বড় হারের দায় বিএনপির
বিশেষ প্রতিনিধি | ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপি তাদের জোটে মানবতাবিরোধীদের নমিনেশন দিয়েছে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের জন্য জামায়াত ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই দলের ২৫ জনকে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট মনোনয়ন দিয়েছে, এজন্য তাদের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের ব্যাংকুয়েট হলে মতবিনিময় সভায় বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের তিনি এসব কারণ তুলে ধরেন। সভায় বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকরা ঐক্যফ্রন্টের সাতটি আসন পাওয়া এবং নির্বাচন নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে ইসি নির্বাচন বন্ধ করে দিত। বিএনপি জয় পাবে কীভাবে, তাদের মূল লিডাররা দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত এবং আদালতের রায়ে অভিযুক্ত। তাদের একজন কারাগারে ও অন্যজন পলাতক। সুতরাং তাদের মূল নেতৃত্বের অভাব ছিল। পরাজয়ের এটিও একটি কারণ।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ জানেই না বিরোধী দলের নেতা কে, যদিও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বিরোধী ঐক্যজোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দিয়েছেন, যাদের মূল শরিক বিএনপি। তাছাড়া তারা প্রতিটি আসনে টাকার বিনিময়ে চার থেকে পাঁচজন প্রার্থী দিয়েছে। যে কারণে দলের আসল প্রার্থী নিয়ে জনগণের মাঝে সন্দেহ দেখা দেয় এবং তাদের অধিকাংশ প্রার্থীই জনগণের কাছে ছিল অপরিচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিজয়ের আরেকটি প্রধান কারণ ছিল গত ১০ বছরে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন। দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা এবং জনগণের জীবন-মানের উন্নয়ন এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করা। তিনি বলেন, তারা (জনগণ) সরকারের ধারাবাহিকতা চেয়েছিল, উন্নয়ন চেয়েছিল যে কারণে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আমাদের ভোট প্রদান করেছে। তবে আমি সবারই প্রধানমন্ত্রী।
আলজাজিরার এক প্রতিবেদকের প্রশ্ন এবার বিদেশি পর্যবেক্ষক কম এবং ভিসা জটিলতার সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ভিসা জটিলতার কারণ যারা বলেছে, তারা অনেকেই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এজন্য তাদের আসার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়নি। এ সময় আনফ্রেলের নির্বাচন পর্যবেক্ষমূলক প্রতিবেদন নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ওই প্রতিবেদকের আরেক প্রশ্ন সরকারের একচ্ছত্র আধিপত্যে সহিংসতা হবে কি না এবং নতুন সরকার এর কী পরিবর্তন আনবে জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০১ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন জোট বিএনপি-জামায়াত কীভাবে আমাদের ওপর চড়াও হয়েছিল। আমাদের এই বিষয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু আমরা তেমনটা করি না। ক্ষমতাসীন দল কিংবা বিরোধী দল স্বাধীন। বিরোধী দল নির্বাচনে জিততেই পারে। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীরা তাদের কোনোরকম হয়রানি করেনি। বরং বিরোধী দলের হামলায় আমাদের প্রায় ২০ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিরোধী দলকে আমরা নির্বাচনে আনতে অনেক ধরনের চেষ্টা করেছি। তারা অনেক ষড়যন্ত্র করেছে, আমি চড়াও হইনি। কারণ আমরা দেশের উন্নতি চাই। আমরা সহিংসতা ও পেট্রোলবোমার রাজনীতি সমর্থন করব না। আমরা সহিংসতা ঠেকাতে যেকোনো পদক্ষেপ নেব। আমাদের দেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রয়েছে। সবাই রাজনৈতিক চর্চা করবে। নির্বাচনে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল অথচ সাংবাদিকদের জন্য এটা প্রয়োজন এই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ইন্টারনেট বেশি ব্যবহারের কারণে গতি কমে গিয়েছিল।
নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র বলেছেন, অনেক স্থানেই ভোট বানচালের চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা কি আশা করতে পারি, নির্বাচন কমিশন কিংবা সরকার এই ঘটনার তদন্ত করবে? রয়টার্সের সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই তারা করতে পারে। অতীতেও এমন তদন্ত করেছে তারা। তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সংস্থা। রোহিঙ্গা বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি প্রতিবেশী দেশ হিসেবে। মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে যেন তারা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়। তাই আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানাই, সবাই যেন এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পাশে থাকে।
