উত্তর-পশ্চিমে দুঃস্বপ্নের সড়কযাত্রা
রূপান্তর ডেস্ক | ১১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০
মহাসড়ক, সেতুর টোলপ্লাজা ও বিভিন্ন নৌঘাটে নজিরবিহীন যানজটের কারণে ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের দীর্ঘ সময় কাটছে পথেই। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সময় লাগছে গন্তব্যে পৌঁছাতে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিন ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে লাগছে ১৫
বেশি সময়। বিশেষ করে ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলগামী মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের পথে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের অসহনীয় যানজট, শিমুলিয়া, পাটুরিয়া, আরিচা ঘাটে দীর্ঘ হচ্ছে পারাপারের অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের দীর্ঘ সারি। অসহনীয় গরম, খাওয়ার ও টয়লেটের সমস্যার পাশাপাশি ঘুমের অভাবে অসুস্থ্ হয়ে পড়ছে দূরপাল্লার ফেরি পারাপারে অপেক্ষমাণ বাসযাত্রীরা। লঞ্চ পারাপারের যাত্রীদের হাঁটতে হচ্ছে দীর্ঘ পথ। ঈদযাত্রায় সড়কের এমন পরিস্থিতিতে গতকাল ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুরে উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তবে যাত্রীদের এমন দুর্ভোগকে ঈদ আনন্দ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
দেশ রূপান্তরের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত- গতকাল রাজধানীর কয়েকটি দূরপাল্লার টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় গত কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় বাসে ব্যাপক শিডিউল বিপর্যয় চলছে। ঘরে ফেরার অপেক্ষায় যাত্রীরা সকাল থেকে টার্মিনালে বসে থাকলেও সকাল ৭টার গাড়ি বিকেল ৩টায়ও পাননি। দেশের সবচেয়ে বড় বাস টার্মিনাল গাবতলীতে মানুষ, গরু আর গাড়িতে একাকার হয়ে গেছে। পরিবহন সংকটে মানুষের দুর্ভোগ রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ঢাকার অভ্যন্তরে যাত্রীসেবাদাতা বাসগুলো দূরপাল্লায় রিজার্ভে চলে যাওয়ায় ব্যাপক পরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ১০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। গাবতলী থেকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটের নিয়মিত ভাড়া ৯০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। এরপরও গাড়ি পাচ্ছেন না যাত্রীরা। মাঝে মাঝে দু-একটি গাড়ির দেখা পেলে মুহূর্তেই ভরে যাচ্ছে গাড়ি। অনেকে ভেতরে আসন না পেয়ে ছাদেও উঠে যাত্রা শুরু করছেন। আবার গরুবাহী ট্রাকে করেও মানুষকে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে।
গাবতলীর হানিফ কাউন্টারে স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে নিয়ে বসে ছিলেন পঞ্চগড়ের আকরাম হোসেন। তিনি জানান, সকাল সাড়ে ৭টায় তার গাড়ি ছাড়া কথা ছিল কিন্তু দুপুর ২টায়ও সে গাড়ি এসে পৌঁছায়নি। প্রচণ্ড গরমে তার শিশুপুত্রের অবস্থা কাহিল। হানিফ পরিবহনের নীলফামারী রুটে চলা একটি বাসের কন্ডাক্টর মোহাম্মদ আলামিন বলেন, সকাল ৮টায় আমার গাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু দুপুরে ফোন দিয়ে শুনেছি গাড়ি এখনো যমুনা ব্রিজ পার হতে পারেনি। ৫টার আগে আসতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।
বঙ্গবন্ধু সেতু দুই প্রান্তে ৭০ কিলোমিটার জট
দেশ রূপান্তরের একজন নিজস্ব প্রতিবেদক ও টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের প্রায় ৪৫ কিলোমিটার অংশে থেমে থেমে চলছে গাড়ি। মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে অন্তত ৭০ কিলোমিটার রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে আছে গাড়ি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, টানা ৮/১০ ঘণ্টার বেশি যানজটে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পথিমধ্যে টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় নারী যাত্রীদের চরম বেগ পেতে হচ্ছে। সুমন মণ্ডল নামে দিনাজপুরের একজন যাত্রী দেশ রূপান্তরকে জানান, শুক্রবার রাত ১০টায় গাবতলীতে গাড়িতে উঠে বিকেল ৪টায় এলেঙ্গা পার হতে পারেননি। তিনি বলেন, যা অবস্থা হয়েছে ঈদ রাস্তাতেই করতে হবে।
