সহিংসতায় নিহত ১৯
রূপান্তর ডেস্ক | ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী জোটসহ বিভিন্ন দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতায় অন্তত ১৯ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে চট্টগ্রামে তিন, কুমিল্লা ও রাজশাহীতে দুজন করে এবং রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, নরসিংদী, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, বগুড়া, নাটোর ও যশোরে একজন করে রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১০ জন ক্ষমতাসীন দলের, ছয়জন বিএনপির, একজন আনসার সদস্য। প্রত্যক্ষদর্শী, নির্বাচনী কর্মকর্তা, হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ ও পুলিশের কাছ থেকে জেলা প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদকদের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদনে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও পটিয়া উপজেলায় ভোট ঘিরে সহিংসতায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন বাঁশখালী সদরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আহমদ কবির, পটিয়ার দক্ষিণ মালিয়ারা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে আবু সাদেক (১৮) ও পটিয়ার গুরনখাইন এলাকার দ্বীন মোহাম্মদ।
রবিবার ভোররাতে বাঁশখালী সদর পৌরসভার বড়ইতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহমদের মৃত্যু হয়। তার রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি।
সকাল সোয়া ১০টার দিকে পটিয়ার পশ্চিম মালিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র দখল নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের সময় আবু সাদেক নিহত হন। নিহত আবু সাদেক বিএনপির সমর্থক বলে পরিচিত। এর আগে শনিবার রাতে পটিয়ার গুরনখাইন এলাকায় বিএনপি কর্মীদের হামলায় যুবলীগ কর্মী দ্বীন মোহাম্মদ নিহত হন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বেলা পৌনে ১২টার দিকে সাতকানিয়ার পূর্ব ছদহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকদের হামলায় একজনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত আবদুর রহমান আওয়ামী লীগের কর্মী বলে পরিচিত।
কুমিল্লায় সহিংসতার দুটি ঘটনায় দুজন নিহত এবং অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন নাঙ্গলকোট উপজেলার বরতলী ইউনিয়নের মুরগাঁও গ্রামের বাচ্চু মিয়া (৪৮) ও চান্দিনার বেলাশ্বর গ্রামের মজিবুর রহমান (৩৫)। দুজন বিএনপির কর্মী বলে দাবি করা হয়েছে।
রবিবার সকালে মুরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে হেলমেট পরা একদল লোক হকিস্টিক দিয়ে বাচ্চুকে পিটিয়ে আহত করে। নাঙ্গলকোট হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বেলাশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ছুড়লে মজিবুর নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন রাহাত ও ফারুক নামে আরো দুজন। কুমিল্লা সদরে জামায়াত কর্মীর গুলিতে যুবলীগ নেতা শাহনেওয়াজ আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রাজশাহীর মোহনপুর ও তানোরে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির সমর্থকদের সংঘর্ষে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন মোহনপুরের পাইকপাড়া গ্রামের মৃত আবদুস সাত্তারের ছেলে আওয়ামী লীগ কর্মী মেরাজুল ইসলাম (৩২) ও পাঁচন্দর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোদাচ্ছের আলী (৪০)।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে মোহনপুর উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়নের পাকুড়িয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় দখল নিয়ে সংঘর্ষের সময় বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা মেরাজুলকে পিটিয়ে জখম করে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পাঁচন্দর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় মোদাচ্ছের গুরুতর আহত হন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ঘাগড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বাসেরউদ্দিন (৩৫) নিহত হন। সকাল ৭টার দিকে ঘাগড়া ইউনিয়নের রাঙ্গিপাড়া এলাকার এ ঘটনায় ১১ জন আহত হন। জড়িত অভিযোগে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।
কক্সবাজারের পেকুয়ার রাজাখালীতে ভোট দিতে গিয়ে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত আবদুল্লাহ আল ফারুক (২৫) পেকুয়ার রাজাখালী গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। রাজাখালী মাতবরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ১১টার দিকের এ ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন। হতাহতরা সবাই ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক বলে দাবি করা হয়েছে।
নোয়াখালী বেগমগঞ্জের গোপালপুর ইউনিয়নে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলির মধ্যে পড়ে নূরনবী (৫০) নামে এক আনসার সদস্য নিহত হয়েছেন। দুপুর ১২টার দিকে তুলাচারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনার পর সেখানে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এ ঘটনায় অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। এছাড়া খানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে তিনজন আহত হন। পরে এখানে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। সদর আসনে বিএনপির প্রার্থী মো. শাহজাহানের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