শেয়ার করুন
বিশেষ প্রতিনিধি | ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপি তাদের জোটে মানবতাবিরোধীদের নমিনেশন দিয়েছে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের জন্য জামায়াত ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই দলের ২৫ জনকে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট মনোনয়ন দিয়েছে, এজন্য তাদের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের ব্যাংকুয়েট হলে মতবিনিময় সভায় বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের তিনি এসব কারণ তুলে ধরেন। সভায় বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকরা ঐক্যফ্রন্টের সাতটি আসন পাওয়া এবং নির্বাচন নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে ইসি নির্বাচন বন্ধ করে দিত। বিএনপি জয় পাবে কীভাবে, তাদের মূল লিডাররা দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত এবং আদালতের রায়ে অভিযুক্ত। তাদের একজন কারাগারে ও অন্যজন পলাতক। সুতরাং তাদের মূল নেতৃত্বের অভাব ছিল। পরাজয়ের এটিও একটি কারণ।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ জানেই না বিরোধী দলের নেতা কে, যদিও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বিরোধী ঐক্যজোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দিয়েছেন, যাদের মূল শরিক বিএনপি। তাছাড়া তারা প্রতিটি আসনে টাকার বিনিময়ে চার থেকে পাঁচজন প্রার্থী দিয়েছে। যে কারণে দলের আসল প্রার্থী নিয়ে জনগণের মাঝে সন্দেহ দেখা দেয় এবং তাদের অধিকাংশ প্রার্থীই জনগণের কাছে ছিল অপরিচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিজয়ের আরেকটি প্রধান কারণ ছিল গত ১০ বছরে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন। দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা এবং জনগণের জীবন-মানের উন্নয়ন এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করা। তিনি বলেন, তারা (জনগণ) সরকারের ধারাবাহিকতা চেয়েছিল, উন্নয়ন চেয়েছিল যে কারণে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আমাদের ভোট প্রদান করেছে। তবে আমি সবারই প্রধানমন্ত্রী।
আলজাজিরার এক প্রতিবেদকের প্রশ্ন এবার বিদেশি পর্যবেক্ষক কম এবং ভিসা জটিলতার সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ভিসা জটিলতার কারণ যারা বলেছে, তারা অনেকেই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এজন্য তাদের আসার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়নি। এ সময় আনফ্রেলের নির্বাচন পর্যবেক্ষমূলক প্রতিবেদন নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ওই প্রতিবেদকের আরেক প্রশ্ন সরকারের একচ্ছত্র আধিপত্যে সহিংসতা হবে কি না এবং নতুন সরকার এর কী পরিবর্তন আনবে জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০১ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন জোট বিএনপি-জামায়াত কীভাবে আমাদের ওপর চড়াও হয়েছিল। আমাদের এই বিষয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু আমরা তেমনটা করি না। ক্ষমতাসীন দল কিংবা বিরোধী দল স্বাধীন। বিরোধী দল নির্বাচনে জিততেই পারে। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীরা তাদের কোনোরকম হয়রানি করেনি। বরং বিরোধী দলের হামলায় আমাদের প্রায় ২০ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিরোধী দলকে আমরা নির্বাচনে আনতে অনেক ধরনের চেষ্টা করেছি। তারা অনেক ষড়যন্ত্র করেছে, আমি চড়াও হইনি। কারণ আমরা দেশের উন্নতি চাই। আমরা সহিংসতা ও পেট্রোলবোমার রাজনীতি সমর্থন করব না। আমরা সহিংসতা ঠেকাতে যেকোনো পদক্ষেপ নেব। আমাদের দেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রয়েছে। সবাই রাজনৈতিক চর্চা করবে। নির্বাচনে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল অথচ সাংবাদিকদের জন্য এটা প্রয়োজন এই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ইন্টারনেট বেশি ব্যবহারের কারণে গতি কমে গিয়েছিল।
নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র বলেছেন, অনেক স্থানেই ভোট বানচালের চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা কি আশা করতে পারি, নির্বাচন কমিশন কিংবা সরকার এই ঘটনার তদন্ত করবে? রয়টার্সের সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই তারা করতে পারে। অতীতেও এমন তদন্ত করেছে তারা। তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সংস্থা। রোহিঙ্গা বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি প্রতিবেশী দেশ হিসেবে। মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে যেন তারা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়। তাই আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানাই, সবাই যেন এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পাশে থাকে।