টাঙ্গাইলে নজিরবিহীন যানজট সৃষ্টির পেছনে সেতুর পশ্চিম অংশে সিরাজগঞ্জ হাটিকুমরুল মোড় পর্যন্ত গাড়ি টানতে না পারাকে দায়ী করেছে জেলা পুলিশ। টাঙ্গাইল জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক নাসির রোকন বলেন, সেতু হয়ে উত্তরবঙ্গের দিকে সড়কের ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত গাড়ি চলাচল করছে। বেশি গাড়ির চাপে সিরাজগঞ্জ অংশে গাড়ি টানতে পারছে না। এ পর্যন্ত ৮বার সেতু বন্ধ করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, অতিরিক্ত চাপে ঢাকা-বগুড়া ও ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের হাটিকুমরুল-বনপাড়া অংশে গাড়ি ধীরে চলছে। বগুড়া মহাসড়কের নলকা ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এখানে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। ২ কিলোমিটার সড়ক পার হতেই ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে। যানজটে অতিষ্ঠ যাত্রীরা শনিবার দুপুরে টাঙ্গাইলে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে বলে জানিয়েছেন গাইবান্ধাগামী মিটল পরিবহনের যাত্রীরা।
তবে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ সংখ্যক যানবাহন পারাপার হয়েছে বলে জানিয়েছে সেতু কর্র্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ সেতু কর্র্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির দেশ রূপান্তরকে জানান, গতকাল (শুক্রবার) ভোর থেকে আজ (শনিবার) ভোর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ হাজার ৩৩৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
ফেরিঘাটে দীর্ঘজট
দেশ রূপান্তরের মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রবেশ পথ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে কয়েকশ ছোট-বড় গাড়ি নদী পারের অপেক্ষায় রয়েছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার সড়কজুড়ে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। শনিবার সকাল থেকে জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া অন্যান্য ট্রাক পারাপার বন্ধ রয়েছে। পারাপারের জন্য ৫ ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। এতে যাত্রী দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। আরিচাঘাটেও একই অবস্থা। মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে পাটুরিয়াঘাট এলাকায় ২০টি অস্থায়ী শৌচাগার ও কয়েকটি টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। দেশের আরেক ফেরিঘাট মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী ঘাটেও যানজট দেখা দিয়েছে। মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শিমুলিয়া অংশে ৩ শতাধিক গাড়ি নদী পারের অপেক্ষায় রয়েছে।
পশুর ট্রাকে মানুষ
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়ক ঈদযাত্রায় ভয়াবহ ভোগান্তির আশঙ্কা থাকলেও গতকাল শনিবার তেমন যানজট চোখে পড়েনি। গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, শিল্পকারখানা অধ্যুষিত গাজীপুর থেকে বিপুল সংখ্যক পোশাককর্মী ও নি¤œ আয়ের মানুষ দুর্ভোগ ছাড়াই নগরী ছেড়েছেন। রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় গরু নিয়ে আসা ট্রাকে করে বাড়ির পথ ধরেন নি¤œ আয়ের মানুষ। ট্রাকের যাত্রী শারমিন আক্তার বলেন, বাসের চেয়ে ট্রাকের ভাড়া কম হওয়ায় স্বামী-স্ত্রী মিলে গ্রামের বাড়ি নওগাঁর পথ ধরেছেন ট্রাকে।
তুলনামূলক ভালো দুই মহাসড়ক
দেশের লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দি অংশে গত শুক্রবার হাল্কা যানজট সৃষ্টি হলেও গতকাল শনিবার যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। একই অবস্থা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও। সামান্য কিছু সমস্যা ছাড়া এ দুই মহাসড়কের যাত্রীরা নির্বিঘেœ বাড়ি ফিরছেন।
দুর্ভোগকে ঈদ আনন্দ বললেন মন্ত্রী
এদিকে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদের এমন দুর্ভোগকে ঈদ আনন্দ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল শনিবার রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, আজ রাস্তার কোথাও দুর্ভোগ আছে এমন কোনো ইনফরমেশন আমি পাইনি। টাঙ্গাইলের রাস্তায় গাড়ির ধীরগতি আছে। কিন্তু যানজটের কোনো খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের মানুষ ঈদযাত্রার দুর্ভোগকে দুর্ভোগ হিসেবে মনে করে না। এটা তারা ঈদ আনন্দের অংশ হিসেবে মনে করে।
