উৎকণ্ঠার ভোট আজ
প্রতীক ইজাজ | ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দেশে বহুল কাক্সিক্ষত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ। একটি আসনের একজন প্রার্থী মারা যাওয়ায় এবার ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে ভোট হচ্ছে। সাড়ে ১০ কোটি ভোটার ভোট দিয়ে এসব আসনে তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন। এসব আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীক নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং ধানের শীষ নিয়ে সরকারবিরোধী বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই প্রথম রাজনৈতিক সরকারের অধীনে দেশের সব রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। তবে এবারের মতো আর কখনোই দেশের কোনো নির্বাচনে সরকারবিরোধী প্রার্থীদের প্রচারের মাঠে এত অনুপস্থিতি দেখা যায়নি। ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৫ জেলাতেই হামলা, বাধা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৯টিতেই ছিল সংঘাত।
সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে এবারই প্রথম ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হচ্ছে। আসনগুলো হলো ঢাকা-৫, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ ও সাতক্ষীরা-২। এসব আসনে মোট কেন্দ্র ৮৪৫টি। ভোটার ২১ লাখ ২৪ হাজার ৪১১ জন।
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে এবারের মতো প্রকাশ্য মতবিরোধ কখনোই দেখেনি জাতি। ভোটের মাঠে সবাই সমান সুযোগ পাচ্ছে বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বারবার দাবি করলেও পাঁচ সদস্যের ইসিতে ভিন্নমত পোষণ করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব প্রতীক থাকলেও জোটের মেরুকরণে দেশের প্রায় অর্ধেক রাজনৈতিক দল স্পষ্ট দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবার। জোটগতভাবে নির্বাচনে ২০টি দল নিজেদের প্রতীক ছেড়ে ভোট করছে প্রধান দুই দলের মার্কা নৌকা আর ধানের শীষ নিয়ে। আর কোনো সংসদ নির্বাচনে দুই মার্কার ভিত্তিতে এতটা স্পষ্ট বিভক্তি দেখা যায়নি। বেড়েছে নির্বাচনে অংশ নেওয়া নারীর সংখ্যাও। এবার ৬৯টি আসনে নারী প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাসহ ২০ জন সরাসরি নৌকা প্রতীকে ভোট করছেন। আর বিএনপি থেকে মাঠে আছেন ১৪ জন। বাকিরা বড় দুই জোটের শরিক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী।
শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীরা টিকে যাওয়ায় ভোটের যুদ্ধে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। ইসির নিবন্ধন বাতিল হলেও জামায়াতে ইসলামীর ২৫ নেতাকে ধানের শীষ দিয়ে প্রার্থী করেছে বিএনপি।
এমন অবস্থার মধ্যেই আজ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল তিনি বলেছেন, ‘যদি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপি নির্বাচন বয়কটের ঘোষণাও দেয়, তবু আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। নির্বাচনের মাঝপথেই তারা ঘোষণা দিতে পারে, নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার এবং নির্বাচন বয়কট করার। সে ক্ষেত্রে আমি আমাদের প্রার্থী এবং অন্য দলের যারা রয়েছেন তাদের বলব, নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোট চালিয়ে যান।’
কারাগার থেকে পাঠানো এক বার্তায় ভোটকেন্দ্র ‘পাহারা দিতে’ বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। গতকাল শনিবার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে দলীয় চেয়ারপারসনের এই বার্তা পড়ে শোনান।
ভোটারদের সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট ‘নিজেরা’ ভোট থেকে সরে যাবে না। ভোটারদের উদ্দেশে কামাল হোসেন বলেন, ‘আপনারা সকাল সকাল কেন্দ্রে যান, ভোট দিন। আপনারা ভয় পাবেন না, আপনারা গেলে দুর্বৃত্তরাই পালিয়ে যাবে। জনগণের শক্তির সাথে তারা পারবে না।’
এদিকে ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। গতকাল তিনি বলেন, মোতায়েন হওয়া সেনাসদস্যরা নিয়মিত টহল দিচ্ছেন। প্রয়োজনে স্বল্প সময়ে আরো সদস্য মোতায়েনের জন্য প্রত্যেকটি সেনানিবাসে পর্যাপ্ত সেনাসদস্য প্রস্তুত রয়েছেন।
