ক্যাসিনো দমনে পিঠটান!
আলাউদ্দিন আরিফ | ১৪ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০
ক্যাসিনো দমন অভিযান শুরুর পর গত ২৫ দিনে ছোট-বড় ৫০টির মতো অভিযান চালিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এ সময়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন আটজন; মামলা হয়েছে ২৩টি; বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে অন্তত ৩০০ জনের। সম্প্রতি এ অভিযান শিথিল হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষক ও বিশিষ্টজনরা। তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, অভিযান শুরুর পর বহু জায়গায় ক্যাসিনো-জুয়া খেলাসহ বিভিন্ন অপকর্ম চলার খবর আসছিল। কিন্তু গুটিকয়েক ক্লাব ও মদের বারে অভিযান এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর এতে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। ক্যাসিনো ছাড়াও দেশে বহু অবৈধ ও অপসংস্কৃতিমূলক কর্মকাণ্ড চলমান। প্রত্যাশা ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেদিকেও নজর দেবে। কিন্তু এরই মধ্যে অভিযানে শিথিলতা হতাশাজনক। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বলছে, এ অভিযান একটি চলমান ধারা।
গত মাসের শুরুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাজধানী ঢাকায় অবৈধভাবে ক্যাসিনো ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে যুবলীগ নেতারা। এরপর গত ১৪ সেপ্টেম্বর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় যুবলীগ নিয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় ক্যাডার-চাঁদাবাজ বাহিনী গড়ে তুলে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে সে। আমার সংগঠনে চাঁদাবাজ দরকার নেই। এরপর জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার এক দিন আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ক্যাসিনো দমন অভিযান। যুক্তরাষ্ট্র সফরেও যেখানেই অনিয়ম-দুর্নীতি সেখানেই অভিযান চালানোর কথা বলেন তিনি। দেশে ফেরার পরও একই মনোভাব পুনর্ব্যক্ত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, দলমত-আত্মীয়-পরিবার বলে কিছু নেই, কেউ ছাড় পাবে না।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল রবিবার পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অর্ধশত অভিযান চালিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এ সময়ে গ্রেপ্তার করা হয় যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগ নামধারী ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া (জি কে) শামীম, কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ, মোহামেডান ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও সহসভাপতি এনামুল হক আরমান এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান ওরফে ফ্রিডম মিজান। এছাড়া গেণ্ডারিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক ভূঁইয়া এনু ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা, অস্ত্র, স্বর্ণালঙ্কার ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে র্যাব।
চলমান অভিযানে শিথিলতা এসেছে কি নাÑ জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অভিযান শিথিল বলে মনে হয় না। কারণ একদিন কাউকে ধরপাকড় করা না হলেই বিষয়টি শিথিল বলে ধারণা হয়। অভিযানটিকে দুর্নীতিবিরোধী বা ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান না বলে আমি বলব অপসংস্কৃতিবিরোধী। চলমান যে অভিযান; সেটা আরও জোরদার করা দরকার।’
এ বিষয়ে অপরাধ বিশ্লেষক ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘অভিযান শুরুর সময় বহু ক্লাবে এবং অন্যান্য জায়গায় ক্যাসিনো এবং জুয়া খেলার খবর এসেছিল। কিন্তু হতাশ হয়ে দেখছি গুটি কয়েক ক্লাবে অভিযানের পর একটা স্পষ্ট নিষ্ক্রিয়তা দৃশ্যমান। অবৈধ ক্যাসিনো ছাড়াও দেশে আরও বহুবিধ অবৈধ ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছে। প্রত্যাশা ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেদিকেও নজর দেবে। কিন্তু হঠাৎ করে অভিযান থেমে যাওয়া বা শিথিল হওয়ায় আমরা সবাই হতাশ হয়ে পড়েছি।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অভিযান শিথিল হয়ে গেছেÑ এটাকে আমি সেরকম নেতিবাচকভাবে দেখতে চাই না। আসলে এ ধরনের প্রবণতা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। দেশে হাইপ্রোফাইল কার্যক্রম শুরু হয়, পরে সেটার ধারাবাহিকতা থাকে না। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী একটি সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতা এলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না; একই সঙ্গে বলেছেন, নিজের ঘর থেকে শুরু করবেনÑ এ কথাগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেই বলছি এই অভিযান, দুর্নীতি অনুসন্ধান বা তদন্তের দায়িত্ব যাদের প্রতি দেওয়া হয়েছে তারা এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন, এটা মানুষের প্রত্যাশা। এ অভিযানের গতি ওঠানামা করতে পারে, কিন্তু এটার যাতে বাস্তবে একটি চূড়ান্ত ফল দেশবাসী দেখতে পারে। তাহলে এটা অর্থবহ হবে। তা না হলে এ ধরনের অভিযানের প্রতি মানুষের আস্থা আরও কমে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বুয়েটে (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) যে ঘটনা ঘটে গেছে অনেকে এর সঙ্গে এটার (অভিযান) যোগসাজস (লিংক) খুঁজছেন। বুয়েটের ঘটনাটি বড় ধরনের পাবলিক সেন্টিমেন্টের ইস্যু হয়ে গেছে। যার ফলে গণমাধ্যমসহ জনগণের দৃষ্টি সেদিকে বেশি ধাবিত হয়ে থাকতে পারে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ক্যাসিনোকেন্দ্রিক বা সার্বিকভাবে দুর্নীতিকেন্দ্রিক যে বিষয়গুলো, সেটাতে শুধু যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে বা যাদের বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটার ব্যাপকতা ও গভীরতা আরও অনেক বিস্তৃত। এটা মোকাবিলার জন্য যে ধরনের কৌশল দরকার সেটা কতটুকু সরকারের পরিকল্পনার মধ্যে আছে সেটাও ভাবা দরকার।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশকে উন্নত রাষ্ট্র করার যে পরিকল্পনা নিয়েছেন ক্যাসিনো, জুয়াসহ সমাজবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে সেটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সমাজবিরোধী ও অপসংস্কৃতিমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছেন। তার এই সাহসী পদক্ষেপকে দলমত নির্বিশেষে সবাই স্বাগত জানিয়েছে।’ এই অভিযান শিথিল বা বন্ধ হবে না উল্লেখ করে সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যা বলেন, তিনি তা করেন। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহুবার তার প্রমাণ হয়েছে।’
অভিযানের বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদ মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘র্যাব-পুলিশ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। এটা নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এলিট ফোর্স র্যাবকে। এ বিষয়ে তারা ভালো বলতে পারবে। র্যাব আমাদের কাছে কোনো সহযোগিতা চাইলে আমরা করব।’
অভিযান নিয়ে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেন, ‘অভিযান হলো নির্দিষ্ট একটা কাজÑ যেমন অস্ত্র উদ্ধারে বের হলাম বা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে কাউকে গ্রেপ্তার করলাম সেটা। আরেক ধরনের হচ্ছে, যেটা পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিচালিত হয়। যেমন “আলোর সন্ধান” বা “দাবানল” নামে যে অভিযান আমরা করেছি, সেটা ছয় মাস বা তারও বেশি সময় ধরে চলে। এ অভিযান সেরকম কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযান নয়। এটাকে ক্যাসিনোবিরোধী, দুর্নীতিবিরোধী বা সন্ত্রাসবিরোধী যেভাবেই বলেনÑ এটা আমাদের চলমান ধারা। এটা আমরা চালিয়েই যাব। এখানে স্তিমিত হওয়া, শিথিল হওয়া বা বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি যথাযোগ্য নয়।’
শেয়ার করুন
আলাউদ্দিন আরিফ | ১৪ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০

ক্যাসিনো দমন অভিযান শুরুর পর গত ২৫ দিনে ছোট-বড় ৫০টির মতো অভিযান চালিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এ সময়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন আটজন; মামলা হয়েছে ২৩টি; বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে অন্তত ৩০০ জনের। সম্প্রতি এ অভিযান শিথিল হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষক ও বিশিষ্টজনরা। তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, অভিযান শুরুর পর বহু জায়গায় ক্যাসিনো-জুয়া খেলাসহ বিভিন্ন অপকর্ম চলার খবর আসছিল। কিন্তু গুটিকয়েক ক্লাব ও মদের বারে অভিযান এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর এতে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। ক্যাসিনো ছাড়াও দেশে বহু অবৈধ ও অপসংস্কৃতিমূলক কর্মকাণ্ড চলমান। প্রত্যাশা ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেদিকেও নজর দেবে। কিন্তু এরই মধ্যে অভিযানে শিথিলতা হতাশাজনক। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বলছে, এ অভিযান একটি চলমান ধারা।
গত মাসের শুরুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাজধানী ঢাকায় অবৈধভাবে ক্যাসিনো ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে যুবলীগ নেতারা। এরপর গত ১৪ সেপ্টেম্বর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় যুবলীগ নিয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় ক্যাডার-চাঁদাবাজ বাহিনী গড়ে তুলে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে সে। আমার সংগঠনে চাঁদাবাজ দরকার নেই। এরপর জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার এক দিন আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ক্যাসিনো দমন অভিযান। যুক্তরাষ্ট্র সফরেও যেখানেই অনিয়ম-দুর্নীতি সেখানেই অভিযান চালানোর কথা বলেন তিনি। দেশে ফেরার পরও একই মনোভাব পুনর্ব্যক্ত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, দলমত-আত্মীয়-পরিবার বলে কিছু নেই, কেউ ছাড় পাবে না।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল রবিবার পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অর্ধশত অভিযান চালিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এ সময়ে গ্রেপ্তার করা হয় যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগ নামধারী ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া (জি কে) শামীম, কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ, মোহামেডান ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও সহসভাপতি এনামুল হক আরমান এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান ওরফে ফ্রিডম মিজান। এছাড়া গেণ্ডারিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক ভূঁইয়া এনু ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা, অস্ত্র, স্বর্ণালঙ্কার ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে র্যাব।
