আওয়ামী লীগের আশাতীত বিজয়
বিশেষ প্রতিনিধি | ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
বিক্ষিপ্ত সহিংসতা ও ভোট কারচুপির অভিযোগের মধ্যে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আশাতীত জয় পেয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতা পেতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। প্রায় সব আসনেই আকাশ-পাতাল ব্যবধান রেখে জিতেছে তাদের প্রার্থী। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে দাবি করা হলেও ব্যাপক ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করে আবার তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
ভোটকেন্দ্রগুলোতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক উপস্থিতি ও সংলগ্ন এলাকার সড়কগুলোয় সেনাবাহিনীর টহলের মধ্যে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিএনপিপ্রধান বিরোধী এই জোটের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে; দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যেগুলোতে নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
গতকাল রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে ভোট চলাকালে ৫৯ জন প্রার্থীর ভোট বর্জন ও কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিতের ঘটনাও ঘটেছে। এবারই প্রথম অনুষ্ঠিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দেওয়া নিয়ে স্বস্তি-অস্বস্তি ছিল মানুষের মধ্যে। সব কেন্দ্রেই সরব উপস্থিতি ছিল নৌকা প্রার্থীর সমর্থকদের। তবে ধানের শীষের কর্মীদের তেমন দেখা যায়নি। সব মিলে ভোটের শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীদের শক্ত অবস্থান ছিল কেন্দ্রগুলোতে।
রাত সোয়া ২টা পর্যন্ত পাওয়া বেসরকারি ফলে দেখা গেছে, ২৯৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৫৭টিতে, জাতীয় পার্টি ২২টিতে, ঐক্যফ্রন্ট ৬টিতে, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ২টিতে আর স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল মিলে ৬টিতে জয়ী হয়েছে। বাকি ৬টি আসনের ফল ঘোষণা বাকি ছিল। আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৫৯ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল, তিনজন বাদে তাদের সবাই জয় পেয়েছে।
সকালে অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট শুরু হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিত্র বদলে যেতে থাকে। ক্ষমতাসীন প্রার্থীর সমর্থকদের ব্যাপক উপস্থিতির মধ্যে অনেকে কেন্দ্রে গিয়ে ‘নিজের ভোট দেওয়া হয়ে গেছে’ বলে অভিযোগ করেছেন। অনেকে আগে ভোটার স্লিপ হাতে না পাওয়ায় ভোটকেন্দ্রে এসে ভোটার নম্বর খুঁজে বের করতে হিমশিম খেয়েছেন। সব মিলে দুপুরের পর থেকে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কমে যায়।
আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালেই রাজধানীর ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বলেছেন, নৌকার জয় হবেই হবে। নির্বাচনী সহিংসতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কাল সারা রাত (শনিবার) পরিস্থিতি মনিটর করেছি। কয়েকটি জায়গায় কিছু ঘটনা ঘটেছে। এগুলো খুবই দুঃখজনক। আমাদের চারজনকে হত্যা করেছে। হত্যা করার ধরন একই রকম। বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমাদের মোট ১০ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। আমরা সহিংসতা চাই না। শান্তিপূর্ণভাবে জনগণ ভোট দেবে। যাকে খুশি তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।’
ভোটের পরিবেশ নিয়ে সকালে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। নির্বাচন সংঘাতহীন হয়েছে বলে দাবি করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বাংলাদেশের গত ৪৭ বছরের ইতিহাসে, আমি বলতে পারি যে এবারের নির্বাচন সংঘাতহীন হয়েছে।’ কিছু জায়গায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও তা ‘অত্যন্ত নগণ্য’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ময়মনসিংহ শহরের রাধা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর বলেছেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। তারা আশাবাদী মহাজোট ক্ষমতায় আসবে।
গতকাল রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে তা বাতিল করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। তাদের জোটসঙ্গী বিএনপি সারা দেশে ২০ ভাগ কেন্দ্রে ভোট কারচুপি হয়েছে বলে দাবি করেছে।
অনিয়মের অভিযোগ এনে ঢাকা-৮ আসনের বিএনপির প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও ঢাকা-৯ আসনের প্রার্থী আফরোজা আব্বাস ভোট দেননি। ঢাকা-৪ আসনের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ শ্যামপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে নামার পর হামলার শিকার হয়েছেন। ঠাকুরগাঁওয়ে নিজে এলাকায় ভোট দেওয়ার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি যে কেন্দ্রে ভোট দিয়েছি এখানের ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে। এই কেন্দ্রে ভোট সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে। কিন্তু আমি এরই মধ্যে অভিযোগ পেয়েছি বেগুনবাড়ি এবং ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ কেন্দ্র দখল করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।’
পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, ভোট কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ তুলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, জামায়াতে ইসলামী ও স্বতন্ত্রসহ অন্তত ৫৯ জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন। এর মধ্যে ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে জামায়াতের ২২ প্রার্থী ও দলের স্বতন্ত্র চার প্রার্থী, বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৩০ জন ও বাকিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী। এর মধ্যে ঢাকা-১ আসন, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, হবিগঞ্জ, নাটোর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, নীলফামারী, শেরপুর, জামালপুর, যশোর, ময়মনসিংহ, রাজবাড়ী, গাজীপুর, খুলনা, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, ঝিনাইদহ ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন আসন রয়েছে।
সংঘাত, সহিংসতার কারণে সারা দেশে মোট ২২টি কেন্দ্র স্থগিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। সারা দেশে ২৯৯ আসনে মোট ৪০ হাজার ৫১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। এই হিসাবে বাতিল হওয়া কেন্দ্রের সংখ্যা দশমিক শূন্য ৫ শতাংশের মতো।
তবে ঢাকার কয়েকটি কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করে ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন বিদেশি পর্যবেক্ষক। ভিকারুননিসা নূন স্কুল কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে কানাডার এক পর্যবেক্ষক বলেন, ‘আমরা কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি এবং দেখেছি ভোটাররা ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে যেতে পারছে।’ ভারতের পর্যবেক্ষক গৌতম ঘোষও একই রকম সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
থাইল্যান্ডভিত্তিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার জোট এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন (আনফ্রেল) নির্বাচন নিয়ে করা শঙ্কার জবাবে ‘দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার পুরোপুরিভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছেন’ বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
শেয়ার করুন
বিশেষ প্রতিনিধি | ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

বিক্ষিপ্ত সহিংসতা ও ভোট কারচুপির অভিযোগের মধ্যে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আশাতীত জয় পেয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতা পেতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। প্রায় সব আসনেই আকাশ-পাতাল ব্যবধান রেখে জিতেছে তাদের প্রার্থী। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে দাবি করা হলেও ব্যাপক ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করে আবার তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
ভোটকেন্দ্রগুলোতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক উপস্থিতি ও সংলগ্ন এলাকার সড়কগুলোয় সেনাবাহিনীর টহলের মধ্যে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিএনপিপ্রধান বিরোধী এই জোটের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে; দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যেগুলোতে নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
গতকাল রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে ভোট চলাকালে ৫৯ জন প্রার্থীর ভোট বর্জন ও কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিতের ঘটনাও ঘটেছে। এবারই প্রথম অনুষ্ঠিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দেওয়া নিয়ে স্বস্তি-অস্বস্তি ছিল মানুষের মধ্যে। সব কেন্দ্রেই সরব উপস্থিতি ছিল নৌকা প্রার্থীর সমর্থকদের। তবে ধানের শীষের কর্মীদের তেমন দেখা যায়নি। সব মিলে ভোটের শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীদের শক্ত অবস্থান ছিল কেন্দ্রগুলোতে।
রাত সোয়া ২টা পর্যন্ত পাওয়া বেসরকারি ফলে দেখা গেছে, ২৯৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৫৭টিতে, জাতীয় পার্টি ২২টিতে, ঐক্যফ্রন্ট ৬টিতে, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ২টিতে আর স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল মিলে ৬টিতে জয়ী হয়েছে। বাকি ৬টি আসনের ফল ঘোষণা বাকি ছিল। আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৫৯ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল, তিনজন বাদে তাদের সবাই জয় পেয়েছে।