নির্বাচনী প্রচারে সহিংসতা হলেও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট ইসি। নির্বাচনকে ভোট উৎসবে পরিণত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। ভোটের পরিবেশ নির্বিঘœ করতে প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
গতকাল মোবাইল ইন্টারনেটে ফোরজি ও থ্রিজি সেবা ৩৩ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। বিটিআরসি জানিয়েছে, ভোটের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত এসব সেবা পাওয়া যাবে না।
তবে ভোটকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ অব্যাহত আছে। ‘নিয়ন্ত্রণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ’ নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে নির্বাচন ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ১৫টি আন্তর্জাতিক সংগঠন।
ভোটগ্রহণ উপলক্ষে আজ সাধারণ ছুটি। ব্যাংকও বন্ধ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ ৩০ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত। যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কমিশনের অনুমোদিত পরিচয়পত্রধারীর বাইরে কোনো যান চলাচল করবে না।
এবার ভোটে লড়ছেন ১৮৬১ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৭৩৩ জন দেশের ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী; বাকি ১২৮ জন স্বতন্ত্র। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক ১৬টি দল এবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া তাদের জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টি নিজেদের লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
বিএনপিসহ তাদের জোট শরিক আটটি দল ধানের শীষে ভোট করছে এবার। নিবন্ধিত দলের বাইরে জামায়াত ও নাগরিক ঐক্যের প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীকে লড়ছেন।
এ ছাড়া গণতান্ত্রিক বাম জোটের দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কাস্তে, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) মই, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি কোদাল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ হাতপাখা, বিএনএফ টেলিভিশন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন বটগাছ, ইসলামী ঐক্যজোট মিনার, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল বাঘ ও জাকের পার্টি গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে ভোটে রয়েছে।
নির্বাচনে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০০ কোটি টাকা। এর দুই-তৃতীয়াংশই যাবে নিরাপত্তা খাতে।
নির্বাচনে মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের সাধারণ কেন্দ্রে ১৪ থেকে ১৫ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৬ জন নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন রয়েছেন। পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল, হাওর এলাকার কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা আরো বেশি। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬ লাখ সদস্য। মোতায়েন হয়েছে সেনাবাহিনী।
নির্বাচনে দেশের ৮১টি নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন। এ ছাড়া বিদেশিদের মধ্যে ফেমবোসা, ওআইসি, কমনওয়েলথ ও অন্যান্য সংস্থার ৩৮ জন, কূটনীতিক ও বিদেশি মিশনের ৬৪ কর্মকর্তা এবং ঢাকাস্থ দূতাবাস বা হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ৬১ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন।
সারা দেশে রবিবার যে ২৯৯ আসনে ভোট হচ্ছে তার মধ্যে ঢাকা জেলায় রয়েছে ২০টি আসন। এর মধ্যে রাজধানীতে ১৫টি আসনে ২ হাজার ১১৩টি ভোটকেন্দ্র। এসব কেন্দ্রের একটিও ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে জানিয়েছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।
ইসির দেওয়া তথ্যমতে, এক প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় এবার ৩০০ আসনের মধ্যে ভোট হবে ২৯৯ আসনে। অবশিষ্ট গাইবান্ধা-৩ আসনে ২৭ জানুয়ারি ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইভিএম কেন্দ্রগুলো ছাড়া বাকি আসনগুলোতে আগের মতোই সনাতন পদ্ধতিতে ব্যালট পেপার ব্যবহার করে ভোট হবে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, ঢাকায় নির্বাচন ভবনের ফোয়ারা প্রাঙ্গণে বিশেষ মঞ্চ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করা হবে।
