জয় দেখছেন কামাল মজুমদার ইতিহাস গড়তে চান শফিকুর
মামুন আব্দুল্লাহ | ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
আগামীকাল রবিবার নির্ধারণ হবে একাদশ জাতীয় সংসদের জনপ্রতিনিধি। নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-১৫ আসনে এবারও জয় দেখছেন মহাজোটের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা কামাল আহমেদ মজুমদার। অপরদিকে জয়ের মাধ্যমে ইতিহাস গড়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। ২২ বছর পর ঢাকার কোনো আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামী। কখনো রাজধানী থেকে তাদের প্রার্থী নির্বাচিত হয়নি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪, ১৩, ১৪ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৫ আসন। মিরপুর-১৩ ও ১৪ নম্বর, বাইশটেকি, ইব্রাহীমপুর, কাফরুল, বড়বাগ, পীরেরবাগ, মণিপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, সেনপাড়া পর্বতা এলাকা রয়েছে এই নির্বাচনী এলাকায়। তিন লাখ ৪০ হাজার ৫২৮ জন ভোটারের এই আসনে এবার প্রার্থী হয়েছেন ১০ জন, যাদের কেউই স্বতন্ত্র নন। সপ্তম, নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই অঞ্চল থেকে সংসদ সদস্য হওয়া কামাল আহমেদ মজুমদারের ওপর এবারও আস্থা রেখেছে আওয়ামী লীগ।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাফরুলের ইব্রাহীমপুর থেকে শেওড়াপাড়া, মণিপুর, কাজীপাড়া, পীরেরবাগের মতো সব এলাকাতেই নৌকা প্রতীকের পোস্টার-ব্যানারের ছড়াছড়ি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীর হাতপাখা প্রতীকের পোস্টার রয়েছে। কিন্তু বিশাল এই এলাকা ঘুরে কোথাও ধানের শীষ প্রতীকে শফিকুর রহমানের একটি পোস্টারও দেখা যায়নি।
এলাকাবাসী বলছেন, নৌকা প্রতীকের সরব প্রচার থাকলেও জামায়াতে ইসলামী ধানের শীষ নিয়ে প্রচার চালিয়েছে যাচ্ছে বেশ নীরবে। দিনের বেলা ময়দানে দেখাই যায় না তাদের নেতাকর্মীদের। রাতের বেলা কিছুটা বিক্ষিপ্তভাবে প্রচার চালান জামায়াতকর্মীরা। ১০-১২ জনের ছোট ছোট দল করে এলাকাভিত্তিক লিফলেট বিতরণ করেছেন তারা।
কথা হয় ব্যবসায়ী আদনান রহমানের সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ধানের শীষের তেমন কোনো প্রচার দেখতে পাইনি। তবে মোবাইলে এসএমএস পেয়েছি। সেদিন মসজিদ থেকে বের হয়ে এ লিফলেটও পেলাম। তবে সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে নৌকার প্রার্থী। দাপুটে প্রচার চালিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘টানা ১০ বছর এমপি থেকে কামাল মজুমদার এলাকার সমস্যা সমাধানে খুব কিছু করতে পারেননি। রাস্তা-ঘাটের করুণ অবস্থা। এখন তাকে ভোট দিতে চাই না। তবে প্রার্থী হিসেবে জামায়াত আমার মোটেও পছন্দ নয়। জামায়াতের লোক ছাড়া অন্য কেউ দাঁড়ালে ভালো হতো।’
ভোটারদের অনেকে বলছেন, নির্বাচনী প্রচারে এক দিনও মাঠে দেখা যায়নি শফিকুর রহমানকে। এমনকি অনেকে জানেনও না এবার বিএনপির প্রার্থী কে। পাইকপাড়ার বাসিন্দা এমদাদুল হক বলেন, ‘এই এলাকায় একসময় বিএনপির প্রভাব ছিল। খালেক সাহেবের প্রভাব এখনো আছে এই এলাকায়। ভোটও ছিল বিএনপির। কিন্তু রাজাকারদের দলটাকে টেনে এনে নিজেরাই পায়ে কুড়াল মারছে।’
বাইশবাগে বাস করেন আবুল কালাম। এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘কাম-কাইজ এমনিতেই সুবিধার না। বেচাকেনা একেবারে খারাপ। তারপর আওয়ামী লীগের পোলাপাইন চাঁদা চাইয়া বেড়ায়। না দিতে পারলে মাইরধর করে। বিএনপি-আওয়ামী লীগ কোনো আমলেই ভালা নাই আমরা।’
