গোপনে ভোট চাইছেন প্রার্থীরা
এস এম নূরুজ্জামান | ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার বন্ধ হলেও ঢাকা-১৬ আসনে গোপনে ভোট চাইছেন নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থী-সমর্থকরা। গতকাল শুক্রবার জয়ের আশায় ‘দোয়া’ চেয়েছেন মসজিদ-মন্দিরে। আসনের মিরপুর, কালশী, রূপনগর ও আলোকদি (আলোব্দী নামেও পরিচিত) এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রচারের বিষয়ে আসনের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী বিএনপি নেতা আহসান উল্লাহ হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যখন প্রকাশ্যে ভোট চাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন সেই সময়েই তো চাইতে পারি নাই। গ্রেপ্তার-আতঙ্কে গোপনে গোপনে বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে ভোট চেয়েছি। এখন তো প্রচারই বন্ধ। তাই ভোট প্রার্থনার বদলে নীরব বিপ্লবের আশায় মসজিদে মসজিদে দোয়া চেয়েছি।’ একই কথা জানান নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহর অনুসারীরা।
ইলিয়াস মোল্লাহর ব্যক্তিগত সচিব বাবু বলেন, শুক্রবার মধ্যরাতের পর থেকে আর কোনো প্রচার চালাননি ইলিয়াস মোল্লাহ। বিভিন্ন এলাকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন আর মসজিদে নামাজ পড়ে দোয়া চেয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ শেষে মিরপুর-১২ নম্বরের সুজাতনগর মোল্লা মার্কেটের মসজিদের ইমামকেও ইলিয়াস মোল্লাহর জন্য দোয়া চাইতে দেখা গেছে। মসজিদের বাইরে কথা হয় ব্যবসায়ী রিপন দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এলাকার যোগ্য সন্তান ইলিয়াস মোল্লাহর জয়ের জন্য মন্দিরেও প্রার্থনা করেছি আমরা। এই এলাকায় আগে পানি ও গ্যাসের সমস্যা ছিল, সেই সমস্যা তিনিই সমাধান করেছেন।’ ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সুজাতনগরের বাসিন্দা মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘এইবারই প্রথম ভোটার হয়েছি। এইচএসসি পাস করে আলুর চপ বিক্রি করছি। যিনি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবেন তাকেই ভোট দেব।’ তার কথা শুনে তারই বন্ধু রুবেল জানালেন, ‘আরে জিতবে তো ইলিয়াস ভাই। তাকেই ভোট দিব।’
২ নম্বর ওয়ার্ডের সি ব্লকের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম জীবন বলেন, ‘এখন যারা রাজনীতিক, তারা সবাই রাজনীতিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘মিরপুরের প্রধান সমস্যা মাদক। মাদকের ভয়াল ছোবলে এলাকার কিশোর-তরুণদের জীবন ধ্বংসের মুখে। যিনি মাদকমুক্ত করতে পারবেন বলে মনে হবে তাকেই ভোট দেব।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রূপনগর ও কালশী এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, মিরপুরের বিভিন্ন অলিগলি মাদকে সয়লাব। ইলিয়াস মোল্লাহর ঘনিষ্ঠ লোকজন এই মাদকের কারবারি। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এ কারণে তিনি অনেক ভোট হারাবেন।
৬ নম্বর রোডের সি ব্লকের বাসিন্দা ও বিএনপি কর্মী জিন্নত আলী জানান, প্রশাসন ও সরকারদলীয় লোকজনের নানামুখী হুমকি, চাপ ও অপতৎপরতার কারণে তারা গোপনে ইলিয়াস মোল্লাহর নানা নেতিবাচক দিক তুলে ধরে ভোট চাইছেন। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপির (উত্তর) সহসভাপতি সৈয়দ গোলাম মোহাম্মদ বলেন, ‘নামে-বেনামে বিভিন্ন ধরনের হুমকিতে আমরা এখন আতঙ্কিত। বাইরে বেরোলেই হামলা ও গ্রেপ্তারের ভয় আছে। তাই ঘরের মধ্যে বসেই ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে ভোট চেয়ে যাচ্ছি।’
ঢাকা মহানগর উত্তরের একাধিক বিএনপি নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বিএনপির সবচেয়ে বড় ভয় দলীয় কোন্দল। কারণ দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও তার স্ত্রী শাহেদা রফিক। এ ছাড়া এই আসন থেকে মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ও কারাবন্দি মোয়াজ্জেম হোসেন, সহসভাপতি আলতাফ হোসেন মনোনয়ন না পাওয়ায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। মোয়াজ্জেম হোসেনের গ্রেপ্তার ও কারাবরণের নেপথ্যে প্রার্থী আহসান উল্লাহ হাসানের ষড়যন্ত্র খুঁজে পেয়েছেন তার অনুসারীরা। এসব কারণে ঢাকা-১৬ আসনে বিএনপির কোন্দল চরমে। এর জের ধরে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে নেই মোয়াজ্জেম হোসেন, আলতাফ মোল্লা, ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতা সুমন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান সেক্রেটারি আনোয়ার হোসেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আহসান উল্লাহ হাসান বলেন, ‘নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ মনে করে সবাই এখন ঐক্যবদ্ধ, কোনো কোন্দল নেই।’ মোয়াজ্জেমের কারাবারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পুলিশ তো আমাদের সবাইকে খুঁজে বেড়ায়। আমি কীভাবে তাকে ধরিয়ে দেব? পুলিশের সঙ্গে কি আমার সম্পর্ক আছে? তাদের জন্য তো আমরা কেউই রাজনীতি করতে পারছি না। এমনকি আমার স্ত্রী রীনা হাসান ও শ্যালিকাকে প্রকাশ্যে মারধর করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২, ৩, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৬ আসন। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৩৪০।