শেয়ার করুন
রূপান্তর ডেস্ক | ১১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০

মহাসড়ক, সেতুর টোলপ্লাজা ও বিভিন্ন নৌঘাটে নজিরবিহীন যানজটের কারণে ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের দীর্ঘ সময় কাটছে পথেই। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সময় লাগছে গন্তব্যে পৌঁছাতে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিন ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে লাগছে ১৫
বেশি সময়। বিশেষ করে ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলগামী মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের পথে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের অসহনীয় যানজট, শিমুলিয়া, পাটুরিয়া, আরিচা ঘাটে দীর্ঘ হচ্ছে পারাপারের অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের দীর্ঘ সারি। অসহনীয় গরম, খাওয়ার ও টয়লেটের সমস্যার পাশাপাশি ঘুমের অভাবে অসুস্থ্ হয়ে পড়ছে দূরপাল্লার ফেরি পারাপারে অপেক্ষমাণ বাসযাত্রীরা। লঞ্চ পারাপারের যাত্রীদের হাঁটতে হচ্ছে দীর্ঘ পথ। ঈদযাত্রায় সড়কের এমন পরিস্থিতিতে গতকাল ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুরে উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তবে যাত্রীদের এমন দুর্ভোগকে ঈদ আনন্দ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
দেশ রূপান্তরের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত- গতকাল রাজধানীর কয়েকটি দূরপাল্লার টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় গত কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় বাসে ব্যাপক শিডিউল বিপর্যয় চলছে। ঘরে ফেরার অপেক্ষায় যাত্রীরা সকাল থেকে টার্মিনালে বসে থাকলেও সকাল ৭টার গাড়ি বিকেল ৩টায়ও পাননি। দেশের সবচেয়ে বড় বাস টার্মিনাল গাবতলীতে মানুষ, গরু আর গাড়িতে একাকার হয়ে গেছে। পরিবহন সংকটে মানুষের দুর্ভোগ রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ঢাকার অভ্যন্তরে যাত্রীসেবাদাতা বাসগুলো দূরপাল্লায় রিজার্ভে চলে যাওয়ায় ব্যাপক পরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ১০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। গাবতলী থেকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটের নিয়মিত ভাড়া ৯০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। এরপরও গাড়ি পাচ্ছেন না যাত্রীরা। মাঝে মাঝে দু-একটি গাড়ির দেখা পেলে মুহূর্তেই ভরে যাচ্ছে গাড়ি। অনেকে ভেতরে আসন না পেয়ে ছাদেও উঠে যাত্রা শুরু করছেন। আবার গরুবাহী ট্রাকে করেও মানুষকে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে।
গাবতলীর হানিফ কাউন্টারে স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে নিয়ে বসে ছিলেন পঞ্চগড়ের আকরাম হোসেন। তিনি জানান, সকাল সাড়ে ৭টায় তার গাড়ি ছাড়া কথা ছিল কিন্তু দুপুর ২টায়ও সে গাড়ি এসে পৌঁছায়নি। প্রচণ্ড গরমে তার শিশুপুত্রের অবস্থা কাহিল। হানিফ পরিবহনের নীলফামারী রুটে চলা একটি বাসের কন্ডাক্টর মোহাম্মদ আলামিন বলেন, সকাল ৮টায় আমার গাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু দুপুরে ফোন দিয়ে শুনেছি গাড়ি এখনো যমুনা ব্রিজ পার হতে পারেনি। ৫টার আগে আসতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।
বঙ্গবন্ধু সেতু দুই প্রান্তে ৭০ কিলোমিটার জট
দেশ রূপান্তরের একজন নিজস্ব প্রতিবেদক ও টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের প্রায় ৪৫ কিলোমিটার অংশে থেমে থেমে চলছে গাড়ি। মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে অন্তত ৭০ কিলোমিটার রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে আছে গাড়ি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, টানা ৮/১০ ঘণ্টার বেশি যানজটে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পথিমধ্যে টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় নারী যাত্রীদের চরম বেগ পেতে হচ্ছে। সুমন মণ্ডল নামে দিনাজপুরের একজন যাত্রী দেশ রূপান্তরকে জানান, শুক্রবার রাত ১০টায় গাবতলীতে গাড়িতে উঠে বিকেল ৪টায় এলেঙ্গা পার হতে পারেননি। তিনি বলেন, যা অবস্থা হয়েছে ঈদ রাস্তাতেই করতে হবে।