লক্ষ্মীপুরে ভোট শুরুর আগে ও পরে দুটি ঘটনায় একজন নিহত ও অন্তত ১২ জন আহত হয়েছে। সদরের চন্দ্রগঞ্জ থানার বড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে শনিবার মধ্যরাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়। নিহত অজ্ঞাতপরিচয় ওই যুবককে মহাজোটের কর্মী দাবি করা হয়েছে। ওই ঘটনায় স্থানীয় রাকিব হোসেন ও জহির নামে দুই ছাত্রলীগ নেতা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে, এটা নির্বাচনী সহিংসতা নয়। গতকাল দুপুরে সদর উপজেলার পশ্চিম নন্দনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং এক স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার রাজঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপির কর্মীরা ভাঙচুর চালানোর সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন রাজঘর গ্রামের সাঈদ মিয়ার ছেলে ইসরাইল (১৮)। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ একই গ্রামের ছাদু মিয়ার ছেলে জাবেদকে (১৬) ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর-আনন্দপুর গ্রামে বিএনপির সমর্থকদের হামলায় অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মোবারক হোসেন এবং সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সংঘর্ষের সময় পুলিশে রাবার বুলেটে স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈনউদ্দিন মঈন ও তার স্ত্রী কামরুন্নাহার লাবণীসহ ১০ জন আহত হন।
নরসিংদীর শিবপুরে কুন্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দুপুর ১২টার দিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। নিহত মিলন মিয়া (৪০) কুন্দারপাড়া বংপুর গ্রামের হযরত আলীর ছেলে। তিনি ওই কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের পোলিং এজেন্ট ছিলেন।
সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার আজিজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সায়েম আহমদ সুহেল নিহত হন।
গাজীপুর মহানগরীর হাড়িনাল এলাকায় গতকাল দুপুরে নির্বাচনী সহিংসতায় একজন নিহত ও সাতজন আহত হয়েছে। নিহত লিয়াকত হোসেন (৪০) কাজী আজিমউদ্দিন কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক ভিপি ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাসুদ রানা এরশাদের বড় ভাই। আহতরা হলেন নিহত লিয়াকতের বন্ধু স্থানীয় যুবলীগ কর্মী আশরাফ (৪০), আওয়ামী লীগ কর্মী খায়রুল ইসলাম (৪০) ও গনি মিয়া (৪২)।
দুপুর দেড়টার দিকে ৪০-৫০ জন যুবক লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হাড়িনাল উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের বাইরে বসে থাকা আওয়ামী নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালালে চারজন আহত হন। তাদের হাসপাতালে পাঠানোর পর লিয়াকতের মৃত্যু হয়। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভানুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী মুজিবুর, জালু ফকির, নাজমুল সরকার ও সায়েম আহত হন বলে দাবি করেন মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মো. রফিজউদ্দিন।
টাঙ্গাইলের গোপালপুরের উপজেলার নগদা শিমলা এলাকা থেকে সকালে ভোটের আগের রাতে নিখোঁজ হওয়া এক বিএনপি নেতার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত আবদুল আজিজ (৬৫) নগদা শিমলা ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। এটাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করেছেন টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি শামছুল আলম তোফা।
বগুড়ার কাহালুর বাগইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের বাইরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত আজিজুল হক (৩২) কাহালু উপজেলার বাগইল গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে এবং পাইকড় ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি। এ ঘটনায় একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হুদা ডুয়েলকে পিটিয়ে আহত করা হয়। তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার সমাস খলসি দিয়ারপাড়া এলাকায় বেলা ১১টার দিকে বিএনপি-সমর্থক ভাতিজার ছুরিকাঘাতে আওয়ামী লীগ কর্মী হোসেন আলীর (৫৫) মৃত্যু হয়। ভোট দিতে যাওয়া নিয়ে বিতণ্ডার জের ধরে হোসেনের পেটে ছুরি চালায় রতন। তাকে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
যশোরের অভয়নগরে পাথালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের কাছে গতকাল সকালে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের হামলায় পাথালিয়া গ্রামের মৃত গোলাম মাওলার ছেলে শামসুর রহমান মারা যান। তিনি ধানের শীষের নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন।
এদিকে যশোরে ধানের শীষের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের ওপর দুবার হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ছয়, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে পাঁচ ও গাইবান্ধায় সুন্দরগঞ্জে একজন আহত হয়েছে।
নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের অপরাধে নড়াইলে নৌকার প্রার্থী কবিরুল হক মুক্তির ভাতিজাসহ ১০ এবং নীলফামারীর জলঢাকায় এক জামায়াত কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
শেয়ার করুন
