পরিবেশ সৃষ্টির দাবি
আন্দোলনে ঐক্যফ্রন্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের পর নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির দাবিতে আন্দোলনে যাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ দাবিতে আগামী ২৭ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে তারা। এর আগে ২১-২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর আসনগুলোতে জোটের প্রার্থীদের পক্ষে ফ্রন্টের নেতারা সমাবেশ ও র্যালিও করবে বিরোধী রাজনৈতিক মোর্চা।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে পুরানা পল্টনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কার্যালয় প্রিতম-জামান টাওয়ারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন ফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের পরে ড. কামাল সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের আচরণ নজিরবিহীন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি কোনো ভোট হয়নি। এটা একটা আয়োজন ছিল। তারা বলেছিল, দ্রুত নির্বাচন দেবে, কিন্তু সেই দ্রুত সময় আর আসেনি। প্রহসন বন্ধ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন, তা না হলে দেশে সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনের প্রচারকাজ শুরুর পর থেকেই ধানের শীষের প্রার্থীদের বাধা দিচ্ছে সরকারি দলের সন্ত্রাসী বাহিনী। প্রার্থী ছাড়াও নেতাকর্মী-সমর্থকদের ওপর সশস্ত্র হামলা থামছেই না। আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে অবাধে গুলিবিদ্ধ করে আহত করা হচ্ছে তাদের। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সারা দেশে ধানের শীষের নির্বাচনী অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতা ও নির্বাচন কমিশনের নিষ্ক্রিয়তায়ই আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এসব অপকর্মে সাহায্য করছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ‘গায়েবি’ মামলায় পুলিশ প্রতিদিনই ঐক্যফ্রন্টের শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করছে। নির্বাচনী প্রচারে বাধা, হামলা, ভাঙচুরের মতো সহিংসতা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। পুলিশসহ প্রশাসনের ভূমিকা দেশবাসীকেও রীতিমতো অবাক করছে।
ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল বলেন, পাঁচ বছর পর নির্বাচন করছেন, এটা প্রহসনে পরিণত করবেন না। আগামীকাল (আজ) থেকে খবর নেব, এই আচরণ বন্ধ হয়েছে কি না। সংবিধানে লেখা আছে, পুলিশ কোনো দলীয় বাহিনী হবে না। পুলিশ ভাইদের অনুরোধ করব, আপনারা পুলিশ ভাইয়েরা যা করছেন, ১৬ আনা নিরপেক্ষতার পরিপন্থি। তা অবিলম্বে বন্ধ করুন। এটা করলে জনগণের মালিকানা থাকবে না, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। জনগণ যাকে ইচ্ছে ভোট দেবে। শুধু এটা নিশ্চিত করুন, আমরা বলছি না, আমাদের ভোট দিতে হবে। জনগণ যাকে ইচ্ছে ভোট দেবে, তারাই ক্ষমতায় আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন ড. কামাল। তিনি বলেন, ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা সিটির ৪ থেকে ১৮ আসন পর্যন্ত প্রতিটি আসনে একই সঙ্গে নির্বাচনী সভা ও গণমিছিল করবে ফ্রন্ট। এ ছাড়া ২৭ ডিসেম্বর বেলা ২টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে ঐক্যফ্রন্ট। এরই মধ্যে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে অনুমতি চেয়ে।
সংবাদ সম্মেলনে ড. কামালের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের যুগ্ম সম্পাদক জগলুল হায়দার আফ্রিক। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এই মুহূর্তে ধানের শীষের ১৬ জন প্রার্থী কারাগারে এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১৩টি নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের প্রার্থিতা শূন্য হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, জাতীয় নির্বাচনের তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে, নির্বাচনী হামলা, সহিংসতা ও নৈরাজ্য ততই তীব্র হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নতুন করে যোগ হচ্ছে পুলিশি নির্যাতন, হামলা ও গ্রেপ্তার। এ অবস্থায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রত্যাশা, অনতিবিলম্বে অত্যাচারের পথ পরিহার করে পুলিশ, প্রশাসন সঠিক পথে ফিরে আসবে এবং নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল আরো বলেন, যেসব আসনে প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে সেসব আসনে পুনঃ তফসিলের দাবি জানাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট। এ ছাড়া ইন্টারনেটের গতি কমানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে, এটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের পর নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির দাবিতে আন্দোলনে যাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ দাবিতে আগামী ২৭ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে তারা। এর আগে ২১-২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর আসনগুলোতে জোটের প্রার্থীদের পক্ষে ফ্রন্টের নেতারা সমাবেশ ও র্যালিও করবে বিরোধী রাজনৈতিক মোর্চা।