শেয়ার করুন
এস এম নূরুজ্জামান | ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার বন্ধ হলেও ঢাকা-১৬ আসনে গোপনে ভোট চাইছেন নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থী-সমর্থকরা। গতকাল শুক্রবার জয়ের আশায় ‘দোয়া’ চেয়েছেন মসজিদ-মন্দিরে। আসনের মিরপুর, কালশী, রূপনগর ও আলোকদি (আলোব্দী নামেও পরিচিত) এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রচারের বিষয়ে আসনের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী বিএনপি নেতা আহসান উল্লাহ হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যখন প্রকাশ্যে ভোট চাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন সেই সময়েই তো চাইতে পারি নাই। গ্রেপ্তার-আতঙ্কে গোপনে গোপনে বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে ভোট চেয়েছি। এখন তো প্রচারই বন্ধ। তাই ভোট প্রার্থনার বদলে নীরব বিপ্লবের আশায় মসজিদে মসজিদে দোয়া চেয়েছি।’ একই কথা জানান নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহর অনুসারীরা।
ইলিয়াস মোল্লাহর ব্যক্তিগত সচিব বাবু বলেন, শুক্রবার মধ্যরাতের পর থেকে আর কোনো প্রচার চালাননি ইলিয়াস মোল্লাহ। বিভিন্ন এলাকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন আর মসজিদে নামাজ পড়ে দোয়া চেয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ শেষে মিরপুর-১২ নম্বরের সুজাতনগর মোল্লা মার্কেটের মসজিদের ইমামকেও ইলিয়াস মোল্লাহর জন্য দোয়া চাইতে দেখা গেছে। মসজিদের বাইরে কথা হয় ব্যবসায়ী রিপন দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এলাকার যোগ্য সন্তান ইলিয়াস মোল্লাহর জয়ের জন্য মন্দিরেও প্রার্থনা করেছি আমরা। এই এলাকায় আগে পানি ও গ্যাসের সমস্যা ছিল, সেই সমস্যা তিনিই সমাধান করেছেন।’ ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সুজাতনগরের বাসিন্দা মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘এইবারই প্রথম ভোটার হয়েছি। এইচএসসি পাস করে আলুর চপ বিক্রি করছি। যিনি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবেন তাকেই ভোট দেব।’ তার কথা শুনে তারই বন্ধু রুবেল জানালেন, ‘আরে জিতবে তো ইলিয়াস ভাই। তাকেই ভোট দিব।’
২ নম্বর ওয়ার্ডের সি ব্লকের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম জীবন বলেন, ‘এখন যারা রাজনীতিক, তারা সবাই রাজনীতিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘মিরপুরের প্রধান সমস্যা মাদক। মাদকের ভয়াল ছোবলে এলাকার কিশোর-তরুণদের জীবন ধ্বংসের মুখে। যিনি মাদকমুক্ত করতে পারবেন বলে মনে হবে তাকেই ভোট দেব।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রূপনগর ও কালশী এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, মিরপুরের বিভিন্ন অলিগলি মাদকে সয়লাব। ইলিয়াস মোল্লাহর ঘনিষ্ঠ লোকজন এই মাদকের কারবারি। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এ কারণে তিনি অনেক ভোট হারাবেন।
৬ নম্বর রোডের সি ব্লকের বাসিন্দা ও বিএনপি কর্মী জিন্নত আলী জানান, প্রশাসন ও সরকারদলীয় লোকজনের নানামুখী হুমকি, চাপ ও অপতৎপরতার কারণে তারা গোপনে ইলিয়াস মোল্লাহর নানা নেতিবাচক দিক তুলে ধরে ভোট চাইছেন। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপির (উত্তর) সহসভাপতি সৈয়দ গোলাম মোহাম্মদ বলেন, ‘নামে-বেনামে বিভিন্ন ধরনের হুমকিতে আমরা এখন আতঙ্কিত। বাইরে বেরোলেই হামলা ও গ্রেপ্তারের ভয় আছে। তাই ঘরের মধ্যে বসেই ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে ভোট চেয়ে যাচ্ছি।’
ঢাকা মহানগর উত্তরের একাধিক বিএনপি নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বিএনপির সবচেয়ে বড় ভয় দলীয় কোন্দল। কারণ দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও তার স্ত্রী শাহেদা রফিক। এ ছাড়া এই আসন থেকে মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ও কারাবন্দি মোয়াজ্জেম হোসেন, সহসভাপতি আলতাফ হোসেন মনোনয়ন না পাওয়ায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। মোয়াজ্জেম হোসেনের গ্রেপ্তার ও কারাবরণের নেপথ্যে প্রার্থী আহসান উল্লাহ হাসানের ষড়যন্ত্র খুঁজে পেয়েছেন তার অনুসারীরা। এসব কারণে ঢাকা-১৬ আসনে বিএনপির কোন্দল চরমে। এর জের ধরে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে নেই মোয়াজ্জেম হোসেন, আলতাফ মোল্লা, ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতা সুমন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান সেক্রেটারি আনোয়ার হোসেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আহসান উল্লাহ হাসান বলেন, ‘নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ মনে করে সবাই এখন ঐক্যবদ্ধ, কোনো কোন্দল নেই।’ মোয়াজ্জেমের কারাবারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পুলিশ তো আমাদের সবাইকে খুঁজে বেড়ায়। আমি কীভাবে তাকে ধরিয়ে দেব? পুলিশের সঙ্গে কি আমার সম্পর্ক আছে? তাদের জন্য তো আমরা কেউই রাজনীতি করতে পারছি না। এমনকি আমার স্ত্রী রীনা হাসান ও শ্যালিকাকে প্রকাশ্যে মারধর করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২, ৩, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৬ আসন। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৩৪০।