প্রচারে আওয়ামী লীগ, দাঁড়াতে পারছে না বিএনপি নিষ্ক্রিয় জাপা
সাইফুর রহমান মিরণ, বরিশাল | ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
বরিশালের ছয়টি আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচারের হাওয়া অনেকটা একমুখী। মহাজোটের নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জমজমাট প্রচার চালালেও নিষ্ক্রিয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী-সমর্থকরা। অপরদিকে দু-একটি আসনে প্রচার চালালেও বাকিগুলোয় দাঁড়াতে পারছে না বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী-সমর্থকরা।
বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) নির্বাচনী এলাকায় একচেটিয়া প্রচার চালাতে দেখা গেছে মহাজোটের প্রার্থী আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর নেতাকর্মীদের। এখানে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা জহিরউদ্দিন স্বপন। দীর্ঘদিন তিনি এলাকার বাইরে ছিলেন। মনোনয়ন পাওয়ার পর এলাকায় এলেও প্রচারের মাঠে তেমন দেখা যাচ্ছে না। স্বপনের অভিযোগ, নানামুখী বাধা এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় প্রচারে নামতে পারছেন না তিনি।
বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে মহাজোটের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা শাহে আলম। দুই উপজেলায় শুধু তার প্রচার চোখে পড়ে। এখানে বিএনপির প্রার্থী সরদার সরফুদ্দিন সান্টু প্রচারে নেমে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কয়েকবার। তার নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর ও নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সান্টুর অভিযোগ, কোথাও তার নির্বাচনী প্রচার চালাতে দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। তবে ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শাহে আলম। এই আসনে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাপার প্রার্থী চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানাকে এখন পর্যন্ত প্রচারে দেখা যায়নি।
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে মহাজোটের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য শেখ মো. টিপু সুলতান। তিনি জোরালোভাবে প্রচার চালাচ্ছেন। একই আসনে মহাজোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপুর পক্ষে তেমন প্রচার নেই।
এখানে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী খালেদা জিয়ার আইন উপদেষ্টা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তার পক্ষে কিছুটা প্রচার দেখা গেছে।
বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে মহাজোটের প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ। তার পক্ষে জোরালো প্রচার চলছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে এখানে নির্বাচন করছেন নাগরিক ঐক্যের মো. নুরুর রহমান। তার পক্ষে বিএনপি নেতাকর্মী না থাকায় প্রচার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। প্রচার চালাতে গিয়ে তিনি ধাওয়া খেয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থকদের। তবে প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। বিএনপির ভোটব্যাংক থাকার পরও এই আসন থেকে প্রার্থী করা হয়নি সাবেক সংসদ সদস্য ও উত্তর জেলা বিএনপির মেজবাহউদ্দিন ফরহাদকে। ফলে নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন দাবি ফরহাদের।
বরিশাল-৫ (সদর) এই আসনের চিত্র অবশ্য ভিন্ন। এখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব দলের প্রার্থী প্রচার চালাচ্ছেন। অবশ্য বৈষম্যমূলক আচরণের স্বীকার হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি বলেন, তার নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। প্রচারে নেমেছেন সদ্য নির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এই আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের পক্ষে প্রচার লক্ষ করা গেছে। এ ছাড়া মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির পক্ষে প্রচারে আছেন এ কে এম মরতুজা আবেদীন। বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে মহাজোটের প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রতœা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী না থাকায় দলের নেতাকর্মীরা অনেকটা ক্ষুব্ধ। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তার পক্ষে প্রচারে দেখা যায়নি।
শেয়ার করুন
সাইফুর রহমান মিরণ, বরিশাল | ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

বরিশালের ছয়টি আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচারের হাওয়া অনেকটা একমুখী। মহাজোটের নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জমজমাট প্রচার চালালেও নিষ্ক্রিয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী-সমর্থকরা। অপরদিকে দু-একটি আসনে প্রচার চালালেও বাকিগুলোয় দাঁড়াতে পারছে না বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী-সমর্থকরা।
বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) নির্বাচনী এলাকায় একচেটিয়া প্রচার চালাতে দেখা গেছে মহাজোটের প্রার্থী আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর নেতাকর্মীদের। এখানে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা জহিরউদ্দিন স্বপন। দীর্ঘদিন তিনি এলাকার বাইরে ছিলেন। মনোনয়ন পাওয়ার পর এলাকায় এলেও প্রচারের মাঠে তেমন দেখা যাচ্ছে না। স্বপনের অভিযোগ, নানামুখী বাধা এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় প্রচারে নামতে পারছেন না তিনি।
বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে মহাজোটের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা শাহে আলম। দুই উপজেলায় শুধু তার প্রচার চোখে পড়ে। এখানে বিএনপির প্রার্থী সরদার সরফুদ্দিন সান্টু প্রচারে নেমে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কয়েকবার। তার নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর ও নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সান্টুর অভিযোগ, কোথাও তার নির্বাচনী প্রচার চালাতে দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। তবে ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শাহে আলম। এই আসনে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাপার প্রার্থী চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানাকে এখন পর্যন্ত প্রচারে দেখা যায়নি।
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে মহাজোটের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য শেখ মো. টিপু সুলতান। তিনি জোরালোভাবে প্রচার চালাচ্ছেন। একই আসনে মহাজোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপুর পক্ষে তেমন প্রচার নেই।
এখানে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী খালেদা জিয়ার আইন উপদেষ্টা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তার পক্ষে কিছুটা প্রচার দেখা গেছে।
বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে মহাজোটের প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ। তার পক্ষে জোরালো প্রচার চলছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে এখানে নির্বাচন করছেন নাগরিক ঐক্যের মো. নুরুর রহমান। তার পক্ষে বিএনপি নেতাকর্মী না থাকায় প্রচার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। প্রচার চালাতে গিয়ে তিনি ধাওয়া খেয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থকদের। তবে প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। বিএনপির ভোটব্যাংক থাকার পরও এই আসন থেকে প্রার্থী করা হয়নি সাবেক সংসদ সদস্য ও উত্তর জেলা বিএনপির মেজবাহউদ্দিন ফরহাদকে। ফলে নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন দাবি ফরহাদের।
বরিশাল-৫ (সদর) এই আসনের চিত্র অবশ্য ভিন্ন। এখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব দলের প্রার্থী প্রচার চালাচ্ছেন। অবশ্য বৈষম্যমূলক আচরণের স্বীকার হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি বলেন, তার নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। প্রচারে নেমেছেন সদ্য নির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এই আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের পক্ষে প্রচার লক্ষ করা গেছে। এ ছাড়া মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির পক্ষে প্রচারে আছেন এ কে এম মরতুজা আবেদীন। বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে মহাজোটের প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রতœা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী না থাকায় দলের নেতাকর্মীরা অনেকটা ক্ষুব্ধ। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তার পক্ষে প্রচারে দেখা যায়নি।