বিএনপির ১৯ দফা ইশতেহার
প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহারের অঙ্গীকার
রেজাউল করিম লাবলু | ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
নির্বাচনের দিনের গণতন্ত্রকে নিত্যদিনের অনুশীলনে পরিণত করে রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে একগুচ্ছ সংস্কারের অঙ্গীকার রেখে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে বিএনপি। নিজেদের নির্বাচনী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মতো রাষ্ট্রে জনগণের মালিকানা সুদৃঢ় করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দলটি।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করলে ঐকমত্য, সবার অন্তর্ভুক্তি এবং প্রতিহিংসাহীনতাÑ এই মূলনীতির ভিত্তিতে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনা করবে।
তিনি বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’ সংবিধানের এই নীতির ভিত্তিতে সরকার পরিচালনায় যাবতীয় পদক্ষেপের ভিত্তি হবে রাষ্ট্রের মালিকদের মালিকানা সুদৃঢ় করা। শুধু নির্বাচনে জেতা দলের মানুষের নয়, এই মালিকানায় সব দল, ব্যক্তি ও মতাদর্শ অন্তর্ভুক্ত হবে।
ইশেতহারে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে না থাকার বিধান, গণভোট পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তন, উচ্চকক্ষ সংসদ প্রতিষ্ঠা, বিরোধীদল থেকে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ, ন্যায়পাল নিয়োগ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট বাতিল, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল ও বেকার ভাতা দেওয়াসহ ১৯ দফা প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব প্রতিবছর প্রকাশ এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর চলাচলে যেন সাধারণ মানুষের কোনো ভোগান্তি না হয় সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে দলটি। বর্তমানে চলমান কোনো প্রকল্প বন্ধ না করারও কথা বলা হয়েছে বিএনপির ইশতেহারে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে চলমান কোনো প্রকল্প বন্ধ করা হবে না। তবে মেগা প্রকল্পের ব্যয়ের আড়ালে সংঘটিত দুর্নীতি নিরীক্ষা করে দেখা হবে। এজন্য দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। সরকারের শেষ দুই বছরে তড়িঘড়ি করে নেওয়া প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনা করে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
তবে বিএনপিকে নিয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখার কথা বলা হলেও ইশতেহারে বা বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে যুদ্ধাপরাধের বিচার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
ইশতেহারের উল্লেখযোগ্য দিক
রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে বিএনপি জনগণের জন্য কী কী করবে তা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতির সঙ্গেই বিএনপির ইশতেহারের সঙ্গে মিল রয়েছে।
বিএনপির ইশতেহারে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিয়ে বলা হয়, নির্বাচনের দিনটিকে বিএনপি গণতন্ত্রের নিত্যদিনের অনুশীলনে পরিণত করবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনবে। বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার দেবে। সংসদে উচ্চকক্ষ গঠন ও গণভোট পুনঃপ্রবর্তন করবে। নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো প্রবর্তন করবে। প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি গঠনের জন্য জাতীয় কমিশন গঠন করবে। এছাড়া ন্যায়পাল নিয়োগ, র্যাবের পুনর্গঠন, পুলিশ ও আনসার ছাড়া শর্তসাপেক্ষে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা উঠিয়ে দেওয়া, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর যাতায়াতের সময় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গ রয়েছে।
নি¤œ আদালতকে সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত করার পাশাপাশি বিচারব্যবস্থা সংস্কারে জুডিশিয়াল কমিশনের কথা বলা হয়েছে বিএনপির ইশতেহারে। মতপ্রকাশের অবারিত স্বাধীনতা, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল, বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল, গুমÑখুন ও শারীরিকÑমানসিক নির্যাতন বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণসহ বাজেটের ৩০ শতাংশ স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে।
