ভোল পাল্টে ১৪৬ প্রার্থীকে জিইয়ে রাখলেন এরশাদ
উম্মুল ওয়ারা সুইটি | ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মহাজোটের বাইরের জাপার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত দিয়ে মাত্র তিন ঘণ্টা পর তা পাল্টালেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণা দেন, মহাজোটের বাইরে জাপার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের সবাইকে নৌকার পক্ষে কাজ করারও নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু রাতে আবার লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মাঠে থাকা প্রার্থীদের কাজ করার নির্দেশ দেন এরশাদ।
রাত সোয়া ৯টার দিকে এরশাদের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি দেলোয়ার জালালীর পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এরশাদ বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমার বক্তব্য ভুলভাবে প্রচারিত হচ্ছে জেনে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। মহাজোট ব্যতীত জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা মুক্তভাবে নিজ নিজ আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। কেউ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না। তাদের নির্বাচনের মাঠে থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। পাশাপাশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ সংশোধন করার অনুরোধ করছি।
জাপার শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এরশাদের এই ঘোষণা আওয়ামী লীগের ফুরফুরে মেজাজে কিছুটা বিঘœ ঘটেছে। মহাজোটের পক্ষে থাকা দলের একাধিক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, এরশাদ প্রার্থীদের চাপে পড়েই এই ঘোষণা দিয়েছেন। তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জাপার চাওয়া-পাওয়ার কোনো বিষয় থাকতে পারে। আজ (বৃহস্পতিবার) রাতের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে। মহাজোটে যুক্ত
পৃষ্ঠা ২ কলাম ১ >
ভোল পাল্টে ১৪৬ প্রার্থীকে জিইয়ে রাখলেন এরশাদ
হওয়ার পর ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও কয়েক দফা সিদ্ধান্ত পাল্টিয়েছেন এবং নাটকের জন্ম দিয়েছেন এরশাদ। দশম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলে থাকার পর থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে অবজ্ঞা এবং বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন তিনি। সবশেষ এবার মহাজোটের আসন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়। মহাজোট থেকে ৭০টি আসন দাবি করার পর মাত্র ২৬টি পাওয়ায় এরশাদ বিরোধিতা শুরু করেন। এই অসন্তোষে মহাজোটের পাশাপাশি লাঙ্গলের ১৪৬ প্রার্থীকে ভোটের মাঠে রাখেন। দলীয় প্রার্থীদের থামাতে না পেরে এরশাদ ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েন। অনেক দেন-দরবারের পরও সমাধান করতে না পেরে গত ১২ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যান তিনি। এর আগে রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মশিউর রহমান রাঙ্গাকে মহাসচিবের দায়িত্ব দিয়ে যান। তবে সিঙ্গাপুর যাওয়ার পরদিনই আবার নতুন বার্তা দেন, রাঙ্গা মহাসচিব হলেও রুহুল আমিন হাওলাদারই হবেন এরশাদের অনুপস্থিতিতে দলের দ্বিতীয় ব্যক্তি।
জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বলছেন, নির্বাচনের তিন সপ্তাহ আগে দলের শীর্ষ পর্যায়ের এই বিশৃঙ্খলায় বিপাকে পড়েছেন প্রার্থীরা। যার যার মতো তারা নির্বাচনী মাঠে থেকেছেন। এরপর দেশে ফেরা নিয়ে দুই দফা তারিখ পরিবর্তন করে বুধবার রাত ৯টায় দেশে ফেরেন এরশাদ। পরদিন গতকাল বারিধারার বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন এরশাদ, তার সঙ্গে ছিলেন দলের সভাপতিম-লীর সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তিনি সিঙ্গাপুরেও এরশাদের সঙ্গী ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ বলেন, নির্বাচনে আমার বোন শেখ হাসিনাকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি। আমি নির্বাচনে বোন শেখ হাসিনাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। তিনি আরো বলেন, ১৪৬টি আসনে দলের উন্মুক্ত প্রার্থীরা মহাজোটকে সমর্থন জানাবেন। মহাজোট যে সিদ্ধান্ত নেবে, প্রার্থীদের তা মেনে নেওয়ার কথাও বলেন তিনি। এই সংবাদ সম্মেলনের পরপরই এরশাদের সঙ্গে দেখা করেন ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠান (চিত্রনায়ক ফারুক)। আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় এরশাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। এ বিষয়ে ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এরশাদ সাহেব আমার মুরব্বি, আমার বড় ভাই। তিনি আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধার ব্যক্তি। তিনি আমাকে সমর্থন দেওয়ায় আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। আমার বিশ্বাস, আপামর জনসাধারণ আমাকে ভোট দিয়ে জয়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবে। দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সহায়তা করবে।’ ঢাকা-১৭ আসন থেকে এরশাদ সরে দাঁড়ালেও আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। ফলে ভোটে তার লাঙ্গল প্রতীক থাকছে।
