ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার ঘোষণা আজ
প্রাধান্য পাবে তরুণ প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষা
রেজাউল করিম লাবলু | ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন, জনগণের ভোটধিকার ফিরিয়ে আনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভ্যাটমুক্ত করা, মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, মেধার ভিত্তিতে চাকরিসহ তরুণ প্রজন্মের চাহিদা ও আশা-আকাক্সক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার আসছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। আজ সোমবার সকালে রাজধানীর মতিঝিলের হোটেল পূর্বাণীতে সংবাদ সম্মেলনে ইশতেহার ঘোষণা করবেন সরকারবিরোধী প্রধান এই রাজনৈতিক জোটের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন।
ইশতেহার প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, ইশতেহারে অন্তত ১৪টি প্রতিশ্রুতি থাকবে। এর মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, নারী ও শিশু, পররাষ্ট্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে ফ্রন্টের বক্তব্য থাকবে। ‘দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে, আনবে পরিবর্তন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’, ‘জনগণ এ রাষ্ট্রের মালিক’- এমন প্রত্যয় থাকবে ইশতেহারে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার তৈরির জন্য ছয় সদস্যের কমিটি করা হয়েছিল। কমিটিতে বিএনপি থেকে আছেন মাহফুজ উল্লাহ, গণফোরাম থেকে আ ও ম শফিক উল্লাহ, নাগরিক ঐক্য থেকে ডা. জাহেদ উর রহমান, জেএসডি থেকে শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের অধ্যক্ষ ইকবাল সিদ্দিকী এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এদেরকে নির্দেশনা দিয়েছে ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি। ইশতেহারের বিষয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ইশতেহারে গুরুত্ব থাকবে কৃষকদের। কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায়। ঢাকার মানুষও যেন ন্যায্যমূল্য পায়। সবদিকে সামঞ্জস্য রাখা হবে। ইশতেহারে উপকৃত হবেন নি¤œবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা। এ ছাড়া আইনের নামে বাংলাদেশে যেসব ‘অপআইন’ চলছে সেগুলো বন্ধের ঘোষণা থাকবে।
ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার থাকছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশগুলো তুলে ধরা হলো :
তরুণ প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থান : ইশতেহারের বেকারদের চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ, চাকরির ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত বেকারভাতার প্রতিশ্রুতি থাকছে। চাকরির ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার সংস্কার আনা হবে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫ বছর করা হতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কোনো ভ্যাট দিতে হবে না; ভ্যাটপ্রথা বাতিল করা হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে প্রথম বছরে অন্তত দেড় লাখ বেকার যুবককে চাকরি দেওয়ার অঙ্গীকার থাকবে ইশতেহারে।
রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন : গতানুগতিক প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার, রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সরকার একক পদক্ষেপের জায়গায় গণভোটের প্রচলন। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
জাতীয় সংসদ : জাতীয় সংসদকে কার্যকর করা, সংসদে বিরোধী দলকে যথাযথ মূল্যায়ন ও সংসদীয় কমিটিগুলোকে শক্তিশালী করা।
সরকারের ক্ষমতার ভারসাম্য আনা : এক ব্যক্তির হাতে সকল ক্ষমতা না রেখে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা হবে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বণ্টন করা হবে। এখন রাষ্ট্রপতির উল্লেখ করার মতো কোনো ক্ষমতা নেই। বিচারব্যবস্থা ঢেলে সাজানো : বিচার বিভাগের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ আলাদাভাবে, স্বাধীনভাবে যাতে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে পারে তা নিশ্চিত করা হবে। বিচারকদের নিয়োগ থেকে পদোন্নতি, আর্থিক সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা হবে।
প্রশাসনকে সরকারি চাপমুক্ত রাখা : বিচার বিভাগের মতো প্রশাসনও নিজেদের আইনি কাঠামোর মধ্যে চলবে। প্রশাসনে সরকারের হস্তক্ষেপ থাকবে না। লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমানো হবে। ফাইল দ্রুত ছাড়তে হবে। ফাইল আটকে রাখা যাবে না।
নারী ও শিশু অধিকার : দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা হবে।
গণমাধ্যমের অধিকার : বর্তমানে গণমাধ্যমে প্রচণ্ড সরকারি চাপের মধ্যে রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ মিডিয়ার ওপর খক্ষ হিসেবে কাজ করছে। সংবাদকর্মীরা স্বাধীনভাবে নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। মিডিয়ার ওপর সব ধরনের বিধি-নিষেধ তুলে নিয়ে মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে।
ব্যক্তির নিরাপত্তা : ভিন্ন মতের হলেও রাষ্ট্র কাউকে খুন কিংবা গুম করবে না। এরই মধ্যে যারা গুমের শিকার হয়েছেন, তাদেরকে খুঁজে বের করা হবে।
গণপরিবহন ও সেবা খাতে সংস্কার : গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা চলছে। এর প্রতিবাদে ছাত্ররা রাজপথে নেমেছিল। ছাত্ররা যে দফাগুলো দিয়েছিল তা বিবেচনায় রাখা হবে। সেবা খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে।
স্বাস্থ্য খাতে আমূল সংস্কার : স্বাস্থ্য খাতে আমূল সংস্কার আনা হবে। বিশেষ করে মেডিকেল টেস্টের মূল্য অন্তত ৩০ শতাংশ ভাগ কমিয়ে আনা হবে। কমানো হবে ওষুধের দাম। চিকিৎসক ও নার্সসহ এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে।
