১৬ আসনে ভোট পেছানোর দাবি বিএনপির
রেজাউল করিম লাবলু | ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
আদালতের নির্দেশে মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় ১৬টি আসনে লড়তে পারছেন না বিএনপির কোনো প্রার্থী। এ আসনগুলোতে নির্বাচন পেছানোর দাবি জানাবে দলটি। গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছেন। শূন্য হওয়া আসনে বিএনপি বিকল্প প্রার্থী দেবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই আসনগুলোতে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেননি তারা। তাই দলের পক্ষ থেকে এগুলোতে নির্বাচন পেছানোর দাবি জানানো হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪, জামালপুর-৪, জামালপুর-১, সিলেট-২, বগুড়া-৭, বগুড়া-৩, রাজশাহী-৬, নীলফামারী-৪, দিনাজপুর-৩, জয়পুরহাট-১, ঢাকা-১, ঢাকা-২০, চাঁদপুর-৪, মানিকগঞ্জ-৩, ময়মনসিংহ-১ ও ঝিনাইদহ-২ আসনে প্রার্থীশূন্য হয়েছে বিএনপি। দলটির একটি সূত্র জানায়, রাজশাহী-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবু সাঈদ চাঁদের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার পর আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নুরুজ্জামান খান মানিককে চিঠি দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মানিক গতকাল রাজশাহীর জেলা প্রশাসককে (ডিসি) চিঠি হস্তান্তর করলে ডিসি তা গ্রহণ করেননি। যুক্তি হিসেবে ডিসি বলেছেন, এখন এই চিঠি গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই।
বিএনপি নেতা ফয়সাল আলীম দেশ রূপান্তরকে বলেন, জয়পুরহাট-১ আসনে বিএনপির প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হলে একই আসনে তাকে চিঠি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। এই চিঠি নিয়ে তিনি আজ বুধবার হাইকোর্টে রিট করবেন।
মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা রীতার মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় একই আসনে মফিজুল ইসলাম খান কামালকে সমর্থন দেওয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। এ ছাড়া সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর লুনার আসনে বিকল্প প্রার্থী খুঁজছে দলটি।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সংশ্লিষ্ট বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাধারণত ইসি কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা চূড়ান্ত করলে আদালত ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করে না। কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো ইসি প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার পর আদালত বিএনপির একাধিক প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করেছে। কিন্তু ইসি এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিষয়টি দুঃখজনক। সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, ইসি, আদালত ও প্রশাসন এক হয়ে সম্মিলিতভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রার্থীর মৃত্যু হলে ইসি আসন শূন্য ঘোষণা করে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করে। এখন একজন প্রার্থীর মৃত্যু হলেও ইসি একই পদক্ষেপ নিতে পারে। কিন্তু ইসি এ ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেবে না। তাই বিএনপি এসব আসনে নির্বাচন পেছানোর দাবি জানাবে। এ ছাড়া বিএনপির কাছে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই।’
বিএনপির একাধিক নেতার অভিযোগ, ইসির মাধ্যমে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার পর আদালত তা বাতিল করতে পারে না। কিন্তু আদালতের নির্দেশের পর বিএনপি এসব আসনে নতুন করে প্রার্থীও দিতে পারছে না।
গতকাল বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে চাঁদপুর-৪ আসনের (ফরিদগঞ্জ) জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত করে পুনঃতফসিল দাবি করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী আবদুল হান্নান। তিনি বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচন স্থগিত করতে হবে অথবা তার প্রার্থিতা ফিরিয়ে দিতে হবে।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তিনি ব্যাংকার ও একটি ব্যাংকের পরিচালক। তার সিবিআই রিপোর্ট পরিষ্কার। কোথাও তিনি ঋণখেলাপি নন। নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বহাল রেখে প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে। তিনি প্রচার চালাচ্ছেন। এমন সময় সোনালী ব্যাংক ২০০০ সালের একটি জারি মামলার চার নম্বরে তার নাম আছে উল্লেখ করে প্রার্থিতা স্থগিতের আবেদন করে, যা সম্পূর্ণ অন্যায় ও অবৈধ।
আবদুল হান্নান আরো বলেন, ব্যাংকিং আইন কিংবা গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) মাধ্যমে তার প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগ নেই। আদালতে তিনি সম্পূর্ণভাবে ন্যায়বিচার-বঞ্চিত হয়েছেন।
