কিউইদের রোমাঞ্চ জয়ের নায়ক উইলিয়ামসন
ক্রীড়া ডেস্ক | ২০ জুন, ২০১৯ ০০:০০
টুর্নামেন্টে টিকে থাকার শেষ সুযোগ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে। কিন্তু পুরনো শত্রুর সঙ্গে পেরে উঠল না। ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপের পর এবারও নিউজিল্যান্ডের কাছেই বিশ্বকাপ-স্বপ্ন প্রায় জলাঞ্জলি দিতে হলো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ৪ উইকেটে হেরে ষষ্ঠ ম্যাচে চতুর্থ হার হজম করল দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ ওভারে ঠান্ডা মাথায় ৬ হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন কেন উইলিয়ামসন। ১৩৮ বলে ১০৬ রানের ইনিংস তার। ইনিংস জুড়েই এক হাতে দলকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন। শেষটাও করলেন একাই।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলে আসরে প্রোটিয়াদের টিকে থাকার সুযোগ ছিল। হারলে রাউন্ড রবিন পর্ব শেষেই বিদায়। ‘মাস্ট উইন’ ম্যাচে নেমে বড় টার্গেট ছুড়তে পারেনি তারা। ৪৯ ওভারে ৬ উইকেটে ২৪১ রান করেছে দলটি। যে লক্ষ্য অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের ব্যাটে চড়ে পার করেছে নিউজিল্যান্ড। অধিনায়কের সঙ্গে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের ৪৭ বলে ৬০ রানের ইনিংসে জয় আরও সহজ হয়। শেষ পর্যন্ত ৪৮.৩ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৪২ রান করে টুর্নামেন্টের চতুর্থ জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড। এ জয়ে ৫ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে কিউইরা। আর ৬ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে আটে দক্ষিণ আফ্রিকা।
১৯৯৯ বিশ্বকাপে এজবাস্টনেই সুপার সিক্সের ম্যাচ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০ বছর পর একই মাঠে একই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি করা হলো না। গত দুই বিশ্বকাপেই নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে থামতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ২০১১ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে আর ২০১৫তে সেমিফাইনাল থেকে। গতকাল আগের দুই আসরের মতো সমীকরণ নিয়ে নেমেছিল ফাফ ডু প্লেসির দল। জিতলে টিকে থাকা, হারলে বিশ্বকাপ-স্বপ্ন শেষ। কিন্তু গত দুইবারের মতো এবারও ভাগ্য সহায় হয়নি প্রোটিয়াদের। ক্যাচ মিস, ফিল্ডিং কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা যেন আবারও মনে করিয়ে দিল কঠিন সময়ে প্রোটিয়াদের ‘চোকার’ হয়ে যাওয়া। নয়তো ইমরান তাহিরের বলে কেন উইলিয়ামসনের ব্যাটে বল নিশ্চিত লাগলেও রিভিউ নিতে ব্যর্থ দক্ষিণ আফ্রিকা। আবার সেই উইলিয়ামসনকেই রান আউট করার দারুণ সুযোগ পেয়েও ব্যর্থতা। আর শেষ দিকে ফেহলুকওয়েও’র বলে ক্যাচ তুললেও তা মিস করেন বাউন্ডারি লাইনে থাকা ফিল্ডার। পরে দেখা যায় তা নো বল। শেষ পর্যন্ত এই উইলিয়ামসনই দক্ষিণ আফ্রিকার হারের কারণ। ভাগ্যপরীক্ষায় আরেকবার হেরে ১২তম বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন প্রায় শেষ হয় দক্ষিণ আফ্রিকার।
ছোট লক্ষ্য হলেও বোলিং ইনিংস ভালো শুরু হয় প্রোটিয়াদের। কলিন মুনরোকে ফিরিয়ে শুভসূচনা করেন রাবাদা। কিন্তু মার্টিন গাপটিলকে (৩৫) নিয়ে উইলিয়ামসন স্বচ্ছন্দে এগিয়ে যেতে থাকেন। তবে ১ উইকেটে ৭২ থেকে মুহূর্তেই ৪ উইকেটে ৮০তে পরিণত হয় নিউজিল্যান্ড। ওই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার আত্মবিশ্বাস আরও জোর পায়। ৩৩তম ওভারে ২৩ রান করা নিশামকে ফিরিয়ে আরও একটু আশা জাগায় প্রোটিয়ারা। কিন্তু ডি গ্র্যান্ডহোম ও উইলিয়ামসন ৯১ রানের জুটিতে নিউজিল্যান্ডকে অনেকটা এগিয়ে দেন। শেষ দিকে শ্বাসরুদ্ধকর রোমাঞ্চ জিতিয়ে দেন কিউই অধিনায়ক।
