যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা
বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ বন্ধের পথে
পঞ্চগড় প্রতিনিধি | ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করার পর একটি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের নির্মাণকাজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় শালবাহান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম ও তার কয়েকজন অনুসারীর বিরুদ্ধে গত ১৫ সেপ্টেম্বর সিমপা পাওয়ার প্লান্ট নামে ওই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের পক্ষে তেঁতুলিয়া থানায় এ মামলা হয়। তবে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা বলছেন, নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে মালামাল সরবরাহের পাওনা টাকার ব্যাপারে তাগাদা দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে।
সিমপা পাওয়ার প্লান্ট কর্র্তৃপক্ষের দাবি, মামলার পর আসামিদের হুমকির মুখে প্রতিষ্ঠানটির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের বাইরে বের হতে পারছেন না। নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছেন সেখানে কর্মরত বিদেশি প্রকৌশলীরাও। গতকাল শুক্রবার দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক সাজ্জাদ হোসেন সাংবাদিকদের কাছে এসব অভিযোগ করেন।
সিমপা পাওয়ার প্লান্টের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, শালবাহান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম ইউপি ট্যাক্সের নাম করে মাঝিপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত প্যারাগন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাকুয়া বিল্ডার্সের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা নিয়ে আসছেন। সম্প্রতি প্যারাগন গ্রুপ সেখানে সিমপা পাওয়ার প্লান্ট নামে একটি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজে হাত দেয়। এই কেন্দ্রে ১০ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা তেঁতুলিয়া উপজেলায় সরবরাহ করার কথা রয়েছে। যুবলীগ নেতা আশরাফুল গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা প্রহরীদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দিলে কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। পরে ওই রাতেই স্থানীয় ডাহুক ব্রিজের সামনে চাঁদার দাবিতে প্যারাগন গ্রুপের মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মুরগি বহনকারী একটি ট্রাকের পথরোধ করেন এই যুবলীগ নেতা ও তার ১০-২ অনুসারী। তারা অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেন ট্রাকের চালক ও নিরাপত্তা প্রহরীদের। চাঁদা দিতে অসম্মতি জানালে চালককে ট্রাক থেকে নিচে নামিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। পরে সবার মোবাইল ফোন এবং চালকের প্যান্টের পকেট থেকে ৪২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনায় সিমপা পাওয়ার প্লান্টের নিরাপত্তা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর তেঁতুলিয়া থানায় মামলা করেন।
প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক সাজ্জাদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আসামিরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। যুবলীগ নেতা আশরাফুল ইসলামের হুমকির মুখে কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিদেশি প্রকৌশলীরা কোম্পানিতে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এরকম চলতে থাকলে পাওয়ার প্লান্টের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’ তিনি আরও জানান, এর আগে ২০১৬ সালে যুবলীগ নেতা আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করে অ্যাকুয়া বিল্ডার্স। এছাড়া গত ২৯ আগস্ট সিমপা পাওয়ার প্লান্টের পরিচালক জার্মানির নাগরিক স্টিফেন ডাটহেল সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে যুবলীগ নেতা আশরাফুল বিভিন্নভাবে সমস্যা সৃষ্টি করছেন বলে জেলার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
ওই অভিযোগে স্টিফেন ডাটহেল বলেন, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি করে সিমপা পাওয়ার প্লান্ট গড়ে তোলা হচ্ছে। এখানে স্পেন, জার্মানি ও ভারতের প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। কিন্তু আশরাফুল ইসলাম তাদের কাজে সমস্যার সৃষ্টি করছেন। তিনি মাঝেমধ্যেই চাঁদার দাবিতে বিদেশি প্রকৌশলীদের হুমকি দিচ্ছেন। যে কারণে প্রকৌশলীরা এখানে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এ পরিস্থিতিতে তদন্তসাপেক্ষে আশরাফুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান এই জার্মান নাগরিক।
তবে তার বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যুবলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম। মোবাইল ফোনে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজনৈতিক গ্রুপিংয়ের কারণে আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। প্যারাগন গ্রুপের সঙ্গে ২০১৮ সালে পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণকাজের মালামাল সরবরাহের জন্য আমার চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ৪১ লাখ টাকার ইট, পাথর ও বালি সরবরাহ করি। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে বিল দেওয়ার কথা থাকলেও কোম্পানিটির কাছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা নয় মাস ধরে বকেয়া আছে। আমি ওই টাকা চাইতে গেলে তারা আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দিয়েছে।’
তবে তেঁতুলিয়া থানার ওসি জহুরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চাঁদাবাজির অভিযোগটি সত্য। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন মাঝিপাড়া এলাকার আলী হোসেন ও প্রামাণিক পাড়া গ্রামের শাহ আলম। অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান আছে।’