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৯৭৯ সালে জামায়াতে ইসলামী জোট করে মুসলিম লীগের সঙ্গে। ওই নির্বাচনে ঢাকা জেলার মধ্যে চারটি আসনে তাদের প্রার্থী ছিল। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে ঢাকা থেকে একটি আসনে প্রার্থী দেয় জামায়াত। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ঢাকা জেলার ১৩টি আসনের মধ্যে ৯টিতে জামায়াত প্রার্থী দিয়েছিল। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। এরপর বিএনপির জোটসঙ্গী থাকায় ২০০১ ও ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ঢাকা জেলায় কোনো প্রার্থী ছিল না দলটির। সর্বশেষ ২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচন বিএনপির মতো তারাও বয়কট করে।
ধানের শীষ প্রতীক পাওয়ায় জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা এবার ভোট বেশি পাবেন বলে মনে করছেন অনেকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. শফিকুর রহমানের নির্বাচনী সমন্বয়ক আতাউর রহমান সরকার বলেন, ‘এর আগে কখনো জামায়াত ইসলামী ঢাকা থেকে আসন না পেলেও এবার পাবে। আমরা একটা নজির স্থাপন করতে চাই। কারণ মানুষ সৎ, যোগ্য ও ভালো লোকের পক্ষে থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘ডা. শফিকুর রহমান মণিপুর স্কুল প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রেখেছেন। তিনি পাস করলে এলাকার বস্তিবাসীর সমস্যা সমাধান ও রাস্তাঘাট বদলে দেবেন বলে ভোটাররা বিশ্বাস করেন।’
তবে এগুলোকে পাত্তা দিচ্ছেন না নৌকার প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতাযুদ্ধে যারা বাংলাদেশের বিপক্ষে গিয়ে পাকিস্তানকে সমর্থন ও সহায়তা দিয়েছে তাদেরকে দেশপ্রেমিক কোনো ব্যক্তি ভোট দিতে পারেন না। নৌকার পালে হাওয়া এবার জোরসে লেগেছে। মানুষ উন্নয়নকে পছন্দ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখে নৌকায় ভোট দেবে মানুষ। সব কিছু ফেভারে আছে। ৩০ তারিখে নৌকার বিশাল বিজয় হবে।’
শেয়ার করুন
মামুন আব্দুল্লাহ | ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

আগামীকাল রবিবার নির্ধারণ হবে একাদশ জাতীয় সংসদের জনপ্রতিনিধি। নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-১৫ আসনে এবারও জয় দেখছেন মহাজোটের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা কামাল আহমেদ মজুমদার। অপরদিকে জয়ের মাধ্যমে ইতিহাস গড়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। ২২ বছর পর ঢাকার কোনো আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামী। কখনো রাজধানী থেকে তাদের প্রার্থী নির্বাচিত হয়নি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪, ১৩, ১৪ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৫ আসন। মিরপুর-১৩ ও ১৪ নম্বর, বাইশটেকি, ইব্রাহীমপুর, কাফরুল, বড়বাগ, পীরেরবাগ, মণিপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, সেনপাড়া পর্বতা এলাকা রয়েছে এই নির্বাচনী এলাকায়। তিন লাখ ৪০ হাজার ৫২৮ জন ভোটারের এই আসনে এবার প্রার্থী হয়েছেন ১০ জন, যাদের কেউই স্বতন্ত্র নন। সপ্তম, নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই অঞ্চল থেকে সংসদ সদস্য হওয়া কামাল আহমেদ মজুমদারের ওপর এবারও আস্থা রেখেছে আওয়ামী লীগ।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাফরুলের ইব্রাহীমপুর থেকে শেওড়াপাড়া, মণিপুর, কাজীপাড়া, পীরেরবাগের মতো সব এলাকাতেই নৌকা প্রতীকের পোস্টার-ব্যানারের ছড়াছড়ি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীর হাতপাখা প্রতীকের পোস্টার রয়েছে। কিন্তু বিশাল এই এলাকা ঘুরে কোথাও ধানের শীষ প্রতীকে শফিকুর রহমানের একটি পোস্টারও দেখা যায়নি।