শেয়ার করুন
প্রতীক ইজাজ | ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দেশে বহুল কাক্সিক্ষত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ। একটি আসনের একজন প্রার্থী মারা যাওয়ায় এবার ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে ভোট হচ্ছে। সাড়ে ১০ কোটি ভোটার ভোট দিয়ে এসব আসনে তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন। এসব আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীক নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং ধানের শীষ নিয়ে সরকারবিরোধী বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই প্রথম রাজনৈতিক সরকারের অধীনে দেশের সব রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। তবে এবারের মতো আর কখনোই দেশের কোনো নির্বাচনে সরকারবিরোধী প্রার্থীদের প্রচারের মাঠে এত অনুপস্থিতি দেখা যায়নি। ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৫ জেলাতেই হামলা, বাধা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৯টিতেই ছিল সংঘাত।
সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে এবারই প্রথম ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হচ্ছে। আসনগুলো হলো ঢাকা-৫, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ ও সাতক্ষীরা-২। এসব আসনে মোট কেন্দ্র ৮৪৫টি। ভোটার ২১ লাখ ২৪ হাজার ৪১১ জন।
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে এবারের মতো প্রকাশ্য মতবিরোধ কখনোই দেখেনি জাতি। ভোটের মাঠে সবাই সমান সুযোগ পাচ্ছে বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বারবার দাবি করলেও পাঁচ সদস্যের ইসিতে ভিন্নমত পোষণ করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব প্রতীক থাকলেও জোটের মেরুকরণে দেশের প্রায় অর্ধেক রাজনৈতিক দল স্পষ্ট দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবার। জোটগতভাবে নির্বাচনে ২০টি দল নিজেদের প্রতীক ছেড়ে ভোট করছে প্রধান দুই দলের মার্কা নৌকা আর ধানের শীষ নিয়ে। আর কোনো সংসদ নির্বাচনে দুই মার্কার ভিত্তিতে এতটা স্পষ্ট বিভক্তি দেখা যায়নি। বেড়েছে নির্বাচনে অংশ নেওয়া নারীর সংখ্যাও। এবার ৬৯টি আসনে নারী প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাসহ ২০ জন সরাসরি নৌকা প্রতীকে ভোট করছেন। আর বিএনপি থেকে মাঠে আছেন ১৪ জন। বাকিরা বড় দুই জোটের শরিক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী।
শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীরা টিকে যাওয়ায় ভোটের যুদ্ধে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। ইসির নিবন্ধন বাতিল হলেও জামায়াতে ইসলামীর ২৫ নেতাকে ধানের শীষ দিয়ে প্রার্থী করেছে বিএনপি।
এমন অবস্থার মধ্যেই আজ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল তিনি বলেছেন, ‘যদি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপি নির্বাচন বয়কটের ঘোষণাও দেয়, তবু আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। নির্বাচনের মাঝপথেই তারা ঘোষণা দিতে পারে, নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার এবং নির্বাচন বয়কট করার। সে ক্ষেত্রে আমি আমাদের প্রার্থী এবং অন্য দলের যারা রয়েছেন তাদের বলব, নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোট চালিয়ে যান।’
কারাগার থেকে পাঠানো এক বার্তায় ভোটকেন্দ্র ‘পাহারা দিতে’ বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। গতকাল শনিবার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে দলীয় চেয়ারপারসনের এই বার্তা পড়ে শোনান।
ভোটারদের সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট ‘নিজেরা’ ভোট থেকে সরে যাবে না। ভোটারদের উদ্দেশে কামাল হোসেন বলেন, ‘আপনারা সকাল সকাল কেন্দ্রে যান, ভোট দিন। আপনারা ভয় পাবেন না, আপনারা গেলে দুর্বৃত্তরাই পালিয়ে যাবে। জনগণের শক্তির সাথে তারা পারবে না।’
এদিকে ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। গতকাল তিনি বলেন, মোতায়েন হওয়া সেনাসদস্যরা নিয়মিত টহল দিচ্ছেন। প্রয়োজনে স্বল্প সময়ে আরো সদস্য মোতায়েনের জন্য প্রত্যেকটি সেনানিবাসে পর্যাপ্ত সেনাসদস্য প্রস্তুত রয়েছেন।