বার্মিংহামে দিনের শুরুটা ছিল বৃষ্টিতে। বৃষ্টির কারণে দেড় ঘণ্টা পর শুরু হয় ম্যাচ। অবশ্য এতে ক্ষতি খুব একটা হয়নি। দুই দলের ইনিংস থেকে মাত্র ১ ওভার করে কাটা হয়। ৪৯ ওভারের ম্যাচ হলেও বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। আসরে অন্যতম সেরা বোলিং বিভাগের একটি নিউজিল্যান্ড। তাদের বিপক্ষে স্বচ্ছন্দ ব্যাটিং করতে পারেননি প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা। টুর্নামেন্টে ঘণ্টায় ৯০ মাইল বেগে বা তার বেশি গতিতে বল করাদের দুজন আছে কিউই দলে। ম্যাট হেনরি ও লোকি ফার্গুসন। এ ছাড়া ট্রেন্ট বোল্টও গতিতে কম যান না। এমন বোলিং বিভাগের সামনে হাত খুলে খেলাও কঠিন। এই সত্য প্রমাণ করেছেন নিউজিল্যান্ড পেসাররা। হেনরি ১০ ওভারে ২টি মেডেনসহ দিয়েছেন ৩৪ রান। ফার্গুসন ১০ ওভারে ৩ উইকেট নিয়েছেন ৫৯ রানে। এদিন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম নিজের মিডিয়াম পেসকে করেছেন নিখুঁত। তাই ১০ ওভারে ৩৩ রানে পেয়েছেন ১ উইকেট। পাঁচ বোলারের কার্যকরী বোলিংয়ে তাই বড় স্কোর গড়া হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার।
মিডলঅর্ডাররা রান পাওয়ায় লড়াইয়ের পুঁজি গড়তে পেরেছে প্রোটিয়ারা। আমলা ৫৫ রান করেছেন ৮৩ বলে। ধীর গতির ব্যাটিং হলেও ওয়ানডেতে ৮ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি। ১৭৬ ইনিংসে এ উচ্চতায় পৌঁছে বিরাট কোহলির পর ৮ হাজার করা দ্বিতীয় দ্রুততম ব্যাটসম্যান হয়েছেন। এ ছাড়া ডু প্লেসি ২৩, মার্করাম ৩৮ করেন। তবে নিচের দিকে ডুসেন ও মিলার বলের সমান রান না তুললে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আরও কমেই থামতে হতো। ডুসেন ৬৪ বলে ৬৭ করে অপরাজিত ছিলেন। আর মিলার ৩৭ বলে ৩৬ করে আউট হন।
শেয়ার করুন
ক্রীড়া ডেস্ক | ২০ জুন, ২০১৯ ০০:০০

টুর্নামেন্টে টিকে থাকার শেষ সুযোগ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে। কিন্তু পুরনো শত্রুর সঙ্গে পেরে উঠল না। ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপের পর এবারও নিউজিল্যান্ডের কাছেই বিশ্বকাপ-স্বপ্ন প্রায় জলাঞ্জলি দিতে হলো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ৪ উইকেটে হেরে ষষ্ঠ ম্যাচে চতুর্থ হার হজম করল দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ ওভারে ঠান্ডা মাথায় ৬ হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন কেন উইলিয়ামসন। ১৩৮ বলে ১০৬ রানের ইনিংস তার। ইনিংস জুড়েই এক হাতে দলকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন। শেষটাও করলেন একাই।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলে আসরে প্রোটিয়াদের টিকে থাকার সুযোগ ছিল। হারলে রাউন্ড রবিন পর্ব শেষেই বিদায়। ‘মাস্ট উইন’ ম্যাচে নেমে বড় টার্গেট ছুড়তে পারেনি তারা। ৪৯ ওভারে ৬ উইকেটে ২৪১ রান করেছে দলটি। যে লক্ষ্য অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের ব্যাটে চড়ে পার করেছে নিউজিল্যান্ড। অধিনায়কের সঙ্গে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের ৪৭ বলে ৬০ রানের ইনিংসে জয় আরও সহজ হয়। শেষ পর্যন্ত ৪৮.৩ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৪২ রান করে টুর্নামেন্টের চতুর্থ জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড। এ জয়ে ৫ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে কিউইরা। আর ৬ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে আটে দক্ষিণ আফ্রিকা।
১৯৯৯ বিশ্বকাপে এজবাস্টনেই সুপার সিক্সের ম্যাচ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০ বছর পর একই মাঠে একই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি করা হলো না। গত দুই বিশ্বকাপেই নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে থামতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ২০১১ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে আর ২০১৫তে সেমিফাইনাল থেকে। গতকাল আগের দুই আসরের মতো সমীকরণ নিয়ে নেমেছিল ফাফ ডু প্লেসির দল। জিতলে টিকে থাকা, হারলে বিশ্বকাপ-স্বপ্ন শেষ। কিন্তু গত দুইবারের মতো এবারও ভাগ্য সহায় হয়নি প্রোটিয়াদের। ক্যাচ মিস, ফিল্ডিং কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা যেন আবারও মনে করিয়ে দিল কঠিন সময়ে প্রোটিয়াদের ‘চোকার’ হয়ে যাওয়া। নয়তো ইমরান তাহিরের বলে কেন উইলিয়ামসনের ব্যাটে বল নিশ্চিত লাগলেও রিভিউ নিতে ব্যর্থ দক্ষিণ আফ্রিকা। আবার সেই উইলিয়ামসনকেই রান আউট করার দারুণ সুযোগ পেয়েও ব্যর্থতা। আর শেষ দিকে ফেহলুকওয়েও’র বলে ক্যাচ তুললেও তা মিস করেন বাউন্ডারি লাইনে থাকা ফিল্ডার। পরে দেখা যায় তা নো বল। শেষ পর্যন্ত এই উইলিয়ামসনই দক্ষিণ আফ্রিকার হারের কারণ। ভাগ্যপরীক্ষায় আরেকবার হেরে ১২তম বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন প্রায় শেষ হয় দক্ষিণ আফ্রিকার।
ছোট লক্ষ্য হলেও বোলিং ইনিংস ভালো শুরু হয় প্রোটিয়াদের। কলিন মুনরোকে ফিরিয়ে শুভসূচনা করেন রাবাদা। কিন্তু মার্টিন গাপটিলকে (৩৫) নিয়ে উইলিয়ামসন স্বচ্ছন্দে এগিয়ে যেতে থাকেন। তবে ১ উইকেটে ৭২ থেকে মুহূর্তেই ৪ উইকেটে ৮০তে পরিণত হয় নিউজিল্যান্ড। ওই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার আত্মবিশ্বাস আরও জোর পায়। ৩৩তম ওভারে ২৩ রান করা নিশামকে ফিরিয়ে আরও একটু আশা জাগায় প্রোটিয়ারা। কিন্তু ডি গ্র্যান্ডহোম ও উইলিয়ামসন ৯১ রানের জুটিতে নিউজিল্যান্ডকে অনেকটা এগিয়ে দেন। শেষ দিকে শ্বাসরুদ্ধকর রোমাঞ্চ জিতিয়ে দেন কিউই অধিনায়ক।
বার্মিংহামে দিনের শুরুটা ছিল বৃষ্টিতে। বৃষ্টির কারণে দেড় ঘণ্টা পর শুরু হয় ম্যাচ। অবশ্য এতে ক্ষতি খুব একটা হয়নি। দুই দলের ইনিংস থেকে মাত্র ১ ওভার করে কাটা হয়। ৪৯ ওভারের ম্যাচ হলেও বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। আসরে অন্যতম সেরা বোলিং বিভাগের একটি নিউজিল্যান্ড। তাদের বিপক্ষে স্বচ্ছন্দ ব্যাটিং করতে পারেননি প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা। টুর্নামেন্টে ঘণ্টায় ৯০ মাইল বেগে বা তার বেশি গতিতে বল করাদের দুজন আছে কিউই দলে। ম্যাট হেনরি ও লোকি ফার্গুসন। এ ছাড়া ট্রেন্ট বোল্টও গতিতে কম যান না। এমন বোলিং বিভাগের সামনে হাত খুলে খেলাও কঠিন। এই সত্য প্রমাণ করেছেন নিউজিল্যান্ড পেসাররা। হেনরি ১০ ওভারে ২টি মেডেনসহ দিয়েছেন ৩৪ রান। ফার্গুসন ১০ ওভারে ৩ উইকেট নিয়েছেন ৫৯ রানে। এদিন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম নিজের মিডিয়াম পেসকে করেছেন নিখুঁত। তাই ১০ ওভারে ৩৩ রানে পেয়েছেন ১ উইকেট। পাঁচ বোলারের কার্যকরী বোলিংয়ে তাই বড় স্কোর গড়া হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার।
মিডলঅর্ডাররা রান পাওয়ায় লড়াইয়ের পুঁজি গড়তে পেরেছে প্রোটিয়ারা। আমলা ৫৫ রান করেছেন ৮৩ বলে। ধীর গতির ব্যাটিং হলেও ওয়ানডেতে ৮ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি। ১৭৬ ইনিংসে এ উচ্চতায় পৌঁছে বিরাট কোহলির পর ৮ হাজার করা দ্বিতীয় দ্রুততম ব্যাটসম্যান হয়েছেন। এ ছাড়া ডু প্লেসি ২৩, মার্করাম ৩৮ করেন। তবে নিচের দিকে ডুসেন ও মিলার বলের সমান রান না তুললে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আরও কমেই থামতে হতো। ডুসেন ৬৪ বলে ৬৭ করে অপরাজিত ছিলেন। আর মিলার ৩৭ বলে ৩৬ করে আউট হন।