হাওয়া ভবন সংশ্লিষ্টকে গ্রেপ্তারের দাবি র্যাবের
নগদ সাড়ে ৮ কোটি ও ১০ কোটি টাকার চেক উদ্ধার
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
রাজধানীতে সাড়ে ৮ কোটি নগদ টাকা, ১০ কোটি টাকার চেক ও ধানের শীষের নির্বাচনী প্রচারপত্রসহ একটি প্রতিষ্ঠানের তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজনের সঙ্গে ‘হাওয়া ভবনের’ সম্পর্ক ছিল বলে র্যাব দাবি করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে মতিঝিল সিটি সেন্টারের ইউনাইটেড করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ জানান।
এরা হলেন ইউনাইটেড করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হায়দার আলী (২৪), মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) জয়নাল আবেদীন (৪৫) ও আলমগীর হোসেন (৩৮)। এদের মধ্যে আলী হায়দারের কাছে নগদ সাড়ে ৮ কোটি টাকা ও ১০ কোটি টাকার চেক পাওয়া গেছে। অভিযানের পর বিকেলে মতিঝিল সিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কালো টাকার মাধ্যমে একটি বিশাল চক্র প্রভাবিত করতে পারেÑ এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত দুদিন ধরে অভিযান চালিয়ে মতিঝিল থেকে তিনজনকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে সাড়ে ৮ কোটি টাকা নগদ ও ১০ কোটি টাকার চেক পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে একজন হাওয়া ভবনে কাজ করত। এই অভিযানের মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিয়ে যাওয়ার ভয়াবহ ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করতে পেরেছি।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয় ছিল বনানীর ১৩ নম্বর সড়কের ৫৩ নম্বর বাড়ি। বহুল আলোচিত-সমালোচিত ‘হাওয়া ভবন’ থেকেও এখন আর নেই।
পরে র্যাবের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জব্দ করা টাকার সঙ্গে তারেক রহমানের ছবিসংবলিত শরীয়তপুর-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী নুরুদ্দিন আহমেদ অপুর প্রচারপত্র পাওয়া গেছে সেখানে। ঢাকার একটি আসনের সব ভোটারের নাম-ঠিকানা সংবলিত একটি তালিকাও পাওয়া গেছে আলী হায়দারের অফিসে।
তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়ার চেকগুলো বিভিন্ন ব্যাংকের। এর মধ্যে সিটি ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের অনুকূলে সবচেয়ে বেশি চেকবই উদ্ধার হয়েছে। এ ছাড়া ইউনাইটেড করপোরেশনের মালিক মাহমুদের নামে দুটি ব্ল্যাক লিস্টেড পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে।
র্যাব মহাপরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কালো টাকা ছড়ানোর জন্যই সিটি সেন্টারে এই অফিস নেওয়া হয়েছে। দুই মাস আগে এই অফিসটি মতিঝিলে অবস্থিত একটি বড় রাজনৈতিক দলের অফিসের পাশে ছিল। নিরাপত্তার কারণে সেখান থেকে সরিয়ে মতিঝিলের সিটি সেন্টারের ২৭ তলায় নেওয়া হয়। এই অফিস থেকে গত দুই মাসে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছে।
বেনজীর বলেন, এই অফিসের কথিত মালিক মাহমুদের একটি অ্যাকাউন্টেই ৭৩ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গত দুই মাসে প্রায় ১৪০ কোটি টাকা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়েছে। কালো টাকার মাধ্যমে নির্বাচন প্রভাবিত করা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো ও নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক র্যাব কর্মকর্তা জানান, মাহমুদের দুটি পাসপোর্ট ‘ব্ল্যাক লিস্টেড’ হওয়ার পর তৃতীয় একটি পাসপোর্ট তৈরি করে দেশের বাইরে তার যাতায়াতের তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবপ্রধান বলেন, ‘এখানে একজন প্রার্থীরও কাগজপত্র পেয়েছি, তার কাছেও ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে এখান থেকে। সেই টাকা পাঠানোর পরপরই আমরা দেখেছি, সেই এলাকায় একটি ইলেক্টোরাল ভায়োলেন্স হয়েছে। এবং আমরা দেখেছি যেখানে যেখানে টাকা গেছে এর অনেক জায়গাতেই ইলেক্টোরাল ভায়োলেন্স হয়েছে। কাজেই আমরা বলতে পারি, বিভিন্ন জায়গায় যে ভায়োলেন্স হয়েছে, এই টাকার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।’
তিনি বলেন, মতিঝিলের এই অফিসে বিভিন্ন ব্যাংকের ক্যাশ বই আছে। বিভিন্ন জায়গায় টাকা পাঠানোর স্লিপ আছে। এখান থেকে এক দিনেই ১১ কোটি ও ২০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। অর্থের উৎসের বিষয়ে তিনি বলেন, এই টাকার বেশির ভাগ এসেছে দুবাই থেকে, হুণ্ডির মাধ্যমে। এ ছাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে ও স্থানীয় পর্যায় থেকেও সংগ্রহ করা হয়েছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, তারা টাকার রেকর্ড খুব বেশি দিন রাখে না।
‘অফিস স্থাপনের পর গত দুই মাসের পূর্ণাঙ্গ হিসাব পাওয়া গেলে প্রকৃতপক্ষে কত টাকা ছড়ানো হয়েছে তার হিসাব পাওয়া যেত। অফিসের রেজিস্টার খাতা ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশ পরীক্ষার পর ধারণা পাওয়া যাবে, আসলে কত টাকার লেনদেন হয়েছিল এই অফিস থেকে। তবে আমরা প্রাথমিকভাবে দেখেছি, এখান থেকে ১৫০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।’