নির্বাচনী প্রচারে সহিংসতা হলেও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট ইসি। নির্বাচনকে ভোট উৎসবে পরিণত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। ভোটের পরিবেশ নির্বিঘœ করতে প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
গতকাল মোবাইল ইন্টারনেটে ফোরজি ও থ্রিজি সেবা ৩৩ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। বিটিআরসি জানিয়েছে, ভোটের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত এসব সেবা পাওয়া যাবে না।
তবে ভোটকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ অব্যাহত আছে। ‘নিয়ন্ত্রণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ’ নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে নির্বাচন ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ১৫টি আন্তর্জাতিক সংগঠন।
ভোটগ্রহণ উপলক্ষে আজ সাধারণ ছুটি। ব্যাংকও বন্ধ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ ৩০ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত। যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কমিশনের অনুমোদিত পরিচয়পত্রধারীর বাইরে কোনো যান চলাচল করবে না।
এবার ভোটে লড়ছেন ১৮৬১ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৭৩৩ জন দেশের ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী; বাকি ১২৮ জন স্বতন্ত্র। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক ১৬টি দল এবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া তাদের জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টি নিজেদের লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
বিএনপিসহ তাদের জোট শরিক আটটি দল ধানের শীষে ভোট করছে এবার। নিবন্ধিত দলের বাইরে জামায়াত ও নাগরিক ঐক্যের প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীকে লড়ছেন।
এ ছাড়া গণতান্ত্রিক বাম জোটের দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কাস্তে, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) মই, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি কোদাল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ হাতপাখা, বিএনএফ টেলিভিশন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন বটগাছ, ইসলামী ঐক্যজোট মিনার, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল বাঘ ও জাকের পার্টি গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে ভোটে রয়েছে।
নির্বাচনে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০০ কোটি টাকা। এর দুই-তৃতীয়াংশই যাবে নিরাপত্তা খাতে।
নির্বাচনে মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের সাধারণ কেন্দ্রে ১৪ থেকে ১৫ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৬ জন নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন রয়েছেন। পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল, হাওর এলাকার কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা আরো বেশি। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬ লাখ সদস্য। মোতায়েন হয়েছে সেনাবাহিনী।
নির্বাচনে দেশের ৮১টি নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন। এ ছাড়া বিদেশিদের মধ্যে ফেমবোসা, ওআইসি, কমনওয়েলথ ও অন্যান্য সংস্থার ৩৮ জন, কূটনীতিক ও বিদেশি মিশনের ৬৪ কর্মকর্তা এবং ঢাকাস্থ দূতাবাস বা হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ৬১ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন।
সারা দেশে রবিবার যে ২৯৯ আসনে ভোট হচ্ছে তার মধ্যে ঢাকা জেলায় রয়েছে ২০টি আসন। এর মধ্যে রাজধানীতে ১৫টি আসনে ২ হাজার ১১৩টি ভোটকেন্দ্র। এসব কেন্দ্রের একটিও ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে জানিয়েছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।
ইসির দেওয়া তথ্যমতে, এক প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় এবার ৩০০ আসনের মধ্যে ভোট হবে ২৯৯ আসনে। অবশিষ্ট গাইবান্ধা-৩ আসনে ২৭ জানুয়ারি ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইভিএম কেন্দ্রগুলো ছাড়া বাকি আসনগুলোতে আগের মতোই সনাতন পদ্ধতিতে ব্যালট পেপার ব্যবহার করে ভোট হবে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, ঢাকায় নির্বাচন ভবনের ফোয়ারা প্রাঙ্গণে বিশেষ মঞ্চ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করা হবে।