বর্তমান সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ না করার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি এসব কাজের দুর্নীতি নিরীক্ষা করে দেখবে বিএনপি। বর্তমান সরকারের শেষ দুই বছরে তড়িঘড়ি করে নেওয়া প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনা করা হবে। ক্ষমতা কুক্ষিগতকরণের পুনরাবৃত্তি রোধে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে স্বচ্ছ আলাপÑআলোচনার ভিত্তিতে নির্বাচন পরিচালনার জন্য ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা’ ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি রয়েছে ইশতেহারে।
প্রতিরক্ষা ও পুলিশের জন্য বিশেষ সুবিধার কথা বলা হয়েছে ইশতেহারে। এতে বলা হয়, সিভিল সার্ভিস আইন প্রণয়ন করা হবে, যুদ্ধাস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কেনা হবে। বর্তমান ও সাবেক সশস্ত্র বাহিনীর কর্মরত সবাইকে যৌক্তিক রেশনিং দেওয়া হবে এবং কল্যাণমূলক প্রকল্প নেওয়া হবে। পুলিশের ঝুঁকি ভাতা বাড়ানো হবে। ইন্সপেক্টর ও সাবÑইন্সপেক্টদের বেতন ছয় মাসের মধ্যে আপগ্রেড করা হবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের নামে দুর্নীতির অবসান ঘটানো হবে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের ভাতা বাড়ানো হবে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা ও বধ্যভূমিÑগণকবর চিহ্নিত করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।
বিএনপির ইশতেহারে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত তরুণদের স্বার্থ রক্ষায় ইয়ুথ পার্লামেন্ট গঠনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে অধিকসংখ্যক শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়া হবে। শিক্ষিত বেকারদের চাকরি না হওয়া পর্যন্ত বা এক বছরব্যাপী ভাতা দেওয়া হবে। নারীদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার করা হবে।
ক্ষমতায় গেলে বিদেশি ভাষা শিক্ষায় জোর, স্বল্প সুদে শিক্ষাঋণ ও বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্যও ঋণ দেবে বিএনপি। ডাকসুসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। খতিব, ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সম্মানী দেবে। প্রশ্নফাঁস প্রতিরোধে ভূমিকা নেওয়া হবে। ভ্যাটবিরোধী, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সব মামলা তুলে নেওয়া হবে। প্রথম তিন বছরে দুই লাখ সরকারি চাকরি দেওয়া হবে, তরুণ দম্পতি ও উদ্যোক্তাদের ২০ বছর মেয়াদি ঋণ দেওয়া হবে। পাঁচ বছরে এক কোটি নতুন কর্মসংস্থান করা হবে।
তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে ভিওআইপি ব্যবস্থায় উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে। সৃজনশীল ব্যক্তিদের মেধাস্বত্ব অধিকার নিশ্চিত করা হবে। সাশ্রয়ী মূল্যে সর্বোচ্চ ইন্টারনেট গতি নিশ্চিত করা হবে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে ব্যবহৃত সব উপকরণে শূন্য শুল্ক সুবিধা বজায় রাখা হবে। পর্যায়ক্রমে স্মার্ট সিটি, স্মার্ট পৌরসভা, স্মার্ট গ্রাম ও স্মার্ট ক্যাম্পাস গঠন করা হবে।
বিএনপির ইশতেহারে বলা হয়, জাতীয় ভাবধারার পরিপন্থী অপসংস্কৃতির চর্চাকে নিরুৎসাহিত করা হবে। বিদেশফেরত প্রবাসীদের বিমানবন্দরে হয়রানি বন্ধ করা হবে। প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ১২ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি দেওয়া হবে। সব খাতে শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। শ্রমিক, খেতমজুরসহ দরিদ্র ব্যক্তিদের সুলভ মূল্যে রেশনিং দেওয়া হবে। এ ছাড়া জ্বালানি খাত, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, আবাসন, পররাষ্ট্র, পরিবেশ, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও সংখ্যালঘুদের জন্য ইশতেহারে বিভিন্ন সুবিধার কথা বলা হয়েছে।
এর আগে গত পরশু সোমবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এই ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক দল বিএনপি। আজ বিএনপি আলাদা করে ইশতেহার দিল।
