ভোটার কম, কেন্দ্র দখলের অভিযোগ
রশিদ আল রুহানী | ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০
শঙ্কার মধ্যে আসেননি অনেক ভোটার, অনেকে এলেও ভোট না দিতে পারার অভিযোগ করেছেন। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর পোলিং এজেন্টের সংখ্যা ছিল খুবই কম। ছিল তিনটি কেন্দ্র দখলের অভিযোগ। এসবের মাঝেও রক্তক্ষয়ী সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি ঢাকা-৭ আসনে। ছিল নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পোলিং এজেন্টদের ব্যাপক সংখ্যক উপস্থিতি।
গতকাল রবিবার সকালে আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল ভবনের দোতলায় চারটি বুথে ভোটগ্রহণ চলছে। তবে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল কম। এ বিষয়ে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার হুমায়ূন কবির পলাশ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সকাল বেলা ভোটার উপস্থিতি একটু কমই থাকে।’ ভোটগ্রহণ শেষে তিনি মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদককে জানান, কেন্দ্রটিতে ৭৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ ভোট পড়েছে।
পাশেই অবস্থিত অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গেলে সেখানেও খুব কম ভোটার দেখা যায়। কেন্দ্রটিতে চারটি বুথে ভোটগ্রহণ হয়। সেখানে নৌকার চারজন, ধানের শীষের তিনজন ও হাত পাখার একজন পোলিং এজেন্ট ছিলেন। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ইকবাল বাহার সুজন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারের উপস্থিতি বাড়ার আশা ব্যক্ত করেন।
বংশালের এফ কে এস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চারটি বুথের একটিতেও ধানের শীষের এজেন্ট পাওয়া যায়নি। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে একজন এলেও কিছুক্ষণ পরেই তিনি চলে যান বলে জানান কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সিদ্দিকুর রহমান তালুকদার। বংশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও ধানের শীষের এজেন্ট আসেননি বলে জানান প্রিসাইডিং অফিসার চয়ন চাকমা।
লালবাগ ১ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শতাধিক ভোটারকে লাইন ধরে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। অপেক্ষারত ভোটাররা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তারা প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন, অথচ তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। জানতে চাইলে প্রিসাইডিং অফিসার মুস্তাফিজুর রহমান তা অস্বীকার করেন। ওই কেন্দ্রে নৌকা ছাড়া আর কোনো প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্ট দেখা যায়নি।
তিন কেন্দ্র দখলের অভিযোগ
চকবাজার এলাকার ইসলামিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা সাড়ে ৯টায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাজী মো. সেলিম ও তার ছেলে সোলাইমান সেলিম ভোট দিতে যান। সোলাইমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আশাবাদী আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসছে। একই সঙ্গে ঢাকা-৭ আসনের প্রার্থী হাজী সেলিম আবার নির্বাচিত হচ্ছেন।’
ভোট শুরুর আগে থেকেই কেন্দ্রটিতে অবস্থান নেয় হাজী সেলিমের সমর্থকরা। কয়েকজন ভোটার অভিযোগ করে বলেন, কেন্দ্রের বাইরে গেটে স্থানীয় নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে ছিলেন, তারা ভেতরে প্রবেশে বাধা দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রিসাইডিং অফিসার গৌরাঙ্গ রায়ের কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। শুধু বলেন, ‘আমি গতকাল (শনিবার) রাত থেকে ঘুমাতে পারিনি। খুবই মানসিক চাপে আছি।’
এদিকে রহমতুল্লাহ উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে যাওয়া সিয়াম আহমেদ, ছাবিকুন্নিছাসহ কয়েকজন ভোটার অভিযোগ করেন, সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকেই কেন্দ্রটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা হট্টগোল শুরু করে। কেন্দ্রটি দখল করে নেয় তারা। প্রধান গেইটে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগ সমর্থকরা পছন্দমতো ভোটার ছাড়া বাকিদের প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। জার্মানি প্রবাসী সুমাইয়া হাসান নামে এক তরুণী বলেন, ‘আমি এবারই প্রথম ভোটার হয়েছি। ভোট দিতে জার্মানি থেকে দেশে এসেছি। কিন্তু আমাকে ও আম্মুকে কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এক ঘণ্টা ধরে রহমতুল্লাহ স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। অনেকবার বলেছি, আমাদের ঢুকতে দিন, অথচ তারা আমাদের কথাই শোনেনি। তাই ভোট না দিয়েই বাসায় ফিরে যাচ্ছি।’