সকালে অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট শুরু হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিত্র বদলে যেতে থাকে। ক্ষমতাসীন প্রার্থীর সমর্থকদের ব্যাপক উপস্থিতির মধ্যে অনেকে কেন্দ্রে গিয়ে ‘নিজের ভোট দেওয়া হয়ে গেছে’ বলে অভিযোগ করেছেন। অনেকে আগে ভোটার স্লিপ হাতে না পাওয়ায় ভোটকেন্দ্রে এসে ভোটার নম্বর খুঁজে বের করতে হিমশিম খেয়েছেন। সব মিলে দুপুরের পর থেকে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কমে যায়।
আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালেই রাজধানীর ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বলেছেন, নৌকার জয় হবেই হবে। নির্বাচনী সহিংসতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কাল সারা রাত (শনিবার) পরিস্থিতি মনিটর করেছি। কয়েকটি জায়গায় কিছু ঘটনা ঘটেছে। এগুলো খুবই দুঃখজনক। আমাদের চারজনকে হত্যা করেছে। হত্যা করার ধরন একই রকম। বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমাদের মোট ১০ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। আমরা সহিংসতা চাই না। শান্তিপূর্ণভাবে জনগণ ভোট দেবে। যাকে খুশি তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।’
ভোটের পরিবেশ নিয়ে সকালে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। নির্বাচন সংঘাতহীন হয়েছে বলে দাবি করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বাংলাদেশের গত ৪৭ বছরের ইতিহাসে, আমি বলতে পারি যে এবারের নির্বাচন সংঘাতহীন হয়েছে।’ কিছু জায়গায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও তা ‘অত্যন্ত নগণ্য’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ময়মনসিংহ শহরের রাধা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর বলেছেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। তারা আশাবাদী মহাজোট ক্ষমতায় আসবে।
গতকাল রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে তা বাতিল করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। তাদের জোটসঙ্গী বিএনপি সারা দেশে ২০ ভাগ কেন্দ্রে ভোট কারচুপি হয়েছে বলে দাবি করেছে।
অনিয়মের অভিযোগ এনে ঢাকা-৮ আসনের বিএনপির প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও ঢাকা-৯ আসনের প্রার্থী আফরোজা আব্বাস ভোট দেননি। ঢাকা-৪ আসনের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ শ্যামপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে নামার পর হামলার শিকার হয়েছেন। ঠাকুরগাঁওয়ে নিজে এলাকায় ভোট দেওয়ার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি যে কেন্দ্রে ভোট দিয়েছি এখানের ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে। এই কেন্দ্রে ভোট সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে। কিন্তু আমি এরই মধ্যে অভিযোগ পেয়েছি বেগুনবাড়ি এবং ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ কেন্দ্র দখল করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।’
পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, ভোট কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ তুলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, জামায়াতে ইসলামী ও স্বতন্ত্রসহ অন্তত ৫৯ জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন। এর মধ্যে ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে জামায়াতের ২২ প্রার্থী ও দলের স্বতন্ত্র চার প্রার্থী, বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৩০ জন ও বাকিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী। এর মধ্যে ঢাকা-১ আসন, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, হবিগঞ্জ, নাটোর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, নীলফামারী, শেরপুর, জামালপুর, যশোর, ময়মনসিংহ, রাজবাড়ী, গাজীপুর, খুলনা, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, ঝিনাইদহ ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন আসন রয়েছে।
সংঘাত, সহিংসতার কারণে সারা দেশে মোট ২২টি কেন্দ্র স্থগিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। সারা দেশে ২৯৯ আসনে মোট ৪০ হাজার ৫১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। এই হিসাবে বাতিল হওয়া কেন্দ্রের সংখ্যা দশমিক শূন্য ৫ শতাংশের মতো।
তবে ঢাকার কয়েকটি কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করে ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন বিদেশি পর্যবেক্ষক। ভিকারুননিসা নূন স্কুল কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে কানাডার এক পর্যবেক্ষক বলেন, ‘আমরা কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি এবং দেখেছি ভোটাররা ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে যেতে পারছে।’ ভারতের পর্যবেক্ষক গৌতম ঘোষও একই রকম সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
থাইল্যান্ডভিত্তিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার জোট এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন (আনফ্রেল) নির্বাচন নিয়ে করা শঙ্কার জবাবে ‘দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার পুরোপুরিভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছেন’ বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।