ইশতেহার ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
শেয়ার করুন
রেজাউল করিম লাবলু | ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

নির্বাচনের দিনের গণতন্ত্রকে নিত্যদিনের অনুশীলনে পরিণত করে রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে একগুচ্ছ সংস্কারের অঙ্গীকার রেখে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে বিএনপি। নিজেদের নির্বাচনী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মতো রাষ্ট্রে জনগণের মালিকানা সুদৃঢ় করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দলটি।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করলে ঐকমত্য, সবার অন্তর্ভুক্তি এবং প্রতিহিংসাহীনতাÑ এই মূলনীতির ভিত্তিতে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনা করবে।
তিনি বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’ সংবিধানের এই নীতির ভিত্তিতে সরকার পরিচালনায় যাবতীয় পদক্ষেপের ভিত্তি হবে রাষ্ট্রের মালিকদের মালিকানা সুদৃঢ় করা। শুধু নির্বাচনে জেতা দলের মানুষের নয়, এই মালিকানায় সব দল, ব্যক্তি ও মতাদর্শ অন্তর্ভুক্ত হবে।
ইশেতহারে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে না থাকার বিধান, গণভোট পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তন, উচ্চকক্ষ সংসদ প্রতিষ্ঠা, বিরোধীদল থেকে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ, ন্যায়পাল নিয়োগ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট বাতিল, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল ও বেকার ভাতা দেওয়াসহ ১৯ দফা প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব প্রতিবছর প্রকাশ এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর চলাচলে যেন সাধারণ মানুষের কোনো ভোগান্তি না হয় সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে দলটি। বর্তমানে চলমান কোনো প্রকল্প বন্ধ না করারও কথা বলা হয়েছে বিএনপির ইশতেহারে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে চলমান কোনো প্রকল্প বন্ধ করা হবে না। তবে মেগা প্রকল্পের ব্যয়ের আড়ালে সংঘটিত দুর্নীতি নিরীক্ষা করে দেখা হবে। এজন্য দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। সরকারের শেষ দুই বছরে তড়িঘড়ি করে নেওয়া প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনা করে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
তবে বিএনপিকে নিয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখার কথা বলা হলেও ইশতেহারে বা বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে যুদ্ধাপরাধের বিচার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
ইশতেহারের উল্লেখযোগ্য দিক
রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে বিএনপি জনগণের জন্য কী কী করবে তা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতির সঙ্গেই বিএনপির ইশতেহারের সঙ্গে মিল রয়েছে।
বিএনপির ইশতেহারে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিয়ে বলা হয়, নির্বাচনের দিনটিকে বিএনপি গণতন্ত্রের নিত্যদিনের অনুশীলনে পরিণত করবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনবে। বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার দেবে। সংসদে উচ্চকক্ষ গঠন ও গণভোট পুনঃপ্রবর্তন করবে। নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো প্রবর্তন করবে। প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি গঠনের জন্য জাতীয় কমিশন গঠন করবে। এছাড়া ন্যায়পাল নিয়োগ, র্যাবের পুনর্গঠন, পুলিশ ও আনসার ছাড়া শর্তসাপেক্ষে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা উঠিয়ে দেওয়া, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর যাতায়াতের সময় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গ রয়েছে।
নি¤œ আদালতকে সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত করার পাশাপাশি বিচারব্যবস্থা সংস্কারে জুডিশিয়াল কমিশনের কথা বলা হয়েছে বিএনপির ইশতেহারে। মতপ্রকাশের অবারিত স্বাধীনতা, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল, বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল, গুমÑখুন ও শারীরিকÑমানসিক নির্যাতন বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণসহ বাজেটের ৩০ শতাংশ স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে।
