‘কারাগারটাই বিএনপির’
ফিরোজ মিয়াজী | ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
‘দেশের কোথাও বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে পারছেন না। ফাঁকা মাঠে প্রচার চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। কারাগারটাই শুধু বিএনপির দখলে আছে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মাসুদ নামে এক দর্শনার্থী। তিনি তার কারাবন্দি স্বজনকে দেখতে এসে এই মন্তব্য করেন। কয়েক দিন আগে ধানের শীষের মিছিল থেকে তার স্বজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান মাসুদ।
পাশে দর্শনার্থীদের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন একজন মা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলছিলেন, ‘আমার ছেলেকে কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ বাসা থেকে ধইরা নিয়া আইছে।’ এ সময় স্বজনকে দেখতে যাওয়া আরেক নারী ওই মাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনার ছেলে কি রাজনীতি করে?।’ ওই মা তখন ‘হ্যাঁ’ বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন।
গতকাল সকালে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে দেখা যায়, বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে স্বজনরা ভিড় জমিয়েছেন। লম্বা লাইনে অপেক্ষা করছেন সাক্ষাতের জন্য। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা অধিকাংশই গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি নেতাকর্মীদের স্বজন।
রুহুল আমিন এসেছেন রাজধানীর বাড্ডা থেকে। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি আমার ভাইকে দেখতে এসেছি। চার দিন আগে রাতের বেলা তাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। অথচ তার নামে কোনো মামলা ছিল না।’
কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা এলাকা থেকে রহিমা বেগম এসেছেন তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের ধরপাকড়ে আমার স্বামী গ্রেপ্তার হন। ১১ মাস ধরে তিনি কারাগারে। জামিন হচ্ছে না। অনেক উকিল ধরেছি। টাকা খরচ করেও কাজ হচ্ছে না।’
এক দিন পরেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবার সব রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেও প্রচারে সব দলের অংশগ্রহণ চোখে পড়েনি। বিএনপির অভিযোগ, তাদের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের প্রচারে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রচারে নামলেই তাদের ওপর হামলা হচ্ছে। পুলিশ গ্রেপ্তার করছে। পুলিশ বাসাবাড়িতেও নেতাকর্মীদের থাকতে দিচ্ছে না। গত কয়েক দিনে বিএনপির বেশ কয়েকজন প্রার্থী আহতও হয়েছেন। গ্রেপ্তারও হয়েছেন কেউ কেউ। নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের সংখ্যাও বহু।
তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হয়েছে, বিএনপি নিজেরা নিজেদের ওপর হামলা করে আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই তারা মাঠে নেই। আর এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে পুলিশ। তারা বলছে, ‘চুরি, ডাকাতিসহ চলমান রাজনৈতিক মামলায় তারা গ্রেপ্তার হয়েছে। ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।’
বিএনপির পক্ষ থেকে গতকালও অভিযোগ করা হয়েছে, তালিকা ধরে ধরে বিভিন্ন এলাকায় তাদের সম্ভাব্য এজেন্টদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দুদিনে খুলনা-১ আসনের ১৮ জন এজেন্টকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিন সকালে দলটির অফিশিয়াল ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে বলা হয়, ‘বিএনপি হাইকমান্ড থেকে সকলকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে নির্বাচনের দিন সকলে নিজ নিজ দায়িত্বে গ্রেফতার এড়িয়ে চলুন।’
এর আগে ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ৮ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে তাদের প্রায় সাড়ে ১০ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ‘কল্পিত’ এবং ‘গায়েবি’ মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নির্বাচনের দিন নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এড়াতেও নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি।
শেয়ার করুন
ফিরোজ মিয়াজী | ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

‘দেশের কোথাও বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে পারছেন না। ফাঁকা মাঠে প্রচার চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। কারাগারটাই শুধু বিএনপির দখলে আছে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মাসুদ নামে এক দর্শনার্থী। তিনি তার কারাবন্দি স্বজনকে দেখতে এসে এই মন্তব্য করেন। কয়েক দিন আগে ধানের শীষের মিছিল থেকে তার স্বজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান মাসুদ।
পাশে দর্শনার্থীদের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন একজন মা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলছিলেন, ‘আমার ছেলেকে কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ বাসা থেকে ধইরা নিয়া আইছে।’ এ সময় স্বজনকে দেখতে যাওয়া আরেক নারী ওই মাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনার ছেলে কি রাজনীতি করে?।’ ওই মা তখন ‘হ্যাঁ’ বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন।
গতকাল সকালে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে দেখা যায়, বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে স্বজনরা ভিড় জমিয়েছেন। লম্বা লাইনে অপেক্ষা করছেন সাক্ষাতের জন্য। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা অধিকাংশই গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি নেতাকর্মীদের স্বজন।
রুহুল আমিন এসেছেন রাজধানীর বাড্ডা থেকে। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি আমার ভাইকে দেখতে এসেছি। চার দিন আগে রাতের বেলা তাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। অথচ তার নামে কোনো মামলা ছিল না।’
কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা এলাকা থেকে রহিমা বেগম এসেছেন তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের ধরপাকড়ে আমার স্বামী গ্রেপ্তার হন। ১১ মাস ধরে তিনি কারাগারে। জামিন হচ্ছে না। অনেক উকিল ধরেছি। টাকা খরচ করেও কাজ হচ্ছে না।’
এক দিন পরেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবার সব রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেও প্রচারে সব দলের অংশগ্রহণ চোখে পড়েনি। বিএনপির অভিযোগ, তাদের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের প্রচারে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রচারে নামলেই তাদের ওপর হামলা হচ্ছে। পুলিশ গ্রেপ্তার করছে। পুলিশ বাসাবাড়িতেও নেতাকর্মীদের থাকতে দিচ্ছে না। গত কয়েক দিনে বিএনপির বেশ কয়েকজন প্রার্থী আহতও হয়েছেন। গ্রেপ্তারও হয়েছেন কেউ কেউ। নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের সংখ্যাও বহু।
তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হয়েছে, বিএনপি নিজেরা নিজেদের ওপর হামলা করে আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই তারা মাঠে নেই। আর এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে পুলিশ। তারা বলছে, ‘চুরি, ডাকাতিসহ চলমান রাজনৈতিক মামলায় তারা গ্রেপ্তার হয়েছে। ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।’
বিএনপির পক্ষ থেকে গতকালও অভিযোগ করা হয়েছে, তালিকা ধরে ধরে বিভিন্ন এলাকায় তাদের সম্ভাব্য এজেন্টদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দুদিনে খুলনা-১ আসনের ১৮ জন এজেন্টকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিন সকালে দলটির অফিশিয়াল ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে বলা হয়, ‘বিএনপি হাইকমান্ড থেকে সকলকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে নির্বাচনের দিন সকলে নিজ নিজ দায়িত্বে গ্রেফতার এড়িয়ে চলুন।’
এর আগে ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ৮ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে তাদের প্রায় সাড়ে ১০ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ‘কল্পিত’ এবং ‘গায়েবি’ মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নির্বাচনের দিন নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এড়াতেও নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি।