ঐক্যফ্রন্টের দাবি
তফসিলের পর গ্রেপ্তার ১১,০০০
আলাউদ্দিন আরিফ | ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিনও পুলিশের বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত সারা দেশে সাড়ে ১১ হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বিএনপিপ্রধান এই জোট দাবি করেছে। শুধু শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ১ হাজার ১২৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ধানের শীষের সমর্থকদের গ্রেপ্তারের অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলছে, রাজনৈতিক কারণে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। সুনির্দিষ্ট মামলার আসামিদের তারা গ্রেপ্তার করছেন। মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনী প্রচারের কারণে বা কোনো দলকে সমর্থন দেওয়ার কারণে কোনো ব্যক্তি বা দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনা দুঃখজনক।
গতকাল শনিবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বিরোধী দলের ১১ হাজার ৫০৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ৯২৭টি। বিরোধী দলের অফিস, মিছিল ও কার্যক্রমে হামলা করা হয়েছে ২ হাজার ৮৯৬ বার। এতে ১৩ হাজার ২৫২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। মারা গেছেন নয়জন। শুক্রবার এক দিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১ হাজার ১২৭ জন। মামলা হয়েছে ৫৯টি।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিশেষ অভিযানে সারা দেশে কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে সে বিষয়ে আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ তাদের কৌশল। কোনো সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা পুলিশের রুটিন ওয়ার্ক। পুলিশ সেটা করছে। কে কোন দল করে পুলিশের কাছে সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। কেউ যদি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে, পেশিশক্তি ব্যবহার করতে চায় এবং কোনো বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়, তবে তাকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।’
গতকালও রাজধানীতে পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত ছিল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাড়ির কাছ থেকে আটক করা হয়েছে আরেক নেতা আলাউদ্দিন আলালকে। দুপুরে ধানের শীষের প্রার্থী মির্জা আব্বাসের বাড়ি ঘিরে রাখে যৌথবাহিনী। ফলে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বলে তার দাবি। মির্জা আব্বাসের মিডিয়া সমন্বয়কারী নাহিদ দাবি করেছেন, গতকাল তাদের অন্তত ২০ জনকে বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে।
স্কুলের সামনে ধানের শীষের পোস্টার থাকায় উত্তর বাড্ডার একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের মালিক ও শিক্ষক আবদুল মান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশ শুক্রবার বিভিন্ন মামলায় ১৭৪ জনকে আদালতে হাজির করেছে। তাদের মধ্যে ৬৮ জনকে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় করা বিশেষ ক্ষমতা আইন, বিস্ফোরক আইন, ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। শুক্রবার নিউমার্কেট থানার পুলিশ কামরাঙ্গীরচরের বাসা থেকে আটক করে ভাঙচুরের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় তাঁতী দলের নেতা বাবু মিয়াকে।
বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের অভিযোগের বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমি বরাবরই বলেছি নির্বাচনী প্রচার বা কোনো দলকে সমর্থন দেওয়ার কারণে যাতে কোনো ব্যক্তি বা দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং হয়রানি করা না হয়। সাধারণ সমর্থক ও এজেন্টদের গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা দুঃখজনক। হত্যা মামলা বা পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার সেটা ভিন্ন কথা। বিরোধীপক্ষের গ্রেপ্তারের অভিযোগগুলো জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পর্যবেক্ষণে রাখছে।
এদিকে রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংস্থার বরাত দিয়ে এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনসহ (অ্যানফ্রেল) কমপক্ষে ১৬টি সংগঠন শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, নভেম্বরের শুরুর দিকে জাতীয় নির্বাচন ঘোষণার পর পুলিশ বিরোধীপক্ষের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর বিরোধী দলের গাড়িবহরে কমপক্ষে ৩০টি হামলা হয়েছে। ১৫৯টি সংসদীয় আসনে ২০৭টি সহিংসতা ঘটেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কমপক্ষে ৪৮ জন প্রার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। মারাত্মক আহত হয়েছেন তাদের ১৩ জন প্রার্থী। গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিরোধী দলের ১৮ প্রার্থীকে। অন্যদিকে ২৬টি সংসদীয় আসনে বিএনপির প্রার্থীদের অযোগ্য ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন। নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সহিংসতায় নিহত হয়েছেন পাঁচজন। আহত হয়েছেন ২ হাজার ৬৮২ জন।
সরকারি দলের সমর্থকের হামলা, বিরোধী নেতাকর্মীদের বাড়ি আগুন দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া, নারী প্রার্থীদের ওপর হামলা, বিরোধী দলের নির্বাচনী র্যালিতে বাধা দেওয়ার মাধ্যমে ভোটারদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও সংস্থাটি দাবি করেছে।
এ বিষয়ে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, তারা যে সংস্থার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন তারা বিতর্কিত ও তাদের তথ্যগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।
শেয়ার করুন
আলাউদ্দিন আরিফ | ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিনও পুলিশের বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত সারা দেশে সাড়ে ১১ হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বিএনপিপ্রধান এই জোট দাবি করেছে। শুধু শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ১ হাজার ১২৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ধানের শীষের সমর্থকদের গ্রেপ্তারের অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলছে, রাজনৈতিক কারণে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। সুনির্দিষ্ট মামলার আসামিদের তারা গ্রেপ্তার করছেন। মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনী প্রচারের কারণে বা কোনো দলকে সমর্থন দেওয়ার কারণে কোনো ব্যক্তি বা দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনা দুঃখজনক।
গতকাল শনিবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বিরোধী দলের ১১ হাজার ৫০৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ৯২৭টি। বিরোধী দলের অফিস, মিছিল ও কার্যক্রমে হামলা করা হয়েছে ২ হাজার ৮৯৬ বার। এতে ১৩ হাজার ২৫২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। মারা গেছেন নয়জন। শুক্রবার এক দিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১ হাজার ১২৭ জন। মামলা হয়েছে ৫৯টি।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিশেষ অভিযানে সারা দেশে কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে সে বিষয়ে আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ তাদের কৌশল। কোনো সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা পুলিশের রুটিন ওয়ার্ক। পুলিশ সেটা করছে। কে কোন দল করে পুলিশের কাছে সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। কেউ যদি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে, পেশিশক্তি ব্যবহার করতে চায় এবং কোনো বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়, তবে তাকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।’
গতকালও রাজধানীতে পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত ছিল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাড়ির কাছ থেকে আটক করা হয়েছে আরেক নেতা আলাউদ্দিন আলালকে। দুপুরে ধানের শীষের প্রার্থী মির্জা আব্বাসের বাড়ি ঘিরে রাখে যৌথবাহিনী। ফলে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বলে তার দাবি। মির্জা আব্বাসের মিডিয়া সমন্বয়কারী নাহিদ দাবি করেছেন, গতকাল তাদের অন্তত ২০ জনকে বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে।
স্কুলের সামনে ধানের শীষের পোস্টার থাকায় উত্তর বাড্ডার একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের মালিক ও শিক্ষক আবদুল মান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশ শুক্রবার বিভিন্ন মামলায় ১৭৪ জনকে আদালতে হাজির করেছে। তাদের মধ্যে ৬৮ জনকে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় করা বিশেষ ক্ষমতা আইন, বিস্ফোরক আইন, ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। শুক্রবার নিউমার্কেট থানার পুলিশ কামরাঙ্গীরচরের বাসা থেকে আটক করে ভাঙচুরের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় তাঁতী দলের নেতা বাবু মিয়াকে।
বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের অভিযোগের বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমি বরাবরই বলেছি নির্বাচনী প্রচার বা কোনো দলকে সমর্থন দেওয়ার কারণে যাতে কোনো ব্যক্তি বা দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং হয়রানি করা না হয়। সাধারণ সমর্থক ও এজেন্টদের গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা দুঃখজনক। হত্যা মামলা বা পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার সেটা ভিন্ন কথা। বিরোধীপক্ষের গ্রেপ্তারের অভিযোগগুলো জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পর্যবেক্ষণে রাখছে।
এদিকে রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংস্থার বরাত দিয়ে এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনসহ (অ্যানফ্রেল) কমপক্ষে ১৬টি সংগঠন শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, নভেম্বরের শুরুর দিকে জাতীয় নির্বাচন ঘোষণার পর পুলিশ বিরোধীপক্ষের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর বিরোধী দলের গাড়িবহরে কমপক্ষে ৩০টি হামলা হয়েছে। ১৫৯টি সংসদীয় আসনে ২০৭টি সহিংসতা ঘটেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কমপক্ষে ৪৮ জন প্রার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। মারাত্মক আহত হয়েছেন তাদের ১৩ জন প্রার্থী। গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিরোধী দলের ১৮ প্রার্থীকে। অন্যদিকে ২৬টি সংসদীয় আসনে বিএনপির প্রার্থীদের অযোগ্য ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন। নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সহিংসতায় নিহত হয়েছেন পাঁচজন। আহত হয়েছেন ২ হাজার ৬৮২ জন।
সরকারি দলের সমর্থকের হামলা, বিরোধী নেতাকর্মীদের বাড়ি আগুন দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া, নারী প্রার্থীদের ওপর হামলা, বিরোধী দলের নির্বাচনী র্যালিতে বাধা দেওয়ার মাধ্যমে ভোটারদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও সংস্থাটি দাবি করেছে।
এ বিষয়ে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, তারা যে সংস্থার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন তারা বিতর্কিত ও তাদের তথ্যগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।