৬ খুনি এখনো অধরা
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৫ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০
অধরাই থাকছে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় খুনি। রায় ঘোষণার প্রায় ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও বিদেশে আত্মগোপনে থাকা খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের মধ্যে নূর চৌধুরী কানাডায় ও চৌধুরী এ এম রাশেদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকি চারজন কোন দেশে অবস্থান করছেন তা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেনি সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে ওই চার খুনি চীন, যুক্তরাজ্য, কেনিয়া, লিবিয়া, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, পোল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড,পাকিস্তান ও ভারতে অবস্থান করতে পারেন বলে পুলিশ সদর দপ্তরের ইন্টারপোল শাখার সূত্রে জানা গেছে। তাদের ধরতে ইন্টারপোল রেড নোটিস জারিও অব্যাহত রেখেছে।
২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে কারাগারে থাকা পাঁচ খুনির ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয়েছে। তারা হলেন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর এ কে বজলুল হুদা ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন। বাকি সাতজনের মধ্যে আজিজ পাশা জিম্বাবুয়েতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় ২০০১ সালের ২ জুন মারা যান বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়। জীবিত ছয়জনের মধ্যে চৌধুরী এ এম রাশেদ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৬ সালে জেদ্দায় কূটনৈতিক পদে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার তাকে দেশে ফেরত আসার নির্দেশ দিলে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেন চৌধুরী এ এম রাশেদ। আরেক খুনি নূর চৌধুরী ১৯৭৬ সালে ব্রাসিলিয়ায় কূটনৈতিক জীবন শুরু করেন। আওয়ামী লীগ সরকার তাকেও ফেরত আসার নির্দেশ দিলে নূর চৌধুরী আশ্রয় নেন কানাডায়। তাকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার কথা জানা যায় মাঝেমধ্যেই। শরিফুল হক ডালিমকে ১৯৭৬ সালে কূটনীতিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় পেইচিংয়ে। ১৯৮৮ সালে পদায়ন করা হয় কেনিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসেবে। খুনি শরিফুল হক ডালিম, খন্দকার আবদুর রশিদ, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেই কারোর। তবে আবদুল মাজেদ ও মোসলেহ উদ্দিন ভারতে থাকতে পারেন এমন তথ্যের ভিত্তিতে আগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বৈঠকে তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নয়াদিল্লির কাছে তুলেছিল ঢাকা। নয়াদিল্লি এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চাইলে ঢাকা দিতে পারেনি। আবার মোসলেহ উদ্দিন জার্মানিতে থাকতে পারেনÑ এমন তথ্যের ভিত্তিতে সরকার যোগাযোগ করলে ওই দেশটি বাংলাদেশের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়েছে। খন্দকার আবদুর রশীদকে পাকিস্তানে দেখা গেছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে পাকিস্তান সরকারকে একটি নোট ভারবাল দেয় বাংলাদেশ। তবে, দেশটির পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদ মর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সরকারের আপত্তি না থাকলেও সেখান থেকে পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতাই এখন বড় বাধা। তবে সরকারের নানা উদ্যোগে এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনে জটিলতা নেই কিন্তু কানাডায় যেটি আছে, তা হচ্ছে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত কোনো আসামিকে তারা ফেরত পাঠায় না। কয়েক বছর আগেও খুনি রশিদ ও ডালিমের লিবিয়া ও পাকিস্তানে আনাগোনা ছিল। খুনি রশিদ ছিলেন লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির আশ্রয়ে। লিবিয়ার বেনগাজিতে গাদ্দাফি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ব্যবসা ছিল তার। কিন্তু লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ ও গাদ্দাফির পতনের পর খুনি রশিদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৫ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০

অধরাই থাকছে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় খুনি। রায় ঘোষণার প্রায় ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও বিদেশে আত্মগোপনে থাকা খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের মধ্যে নূর চৌধুরী কানাডায় ও চৌধুরী এ এম রাশেদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকি চারজন কোন দেশে অবস্থান করছেন তা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেনি সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে ওই চার খুনি চীন, যুক্তরাজ্য, কেনিয়া, লিবিয়া, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, পোল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড,পাকিস্তান ও ভারতে অবস্থান করতে পারেন বলে পুলিশ সদর দপ্তরের ইন্টারপোল শাখার সূত্রে জানা গেছে। তাদের ধরতে ইন্টারপোল রেড নোটিস জারিও অব্যাহত রেখেছে।
২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে কারাগারে থাকা পাঁচ খুনির ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয়েছে। তারা হলেন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর এ কে বজলুল হুদা ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন। বাকি সাতজনের মধ্যে আজিজ পাশা জিম্বাবুয়েতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় ২০০১ সালের ২ জুন মারা যান বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়। জীবিত ছয়জনের মধ্যে চৌধুরী এ এম রাশেদ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৬ সালে জেদ্দায় কূটনৈতিক পদে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার তাকে দেশে ফেরত আসার নির্দেশ দিলে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেন চৌধুরী এ এম রাশেদ। আরেক খুনি নূর চৌধুরী ১৯৭৬ সালে ব্রাসিলিয়ায় কূটনৈতিক জীবন শুরু করেন। আওয়ামী লীগ সরকার তাকেও ফেরত আসার নির্দেশ দিলে নূর চৌধুরী আশ্রয় নেন কানাডায়। তাকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার কথা জানা যায় মাঝেমধ্যেই। শরিফুল হক ডালিমকে ১৯৭৬ সালে কূটনীতিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় পেইচিংয়ে। ১৯৮৮ সালে পদায়ন করা হয় কেনিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসেবে। খুনি শরিফুল হক ডালিম, খন্দকার আবদুর রশিদ, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেই কারোর। তবে আবদুল মাজেদ ও মোসলেহ উদ্দিন ভারতে থাকতে পারেন এমন তথ্যের ভিত্তিতে আগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বৈঠকে তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নয়াদিল্লির কাছে তুলেছিল ঢাকা। নয়াদিল্লি এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চাইলে ঢাকা দিতে পারেনি। আবার মোসলেহ উদ্দিন জার্মানিতে থাকতে পারেনÑ এমন তথ্যের ভিত্তিতে সরকার যোগাযোগ করলে ওই দেশটি বাংলাদেশের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়েছে। খন্দকার আবদুর রশীদকে পাকিস্তানে দেখা গেছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে পাকিস্তান সরকারকে একটি নোট ভারবাল দেয় বাংলাদেশ। তবে, দেশটির পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদ মর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সরকারের আপত্তি না থাকলেও সেখান থেকে পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতাই এখন বড় বাধা। তবে সরকারের নানা উদ্যোগে এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনে জটিলতা নেই কিন্তু কানাডায় যেটি আছে, তা হচ্ছে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত কোনো আসামিকে তারা ফেরত পাঠায় না। কয়েক বছর আগেও খুনি রশিদ ও ডালিমের লিবিয়া ও পাকিস্তানে আনাগোনা ছিল। খুনি রশিদ ছিলেন লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির আশ্রয়ে। লিবিয়ার বেনগাজিতে গাদ্দাফি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ব্যবসা ছিল তার। কিন্তু লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ ও গাদ্দাফির পতনের পর খুনি রশিদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।