চলমান অভিযানে শিথিলতা এসেছে কি নাÑ জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অভিযান শিথিল বলে মনে হয় না। কারণ একদিন কাউকে ধরপাকড় করা না হলেই বিষয়টি শিথিল বলে ধারণা হয়। অভিযানটিকে দুর্নীতিবিরোধী বা ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান না বলে আমি বলব অপসংস্কৃতিবিরোধী। চলমান যে অভিযান; সেটা আরও জোরদার করা দরকার।’
এ বিষয়ে অপরাধ বিশ্লেষক ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘অভিযান শুরুর সময় বহু ক্লাবে এবং অন্যান্য জায়গায় ক্যাসিনো এবং জুয়া খেলার খবর এসেছিল। কিন্তু হতাশ হয়ে দেখছি গুটি কয়েক ক্লাবে অভিযানের পর একটা স্পষ্ট নিষ্ক্রিয়তা দৃশ্যমান। অবৈধ ক্যাসিনো ছাড়াও দেশে আরও বহুবিধ অবৈধ ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছে। প্রত্যাশা ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেদিকেও নজর দেবে। কিন্তু হঠাৎ করে অভিযান থেমে যাওয়া বা শিথিল হওয়ায় আমরা সবাই হতাশ হয়ে পড়েছি।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অভিযান শিথিল হয়ে গেছেÑ এটাকে আমি সেরকম নেতিবাচকভাবে দেখতে চাই না। আসলে এ ধরনের প্রবণতা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। দেশে হাইপ্রোফাইল কার্যক্রম শুরু হয়, পরে সেটার ধারাবাহিকতা থাকে না। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী একটি সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতা এলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না; একই সঙ্গে বলেছেন, নিজের ঘর থেকে শুরু করবেনÑ এ কথাগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেই বলছি এই অভিযান, দুর্নীতি অনুসন্ধান বা তদন্তের দায়িত্ব যাদের প্রতি দেওয়া হয়েছে তারা এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন, এটা মানুষের প্রত্যাশা। এ অভিযানের গতি ওঠানামা করতে পারে, কিন্তু এটার যাতে বাস্তবে একটি চূড়ান্ত ফল দেশবাসী দেখতে পারে। তাহলে এটা অর্থবহ হবে। তা না হলে এ ধরনের অভিযানের প্রতি মানুষের আস্থা আরও কমে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বুয়েটে (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) যে ঘটনা ঘটে গেছে অনেকে এর সঙ্গে এটার (অভিযান) যোগসাজস (লিংক) খুঁজছেন। বুয়েটের ঘটনাটি বড় ধরনের পাবলিক সেন্টিমেন্টের ইস্যু হয়ে গেছে। যার ফলে গণমাধ্যমসহ জনগণের দৃষ্টি সেদিকে বেশি ধাবিত হয়ে থাকতে পারে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ক্যাসিনোকেন্দ্রিক বা সার্বিকভাবে দুর্নীতিকেন্দ্রিক যে বিষয়গুলো, সেটাতে শুধু যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে বা যাদের বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটার ব্যাপকতা ও গভীরতা আরও অনেক বিস্তৃত। এটা মোকাবিলার জন্য যে ধরনের কৌশল দরকার সেটা কতটুকু সরকারের পরিকল্পনার মধ্যে আছে সেটাও ভাবা দরকার।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশকে উন্নত রাষ্ট্র করার যে পরিকল্পনা নিয়েছেন ক্যাসিনো, জুয়াসহ সমাজবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে সেটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সমাজবিরোধী ও অপসংস্কৃতিমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছেন। তার এই সাহসী পদক্ষেপকে দলমত নির্বিশেষে সবাই স্বাগত জানিয়েছে।’ এই অভিযান শিথিল বা বন্ধ হবে না উল্লেখ করে সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যা বলেন, তিনি তা করেন। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহুবার তার প্রমাণ হয়েছে।’
অভিযানের বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদ মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘র্যাব-পুলিশ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। এটা নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এলিট ফোর্স র্যাবকে। এ বিষয়ে তারা ভালো বলতে পারবে। র্যাব আমাদের কাছে কোনো সহযোগিতা চাইলে আমরা করব।’
অভিযান নিয়ে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেন, ‘অভিযান হলো নির্দিষ্ট একটা কাজÑ যেমন অস্ত্র উদ্ধারে বের হলাম বা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে কাউকে গ্রেপ্তার করলাম সেটা। আরেক ধরনের হচ্ছে, যেটা পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিচালিত হয়। যেমন “আলোর সন্ধান” বা “দাবানল” নামে যে অভিযান আমরা করেছি, সেটা ছয় মাস বা তারও বেশি সময় ধরে চলে। এ অভিযান সেরকম কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযান নয়। এটাকে ক্যাসিনোবিরোধী, দুর্নীতিবিরোধী বা সন্ত্রাসবিরোধী যেভাবেই বলেনÑ এটা আমাদের চলমান ধারা। এটা আমরা চালিয়েই যাব। এখানে স্তিমিত হওয়া, শিথিল হওয়া বা বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি যথাযোগ্য নয়।’