দেশে ফেরা নিয়ে ফের আলোচনায় এরশাদ
প্রতীক ইজাজ | ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দেশে ফেরার দিনক্ষণ ঠিক থাকছে না। দল থেকেই বলা হয়েছিল গতকাল সোমবার দেশে ফিরবেন তিনি। কিন্তু সে রাতেই আবার জানানো হয় তিনি ফিরছেন না।
নেপথ্য কারণ নিয়ে নানা গুঞ্জন দলের ভেতর-বাইরে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক শীর্ষ নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগের যে সব আসনে জাপার প্রার্থী রয়েছে, সেখানে কিছু আসনে জাপা প্রার্থী রাখতে চায়। নিজের ঢাকা-১৭ আসন ছাড়তে নারাজ এরশাদ। কিন্তু আওয়ামী লীগ চাইছে যেখানে নৌকার প্রার্থী আছে সেখান থেকে জাপার প্রার্থীদের সরিয়ে নিতে। অথচ দলীয় চাপ ও মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে এরশাদ তা প্রার্থীদের মানাতে পারছিলেন না। বিতর্ক এড়াতে চিকিৎসার নাম করে সিঙ্গাপুর চলে যান তিনি। এসব বিষয়ে সমঝোতা হলেই দেশে ফিরবেন বলে জানান এই নেতা। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে এরশাদের সমঝোতার আভাস দিয়েছেন এরশাদের ঘনিষ্ঠ আরেক শীর্ষ নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, মূলত আসন নিয়েই ক্ষুব্ধ এরশাদ। এর সমাধানও অনেকটাই হয়েছে। দেশে ফিরে এরশাদ ঢাকা-১৭ আসন ছাড়ার ঘোষণা দিতে পারেন। এই মুহূর্তে দলীয় প্রার্থীদের মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব না। তাই নিজের অনুপস্থিতির মধ্য দিয়ে তিনি দলীয় প্রার্থীদের নিষ্ক্রিয় করার কৌশল নিয়েছেন। এরশাদ এমন সময়ে দেশে ফিরবেন যাতে তার উপস্থিতি এসব আসনে নৌকার প্রার্থীদের কোনো ধরনের বিপদের মুখে পড়তে না হয়। তার মহাজোট ছাড়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
জাপার কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের চেয়ারম্যান চিকিৎসা নিতে গেছেন। শেষ হলেই ফিরবেন। তার নির্দেশনাতেই দল চলছে। এর বাইরে কিছু জানি না।’
এর আগে গত নভেম্বরের শেষের দিকেও আসন নিয়ে সমঝোতা না হওয়ার পর এরশাদ ভর্তি হন রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। সেখান থেকে গত ১০ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও হঠাৎ করে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এরশাদ।
আগামী ২৬ ডিসেম্বর এরশাদের দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদের ঢাকা-১৭ আসনের প্রচার কমিটির প্রধান ফয়সাল আলম চিশতী।
এদিকে এরশাদ বিদেশ যাওয়ায় নৌকা ও মহাজোটের প্রার্থীদের সুবিধা হয়েছে বলে মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রেসিডিয়াম সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলে মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। এরশাদ চাইলেও প্রার্থীদের তুলে নিতে পারবেন না। ফলে তিনি দেশের বাইরে থেকে মূলত এসব প্রার্থীদের নিষ্ক্রিয় করতে চাইছেন। সেখানে তিনি কিছুটা হলেও সফল। কারণ এখনো ভোটের মাঠে তেমনভাবে সরব হতে দেখা যাচ্ছে না দলীয় প্রার্থীদের। দলের চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে কোনো ধরনের দলীয় দিকনির্দেশনা-পরামর্শও পাচ্ছেন না প্রার্থীরা। দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ তার নির্বাচনী এলাকা ময়মনসিংহ, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের লালমনিরহাট, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা রংপুর ও সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চট্টগ্রামে ব্যস্ত নির্বাচনী প্রচারকাজে। এরশাদের অনুপস্থিতিতে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত সদ্য বিদায়ী মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ব্যস্ত তার স্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারকাজে। এমন অবস্থায় নৌকার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী আসনগুলোতে লাঙ্গলের পরাজয় নিশ্চিত বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।
এবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভাগাভাগিতে ২৬টি আসন পেয়েছে জাপা। এর বাইরে আরো ১৪৭ আসনে জাপার প্রার্থী রয়েছেন। বর্তমানে জাপার ৩৪ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন।
