বিনিয়োগ করতে এসে বিরক্ত সৌদি কোম্পানি
রায়ান বণিক | ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এসে বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার মুখে পড়েছে সৌদি আরবের আলফানা কোম্পানির প্রতিনিধিদল। গত অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরকালে এ কোম্পানিটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। ওই এমওইউ অনুযায়ী, আলফানা কোম্পানি বাংলাদেশে ১০০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বিনিয়োগ করবে, সরকার তাদের জমি দেবে।
গত ১০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় ভিডিও কনফারেন্সে রিয়াদে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ অভিযোগ করে বলেন, আলফানা কোম্পানির প্রতিনিধিরা কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছেন। তাদের নির্ধারিত কোনো স্থান পরিদর্শন করতে দেওয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে সৌদি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাক্ষর করা এমওইউ বাস্তবায়ন পরিস্থিতি পর্যালোচনা নিয়ে আয়োজন করা ওই বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউসও উপস্থিত ছিলেন।
গোলাম মসীহ’র অভিযোগ প্রসঙ্গে বৈঠকে বিদ্যুৎ সচিব বলেন, কাপ্তাই হ্রদের তীরে একটি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এলাকাটি পাহাড়ি, তাই সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উপযোগী নয়। তিনি বলেন, ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ট্যারিফ নির্ধারণ ও অন্যান্য বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মতামত চাওয়া হয়েছে। ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) মডেলে সৌদি কোম্পানিটির সঙ্গে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করা যেতে পারে। এছাড়া, সৌদি কোম্পানিটি অন্য যে কোনো স্থানে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে পারে।
পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক তখন বলেন, সমঝোতা স্মারকের শর্ত অনুযায়ী উপযুক্ত জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশের ওপর বর্তায়। সৌদি কোম্পানিটির জন্য উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ করতে বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ করেন তিনি।
কয়েকবার বাংলাদেশে আসার পরও সৌদি কোম্পানি আলফানা’র প্রতিনিধিদলকে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে উপযুক্ত জায়গা দেখাতে না পারার কারণে বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয় বলে উল্লেখ রয়েছে আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত ওই বৈঠকের কার্যবিবরণীতে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে সৌদির বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আরো চারটি এমওইউ হয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (বিডা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম জানান, সৌদি আরবের ১০টি বিনিয়োগ প্রস্তাব রয়েছে। ছাতক সিমেন্ট কারখানায় উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে এটিকে আধুনিক মানে উন্নীতকরণ ও নতুন সিমেন্ট কারখানা স্থাপনের বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনস থেকে দুটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাওয়া গেছে।
বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশনস বিদ্যমান ছাতক সিমেন্ট কারখানার মানোন্নয়ন করে কাফকো মডেলে প্ল্যান্ট নির্মাণ করবে। এছাড়া ওই কারখানার ফাঁকা জায়গায় নতুন প্ল্যান্ট স্থাপন করবে।
সৌদি কন্ট্রাক্টিং কোম্পানি লিমিটেড বাংলাদেশে ডিএপি সারকারখানা স্থাপনে আগ্রহী। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো প্রস্তাব পায়নি শিল্প মন্ত্রণালয়। রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, আগামী বছরের শুরুতেই কোম্পানিটির প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসবে।
সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশনস বাংলাদেশের জেমকো কারখানা আধুনিকায়ন করবে। এছাড়া, জেমকোর ফাঁকা জমিতে নতুন কারখানা স্থাপন করে ট্রান্সফরমার উৎপাদন করবে। এরমধ্যে কোম্পানিটির প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসে জেমকো কোম্পানি ঘুরে গেছে বলে জানা গেছে।
সৌদির বাউয়ানি কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্র্তৃপক্ষ (বেজা)’র এমওইউ সই হয়েছে। তাতে বেজার আওতাধীন ১০০ একর জমিতে বৃহৎ স্থাপনা নির্মাণ করবে বাউয়ানি কোম্পানি। বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জানান, তারা একবার বাংলাদেশ সফর করেছেন। কিন্তু কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেননি।