শেয়ার করুন
রেজাউল করিম লাবলু | ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

আদালতের নির্দেশে মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় ১৬টি আসনে লড়তে পারছেন না বিএনপির কোনো প্রার্থী। এ আসনগুলোতে নির্বাচন পেছানোর দাবি জানাবে দলটি। গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছেন। শূন্য হওয়া আসনে বিএনপি বিকল্প প্রার্থী দেবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই আসনগুলোতে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেননি তারা। তাই দলের পক্ষ থেকে এগুলোতে নির্বাচন পেছানোর দাবি জানানো হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪, জামালপুর-৪, জামালপুর-১, সিলেট-২, বগুড়া-৭, বগুড়া-৩, রাজশাহী-৬, নীলফামারী-৪, দিনাজপুর-৩, জয়পুরহাট-১, ঢাকা-১, ঢাকা-২০, চাঁদপুর-৪, মানিকগঞ্জ-৩, ময়মনসিংহ-১ ও ঝিনাইদহ-২ আসনে প্রার্থীশূন্য হয়েছে বিএনপি। দলটির একটি সূত্র জানায়, রাজশাহী-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবু সাঈদ চাঁদের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার পর আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নুরুজ্জামান খান মানিককে চিঠি দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মানিক গতকাল রাজশাহীর জেলা প্রশাসককে (ডিসি) চিঠি হস্তান্তর করলে ডিসি তা গ্রহণ করেননি। যুক্তি হিসেবে ডিসি বলেছেন, এখন এই চিঠি গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই।
বিএনপি নেতা ফয়সাল আলীম দেশ রূপান্তরকে বলেন, জয়পুরহাট-১ আসনে বিএনপির প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হলে একই আসনে তাকে চিঠি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। এই চিঠি নিয়ে তিনি আজ বুধবার হাইকোর্টে রিট করবেন।
মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা রীতার মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় একই আসনে মফিজুল ইসলাম খান কামালকে সমর্থন দেওয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। এ ছাড়া সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর লুনার আসনে বিকল্প প্রার্থী খুঁজছে দলটি।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সংশ্লিষ্ট বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাধারণত ইসি কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা চূড়ান্ত করলে আদালত ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করে না। কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো ইসি প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার পর আদালত বিএনপির একাধিক প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করেছে। কিন্তু ইসি এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিষয়টি দুঃখজনক। সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, ইসি, আদালত ও প্রশাসন এক হয়ে সম্মিলিতভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রার্থীর মৃত্যু হলে ইসি আসন শূন্য ঘোষণা করে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করে। এখন একজন প্রার্থীর মৃত্যু হলেও ইসি একই পদক্ষেপ নিতে পারে। কিন্তু ইসি এ ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেবে না। তাই বিএনপি এসব আসনে নির্বাচন পেছানোর দাবি জানাবে। এ ছাড়া বিএনপির কাছে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই।’
বিএনপির একাধিক নেতার অভিযোগ, ইসির মাধ্যমে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার পর আদালত তা বাতিল করতে পারে না। কিন্তু আদালতের নির্দেশের পর বিএনপি এসব আসনে নতুন করে প্রার্থীও দিতে পারছে না।
গতকাল বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে চাঁদপুর-৪ আসনের (ফরিদগঞ্জ) জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত করে পুনঃতফসিল দাবি করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী আবদুল হান্নান। তিনি বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচন স্থগিত করতে হবে অথবা তার প্রার্থিতা ফিরিয়ে দিতে হবে।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তিনি ব্যাংকার ও একটি ব্যাংকের পরিচালক। তার সিবিআই রিপোর্ট পরিষ্কার। কোথাও তিনি ঋণখেলাপি নন। নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বহাল রেখে প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে। তিনি প্রচার চালাচ্ছেন। এমন সময় সোনালী ব্যাংক ২০০০ সালের একটি জারি মামলার চার নম্বরে তার নাম আছে উল্লেখ করে প্রার্থিতা স্থগিতের আবেদন করে, যা সম্পূর্ণ অন্যায় ও অবৈধ।
আবদুল হান্নান আরো বলেন, ব্যাংকিং আইন কিংবা গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) মাধ্যমে তার প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগ নেই। আদালতে তিনি সম্পূর্ণভাবে ন্যায়বিচার-বঞ্চিত হয়েছেন।