বর্তমান সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ না করার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি এসব কাজের দুর্নীতি নিরীক্ষা করে দেখবে বিএনপি। বর্তমান সরকারের শেষ দুই বছরে তড়িঘড়ি করে নেওয়া প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনা করা হবে। ক্ষমতা কুক্ষিগতকরণের পুনরাবৃত্তি রোধে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে স্বচ্ছ আলাপÑআলোচনার ভিত্তিতে নির্বাচন পরিচালনার জন্য ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা’ ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি রয়েছে ইশতেহারে।
প্রতিরক্ষা ও পুলিশের জন্য বিশেষ সুবিধার কথা বলা হয়েছে ইশতেহারে। এতে বলা হয়, সিভিল সার্ভিস আইন প্রণয়ন করা হবে, যুদ্ধাস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কেনা হবে। বর্তমান ও সাবেক সশস্ত্র বাহিনীর কর্মরত সবাইকে যৌক্তিক রেশনিং দেওয়া হবে এবং কল্যাণমূলক প্রকল্প নেওয়া হবে। পুলিশের ঝুঁকি ভাতা বাড়ানো হবে। ইন্সপেক্টর ও সাবÑইন্সপেক্টদের বেতন ছয় মাসের মধ্যে আপগ্রেড করা হবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের নামে দুর্নীতির অবসান ঘটানো হবে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের ভাতা বাড়ানো হবে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা ও বধ্যভূমিÑগণকবর চিহ্নিত করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।
বিএনপির ইশতেহারে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত তরুণদের স্বার্থ রক্ষায় ইয়ুথ পার্লামেন্ট গঠনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে অধিকসংখ্যক শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়া হবে। শিক্ষিত বেকারদের চাকরি না হওয়া পর্যন্ত বা এক বছরব্যাপী ভাতা দেওয়া হবে। নারীদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার করা হবে।
ক্ষমতায় গেলে বিদেশি ভাষা শিক্ষায় জোর, স্বল্প সুদে শিক্ষাঋণ ও বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্যও ঋণ দেবে বিএনপি। ডাকসুসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। খতিব, ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সম্মানী দেবে। প্রশ্নফাঁস প্রতিরোধে ভূমিকা নেওয়া হবে। ভ্যাটবিরোধী, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সব মামলা তুলে নেওয়া হবে। প্রথম তিন বছরে দুই লাখ সরকারি চাকরি দেওয়া হবে, তরুণ দম্পতি ও উদ্যোক্তাদের ২০ বছর মেয়াদি ঋণ দেওয়া হবে। পাঁচ বছরে এক কোটি নতুন কর্মসংস্থান করা হবে।
তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে ভিওআইপি ব্যবস্থায় উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে। সৃজনশীল ব্যক্তিদের মেধাস্বত্ব অধিকার নিশ্চিত করা হবে। সাশ্রয়ী মূল্যে সর্বোচ্চ ইন্টারনেট গতি নিশ্চিত করা হবে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে ব্যবহৃত সব উপকরণে শূন্য শুল্ক সুবিধা বজায় রাখা হবে। পর্যায়ক্রমে স্মার্ট সিটি, স্মার্ট পৌরসভা, স্মার্ট গ্রাম ও স্মার্ট ক্যাম্পাস গঠন করা হবে।
বিএনপির ইশতেহারে বলা হয়, জাতীয় ভাবধারার পরিপন্থী অপসংস্কৃতির চর্চাকে নিরুৎসাহিত করা হবে। বিদেশফেরত প্রবাসীদের বিমানবন্দরে হয়রানি বন্ধ করা হবে। প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ১২ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি দেওয়া হবে। সব খাতে শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। শ্রমিক, খেতমজুরসহ দরিদ্র ব্যক্তিদের সুলভ মূল্যে রেশনিং দেওয়া হবে। এ ছাড়া জ্বালানি খাত, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, আবাসন, পররাষ্ট্র, পরিবেশ, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও সংখ্যালঘুদের জন্য ইশতেহারে বিভিন্ন সুবিধার কথা বলা হয়েছে।
এর আগে গত পরশু সোমবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এই ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক দল বিএনপি। আজ বিএনপি আলাদা করে ইশতেহার দিল।
ইশতেহার ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।