রাইসুল ইসলাম নাকে এক ভোটার অভিযোগ করেন, এই কেন্দ্রে শনিবার রাত থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। স্কুলের সিসিটিভি ক্যামেরা খুলে ফেলা হয়েছে। এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিসাইডিং অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, ‘এসব অভিযোগ সত্য নয়। এখানে সুশৃঙ্খলভাবে ভোটগ্রহণ হচ্ছে।’
লালবাগে ওয়েস্ট এন্ড স্কুলের সামনে বেলা ১টার দিকে গেলে দেখা যায়, ভোটগ্রহণ বন্ধ রয়েছে। বাইরে প্রায় অর্ধশতাধিক ভোটার উপস্থিত রয়েছেন। এদের মধ্যে সালাম উদ্দিন, রাবেয়া খাতুনসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা অনেক আগে এসেছি। প্রথমে বলছে, ব্যালট পেপার শেষ, আবার এখন বলছে লাঞ্চের বিরতি চলছে। এক ঘণ্টা পর ভোট দেওয়া যাবে। আমরা কখনো শুনিনি, ভোট চলাকালীন খাওয়ার জন্য বিরতি দেওয়া হয়। আসলে আমাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। অনেককেই ভোটার স্লিপ দেওয়া হয়নি। যারা স্লিপ দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন তারা চলে গেছেন। গেটে স্থানীয় লোকজন দাঁড়িয়ে আছে, তারা আমাদের প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিসাইডিং অফিসার প্রবাল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের পোলিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট সকাল থেকে কিছুই খায়নি। বিষয়টি তো অমানবিক হয়ে যায়। তাই তাদের খাওয়ার জন্য এক ঘণ্টার বিরতি দিয়েছি।’ কেন্দ্রটিতে মুস্তাকিম খান নামে ধানের শীষের একজন পোলিং এজেন্টকে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘কত কষ্টে যে সকাল থেকে এখানে আছি তা বোঝাতে পারব না। এখন আর এসব অন্যায় সহ্য করতে পারছি না। আমি চলে যাব।’ কী অন্যায় হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
শেয়ার করুন
রশিদ আল রুহানী | ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০

শঙ্কার মধ্যে আসেননি অনেক ভোটার, অনেকে এলেও ভোট না দিতে পারার অভিযোগ করেছেন। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর পোলিং এজেন্টের সংখ্যা ছিল খুবই কম। ছিল তিনটি কেন্দ্র দখলের অভিযোগ। এসবের মাঝেও রক্তক্ষয়ী সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি ঢাকা-৭ আসনে। ছিল নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পোলিং এজেন্টদের ব্যাপক সংখ্যক উপস্থিতি।
গতকাল রবিবার সকালে আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল ভবনের দোতলায় চারটি বুথে ভোটগ্রহণ চলছে। তবে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল কম। এ বিষয়ে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার হুমায়ূন কবির পলাশ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সকাল বেলা ভোটার উপস্থিতি একটু কমই থাকে।’ ভোটগ্রহণ শেষে তিনি মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদককে জানান, কেন্দ্রটিতে ৭৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ ভোট পড়েছে।
পাশেই অবস্থিত অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গেলে সেখানেও খুব কম ভোটার দেখা যায়। কেন্দ্রটিতে চারটি বুথে ভোটগ্রহণ হয়। সেখানে নৌকার চারজন, ধানের শীষের তিনজন ও হাত পাখার একজন পোলিং এজেন্ট ছিলেন। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ইকবাল বাহার সুজন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারের উপস্থিতি বাড়ার আশা ব্যক্ত করেন।
বংশালের এফ কে এস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চারটি বুথের একটিতেও ধানের শীষের এজেন্ট পাওয়া যায়নি। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে একজন এলেও কিছুক্ষণ পরেই তিনি চলে যান বলে জানান কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সিদ্দিকুর রহমান তালুকদার। বংশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও ধানের শীষের এজেন্ট আসেননি বলে জানান প্রিসাইডিং অফিসার চয়ন চাকমা।