এলাকাবাসী বলছেন, নৌকা প্রতীকের সরব প্রচার থাকলেও জামায়াতে ইসলামী ধানের শীষ নিয়ে প্রচার চালিয়েছে যাচ্ছে বেশ নীরবে। দিনের বেলা ময়দানে দেখাই যায় না তাদের নেতাকর্মীদের। রাতের বেলা কিছুটা বিক্ষিপ্তভাবে প্রচার চালান জামায়াতকর্মীরা। ১০-১২ জনের ছোট ছোট দল করে এলাকাভিত্তিক লিফলেট বিতরণ করেছেন তারা।
কথা হয় ব্যবসায়ী আদনান রহমানের সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ধানের শীষের তেমন কোনো প্রচার দেখতে পাইনি। তবে মোবাইলে এসএমএস পেয়েছি। সেদিন মসজিদ থেকে বের হয়ে এ লিফলেটও পেলাম। তবে সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে নৌকার প্রার্থী। দাপুটে প্রচার চালিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘টানা ১০ বছর এমপি থেকে কামাল মজুমদার এলাকার সমস্যা সমাধানে খুব কিছু করতে পারেননি। রাস্তা-ঘাটের করুণ অবস্থা। এখন তাকে ভোট দিতে চাই না। তবে প্রার্থী হিসেবে জামায়াত আমার মোটেও পছন্দ নয়। জামায়াতের লোক ছাড়া অন্য কেউ দাঁড়ালে ভালো হতো।’
ভোটারদের অনেকে বলছেন, নির্বাচনী প্রচারে এক দিনও মাঠে দেখা যায়নি শফিকুর রহমানকে। এমনকি অনেকে জানেনও না এবার বিএনপির প্রার্থী কে। পাইকপাড়ার বাসিন্দা এমদাদুল হক বলেন, ‘এই এলাকায় একসময় বিএনপির প্রভাব ছিল। খালেক সাহেবের প্রভাব এখনো আছে এই এলাকায়। ভোটও ছিল বিএনপির। কিন্তু রাজাকারদের দলটাকে টেনে এনে নিজেরাই পায়ে কুড়াল মারছে।’
বাইশবাগে বাস করেন আবুল কালাম। এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘কাম-কাইজ এমনিতেই সুবিধার না। বেচাকেনা একেবারে খারাপ। তারপর আওয়ামী লীগের পোলাপাইন চাঁদা চাইয়া বেড়ায়। না দিতে পারলে মাইরধর করে। বিএনপি-আওয়ামী লীগ কোনো আমলেই ভালা নাই আমরা।’
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৯৭৯ সালে জামায়াতে ইসলামী জোট করে মুসলিম লীগের সঙ্গে। ওই নির্বাচনে ঢাকা জেলার মধ্যে চারটি আসনে তাদের প্রার্থী ছিল। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে ঢাকা থেকে একটি আসনে প্রার্থী দেয় জামায়াত। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ঢাকা জেলার ১৩টি আসনের মধ্যে ৯টিতে জামায়াত প্রার্থী দিয়েছিল। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। এরপর বিএনপির জোটসঙ্গী থাকায় ২০০১ ও ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ঢাকা জেলায় কোনো প্রার্থী ছিল না দলটির। সর্বশেষ ২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচন বিএনপির মতো তারাও বয়কট করে।
ধানের শীষ প্রতীক পাওয়ায় জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা এবার ভোট বেশি পাবেন বলে মনে করছেন অনেকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. শফিকুর রহমানের নির্বাচনী সমন্বয়ক আতাউর রহমান সরকার বলেন, ‘এর আগে কখনো জামায়াত ইসলামী ঢাকা থেকে আসন না পেলেও এবার পাবে। আমরা একটা নজির স্থাপন করতে চাই। কারণ মানুষ সৎ, যোগ্য ও ভালো লোকের পক্ষে থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘ডা. শফিকুর রহমান মণিপুর স্কুল প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রেখেছেন। তিনি পাস করলে এলাকার বস্তিবাসীর সমস্যা সমাধান ও রাস্তাঘাট বদলে দেবেন বলে ভোটাররা বিশ্বাস করেন।’
তবে এগুলোকে পাত্তা দিচ্ছেন না নৌকার প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতাযুদ্ধে যারা বাংলাদেশের বিপক্ষে গিয়ে পাকিস্তানকে সমর্থন ও সহায়তা দিয়েছে তাদেরকে দেশপ্রেমিক কোনো ব্যক্তি ভোট দিতে পারেন না। নৌকার পালে হাওয়া এবার জোরসে লেগেছে। মানুষ উন্নয়নকে পছন্দ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখে নৌকায় ভোট দেবে মানুষ। সব কিছু ফেভারে আছে। ৩০ তারিখে নৌকার বিশাল বিজয় হবে।’