ভোটের রাতে দলবদ্ধ ধর্ষণ
যে বর্ণনা শোনার মতো নয়
মনির চৌধুরী | ২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ভোটের দিন রাতে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার সেই নারী সারা দেহজুড়ে বর্বরতা ও পাশবিকতার চিহ্ন নিয়ে শুয়ে আছেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে। স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে ধর্ষিতার কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ হয়েছে ভারী। চিকিৎসকরা বলছেন, ওই নারীর অবস্থা গুরুতর। ঘটনার প্রায় ৫৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তার রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই ৩৫ বছর বয়সী দুই সন্তানের জননী দেশ রূপান্তরের কাছে তুলে ধরেন বিভীষিকাময় ওই রাতের ঘটনা। বেলা ১২টার দিকে হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ধর্ষিতা, তার স্বামী ও পুত্র-কন্যা। কিছুক্ষণ পর নিজেকে সংবরণ করে সবার সামনেই তুলে ধরেন একদল মানুষরূপী পশুর বর্বরতার ঘটনা। তিনি বলেন, গত রবিবার ধানের শীষে ভোট দেওয়ায় ভোটকেন্দ্রেই দলবল নিয়ে চরজব্বার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন তাকে রাতে দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়। রাতে ঘুমিয়ে পড়ার পর ১০টার দিকে রুহুল আমিন পুলিশ এসেছে বলে তার স্বামীকে ডাক দেয়। দরজা খোলার পর আওয়ামী লীগকর্মী সোহেল, আবু, বেচু, হেঞ্জু, মোশাররফ, সালাউদ্দিন, চৌধুরী, সোহাগ, সোহেল ও আরো কয়েকজন ঘরে ঢুকে তার স্বামী, ছেলে ও মেয়েকে বেঁধে ফেলে।তীব্র ব্যথায় গোঙাতে গোঙাতে ওই নারী বলেন, ‘তার ব্লাউজ ছিঁড়ে মুখ বেঁধে তাকে বাড়ির উঠানে নিয়ে গিয়ে কাপড় খুলে ফেলে তারা। তারপর একে একে সবাই তাকে ধর্ষণ করে। তাদের পাশবিকতা সহ্য করতে না পেরে এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফেরার পর তারা আবার উপর্যুপরি ধর্ষণ করে।’ এই বর্ণনা দিতে দিতেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় পাশে দাঁড়ানো সিনিয়র স্টাফ নার্স (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ২২টি কামড়ের চিহ্ন রয়েছে।
কর্তব্যরত গাইনি চিকিৎসক ও রেজিস্ট্রার ডা. ফাতেমা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ধর্ষিতার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড়ে রক্তাক্ত করে জিঘাংসা চরিতার্থ করা হয়েছে, যা অমানবিক ও পশুত্বের বহির্প্রকাশ। তার শরীরে ভোঁতা অস্ত্রের আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। তার দুটি পা ফুলে যাচ্ছে। ধর্ষণের কারণে শুরু রক্তক্ষরণ ৫৫ ঘণ্টা পরও বন্ধ হচ্ছে না।
এ ঘটনায় গত সোমবার নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করা হয়েছে। এ বিষয়ে ধর্ষিতার স্বামী বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যায় চর জব্বার থানার ওসি (তদন্ত) হাসপাতালে এসে আমাকে চর জব্বার থানায় নিয়ে যান এবং থানায় লেখা এজাহারে আমার সই নিয়ে বলেন, এটাই মামলা। তবে এখন দেখা যাচ্ছে মামলায় রুহুল আমিনের নাম রাখা হয়নি। পুলিশ তাকে ধরলেও পরে ছেড়ে দিয়েছে।’
সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, সন্ত্রাসীরা যে দলেরই হোক তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। তারা যদি আওয়ামী লীগের হয় তদন্ত করে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং পুলিশে সোপর্দ করা হবে।
অনেক চেষ্টা করেও সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে পাওয়া যায়নি। তবে তার নির্বাচন সমন্বয়কারী মো. জাভেদ বলেন, এমপি সাহেব ঘটনা শুনেছেন। তিনি পুলিশকে কোনো ছাড় না দিয়ে আওয়ামী লীগের হলেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার ইলিয়াস শরীফ জানান, ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সবাইকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ধর্ষিতার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