লালবাগ ১ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শতাধিক ভোটারকে লাইন ধরে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। অপেক্ষারত ভোটাররা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তারা প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন, অথচ তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। জানতে চাইলে প্রিসাইডিং অফিসার মুস্তাফিজুর রহমান তা অস্বীকার করেন। ওই কেন্দ্রে নৌকা ছাড়া আর কোনো প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্ট দেখা যায়নি।
তিন কেন্দ্র দখলের অভিযোগ
চকবাজার এলাকার ইসলামিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা সাড়ে ৯টায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাজী মো. সেলিম ও তার ছেলে সোলাইমান সেলিম ভোট দিতে যান। সোলাইমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আশাবাদী আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসছে। একই সঙ্গে ঢাকা-৭ আসনের প্রার্থী হাজী সেলিম আবার নির্বাচিত হচ্ছেন।’
ভোট শুরুর আগে থেকেই কেন্দ্রটিতে অবস্থান নেয় হাজী সেলিমের সমর্থকরা। কয়েকজন ভোটার অভিযোগ করে বলেন, কেন্দ্রের বাইরে গেটে স্থানীয় নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে ছিলেন, তারা ভেতরে প্রবেশে বাধা দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রিসাইডিং অফিসার গৌরাঙ্গ রায়ের কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। শুধু বলেন, ‘আমি গতকাল (শনিবার) রাত থেকে ঘুমাতে পারিনি। খুবই মানসিক চাপে আছি।’
এদিকে রহমতুল্লাহ উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে যাওয়া সিয়াম আহমেদ, ছাবিকুন্নিছাসহ কয়েকজন ভোটার অভিযোগ করেন, সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকেই কেন্দ্রটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা হট্টগোল শুরু করে। কেন্দ্রটি দখল করে নেয় তারা। প্রধান গেইটে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগ সমর্থকরা পছন্দমতো ভোটার ছাড়া বাকিদের প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। জার্মানি প্রবাসী সুমাইয়া হাসান নামে এক তরুণী বলেন, ‘আমি এবারই প্রথম ভোটার হয়েছি। ভোট দিতে জার্মানি থেকে দেশে এসেছি। কিন্তু আমাকে ও আম্মুকে কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এক ঘণ্টা ধরে রহমতুল্লাহ স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। অনেকবার বলেছি, আমাদের ঢুকতে দিন, অথচ তারা আমাদের কথাই শোনেনি। তাই ভোট না দিয়েই বাসায় ফিরে যাচ্ছি।’
রাইসুল ইসলাম নাকে এক ভোটার অভিযোগ করেন, এই কেন্দ্রে শনিবার রাত থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। স্কুলের সিসিটিভি ক্যামেরা খুলে ফেলা হয়েছে। এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিসাইডিং অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, ‘এসব অভিযোগ সত্য নয়। এখানে সুশৃঙ্খলভাবে ভোটগ্রহণ হচ্ছে।’
লালবাগে ওয়েস্ট এন্ড স্কুলের সামনে বেলা ১টার দিকে গেলে দেখা যায়, ভোটগ্রহণ বন্ধ রয়েছে। বাইরে প্রায় অর্ধশতাধিক ভোটার উপস্থিত রয়েছেন। এদের মধ্যে সালাম উদ্দিন, রাবেয়া খাতুনসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা অনেক আগে এসেছি। প্রথমে বলছে, ব্যালট পেপার শেষ, আবার এখন বলছে লাঞ্চের বিরতি চলছে। এক ঘণ্টা পর ভোট দেওয়া যাবে। আমরা কখনো শুনিনি, ভোট চলাকালীন খাওয়ার জন্য বিরতি দেওয়া হয়। আসলে আমাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। অনেককেই ভোটার স্লিপ দেওয়া হয়নি। যারা স্লিপ দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন তারা চলে গেছেন। গেটে স্থানীয় লোকজন দাঁড়িয়ে আছে, তারা আমাদের প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিসাইডিং অফিসার প্রবাল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের পোলিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট সকাল থেকে কিছুই খায়নি। বিষয়টি তো অমানবিক হয়ে যায়। তাই তাদের খাওয়ার জন্য এক ঘণ্টার বিরতি দিয়েছি।’ কেন্দ্রটিতে মুস্তাকিম খান নামে ধানের শীষের একজন পোলিং এজেন্টকে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘কত কষ্টে যে সকাল থেকে এখানে আছি তা বোঝাতে পারব না। এখন আর এসব অন্যায় সহ্য করতে পারছি না। আমি চলে যাব।’ কী অন্যায় হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।