কর্মী-সমর্থকরা আহত হচ্ছেন; ভাঙচুর করা হচ্ছে প্রার্থীদের গাড়িবহর। কিন্তু পাল্টা হামলায় যাচ্ছে না দলটি। ক্ষুব্ধ কর্মীদের তোপের মুখে পড়লেও নেতারা ‘সরকারের পাতা ফাঁদে’ পা না দিয়ে নির্বাচন পর্যন্ত তাদের ধৈর্য ধরার কৌশল নিয়েছেন। জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে হামলার জবাব দেবে বলে তাদের আশা।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে প্রথম হামলা হয়। এরপর বিভিন্ন এলাকায় হামলার ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে নির্বাচনী প্রচার চালাতে গিয়ে হামলার শিকার হন বিএনপির প্রার্থী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীদের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীরাও হামলার শিকার হন।
পুলিশের উপস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই এসব হামলা চালিয়েছে বলে বিএনপি প্রধান সরকারবিরোধী এই জোটের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নির্বাচন বানচাল করার মিশন নিয়ে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিএনপিই এসব হামলার নাটক মঞ্চস্থ করছে।
হামলার বিষয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, প্রতিদিনই দলের নেতাকর্মীরা মার খাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় এই হামলা করছে। নির্বাচন কমিশনে এ বিষয়ে অভিযোগ করা হলে তারা কোনো পদক্ষেপ নেয় না। এভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। চাইলে বিএনপি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মোকাবিলা করতে পারে। কিন্তু তখন তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সামনে এসে দাঁড়ায়। তবে বিএনপি কি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করবে? তাহলে তো দেশে গৃহযুদ্ধ লেগে যাবে। তাই বিএনপি নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত এভাবে সব ধরনের অত্যাচার-নিপীড়ন সহ্য করে যাবে। এর জবাব জনগণ দেবে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের মাধ্যমে। বিএনপি সেদিকে তাকিয়ে আছে।
তবে কোথাও কোথাও বিএনপির প্রার্থীরা পাল্টা আক্রমণে যাচ্ছেন, যার জন্য তাদের মামলার আসামি হতে হচ্ছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রবাসী কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ও চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর) আসনের প্রার্থী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক দেশ রূপান্তরকে জানান, তারা হামলা-মামলা মোকাবেলা করে প্রতিদিনই নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের ওপর আক্রমণ এলে তারাও পাল্টা আক্রমণে যাচ্ছেন।
এদিকে গতকাল শনিবার নোয়াখালী-১ (চাটখিল ও সোনাইমুড়ির একাংশ) আসনের বিএনপিদলীয় প্রার্থী ও দলের যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা চালায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। খোকনের কর্মী-সমর্থকরা পাল্টা হামলায় গেলে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ গুলি চালালে তাতে খোকন আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন,সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। তাদের প্রতি জনসমর্থন নেই। তাই তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করছে। তবে বিএনপি তাদের পাতা ফাঁদে পা দেবে না। বিএনপি হামলা-মামলা মোকাবিলা করে রাজপথে থাকবে। ভোটের দিন একদিন সংগ্রাম করবে।
গত মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের দানারহাট এলাকায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলার সময় সেখানে থাকা জেলা ছাত্রদলের এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, তারা পাল্টা হামলার জন্য মহাসচিবের নির্দেশ চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি অনুমতি দেননি। কারণ হিসেবে মহাসচিব তাদের বলেছিলেন, সরকারের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। সরকার চাইছে বিএনপি পাল্টা আক্রমণ করুক। তাহলে নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা যাবে, এলাকা নেতাকর্মীশূন্য করা হবে। বিএনপি শুধু ভোটের দিন শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়ে ভোটের ফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পাহারা দেবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারি দল পরিকল্পিতভাবে বিএনপির নির্বাচনী প্রচারে হামলা করছে। উদ্দেশ্য বিএনপি যাতে ভয় পেয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। কিন্তু বিএনপি তাদের পাতা ফাঁদে পা দেবে না। বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা-মামলা সহ্য করে মাটি কামড়ে থাকবে। পাল্টা কোনো অ্যাকশনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের সব অত্যাচার-নির্যাতনের জবাব আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন দেওয়া হবে। এমন জবাব জনগণ দেবে, যা তাদের কল্পনার বাইরে।
শেয়ার করুন
রেজাউল করিম লাবলু | ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