শেয়ার করুন
মনির চৌধুরী | ২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ভোটের দিন রাতে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার সেই নারী সারা দেহজুড়ে বর্বরতা ও পাশবিকতার চিহ্ন নিয়ে শুয়ে আছেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে। স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে ধর্ষিতার কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ হয়েছে ভারী। চিকিৎসকরা বলছেন, ওই নারীর অবস্থা গুরুতর। ঘটনার প্রায় ৫৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তার রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই ৩৫ বছর বয়সী দুই সন্তানের জননী দেশ রূপান্তরের কাছে তুলে ধরেন বিভীষিকাময় ওই রাতের ঘটনা। বেলা ১২টার দিকে হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ধর্ষিতা, তার স্বামী ও পুত্র-কন্যা। কিছুক্ষণ পর নিজেকে সংবরণ করে সবার সামনেই তুলে ধরেন একদল মানুষরূপী পশুর বর্বরতার ঘটনা। তিনি বলেন, গত রবিবার ধানের শীষে ভোট দেওয়ায় ভোটকেন্দ্রেই দলবল নিয়ে চরজব্বার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন তাকে রাতে দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়। রাতে ঘুমিয়ে পড়ার পর ১০টার দিকে রুহুল আমিন পুলিশ এসেছে বলে তার স্বামীকে ডাক দেয়। দরজা খোলার পর আওয়ামী লীগকর্মী সোহেল, আবু, বেচু, হেঞ্জু, মোশাররফ, সালাউদ্দিন, চৌধুরী, সোহাগ, সোহেল ও আরো কয়েকজন ঘরে ঢুকে তার স্বামী, ছেলে ও মেয়েকে বেঁধে ফেলে।তীব্র ব্যথায় গোঙাতে গোঙাতে ওই নারী বলেন, ‘তার ব্লাউজ ছিঁড়ে মুখ বেঁধে তাকে বাড়ির উঠানে নিয়ে গিয়ে কাপড় খুলে ফেলে তারা। তারপর একে একে সবাই তাকে ধর্ষণ করে। তাদের পাশবিকতা সহ্য করতে না পেরে এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফেরার পর তারা আবার উপর্যুপরি ধর্ষণ করে।’ এই বর্ণনা দিতে দিতেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় পাশে দাঁড়ানো সিনিয়র স্টাফ নার্স (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ২২টি কামড়ের চিহ্ন রয়েছে।
কর্তব্যরত গাইনি চিকিৎসক ও রেজিস্ট্রার ডা. ফাতেমা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ধর্ষিতার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড়ে রক্তাক্ত করে জিঘাংসা চরিতার্থ করা হয়েছে, যা অমানবিক ও পশুত্বের বহির্প্রকাশ। তার শরীরে ভোঁতা অস্ত্রের আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। তার দুটি পা ফুলে যাচ্ছে। ধর্ষণের কারণে শুরু রক্তক্ষরণ ৫৫ ঘণ্টা পরও বন্ধ হচ্ছে না।
এ ঘটনায় গত সোমবার নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করা হয়েছে। এ বিষয়ে ধর্ষিতার স্বামী বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যায় চর জব্বার থানার ওসি (তদন্ত) হাসপাতালে এসে আমাকে চর জব্বার থানায় নিয়ে যান এবং থানায় লেখা এজাহারে আমার সই নিয়ে বলেন, এটাই মামলা। তবে এখন দেখা যাচ্ছে মামলায় রুহুল আমিনের নাম রাখা হয়নি। পুলিশ তাকে ধরলেও পরে ছেড়ে দিয়েছে।’
সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, সন্ত্রাসীরা যে দলেরই হোক তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। তারা যদি আওয়ামী লীগের হয় তদন্ত করে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং পুলিশে সোপর্দ করা হবে।
অনেক চেষ্টা করেও সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে পাওয়া যায়নি। তবে তার নির্বাচন সমন্বয়কারী মো. জাভেদ বলেন, এমপি সাহেব ঘটনা শুনেছেন। তিনি পুলিশকে কোনো ছাড় না দিয়ে আওয়ামী লীগের হলেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার ইলিয়াস শরীফ জানান, ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সবাইকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ধর্ষিতার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।