২৭ বছর পর ফাইনালে ইংল্যান্ড
ক্রীড়া ডেস্ক | ১২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০
ইংল্যান্ডের ২৭ বছরের অপেক্ষার অবসান হলো এজবাস্টনে। অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে ইংলিশরা। রবিবার লর্ডসে ফাইনাল। যেখানে ইংলিশদের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। ২৭ বছর আগে, ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের কাছে ফাইনাল হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল, এবার লর্ডসে কি স্বপ্ন পূরণ হবে?
প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে ১৪ জুলাই। সেদিন ক্রিকেটের ভাগ্যদেবতা মুখ তুলে চাইলে ৪৪ বছরের প্রতীক্ষার অবসান হবে। বিশ্বকাপ জিতবে ক্রিকেটের জন্মভূমি। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, আগে তিনবার ফাইনাল খেললেও ট্রফি জিততে পারেননি কোনো ইংলিশ ক্যাপ্টেন। মাইক গ্যাটিং খুব কাছে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ১৯৮৭তে ইডেনে মাত্র ৭ রানে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছিল ইংল্যান্ড। এরপর বিরানব্বই। গ্রাহাম গুচরা ব্যর্থ হয়েছিলেন। এবার মরগানদের সামনে সব ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা সরিয়ে ফেলে গৌরবান্বিত হওয়ার পালা।
এজবাস্টনে গতকাল পাত্তাই পায়নি অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় সেমিফাইনালকে একপক্ষীয় বললে কম বলা হয়। অজিদের দেওয়া ২২৪ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ১০৭ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় স্বাগতিকরা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাথা তুলে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ পায়নি অ্যারন ফিঞ্চরা। জোফরা আর্চারদের পেস আক্রমণে নতজানু হওয়ার পর জেসন রয়দের ঝড়ের মুখে পড়ে অজি বোলাররা। ওপেনিং জুটিতে বিনা উইকেটে ১৭ ওভারে ইংল্যান্ড ১২৪ রান তোলার পরেই ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তা শেষ। এরপর দ্রুত ম্যাচ শেষ করেছেন জো রুট আর অধিনায়ক মরগান। ৬৫ বলে ৮৫ রান করে জেসন রয় ফেরার আগেই মিচেল স্টার্কের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে প্যাভিলিয়নে
ফেরেন জনি বেয়ারস্টো। বাকি পথ নির্বিঘেœ পাড়ি দেন রুট ও মরগান। তৃতীয় উইকেটে ৭৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেন তারা। ৮ উইকেটের দারুণ কর্তৃত্বপূর্ণ জয় থেকেই বোঝা সম্ভব অস্ট্রেলিয়া কতটা অসহায় ছিল।
এই বিশ্বকাপে অনুমান-ভবিষ্যদ্বাণী-অতীত রেকর্ড এসব কিছুই মিলছে না। বলা হয়েছিল দলীয় সংগ্রহ এবার পাঁচশ ছোঁবে। অথচ সিংহভাগ ম্যাচে দেখা গেল বোলারদের দাপট। পাকিস্তানের ১৯৯২ ফিরিয়ে আনার তোড়জোড় বাতাসেই উড়ে গেল। ফেভারিট ভারত সেমিফাইনালে ২৪০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে ব্যর্থ। আর সবশেষ, সেমিফাইনাল হারের রেকর্ডহীন অস্ট্রেলিয়া অসহায়ভাবে পরাজিত হলো। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে গতকাল ৪৯ ওভারে মাত্র ২২৩ রানে অল আউট হয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। টসের পর দুই অধিনায়কের চিন্তা একবিন্দুতে মিলে যায়। দুজনই আগে ব্যাট করতে চেয়েছিলেন। অ্যারন ফিঞ্চ আগে ব্যাট নিতে দ্বিধা করেননি। ইয়ন মরগান এসে বললেন টস জিতলে আমরাও ব্যাট করতাম। প্রথম ইনিংস শেষে মাথায় হাত ফিঞ্চের। অন্যদিকে মুচকি হাসছিলেন মরগান। হতাশার দিনে ওয়ানডেতে প্রথম ১০ ওভারে নিজেদের সর্বনি¤œ রানের রেকর্ড গড়ে অজিরা। ৩ উইকেট হারিয়ে ২৭। সেমিফাইনালের আগ পর্যন্ত দুর্দান্ত খেলে আসা দুই অজি ওপেনার এদিন শুরুতেই বিদায় নেন। দলীয় ৪ রানে ফিঞ্চ আউট হন। অজিদেরও ব্যাটিং বিপর্যয় হয়েছিল ভারতের মতো। হুবহু তেমন না হলেও প্রায় একই রকম। তাতে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় দলটির। আসরে অজিদের দুই সেরা পারফরমার বিদায় নেন শুরুতেই। ফিঞ্চ শূন্য ও ওয়ার্নার ৯ রান করেন। উসমান খাজার বদলে দলে সুযোগ পাওয়া পিটার হ্যান্ডসকম্বও মাত্র ৪ রানে আউট। ওই সময়ে উইকেটে ছিলেন স্টিভেন স্মিথ। গত তিন ম্যাচে ব্যর্থ সাবেক অধিনায়কের কাছে বড় স্কোর দরকার ছিল। অ্যালেক্স ক্যারিকে সঙ্গে নিয়ে দলের প্রয়োজন মিটিয়েছেন তিনি। দুজনে গড়েন ১০৩ রানের জুটি। তাতে লড়াইয়ের পুঁজি পায় অস্ট্রেলিয়া। ৪৬ রানে ক্যারির বিদায়ে জুটি ভাঙে। এদিকে স্মিথ করেন ১১৯ বলে ৮৫। পরে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ২২ ও মিচেল স্টার্কের ২৯ রানে দুইশ অতিক্রম করে অস্ট্রেলিয়া।
এর আগে তিনবার ২২৩-এর কমে গুটিয়ে গেলেও ম্যাচ জিতেছিল তারা। ১৯৯৬-তে ২০৭ রানে আটকে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২০২ রানে অল আউট করে দেয়। ১৯৯৯ সালে ২১৩ করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১৩ রানে বেঁধে ফেলে। গ্রুপ পর্বে রানরেটে এগিয়ে থাকায় ফাইনালে চলে যায় অজিরা। ২০০৩ সালে ২১২ রান করে শ্রীলঙ্কাকে বৃষ্টি আইনে হারিয়ে দেয়। এবারও তাই আশা ছিল। কিন্তু ইংল্যান্ডের ওপেনিং জুটি ১৭ ওভারের মধ্যে সেই আশার সমাধি রচনা করে।
শেয়ার করুন
ক্রীড়া ডেস্ক | ১২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০

ইংল্যান্ডের ২৭ বছরের অপেক্ষার অবসান হলো এজবাস্টনে। অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে ইংলিশরা। রবিবার লর্ডসে ফাইনাল। যেখানে ইংলিশদের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। ২৭ বছর আগে, ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের কাছে ফাইনাল হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল, এবার লর্ডসে কি স্বপ্ন পূরণ হবে?
প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে ১৪ জুলাই। সেদিন ক্রিকেটের ভাগ্যদেবতা মুখ তুলে চাইলে ৪৪ বছরের প্রতীক্ষার অবসান হবে। বিশ্বকাপ জিতবে ক্রিকেটের জন্মভূমি। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, আগে তিনবার ফাইনাল খেললেও ট্রফি জিততে পারেননি কোনো ইংলিশ ক্যাপ্টেন। মাইক গ্যাটিং খুব কাছে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ১৯৮৭তে ইডেনে মাত্র ৭ রানে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছিল ইংল্যান্ড। এরপর বিরানব্বই। গ্রাহাম গুচরা ব্যর্থ হয়েছিলেন। এবার মরগানদের সামনে সব ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা সরিয়ে ফেলে গৌরবান্বিত হওয়ার পালা।
এজবাস্টনে গতকাল পাত্তাই পায়নি অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় সেমিফাইনালকে একপক্ষীয় বললে কম বলা হয়। অজিদের দেওয়া ২২৪ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ১০৭ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় স্বাগতিকরা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাথা তুলে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ পায়নি অ্যারন ফিঞ্চরা। জোফরা আর্চারদের পেস আক্রমণে নতজানু হওয়ার পর জেসন রয়দের ঝড়ের মুখে পড়ে অজি বোলাররা। ওপেনিং জুটিতে বিনা উইকেটে ১৭ ওভারে ইংল্যান্ড ১২৪ রান তোলার পরেই ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তা শেষ। এরপর দ্রুত ম্যাচ শেষ করেছেন জো রুট আর অধিনায়ক মরগান। ৬৫ বলে ৮৫ রান করে জেসন রয় ফেরার আগেই মিচেল স্টার্কের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে প্যাভিলিয়নে
ফেরেন জনি বেয়ারস্টো। বাকি পথ নির্বিঘেœ পাড়ি দেন রুট ও মরগান। তৃতীয় উইকেটে ৭৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেন তারা। ৮ উইকেটের দারুণ কর্তৃত্বপূর্ণ জয় থেকেই বোঝা সম্ভব অস্ট্রেলিয়া কতটা অসহায় ছিল।
এই বিশ্বকাপে অনুমান-ভবিষ্যদ্বাণী-অতীত রেকর্ড এসব কিছুই মিলছে না। বলা হয়েছিল দলীয় সংগ্রহ এবার পাঁচশ ছোঁবে। অথচ সিংহভাগ ম্যাচে দেখা গেল বোলারদের দাপট। পাকিস্তানের ১৯৯২ ফিরিয়ে আনার তোড়জোড় বাতাসেই উড়ে গেল। ফেভারিট ভারত সেমিফাইনালে ২৪০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে ব্যর্থ। আর সবশেষ, সেমিফাইনাল হারের রেকর্ডহীন অস্ট্রেলিয়া অসহায়ভাবে পরাজিত হলো। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে গতকাল ৪৯ ওভারে মাত্র ২২৩ রানে অল আউট হয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। টসের পর দুই অধিনায়কের চিন্তা একবিন্দুতে মিলে যায়। দুজনই আগে ব্যাট করতে চেয়েছিলেন। অ্যারন ফিঞ্চ আগে ব্যাট নিতে দ্বিধা করেননি। ইয়ন মরগান এসে বললেন টস জিতলে আমরাও ব্যাট করতাম। প্রথম ইনিংস শেষে মাথায় হাত ফিঞ্চের। অন্যদিকে মুচকি হাসছিলেন মরগান। হতাশার দিনে ওয়ানডেতে প্রথম ১০ ওভারে নিজেদের সর্বনি¤œ রানের রেকর্ড গড়ে অজিরা। ৩ উইকেট হারিয়ে ২৭। সেমিফাইনালের আগ পর্যন্ত দুর্দান্ত খেলে আসা দুই অজি ওপেনার এদিন শুরুতেই বিদায় নেন। দলীয় ৪ রানে ফিঞ্চ আউট হন। অজিদেরও ব্যাটিং বিপর্যয় হয়েছিল ভারতের মতো। হুবহু তেমন না হলেও প্রায় একই রকম। তাতে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় দলটির। আসরে অজিদের দুই সেরা পারফরমার বিদায় নেন শুরুতেই। ফিঞ্চ শূন্য ও ওয়ার্নার ৯ রান করেন। উসমান খাজার বদলে দলে সুযোগ পাওয়া পিটার হ্যান্ডসকম্বও মাত্র ৪ রানে আউট। ওই সময়ে উইকেটে ছিলেন স্টিভেন স্মিথ। গত তিন ম্যাচে ব্যর্থ সাবেক অধিনায়কের কাছে বড় স্কোর দরকার ছিল। অ্যালেক্স ক্যারিকে সঙ্গে নিয়ে দলের প্রয়োজন মিটিয়েছেন তিনি। দুজনে গড়েন ১০৩ রানের জুটি। তাতে লড়াইয়ের পুঁজি পায় অস্ট্রেলিয়া। ৪৬ রানে ক্যারির বিদায়ে জুটি ভাঙে। এদিকে স্মিথ করেন ১১৯ বলে ৮৫। পরে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ২২ ও মিচেল স্টার্কের ২৯ রানে দুইশ অতিক্রম করে অস্ট্রেলিয়া।
এর আগে তিনবার ২২৩-এর কমে গুটিয়ে গেলেও ম্যাচ জিতেছিল তারা। ১৯৯৬-তে ২০৭ রানে আটকে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২০২ রানে অল আউট করে দেয়। ১৯৯৯ সালে ২১৩ করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১৩ রানে বেঁধে ফেলে। গ্রুপ পর্বে রানরেটে এগিয়ে থাকায় ফাইনালে চলে যায় অজিরা। ২০০৩ সালে ২১২ রান করে শ্রীলঙ্কাকে বৃষ্টি আইনে হারিয়ে দেয়। এবারও তাই আশা ছিল। কিন্তু ইংল্যান্ডের ওপেনিং জুটি ১৭ ওভারের মধ্যে সেই আশার সমাধি রচনা করে।