রূপান্তর ডেস্ক | ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী জোটসহ বিভিন্ন দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতায় অন্তত ১৯ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে চট্টগ্রামে তিন, কুমিল্লা ও রাজশাহীতে দুজন করে এবং রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, নরসিংদী, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, বগুড়া, নাটোর ও যশোরে একজন করে রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১০ জন ক্ষমতাসীন দলের, ছয়জন বিএনপির, একজন আনসার সদস্য। প্রত্যক্ষদর্শী, নির্বাচনী কর্মকর্তা, হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ ও পুলিশের কাছ থেকে জেলা প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদকদের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদনে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো। চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও পটিয়া উপজেলায় ভোট ঘিরে সহিংসতায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন বাঁশখালী সদরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আহমদ কবির, পটিয়ার দক্ষিণ মালিয়ারা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে আবু সাদেক (১৮) ও পটিয়ার গুরনখাইন এলাকার দ্বীন মোহাম্মদ। রবিবার ভোররাতে বাঁশখালী সদর পৌরসভার বড়ইতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহমদের মৃত্যু হয়। তার রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। সকাল সোয়া ১০টার দিকে পটিয়ার পশ্চিম মালিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র দখল নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের সময় আবু সাদেক নিহত হন। নিহত আবু সাদেক বিএনপির সমর্থক বলে পরিচিত। এর আগে শনিবার রাতে পটিয়ার গুরনখাইন এলাকায় বিএনপি কর্মীদের হামলায় যুবলীগ কর্মী দ্বীন মোহাম্মদ নিহত হন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেলা পৌনে ১২টার দিকে সাতকানিয়ার পূর্ব ছদহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকদের হামলায় একজনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত আবদুর রহমান আওয়ামী লীগের কর্মী বলে পরিচিত। কুমিল্লায় সহিংসতার দুটি ঘটনায় দুজন নিহত এবং অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন নাঙ্গলকোট উপজেলার বরতলী ইউনিয়নের মুরগাঁও গ্রামের বাচ্চু মিয়া (৪৮) ও চান্দিনার বেলাশ্বর গ্রামের মজিবুর রহমান (৩৫)। দুজন বিএনপির কর্মী বলে দাবি করা হয়েছে। রবিবার সকালে মুরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে হেলমেট পরা একদল লোক হকিস্টিক দিয়ে বাচ্চুকে পিটিয়ে আহত করে। নাঙ্গলকোট হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বেলাশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ছুড়লে মজিবুর নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন রাহাত ও ফারুক নামে আরো দুজন। কুমিল্লা সদরে জামায়াত কর্মীর গুলিতে যুবলীগ নেতা শাহনেওয়াজ আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজশাহীর মোহনপুর ও তানোরে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির সমর্থকদের সংঘর্ষে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন মোহনপুরের পাইকপাড়া গ্রামের মৃত আবদুস সাত্তারের ছেলে আওয়ামী লীগ কর্মী মেরাজুল ইসলাম (৩২) ও পাঁচন্দর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোদাচ্ছের আলী (৪০)। গতকাল বেলা ১১টার দিকে মোহনপুর উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়নের পাকুড়িয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় দখল নিয়ে সংঘর্ষের সময় বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা মেরাজুলকে পিটিয়ে জখম করে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পাঁচন্দর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় মোদাচ্ছের গুরুতর আহত হন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ঘাগড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বাসেরউদ্দিন (৩৫) নিহত হন। সকাল ৭টার দিকে ঘাগড়া ইউনিয়নের রাঙ্গিপাড়া এলাকার এ ঘটনায় ১১ জন আহত হন। জড়িত অভিযোগে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। কক্সবাজারের পেকুয়ার রাজাখালীতে ভোট দিতে গিয়ে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত আবদুল্লাহ আল ফারুক (২৫) পেকুয়ার রাজাখালী গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। রাজাখালী মাতবরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ১১টার দিকের এ ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন। হতাহতরা সবাই ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক বলে দাবি করা হয়েছে। নোয়াখালী বেগমগঞ্জের গোপালপুর ইউনিয়নে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলির মধ্যে পড়ে নূরনবী (৫০) নামে এক আনসার সদস্য নিহত হয়েছেন। দুপুর ১২টার দিকে তুলাচারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনার পর সেখানে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এ ঘটনায় অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। এছাড়া খানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে তিনজন আহত হন। পরে এখানে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। সদর