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

রাজধানীতে সাড়ে ৮ কোটি নগদ টাকা, ১০ কোটি টাকার চেক ও ধানের শীষের নির্বাচনী প্রচারপত্রসহ একটি প্রতিষ্ঠানের তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজনের সঙ্গে ‘হাওয়া ভবনের’ সম্পর্ক ছিল বলে র্যাব দাবি করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে মতিঝিল সিটি সেন্টারের ইউনাইটেড করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ জানান।
এরা হলেন ইউনাইটেড করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হায়দার আলী (২৪), মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) জয়নাল আবেদীন (৪৫) ও আলমগীর হোসেন (৩৮)। এদের মধ্যে আলী হায়দারের কাছে নগদ সাড়ে ৮ কোটি টাকা ও ১০ কোটি টাকার চেক পাওয়া গেছে। অভিযানের পর বিকেলে মতিঝিল সিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কালো টাকার মাধ্যমে একটি বিশাল চক্র প্রভাবিত করতে পারেÑ এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত দুদিন ধরে অভিযান চালিয়ে মতিঝিল থেকে তিনজনকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে সাড়ে ৮ কোটি টাকা নগদ ও ১০ কোটি টাকার চেক পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে একজন হাওয়া ভবনে কাজ করত। এই অভিযানের মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিয়ে যাওয়ার ভয়াবহ ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করতে পেরেছি।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয় ছিল বনানীর ১৩ নম্বর সড়কের ৫৩ নম্বর বাড়ি। বহুল আলোচিত-সমালোচিত ‘হাওয়া ভবন’ থেকেও এখন আর নেই।
পরে র্যাবের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জব্দ করা টাকার সঙ্গে তারেক রহমানের ছবিসংবলিত শরীয়তপুর-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী নুরুদ্দিন আহমেদ অপুর প্রচারপত্র পাওয়া গেছে সেখানে। ঢাকার একটি আসনের সব ভোটারের নাম-ঠিকানা সংবলিত একটি তালিকাও পাওয়া গেছে আলী হায়দারের অফিসে।
তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়ার চেকগুলো বিভিন্ন ব্যাংকের। এর মধ্যে সিটি ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের অনুকূলে সবচেয়ে বেশি চেকবই উদ্ধার হয়েছে। এ ছাড়া ইউনাইটেড করপোরেশনের মালিক মাহমুদের নামে দুটি ব্ল্যাক লিস্টেড পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে।
র্যাব মহাপরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কালো টাকা ছড়ানোর জন্যই সিটি সেন্টারে এই অফিস নেওয়া হয়েছে। দুই মাস আগে এই অফিসটি মতিঝিলে অবস্থিত একটি বড় রাজনৈতিক দলের অফিসের পাশে ছিল। নিরাপত্তার কারণে সেখান থেকে সরিয়ে মতিঝিলের সিটি সেন্টারের ২৭ তলায় নেওয়া হয়। এই অফিস থেকে গত দুই মাসে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছে।
বেনজীর বলেন, এই অফিসের কথিত মালিক মাহমুদের একটি অ্যাকাউন্টেই ৭৩ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গত দুই মাসে প্রায় ১৪০ কোটি টাকা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়েছে। কালো টাকার মাধ্যমে নির্বাচন প্রভাবিত করা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো ও নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক র্যাব কর্মকর্তা জানান, মাহমুদের দুটি পাসপোর্ট ‘ব্ল্যাক লিস্টেড’ হওয়ার পর তৃতীয় একটি পাসপোর্ট তৈরি করে দেশের বাইরে তার যাতায়াতের তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবপ্রধান বলেন, ‘এখানে একজন প্রার্থীরও কাগজপত্র পেয়েছি, তার কাছেও ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে এখান থেকে। সেই টাকা পাঠানোর পরপরই আমরা দেখেছি, সেই এলাকায় একটি ইলেক্টোরাল ভায়োলেন্স হয়েছে। এবং আমরা দেখেছি যেখানে যেখানে টাকা গেছে এর অনেক জায়গাতেই ইলেক্টোরাল ভায়োলেন্স হয়েছে। কাজেই আমরা বলতে পারি, বিভিন্ন জায়গায় যে ভায়োলেন্স হয়েছে, এই টাকার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।’
তিনি বলেন, মতিঝিলের এই অফিসে বিভিন্ন ব্যাংকের ক্যাশ বই আছে। বিভিন্ন জায়গায় টাকা পাঠানোর স্লিপ আছে। এখান থেকে এক দিনেই ১১ কোটি ও ২০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। অর্থের উৎসের বিষয়ে তিনি বলেন, এই টাকার বেশির ভাগ এসেছে দুবাই থেকে, হুণ্ডির মাধ্যমে। এ ছাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে ও স্থানীয় পর্যায় থেকেও সংগ্রহ করা হয়েছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, তারা টাকার রেকর্ড খুব বেশি দিন রাখে না।
‘অফিস স্থাপনের পর গত দুই মাসের পূর্ণাঙ্গ হিসাব পাওয়া গেলে প্রকৃতপক্ষে কত টাকা ছড়ানো হয়েছে তার হিসাব পাওয়া যেত। অফিসের রেজিস্টার খাতা ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশ পরীক্ষার পর ধারণা পাওয়া যাবে, আসলে কত টাকার লেনদেন হয়েছিল এই অফিস থেকে। তবে আমরা প্রাথমিকভাবে দেখেছি, এখান থেকে ১৫০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।’