শেয়ার করুন
উম্মুল ওয়ারা সুইটি | ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মহাজোটের বাইরের জাপার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত দিয়ে মাত্র তিন ঘণ্টা পর তা পাল্টালেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণা দেন, মহাজোটের বাইরে জাপার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের সবাইকে নৌকার পক্ষে কাজ করারও নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু রাতে আবার লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মাঠে থাকা প্রার্থীদের কাজ করার নির্দেশ দেন এরশাদ।
রাত সোয়া ৯টার দিকে এরশাদের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি দেলোয়ার জালালীর পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এরশাদ বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমার বক্তব্য ভুলভাবে প্রচারিত হচ্ছে জেনে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। মহাজোট ব্যতীত জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা মুক্তভাবে নিজ নিজ আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। কেউ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না। তাদের নির্বাচনের মাঠে থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। পাশাপাশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ সংশোধন করার অনুরোধ করছি।
জাপার শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এরশাদের এই ঘোষণা আওয়ামী লীগের ফুরফুরে মেজাজে কিছুটা বিঘœ ঘটেছে। মহাজোটের পক্ষে থাকা দলের একাধিক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, এরশাদ প্রার্থীদের চাপে পড়েই এই ঘোষণা দিয়েছেন। তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জাপার চাওয়া-পাওয়ার কোনো বিষয় থাকতে পারে। আজ (বৃহস্পতিবার) রাতের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে। মহাজোটে যুক্ত
পৃষ্ঠা ২ কলাম ১ >
ভোল পাল্টে ১৪৬ প্রার্থীকে জিইয়ে রাখলেন এরশাদ
হওয়ার পর ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও কয়েক দফা সিদ্ধান্ত পাল্টিয়েছেন এবং নাটকের জন্ম দিয়েছেন এরশাদ। দশম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলে থাকার পর থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে অবজ্ঞা এবং বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন তিনি। সবশেষ এবার মহাজোটের আসন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়। মহাজোট থেকে ৭০টি আসন দাবি করার পর মাত্র ২৬টি পাওয়ায় এরশাদ বিরোধিতা শুরু করেন। এই অসন্তোষে মহাজোটের পাশাপাশি লাঙ্গলের ১৪৬ প্রার্থীকে ভোটের মাঠে রাখেন। দলীয় প্রার্থীদের থামাতে না পেরে এরশাদ ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েন। অনেক দেন-দরবারের পরও সমাধান করতে না পেরে গত ১২ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যান তিনি। এর আগে রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মশিউর রহমান রাঙ্গাকে মহাসচিবের দায়িত্ব দিয়ে যান। তবে সিঙ্গাপুর যাওয়ার পরদিনই আবার নতুন বার্তা দেন, রাঙ্গা মহাসচিব হলেও রুহুল আমিন হাওলাদারই হবেন এরশাদের অনুপস্থিতিতে দলের দ্বিতীয় ব্যক্তি।
জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বলছেন, নির্বাচনের তিন সপ্তাহ আগে দলের শীর্ষ পর্যায়ের এই বিশৃঙ্খলায় বিপাকে পড়েছেন প্রার্থীরা। যার যার মতো তারা নির্বাচনী মাঠে থেকেছেন। এরপর দেশে ফেরা নিয়ে দুই দফা তারিখ পরিবর্তন করে বুধবার রাত ৯টায় দেশে ফেরেন এরশাদ। পরদিন গতকাল বারিধারার বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন এরশাদ, তার সঙ্গে ছিলেন দলের সভাপতিম-লীর সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তিনি সিঙ্গাপুরেও এরশাদের সঙ্গী ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ বলেন, নির্বাচনে আমার বোন শেখ হাসিনাকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি। আমি নির্বাচনে বোন শেখ হাসিনাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। তিনি আরো বলেন, ১৪৬টি আসনে দলের উন্মুক্ত প্রার্থীরা মহাজোটকে সমর্থন জানাবেন। মহাজোট যে সিদ্ধান্ত নেবে, প্রার্থীদের তা মেনে নেওয়ার কথাও বলেন তিনি। এই সংবাদ সম্মেলনের পরপরই এরশাদের সঙ্গে দেখা করেন ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠান (চিত্রনায়ক ফারুক)। আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় এরশাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। এ বিষয়ে ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এরশাদ সাহেব আমার মুরব্বি, আমার বড় ভাই। তিনি আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধার ব্যক্তি। তিনি আমাকে সমর্থন দেওয়ায় আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। আমার বিশ্বাস, আপামর জনসাধারণ আমাকে ভোট দিয়ে জয়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবে। দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সহায়তা করবে।’ ঢাকা-১৭ আসন থেকে এরশাদ সরে দাঁড়ালেও আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। ফলে ভোটে তার লাঙ্গল প্রতীক থাকছে।