শেয়ার করুন
রায়ান বণিক | ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এসে বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার মুখে পড়েছে সৌদি আরবের আলফানা কোম্পানির প্রতিনিধিদল। গত অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরকালে এ কোম্পানিটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। ওই এমওইউ অনুযায়ী, আলফানা কোম্পানি বাংলাদেশে ১০০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বিনিয়োগ করবে, সরকার তাদের জমি দেবে।
গত ১০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় ভিডিও কনফারেন্সে রিয়াদে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ অভিযোগ করে বলেন, আলফানা কোম্পানির প্রতিনিধিরা কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছেন। তাদের নির্ধারিত কোনো স্থান পরিদর্শন করতে দেওয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে সৌদি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাক্ষর করা এমওইউ বাস্তবায়ন পরিস্থিতি পর্যালোচনা নিয়ে আয়োজন করা ওই বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউসও উপস্থিত ছিলেন।
গোলাম মসীহ’র অভিযোগ প্রসঙ্গে বৈঠকে বিদ্যুৎ সচিব বলেন, কাপ্তাই হ্রদের তীরে একটি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এলাকাটি পাহাড়ি, তাই সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উপযোগী নয়। তিনি বলেন, ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ট্যারিফ নির্ধারণ ও অন্যান্য বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মতামত চাওয়া হয়েছে। ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) মডেলে সৌদি কোম্পানিটির সঙ্গে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করা যেতে পারে। এছাড়া, সৌদি কোম্পানিটি অন্য যে কোনো স্থানে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে পারে।
পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক তখন বলেন, সমঝোতা স্মারকের শর্ত অনুযায়ী উপযুক্ত জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশের ওপর বর্তায়। সৌদি কোম্পানিটির জন্য উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ করতে বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ করেন তিনি।
কয়েকবার বাংলাদেশে আসার পরও সৌদি কোম্পানি আলফানা’র প্রতিনিধিদলকে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে উপযুক্ত জায়গা দেখাতে না পারার কারণে বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয় বলে উল্লেখ রয়েছে আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত ওই বৈঠকের কার্যবিবরণীতে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে সৌদির বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আরো চারটি এমওইউ হয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (বিডা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম জানান, সৌদি আরবের ১০টি বিনিয়োগ প্রস্তাব রয়েছে। ছাতক সিমেন্ট কারখানায় উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে এটিকে আধুনিক মানে উন্নীতকরণ ও নতুন সিমেন্ট কারখানা স্থাপনের বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনস থেকে দুটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাওয়া গেছে।
বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশনস বিদ্যমান ছাতক সিমেন্ট কারখানার মানোন্নয়ন করে কাফকো মডেলে প্ল্যান্ট নির্মাণ করবে। এছাড়া ওই কারখানার ফাঁকা জায়গায় নতুন প্ল্যান্ট স্থাপন করবে।
সৌদি কন্ট্রাক্টিং কোম্পানি লিমিটেড বাংলাদেশে ডিএপি সারকারখানা স্থাপনে আগ্রহী। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো প্রস্তাব পায়নি শিল্প মন্ত্রণালয়। রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, আগামী বছরের শুরুতেই কোম্পানিটির প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসবে।
সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশনস বাংলাদেশের জেমকো কারখানা আধুনিকায়ন করবে। এছাড়া, জেমকোর ফাঁকা জমিতে নতুন কারখানা স্থাপন করে ট্রান্সফরমার উৎপাদন করবে। এরমধ্যে কোম্পানিটির প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসে জেমকো কোম্পানি ঘুরে গেছে বলে জানা গেছে।
সৌদির বাউয়ানি কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্র্তৃপক্ষ (বেজা)’র এমওইউ সই হয়েছে। তাতে বেজার আওতাধীন ১০০ একর জমিতে বৃহৎ স্থাপনা নির্মাণ করবে বাউয়ানি কোম্পানি। বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জানান, তারা একবার বাংলাদেশ সফর করেছেন। কিন্তু কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেননি।