ইসির অগ্নিপরীক্ষা কাল
উম্মুল ওয়ারা সুইটি | ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
নির্বাচনের সব আয়োজন শেষ রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার দিকে দেশ-বিদেশের নজর
ভোটের দিন সামনে রেখে সবার নজর এখন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দিকে। নির্বিঘ্নে ভোটাভুটি সম্পন্ন করার জন্য চ্যালেঞ্জের মুখে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা। নির্বাচন কেমন হয় তার ওপর শ্যেনদৃষ্টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের।
রাজনৈতিক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের পরীক্ষাও কাল ভোটের দিন। এই পরিস্থিতিতে নাশকতার আশঙ্কা, বিরোধী দলগুলোর সমান সুযোগ না-পাওয়ার অভিযোগ, মামলা-হামলা এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে গতকাল শুক্রবার সকালে শেষ হয়েছে প্রচার।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দেশব্যাপী বিরোধী পক্ষের নাশকতার আশঙ্কা এবং নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশনায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও কিছুটা শঙ্কিত। আবার গত বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের হাঁকডাক দিয়ে সারা দেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনায় ভোটারদের মধ্যে দেশব্যাপী কিছুটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, নির্বাচন শেষপর্যন্ত উৎসবমুখর এবং ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি থাকবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যদিও গতকাল সিইসি বলেছেন, ভোট হবে উৎসবমুখর। এদিকে গতকালও বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যম বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। সেসব প্রতিবেদনে, শান্তিপূর্ণ এবং সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে জাতিসংঘ গত দুই সপ্তাহের সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইসিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির কথা জানিয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার কথা বলেছেন। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংগঠনগুলো বলেছে, নির্বাচনে পর্যাপ্ত পরিমাণ পর্যবেক্ষক না এলেও বিদেশিরা নিবিড়ভাবে এই নির্বাচনটি দেখছে। নির্বাচন পরবর্তীকালে তারা এ ব্যাপারে কথা বলবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা সঠিক না ভুল এবং বাংলাদেশের রাজনীতি এগিয়ে যাচ্ছে না পিছিয়ে পড়ছে তা নির্বাচন অনুষ্ঠান ও এটি সম্পন্ন হওয়ার ওপর নির্ভর করবে। তাই এই নির্বাচন সরকার এবং ইসির জন্য অনেক চ্যালেঞ্জের। বিভিন্ন কারণে সম্পূর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার ওপর মানুষের বিশ্বাস টলমলে। বিদেশি পর্যবেক্ষক খুব কম এলেও শ্যেন দৃষ্টি দিয়ে রেখেছে।’
বিএনপি সমর্থক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রবীণ অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এক দিন পরেই ভোট। অথচ এখনো বিরোধী দলের প্রার্থীরা অবরুদ্ধ। আবার সিইসি ও কমিশনারদের মধ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। পোলিং এজেন্টরা আতঙ্কে। বিএনপিসহ অন্যান্য প্রার্থীর সমর্থকদের ধরপাকড় অব্যাহত, আদালতের রায়ের ফলে বিএনপির সাতটি সংসদীয় আসনে প্রার্থী শূন্য, কয়েকটি তিন মাসের জন্য স্থগিত। তারপরও কমিশন বলছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সৃষ্টি হওয়া এই চ্যালেঞ্জ যদি ইসি মোকাবিলা করতে পারে, তবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির পথ উজ্জ্বল। আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নিয়ম রক্ষার নির্বাচন দিয়ে এবার পার হওয়া যাবে না। তাই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই নির্বাচনের গুরুত্ব আমাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির পট কী হবে তা নির্ধারণের বড় জায়গা।’
আওয়ামী লীগ সমর্থক সাবেক কূটনীতিক ওয়ালিউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এগুলো বিএনপি-জামায়াতের প্রপাগান্ডা। বিদেশিদের এত খেয়ে কাজ পড়েনি আমাদের নির্বাচনের ওপর তীক্ষè দৃষ্টি রাখবে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে কোনো বিদেশি পর্যবেক্ষক আসতে দেব না। আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। এখানে আমাদের রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন মনিটর করবে। বিদেশিরা রায় দেবে কেন? ইউরোপ আমেরিকার নির্বাচনে কি আমরা নাকগলাতে যাই? সেসব দেশে কি নির্বাচনে সহিংসতা হয় না? যখন ১৫ আগস্টে জাতির পিতাকে হত্যা করা হলো এবং একুশে আগস্টে গ্রেনেড হামলা হলো তখন তো পর্যবেক্ষকরা আসেনি।’
এক প্রশ্নের জবাবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, বিএনপি শেষ পর্যন্ত চাইবে নির্বাচন বানচাল করতে। তাই তারা বিভিন্ন জায়গায় নালিশ করছে। ভোট এবং জনগণকে তারা ভয় পায়, কিন্তু ভোট উৎসব শুরু হয়ে গেছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই সিইসি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে সব কাজ করছে। আর বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার নির্বিঘ্নে পরিবেশ তৈরি করতে পারলে ধানের শীষের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।’