আসনে বিএনপির প্রার্থী মো. শাহজাহানের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। লক্ষ্মীপুরে ভোট শুরুর আগে ও পরে দুটি ঘটনায় একজন নিহত ও অন্তত ১২ জন আহত হয়েছে। সদরের চন্দ্রগঞ্জ থানার বড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে শনিবার মধ্যরাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়। নিহত অজ্ঞাতপরিচয় ওই যুবককে মহাজোটের কর্মী দাবি করা হয়েছে। ওই ঘটনায় স্থানীয় রাকিব হোসেন ও জহির নামে দুই ছাত্রলীগ নেতা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে, এটা নির্বাচনী সহিংসতা নয়। গতকাল দুপুরে সদর উপজেলার পশ্চিম নন্দনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং এক স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার রাজঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপির কর্মীরা ভাঙচুর চালানোর সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন রাজঘর গ্রামের সাঈদ মিয়ার ছেলে ইসরাইল (১৮)। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ একই গ্রামের ছাদু মিয়ার ছেলে জাবেদকে (১৬) ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর-আনন্দপুর গ্রামে বিএনপির সমর্থকদের হামলায় অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মোবারক হোসেন এবং সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সংঘর্ষের সময় পুলিশে রাবার বুলেটে স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈনউদ্দিন মঈন ও তার স্ত্রী কামরুন্নাহার লাবণীসহ ১০ জন আহত হন। নরসিংদীর শিবপুরে কুন্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দুপুর ১২টার দিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। নিহত মিলন মিয়া (৪০) কুন্দারপাড়া বংপুর গ্রামের হযরত আলীর ছেলে। তিনি ওই কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের পোলিং এজেন্ট ছিলেন। সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার আজিজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সায়েম আহমদ সুহেল নিহত হন। গাজীপুর মহানগরীর হাড়িনাল এলাকায় গতকাল দুপুরে নির্বাচনী সহিংসতায় একজন নিহত ও সাতজন আহত হয়েছে। নিহত লিয়াকত হোসেন (৪০) কাজী আজিমউদ্দিন কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক ভিপি ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাসুদ রানা এরশাদের বড় ভাই। আহতরা হলেন নিহত লিয়াকতের বন্ধু স্থানীয় যুবলীগ কর্মী আশরাফ (৪০), আওয়ামী লীগ কর্মী খায়রুল ইসলাম (৪০) ও গনি মিয়া (৪২)। দুপুর দেড়টার দিকে ৪০-৫০ জন যুবক লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হাড়িনাল উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের বাইরে বসে থাকা আওয়ামী নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালালে চারজন আহত হন। তাদের হাসপাতালে পাঠানোর পর লিয়াকতের মৃত্যু হয়। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভানুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী মুজিবুর, জালু ফকির, নাজমুল সরকার ও সায়েম আহত হন বলে দাবি করেন মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মো. রফিজউদ্দিন। টাঙ্গাইলের গোপালপুরের উপজেলার নগদা শিমলা এলাকা থেকে সকালে ভোটের আগের রাতে নিখোঁজ হওয়া এক বিএনপি নেতার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত আবদুল আজিজ (৬৫) নগদা শিমলা ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। এটাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করেছেন টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি শামছুল আলম তোফা। বগুড়ার কাহালুর বাগইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের বাইরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত আজিজুল হক (৩২) কাহালু উপজেলার বাগইল গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে এবং পাইকড় ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি। এ ঘটনায় একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হুদা ডুয়েলকে পিটিয়ে আহত করা হয়। তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার সমাস খলসি দিয়ারপাড়া এলাকায় বেলা ১১টার দিকে বিএনপি-সমর্থক ভাতিজার ছুরিকাঘাতে আওয়ামী লীগ কর্মী হোসেন আলীর (৫৫) মৃত্যু হয়। ভোট দিতে যাওয়া নিয়ে বিতণ্ডার জের ধরে হোসেনের পেটে ছুরি চালায় রতন। তাকে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। যশোরের অভয়নগরে পাথালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের কাছে গতকাল সকালে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের হামলায় পাথালিয়া গ্রামের মৃত গোলাম মাওলার ছেলে শামসুর রহমান মারা যান। তিনি ধানের শীষের নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। এদিকে যশোরে ধানের শীষের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের ওপর দুবার হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ছয়, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে পাঁচ ও গাইবান্ধায় সুন্দরগঞ্জে একজন আহত হয়েছে। নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের অপরাধে নড়াইলে নৌকার প্রার্থী কবিরুল হক মুক্তির ভাতিজাসহ ১০ এবং নীলফামারীর জলঢাকায় এক জামায়াত কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।