শেয়ার করুন
পঞ্চগড় প্রতিনিধি | ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করার পর একটি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের নির্মাণকাজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় শালবাহান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম ও তার কয়েকজন অনুসারীর বিরুদ্ধে গত ১৫ সেপ্টেম্বর সিমপা পাওয়ার প্লান্ট নামে ওই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের পক্ষে তেঁতুলিয়া থানায় এ মামলা হয়। তবে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা বলছেন, নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে মালামাল সরবরাহের পাওনা টাকার ব্যাপারে তাগাদা দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে।
সিমপা পাওয়ার প্লান্ট কর্র্তৃপক্ষের দাবি, মামলার পর আসামিদের হুমকির মুখে প্রতিষ্ঠানটির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের বাইরে বের হতে পারছেন না। নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছেন সেখানে কর্মরত বিদেশি প্রকৌশলীরাও। গতকাল শুক্রবার দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক সাজ্জাদ হোসেন সাংবাদিকদের কাছে এসব অভিযোগ করেন।
সিমপা পাওয়ার প্লান্টের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, শালবাহান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম ইউপি ট্যাক্সের নাম করে মাঝিপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত প্যারাগন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাকুয়া বিল্ডার্সের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা নিয়ে আসছেন। সম্প্রতি প্যারাগন গ্রুপ সেখানে সিমপা পাওয়ার প্লান্ট নামে একটি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজে হাত দেয়। এই কেন্দ্রে ১০ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা তেঁতুলিয়া উপজেলায় সরবরাহ করার কথা রয়েছে। যুবলীগ নেতা আশরাফুল গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা প্রহরীদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দিলে কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। পরে ওই রাতেই স্থানীয় ডাহুক ব্রিজের সামনে চাঁদার দাবিতে প্যারাগন গ্রুপের মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মুরগি বহনকারী একটি ট্রাকের পথরোধ করেন এই যুবলীগ নেতা ও তার ১০-২ অনুসারী। তারা অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেন ট্রাকের চালক ও নিরাপত্তা প্রহরীদের। চাঁদা দিতে অসম্মতি জানালে চালককে ট্রাক থেকে নিচে নামিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। পরে সবার মোবাইল ফোন এবং চালকের প্যান্টের পকেট থেকে ৪২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনায় সিমপা পাওয়ার প্লান্টের নিরাপত্তা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর তেঁতুলিয়া থানায় মামলা করেন।
প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক সাজ্জাদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আসামিরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। যুবলীগ নেতা আশরাফুল ইসলামের হুমকির মুখে কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিদেশি প্রকৌশলীরা কোম্পানিতে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এরকম চলতে থাকলে পাওয়ার প্লান্টের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’ তিনি আরও জানান, এর আগে ২০১৬ সালে যুবলীগ নেতা আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করে অ্যাকুয়া বিল্ডার্স। এছাড়া গত ২৯ আগস্ট সিমপা পাওয়ার প্লান্টের পরিচালক জার্মানির নাগরিক স্টিফেন ডাটহেল সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে যুবলীগ নেতা আশরাফুল বিভিন্নভাবে সমস্যা সৃষ্টি করছেন বলে জেলার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
ওই অভিযোগে স্টিফেন ডাটহেল বলেন, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি করে সিমপা পাওয়ার প্লান্ট গড়ে তোলা হচ্ছে। এখানে স্পেন, জার্মানি ও ভারতের প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। কিন্তু আশরাফুল ইসলাম তাদের কাজে সমস্যার সৃষ্টি করছেন। তিনি মাঝেমধ্যেই চাঁদার দাবিতে বিদেশি প্রকৌশলীদের হুমকি দিচ্ছেন। যে কারণে প্রকৌশলীরা এখানে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এ পরিস্থিতিতে তদন্তসাপেক্ষে আশরাফুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান এই জার্মান নাগরিক।
তবে তার বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যুবলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম। মোবাইল ফোনে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজনৈতিক গ্রুপিংয়ের কারণে আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। প্যারাগন গ্রুপের সঙ্গে ২০১৮ সালে পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণকাজের মালামাল সরবরাহের জন্য আমার চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ৪১ লাখ টাকার ইট, পাথর ও বালি সরবরাহ করি। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে বিল দেওয়ার কথা থাকলেও কোম্পানিটির কাছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা নয় মাস ধরে বকেয়া আছে। আমি ওই টাকা চাইতে গেলে তারা আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দিয়েছে।’
তবে তেঁতুলিয়া থানার ওসি জহুরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চাঁদাবাজির অভিযোগটি সত্য। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন মাঝিপাড়া এলাকার আলী হোসেন ও প্রামাণিক পাড়া গ্রামের শাহ আলম। অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান আছে।’