টাঙ্গাইলে নজিরবিহীন যানজট সৃষ্টির পেছনে সেতুর পশ্চিম অংশে সিরাজগঞ্জ হাটিকুমরুল মোড় পর্যন্ত গাড়ি টানতে না পারাকে দায়ী করেছে জেলা পুলিশ। টাঙ্গাইল জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক নাসির রোকন বলেন, সেতু হয়ে উত্তরবঙ্গের দিকে সড়কের ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত গাড়ি চলাচল করছে। বেশি গাড়ির চাপে সিরাজগঞ্জ অংশে গাড়ি টানতে পারছে না। এ পর্যন্ত ৮বার সেতু বন্ধ করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, অতিরিক্ত চাপে ঢাকা-বগুড়া ও ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের হাটিকুমরুল-বনপাড়া অংশে গাড়ি ধীরে চলছে। বগুড়া মহাসড়কের নলকা ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এখানে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। ২ কিলোমিটার সড়ক পার হতেই ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে। যানজটে অতিষ্ঠ যাত্রীরা শনিবার দুপুরে টাঙ্গাইলে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে বলে জানিয়েছেন গাইবান্ধাগামী মিটল পরিবহনের যাত্রীরা।
তবে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ সংখ্যক যানবাহন পারাপার হয়েছে বলে জানিয়েছে সেতু কর্র্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ সেতু কর্র্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির দেশ রূপান্তরকে জানান, গতকাল (শুক্রবার) ভোর থেকে আজ (শনিবার) ভোর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ হাজার ৩৩৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
ফেরিঘাটে দীর্ঘজট
দেশ রূপান্তরের মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রবেশ পথ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে কয়েকশ ছোট-বড় গাড়ি নদী পারের অপেক্ষায় রয়েছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার সড়কজুড়ে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। শনিবার সকাল থেকে জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া অন্যান্য ট্রাক পারাপার বন্ধ রয়েছে। পারাপারের জন্য ৫ ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। এতে যাত্রী দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। আরিচাঘাটেও একই অবস্থা। মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে পাটুরিয়াঘাট এলাকায় ২০টি অস্থায়ী শৌচাগার ও কয়েকটি টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। দেশের আরেক ফেরিঘাট মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী ঘাটেও যানজট দেখা দিয়েছে। মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শিমুলিয়া অংশে ৩ শতাধিক গাড়ি নদী পারের অপেক্ষায় রয়েছে।
পশুর ট্রাকে মানুষ
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়ক ঈদযাত্রায় ভয়াবহ ভোগান্তির আশঙ্কা থাকলেও গতকাল শনিবার তেমন যানজট চোখে পড়েনি। গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, শিল্পকারখানা অধ্যুষিত গাজীপুর থেকে বিপুল সংখ্যক পোশাককর্মী ও নি¤œ আয়ের মানুষ দুর্ভোগ ছাড়াই নগরী ছেড়েছেন। রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় গরু নিয়ে আসা ট্রাকে করে বাড়ির পথ ধরেন নি¤œ আয়ের মানুষ। ট্রাকের যাত্রী শারমিন আক্তার বলেন, বাসের চেয়ে ট্রাকের ভাড়া কম হওয়ায় স্বামী-স্ত্রী মিলে গ্রামের বাড়ি নওগাঁর পথ ধরেছেন ট্রাকে।
তুলনামূলক ভালো দুই মহাসড়ক
দেশের লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দি অংশে গত শুক্রবার হাল্কা যানজট সৃষ্টি হলেও গতকাল শনিবার যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। একই অবস্থা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও। সামান্য কিছু সমস্যা ছাড়া এ দুই মহাসড়কের যাত্রীরা নির্বিঘেœ বাড়ি ফিরছেন।
দুর্ভোগকে ঈদ আনন্দ বললেন মন্ত্রী
এদিকে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদের এমন দুর্ভোগকে ঈদ আনন্দ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল শনিবার রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, আজ রাস্তার কোথাও দুর্ভোগ আছে এমন কোনো ইনফরমেশন আমি পাইনি। টাঙ্গাইলের রাস্তায় গাড়ির ধীরগতি আছে। কিন্তু যানজটের কোনো খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের মানুষ ঈদযাত্রার দুর্ভোগকে দুর্ভোগ হিসেবে মনে করে না। এটা তারা ঈদ আনন্দের অংশ হিসেবে মনে করে।