সারা দেশে একের পর এক বিএনপির নির্বাচনী প্রচারে হামলার ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিনই প্রার্থীসহ দলের কর্মী-সমর্থকরা আহত হচ্ছেন; ভাঙচুর করা হচ্ছে প্রার্থীদের গাড়িবহর। কিন্তু পাল্টা হামলায় যাচ্ছে না দলটি। ক্ষুব্ধ কর্মীদের তোপের মুখে পড়লেও নেতারা ‘সরকারের পাতা ফাঁদে’ পা না দিয়ে নির্বাচন পর্যন্ত তাদের ধৈর্য ধরার কৌশল নিয়েছেন। জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে হামলার জবাব দেবে বলে তাদের আশা।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে প্রথম হামলা হয়। এরপর বিভিন্ন এলাকায় হামলার ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে নির্বাচনী প্রচার চালাতে গিয়ে হামলার শিকার হন বিএনপির প্রার্থী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীদের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীরাও হামলার শিকার হন।
পুলিশের উপস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই এসব হামলা চালিয়েছে বলে বিএনপি প্রধান সরকারবিরোধী এই জোটের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নির্বাচন বানচাল করার মিশন নিয়ে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিএনপিই এসব হামলার নাটক মঞ্চস্থ করছে।
হামলার বিষয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, প্রতিদিনই দলের নেতাকর্মীরা মার খাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় এই হামলা করছে। নির্বাচন কমিশনে এ বিষয়ে অভিযোগ করা হলে তারা কোনো পদক্ষেপ নেয় না। এভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। চাইলে বিএনপি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মোকাবিলা করতে পারে। কিন্তু তখন তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সামনে এসে দাঁড়ায়। তবে বিএনপি কি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করবে? তাহলে তো দেশে গৃহযুদ্ধ লেগে যাবে। তাই বিএনপি নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত এভাবে সব ধরনের অত্যাচার-নিপীড়ন সহ্য করে যাবে। এর জবাব জনগণ দেবে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের মাধ্যমে। বিএনপি সেদিকে তাকিয়ে আছে।
তবে কোথাও কোথাও বিএনপির প্রার্থীরা পাল্টা আক্রমণে যাচ্ছেন, যার জন্য তাদের মামলার আসামি হতে হচ্ছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রবাসী কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ও চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর) আসনের প্রার্থী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক দেশ রূপান্তরকে জানান, তারা হামলা-মামলা মোকাবেলা করে প্রতিদিনই নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের ওপর আক্রমণ এলে তারাও পাল্টা আক্রমণে যাচ্ছেন।
এদিকে গতকাল শনিবার নোয়াখালী-১ (চাটখিল ও সোনাইমুড়ির একাংশ) আসনের বিএনপিদলীয় প্রার্থী ও দলের যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা চালায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। খোকনের কর্মী-সমর্থকরা পাল্টা হামলায় গেলে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ গুলি চালালে তাতে খোকন আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন,সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। তাদের প্রতি জনসমর্থন নেই। তাই তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করছে। তবে বিএনপি তাদের পাতা ফাঁদে পা দেবে না। বিএনপি হামলা-মামলা মোকাবিলা করে রাজপথে থাকবে। ভোটের দিন একদিন সংগ্রাম করবে।
গত মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের দানারহাট এলাকায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলার সময় সেখানে থাকা জেলা ছাত্রদলের এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, তারা পাল্টা হামলার জন্য মহাসচিবের নির্দেশ চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি অনুমতি দেননি। কারণ হিসেবে মহাসচিব তাদের বলেছিলেন, সরকারের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। সরকার চাইছে বিএনপি পাল্টা আক্রমণ করুক। তাহলে নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা যাবে, এলাকা নেতাকর্মীশূন্য করা হবে। বিএনপি শুধু ভোটের দিন শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়ে ভোটের ফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পাহারা দেবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারি দল পরিকল্পিতভাবে বিএনপির নির্বাচনী প্রচারে হামলা করছে। উদ্দেশ্য বিএনপি যাতে ভয় পেয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। কিন্তু বিএনপি তাদের পাতা ফাঁদে পা দেবে না। বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা-মামলা সহ্য করে মাটি কামড়ে থাকবে। পাল্টা কোনো অ্যাকশনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের সব অত্যাচার-নির্যাতনের জবাব আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন দেওয়া হবে। এমন জবাব জনগণ দেবে, যা তাদের কল্পনার বাইরে।