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে পুরানা পল্টনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কার্যালয় প্রিতম-জামান টাওয়ারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন ফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের পরে ড. কামাল সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের আচরণ নজিরবিহীন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি কোনো ভোট হয়নি। এটা একটা আয়োজন ছিল। তারা বলেছিল, দ্রুত নির্বাচন দেবে, কিন্তু সেই দ্রুত সময় আর আসেনি। প্রহসন বন্ধ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন, তা না হলে দেশে সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনের প্রচারকাজ শুরুর পর থেকেই ধানের শীষের প্রার্থীদের বাধা দিচ্ছে সরকারি দলের সন্ত্রাসী বাহিনী। প্রার্থী ছাড়াও নেতাকর্মী-সমর্থকদের ওপর সশস্ত্র হামলা থামছেই না। আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে অবাধে গুলিবিদ্ধ করে আহত করা হচ্ছে তাদের। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সারা দেশে ধানের শীষের নির্বাচনী অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতা ও নির্বাচন কমিশনের নিষ্ক্রিয়তায়ই আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এসব অপকর্মে সাহায্য করছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ‘গায়েবি’ মামলায় পুলিশ প্রতিদিনই ঐক্যফ্রন্টের শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করছে। নির্বাচনী প্রচারে বাধা, হামলা, ভাঙচুরের মতো সহিংসতা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। পুলিশসহ প্রশাসনের ভূমিকা দেশবাসীকেও রীতিমতো অবাক করছে।
ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল বলেন, পাঁচ বছর পর নির্বাচন করছেন, এটা প্রহসনে পরিণত করবেন না। আগামীকাল (আজ) থেকে খবর নেব, এই আচরণ বন্ধ হয়েছে কি না। সংবিধানে লেখা আছে, পুলিশ কোনো দলীয় বাহিনী হবে না। পুলিশ ভাইদের অনুরোধ করব, আপনারা পুলিশ ভাইয়েরা যা করছেন, ১৬ আনা নিরপেক্ষতার পরিপন্থি। তা অবিলম্বে বন্ধ করুন। এটা করলে জনগণের মালিকানা থাকবে না, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। জনগণ যাকে ইচ্ছে ভোট দেবে। শুধু এটা নিশ্চিত করুন, আমরা বলছি না, আমাদের ভোট দিতে হবে। জনগণ যাকে ইচ্ছে ভোট দেবে, তারাই ক্ষমতায় আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন ড. কামাল। তিনি বলেন, ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা সিটির ৪ থেকে ১৮ আসন পর্যন্ত প্রতিটি আসনে একই সঙ্গে নির্বাচনী সভা ও গণমিছিল করবে ফ্রন্ট। এ ছাড়া ২৭ ডিসেম্বর বেলা ২টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে ঐক্যফ্রন্ট। এরই মধ্যে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে অনুমতি চেয়ে।
সংবাদ সম্মেলনে ড. কামালের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের যুগ্ম সম্পাদক জগলুল হায়দার আফ্রিক। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এই মুহূর্তে ধানের শীষের ১৬ জন প্রার্থী কারাগারে এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১৩টি নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের প্রার্থিতা শূন্য হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, জাতীয় নির্বাচনের তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে, নির্বাচনী হামলা, সহিংসতা ও নৈরাজ্য ততই তীব্র হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নতুন করে যোগ হচ্ছে পুলিশি নির্যাতন, হামলা ও গ্রেপ্তার। এ অবস্থায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রত্যাশা, অনতিবিলম্বে অত্যাচারের পথ পরিহার করে পুলিশ, প্রশাসন সঠিক পথে ফিরে আসবে এবং নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল আরো বলেন, যেসব আসনে প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে সেসব আসনে পুনঃ তফসিলের দাবি জানাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট। এ ছাড়া ইন্টারনেটের গতি কমানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে, এটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।