শেয়ার করুন
প্রতীক ইজাজ | ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দেশে ফেরার দিনক্ষণ ঠিক থাকছে না। দল থেকেই বলা হয়েছিল গতকাল সোমবার দেশে ফিরবেন তিনি। কিন্তু সে রাতেই আবার জানানো হয় তিনি ফিরছেন না।
নেপথ্য কারণ নিয়ে নানা গুঞ্জন দলের ভেতর-বাইরে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক শীর্ষ নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগের যে সব আসনে জাপার প্রার্থী রয়েছে, সেখানে কিছু আসনে জাপা প্রার্থী রাখতে চায়। নিজের ঢাকা-১৭ আসন ছাড়তে নারাজ এরশাদ। কিন্তু আওয়ামী লীগ চাইছে যেখানে নৌকার প্রার্থী আছে সেখান থেকে জাপার প্রার্থীদের সরিয়ে নিতে। অথচ দলীয় চাপ ও মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে এরশাদ তা প্রার্থীদের মানাতে পারছিলেন না। বিতর্ক এড়াতে চিকিৎসার নাম করে সিঙ্গাপুর চলে যান তিনি। এসব বিষয়ে সমঝোতা হলেই দেশে ফিরবেন বলে জানান এই নেতা। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে এরশাদের সমঝোতার আভাস দিয়েছেন এরশাদের ঘনিষ্ঠ আরেক শীর্ষ নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, মূলত আসন নিয়েই ক্ষুব্ধ এরশাদ। এর সমাধানও অনেকটাই হয়েছে। দেশে ফিরে এরশাদ ঢাকা-১৭ আসন ছাড়ার ঘোষণা দিতে পারেন। এই মুহূর্তে দলীয় প্রার্থীদের মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব না। তাই নিজের অনুপস্থিতির মধ্য দিয়ে তিনি দলীয় প্রার্থীদের নিষ্ক্রিয় করার কৌশল নিয়েছেন। এরশাদ এমন সময়ে দেশে ফিরবেন যাতে তার উপস্থিতি এসব আসনে নৌকার প্রার্থীদের কোনো ধরনের বিপদের মুখে পড়তে না হয়। তার মহাজোট ছাড়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
জাপার কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের চেয়ারম্যান চিকিৎসা নিতে গেছেন। শেষ হলেই ফিরবেন। তার নির্দেশনাতেই দল চলছে। এর বাইরে কিছু জানি না।’
এর আগে গত নভেম্বরের শেষের দিকেও আসন নিয়ে সমঝোতা না হওয়ার পর এরশাদ ভর্তি হন রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। সেখান থেকে গত ১০ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও হঠাৎ করে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এরশাদ।
আগামী ২৬ ডিসেম্বর এরশাদের দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদের ঢাকা-১৭ আসনের প্রচার কমিটির প্রধান ফয়সাল আলম চিশতী।
এদিকে এরশাদ বিদেশ যাওয়ায় নৌকা ও মহাজোটের প্রার্থীদের সুবিধা হয়েছে বলে মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রেসিডিয়াম সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলে মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। এরশাদ চাইলেও প্রার্থীদের তুলে নিতে পারবেন না। ফলে তিনি দেশের বাইরে থেকে মূলত এসব প্রার্থীদের নিষ্ক্রিয় করতে চাইছেন। সেখানে তিনি কিছুটা হলেও সফল। কারণ এখনো ভোটের মাঠে তেমনভাবে সরব হতে দেখা যাচ্ছে না দলীয় প্রার্থীদের। দলের চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে কোনো ধরনের দলীয় দিকনির্দেশনা-পরামর্শও পাচ্ছেন না প্রার্থীরা। দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ তার নির্বাচনী এলাকা ময়মনসিংহ, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের লালমনিরহাট, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা রংপুর ও সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চট্টগ্রামে ব্যস্ত নির্বাচনী প্রচারকাজে। এরশাদের অনুপস্থিতিতে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত সদ্য বিদায়ী মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ব্যস্ত তার স্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারকাজে। এমন অবস্থায় নৌকার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী আসনগুলোতে লাঙ্গলের পরাজয় নিশ্চিত বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।
এবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভাগাভাগিতে ২৬টি আসন পেয়েছে জাপা। এর বাইরে আরো ১৪৭ আসনে জাপার প্রার্থী রয়েছেন। বর্তমানে জাপার ৩৪ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন।