প্রার্থী পেটানো নিয়ে বেকায়দায় পুলিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় বেকায়দায় পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এমনকি পুলিশের বিশেষ বৈঠকে কর্মকর্তাদের মধ্যে বাগ্বিতন্ডা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুলিশের একটি পক্ষ রাজনৈতিক দায় নিতে চাইছে না। সমালোচনা হওয়ায় পুলিশই এখন হামলার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ভোটের আগ পর্যন্ত প্রার্থীদের ওপর হামলাসহ যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো তদন্ত করতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির অভিযোগ, মনোনয়নপত্র জমার পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন অন্তত অর্ধশত প্রার্থী। তাদের বেশ কয়েক জনের অবস্থা সংকটাপন্ন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা যেন পোস্টার টানাতে না পারে, সেজন্য অলিখিত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুুলিশ। সব কটি মেট্রোপলিটন এলাকায় বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় বিভিন্ন ছাপাখানায়ও পুলিশ হানা দিয়েছে।
এসব প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সব দলের প্রার্থী যাতে সমান সুযোগ পায়, সেদিকে আমরা বিশেষ নজর দিয়েছি। সম্প্রতি ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের ওপর যে ধরনের হামলা হয়েছে তা ঠিক হয়নি। এজন্য আমরা তদন্ত শুরু করেছি। তিনি বলেন, পুলিশকে আমরা নির্দেশ দিয়েছি, সামনে যাতে আর কোনো প্রার্থীর ওপর হামলা না হয়। পাশাপাশি যেসব প্রার্থী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তাদের নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। তবে বিএনপি বা তাদের জোটের প্রার্থীদের পোস্টার টানানোয় বিধিনিষেধ নেই।
পুলিশ সদর দপ্তর ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রার্থীদের ওপর হামলা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এতে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা অনেকাংশ বেড়ে যায়। কয়েক দিন আগে পুলিশ সদর দপ্তরে এক বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। বেশিরভাগ পুলিশ কর্মকর্তাই একমত হয়েছেন, প্রার্থীদের যাতে নিরাপত্তা দেওয়া হয়। হামলার বিষয়টি নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের জানানো হয়েছে। তার পরও হামলা হচ্ছে। ওই দুই কর্মকর্তা বলেন, এসব হামলার পেছনে পুলিশের কেউ জড়িত কি না, তাও তদন্ত হচ্ছে। এ ছাড়া ডিআইজি ও এসপিদেরও বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সামনে যাতে আর কোনো ঘটনা না ঘটে সেদিকে বাড়তি নজরদারি করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তাদের একজন বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে যাতে বিএনপি কোনো ধরনের পোস্টারিং করতে না পারে সেদিকে আমাদের কিছু নির্দেশনা ছিল, তা সত্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় হামলার শিকার হওয়ার পর সমালোচনা বেশি হচ্ছে। এই ঘটনায় তার প্রতিদ্বন্দ্বী ও থানার ওসি দুঃখ প্রকাশ করেন। হামলায় জড়িত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। বিএনপির অভিযোগ, গয়েশ^ও ছাড়াও গত কয়েক দিনে মির্জা আব্বাস, আফরোজা আব্বাস, হাবিবুর রহমান হাবিব, মেজর (অব.) আকতারুজ্জামান, শরীফুল আলম, মিয়া নুরুউদ্দিন অপু, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, জয়নুল আবদিন ফারুক, জহির উদ্দিন স্বপনসহ অন্তত অর্ধশত প্রার্থী আহত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এসবির এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রার্থী পেটানো ঠেকাতে সম্প্রতি পুলিশের এক বৈঠকে দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। একজন বলছিলেন, দুবৃর্ত্তরা হামলা চালালে পুলিশের কিছু করার নেই। অন্যজন বলছিলেন, এতে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ হচ্ছে। বিএনপি ছাড়া সব প্রার্থীরই পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এখন সবার উপলব্ধি হয়েছে, আর বাড়তে দেওয়া যায় না। হামলায় অন্য কেউ জড়িত কি না, তা বের করতে ডিআইজি ও এসপিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় বেকায়দায় পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এমনকি পুলিশের বিশেষ বৈঠকে কর্মকর্তাদের মধ্যে বাগ্বিতন্ডা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুলিশের একটি পক্ষ রাজনৈতিক দায় নিতে চাইছে না। সমালোচনা হওয়ায় পুলিশই এখন হামলার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ভোটের আগ পর্যন্ত প্রার্থীদের ওপর হামলাসহ যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো তদন্ত করতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির অভিযোগ, মনোনয়নপত্র জমার পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন অন্তত অর্ধশত প্রার্থী। তাদের বেশ কয়েক জনের অবস্থা সংকটাপন্ন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা যেন পোস্টার টানাতে না পারে, সেজন্য অলিখিত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুুলিশ। সব কটি মেট্রোপলিটন এলাকায় বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় বিভিন্ন ছাপাখানায়ও পুলিশ হানা দিয়েছে।
এসব প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সব দলের প্রার্থী যাতে সমান সুযোগ পায়, সেদিকে আমরা বিশেষ নজর দিয়েছি। সম্প্রতি ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের ওপর যে ধরনের হামলা হয়েছে তা ঠিক হয়নি। এজন্য আমরা তদন্ত শুরু করেছি। তিনি বলেন, পুলিশকে আমরা নির্দেশ দিয়েছি, সামনে যাতে আর কোনো প্রার্থীর ওপর হামলা না হয়। পাশাপাশি যেসব প্রার্থী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তাদের নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। তবে বিএনপি বা তাদের জোটের প্রার্থীদের পোস্টার টানানোয় বিধিনিষেধ নেই।
পুলিশ সদর দপ্তর ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রার্থীদের ওপর হামলা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এতে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা অনেকাংশ বেড়ে যায়। কয়েক দিন আগে পুলিশ সদর দপ্তরে এক বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। বেশিরভাগ পুলিশ কর্মকর্তাই একমত হয়েছেন, প্রার্থীদের যাতে নিরাপত্তা দেওয়া হয়। হামলার বিষয়টি নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের জানানো হয়েছে। তার পরও হামলা হচ্ছে। ওই দুই কর্মকর্তা বলেন, এসব হামলার পেছনে পুলিশের কেউ জড়িত কি না, তাও তদন্ত হচ্ছে। এ ছাড়া ডিআইজি ও এসপিদেরও বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সামনে যাতে আর কোনো ঘটনা না ঘটে সেদিকে বাড়তি নজরদারি করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তাদের একজন বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে যাতে বিএনপি কোনো ধরনের পোস্টারিং করতে না পারে সেদিকে আমাদের কিছু নির্দেশনা ছিল, তা সত্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় হামলার শিকার হওয়ার পর সমালোচনা বেশি হচ্ছে। এই ঘটনায় তার প্রতিদ্বন্দ্বী ও থানার ওসি দুঃখ প্রকাশ করেন। হামলায় জড়িত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। বিএনপির অভিযোগ, গয়েশ^ও ছাড়াও গত কয়েক দিনে মির্জা আব্বাস, আফরোজা আব্বাস, হাবিবুর রহমান হাবিব, মেজর (অব.) আকতারুজ্জামান, শরীফুল আলম, মিয়া নুরুউদ্দিন অপু, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, জয়নুল আবদিন ফারুক, জহির উদ্দিন স্বপনসহ অন্তত অর্ধশত প্রার্থী আহত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এসবির এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রার্থী পেটানো ঠেকাতে সম্প্রতি পুলিশের এক বৈঠকে দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। একজন বলছিলেন, দুবৃর্ত্তরা হামলা চালালে পুলিশের কিছু করার নেই। অন্যজন বলছিলেন, এতে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ হচ্ছে। বিএনপি ছাড়া সব প্রার্থীরই পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এখন সবার উপলব্ধি হয়েছে, আর বাড়তে দেওয়া যায় না। হামলায় অন্য কেউ জড়িত কি না, তা বের করতে ডিআইজি ও এসপিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।