শেয়ার করুন
উম্মুল ওয়ারা সুইটি | ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

নির্বাচনের সব আয়োজন শেষ রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার দিকে দেশ-বিদেশের নজর
ভোটের দিন সামনে রেখে সবার নজর এখন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দিকে। নির্বিঘ্নে ভোটাভুটি সম্পন্ন করার জন্য চ্যালেঞ্জের মুখে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা। নির্বাচন কেমন হয় তার ওপর শ্যেনদৃষ্টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের।
রাজনৈতিক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের পরীক্ষাও কাল ভোটের দিন। এই পরিস্থিতিতে নাশকতার আশঙ্কা, বিরোধী দলগুলোর সমান সুযোগ না-পাওয়ার অভিযোগ, মামলা-হামলা এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে গতকাল শুক্রবার সকালে শেষ হয়েছে প্রচার।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দেশব্যাপী বিরোধী পক্ষের নাশকতার আশঙ্কা এবং নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশনায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও কিছুটা শঙ্কিত। আবার গত বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের হাঁকডাক দিয়ে সারা দেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনায় ভোটারদের মধ্যে দেশব্যাপী কিছুটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, নির্বাচন শেষপর্যন্ত উৎসবমুখর এবং ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি থাকবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যদিও গতকাল সিইসি বলেছেন, ভোট হবে উৎসবমুখর। এদিকে গতকালও বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যম বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। সেসব প্রতিবেদনে, শান্তিপূর্ণ এবং সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে জাতিসংঘ গত দুই সপ্তাহের সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইসিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির কথা জানিয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার কথা বলেছেন। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংগঠনগুলো বলেছে, নির্বাচনে পর্যাপ্ত পরিমাণ পর্যবেক্ষক না এলেও বিদেশিরা নিবিড়ভাবে এই নির্বাচনটি দেখছে। নির্বাচন পরবর্তীকালে তারা এ ব্যাপারে কথা বলবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা সঠিক না ভুল এবং বাংলাদেশের রাজনীতি এগিয়ে যাচ্ছে না পিছিয়ে পড়ছে তা নির্বাচন অনুষ্ঠান ও এটি সম্পন্ন হওয়ার ওপর নির্ভর করবে। তাই এই নির্বাচন সরকার এবং ইসির জন্য অনেক চ্যালেঞ্জের। বিভিন্ন কারণে সম্পূর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার ওপর মানুষের বিশ্বাস টলমলে। বিদেশি পর্যবেক্ষক খুব কম এলেও শ্যেন দৃষ্টি দিয়ে রেখেছে।’
বিএনপি সমর্থক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রবীণ অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এক দিন পরেই ভোট। অথচ এখনো বিরোধী দলের প্রার্থীরা অবরুদ্ধ। আবার সিইসি ও কমিশনারদের মধ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। পোলিং এজেন্টরা আতঙ্কে। বিএনপিসহ অন্যান্য প্রার্থীর সমর্থকদের ধরপাকড় অব্যাহত, আদালতের রায়ের ফলে বিএনপির সাতটি সংসদীয় আসনে প্রার্থী শূন্য, কয়েকটি তিন মাসের জন্য স্থগিত। তারপরও কমিশন বলছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সৃষ্টি হওয়া এই চ্যালেঞ্জ যদি ইসি মোকাবিলা করতে পারে, তবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির পথ উজ্জ্বল। আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নিয়ম রক্ষার নির্বাচন দিয়ে এবার পার হওয়া যাবে না। তাই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই নির্বাচনের গুরুত্ব আমাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির পট কী হবে তা নির্ধারণের বড় জায়গা।’
আওয়ামী লীগ সমর্থক সাবেক কূটনীতিক ওয়ালিউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এগুলো বিএনপি-জামায়াতের প্রপাগান্ডা। বিদেশিদের এত খেয়ে কাজ পড়েনি আমাদের নির্বাচনের ওপর তীক্ষè দৃষ্টি রাখবে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে কোনো বিদেশি পর্যবেক্ষক আসতে দেব না। আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। এখানে আমাদের রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন মনিটর করবে। বিদেশিরা রায় দেবে কেন? ইউরোপ আমেরিকার নির্বাচনে কি আমরা নাকগলাতে যাই? সেসব দেশে কি নির্বাচনে সহিংসতা হয় না? যখন ১৫ আগস্টে জাতির পিতাকে হত্যা করা হলো এবং একুশে আগস্টে গ্রেনেড হামলা হলো তখন তো পর্যবেক্ষকরা আসেনি।’
এক প্রশ্নের জবাবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, বিএনপি শেষ পর্যন্ত চাইবে নির্বাচন বানচাল করতে। তাই তারা বিভিন্ন জায়গায় নালিশ করছে। ভোট এবং জনগণকে তারা ভয় পায়, কিন্তু ভোট উৎসব শুরু হয়ে গেছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই সিইসি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে সব কাজ করছে। আর বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার নির্বিঘ্নে পরিবেশ তৈরি করতে পারলে ধানের শীষের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।’