শেয়ার করুন
রেজাউল করিম লাবলু | ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন, জনগণের ভোটধিকার ফিরিয়ে আনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভ্যাটমুক্ত করা, মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, মেধার ভিত্তিতে চাকরিসহ তরুণ প্রজন্মের চাহিদা ও আশা-আকাক্সক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার আসছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। আজ সোমবার সকালে রাজধানীর মতিঝিলের হোটেল পূর্বাণীতে সংবাদ সম্মেলনে ইশতেহার ঘোষণা করবেন সরকারবিরোধী প্রধান এই রাজনৈতিক জোটের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। ইশতেহার প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, ইশতেহারে অন্তত ১৪টি প্রতিশ্রুতি থাকবে। এর মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, নারী ও শিশু, পররাষ্ট্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে ফ্রন্টের বক্তব্য থাকবে। ‘দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে, আনবে পরিবর্তন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’, ‘জনগণ এ রাষ্ট্রের মালিক’- এমন প্রত্যয় থাকবে ইশতেহারে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার তৈরির জন্য ছয় সদস্যের কমিটি করা হয়েছিল। কমিটিতে বিএনপি থেকে আছেন মাহফুজ উল্লাহ, গণফোরাম থেকে আ ও ম শফিক উল্লাহ, নাগরিক ঐক্য থেকে ডা. জাহেদ উর রহমান, জেএসডি থেকে শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের অধ্যক্ষ ইকবাল সিদ্দিকী এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এদেরকে নির্দেশনা দিয়েছে ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি। ইশতেহারের বিষয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ইশতেহারে গুরুত্ব থাকবে কৃষকদের। কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায়। ঢাকার মানুষও যেন ন্যায্যমূল্য পায়। সবদিকে সামঞ্জস্য রাখা হবে। ইশতেহারে উপকৃত হবেন নি¤œবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা। এ ছাড়া আইনের নামে বাংলাদেশে যেসব ‘অপআইন’ চলছে সেগুলো বন্ধের ঘোষণা থাকবে। ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার থাকছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশগুলো তুলে ধরা হলো : তরুণ প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থান : ইশতেহারের বেকারদের চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ, চাকরির ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত বেকারভাতার প্রতিশ্রুতি থাকছে। চাকরির ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার সংস্কার আনা হবে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫ বছর করা হতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কোনো ভ্যাট দিতে হবে না; ভ্যাটপ্রথা বাতিল করা হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে প্রথম বছরে অন্তত দেড় লাখ বেকার যুবককে চাকরি দেওয়ার অঙ্গীকার থাকবে ইশতেহারে। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন : গতানুগতিক প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার, রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সরকার একক পদক্ষেপের জায়গায় গণভোটের প্রচলন। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হবে। জাতীয় সংসদ : জাতীয় সংসদকে কার্যকর করা, সংসদে বিরোধী দলকে যথাযথ মূল্যায়ন ও সংসদীয় কমিটিগুলোকে শক্তিশালী করা। সরকারের ক্ষমতার ভারসাম্য আনা : এক ব্যক্তির হাতে সকল ক্ষমতা না রেখে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা হবে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বণ্টন করা হবে। এখন রাষ্ট্রপতির উল্লেখ করার মতো কোনো ক্ষমতা নেই। বিচারব্যবস্থা ঢেলে সাজানো : বিচার বিভাগের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ আলাদাভাবে, স্বাধীনভাবে যাতে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে পারে তা নিশ্চিত করা হবে। বিচারকদের নিয়োগ থেকে পদোন্নতি, আর্থিক সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা হবে। প্রশাসনকে সরকারি চাপমুক্ত রাখা : বিচার বিভাগের মতো প্রশাসনও নিজেদের আইনি কাঠামোর মধ্যে চলবে। প্রশাসনে সরকারের হস্তক্ষেপ থাকবে না। লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমানো হবে। ফাইল দ্রুত ছাড়তে হবে। ফাইল আটকে রাখা যাবে না। নারী ও শিশু অধিকার : দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা হবে। গণমাধ্যমের অধিকার : বর্তমানে গণমাধ্যমে প্রচণ্ড সরকারি চাপের মধ্যে রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ মিডিয়ার ওপর খক্ষ হিসেবে কাজ করছে। সংবাদকর্মীরা স্বাধীনভাবে নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। মিডিয়ার ওপর সব ধরনের বিধি-নিষেধ তুলে নিয়ে মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। ব্যক্তির নিরাপত্তা : ভিন্ন মতের হলেও রাষ্ট্র কাউকে খুন কিংবা গুম করবে না। এরই মধ্যে যারা গুমের শিকার হয়েছেন, তাদেরকে খুঁজে বের করা হবে। গণপরিবহন ও সেবা খাতে সংস্কার : গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা চলছে। এর প্রতিবাদে ছাত্ররা রাজপথে নেমেছিল। ছাত্ররা যে দফাগুলো দিয়েছিল তা বিবেচনায় রাখা হবে। সেবা খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। স্বাস্থ্য খাতে আমূল সংস্কার : স্বাস্থ্য খাতে আমূল সংস্কার আনা হবে। বিশেষ করে মেডিকেল টেস্টের মূল্য অন্তত ৩০ শতাংশ ভাগ কমিয়ে আনা হবে। কমানো হবে ওষুধের দাম। চিকিৎসক ও নার্সসহ এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে।