ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ধর্মঘটের ডাক
আশরাফুজ্জামান মণ্ডল | ২০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০
নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের প্রতিবাদে আঞ্চলিকভাবে শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলছিল কয়েক দিন ধরেই। এর মধ্যে খবর আসে ভেতরে-ভেতরে দেশব্যাপী বড় শ্রমিক ধর্মঘট করার চেষ্টা করছে মালিক ও শ্রমিকপক্ষ। আশঙ্কাজনক সে খবর সত্যি হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। আনুষ্ঠানিকভাবে সারা দেশে পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ৬টা থেকে এই ধর্মঘট শুরু হওয়ার কথা। গণপরিহন মালিক ও শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় সংগঠনগুলো গতকাল পর্যন্ত এ ধর্মঘটের সঙ্গে একাত্মতা না জানালেও শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আন্দোলনে যাওয়ার চাপ সৃষ্টি হয়েছে বলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন শীর্ষ নেতারা। দেশের বৃহত্তম পরিবহন শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন
শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী গতকাল সন্ধ্যায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ট্রাক-মালিক শ্রমিকদের ডাকা এই আন্দোলনের পক্ষে আমরা নই। তবে আমাদের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। গায়ের চামড়া থাকছে না। এ পরিস্থিতিতে ২১ ও ২২ নভেম্বর আমরা সারা দেশের নেতাদের ডেকেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে কী করা উচিত।’
সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংসদে পাস হওয়ার এক বছর পর চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে তা কার্যকর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে আইনটিতে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের স্বার্থ বড় আকারে ক্ষুণœ হয়েছে দাবি করে কয়েক দিন ধরেই দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘোষণা ছাড়াই কর্মবিরতিতে যান শ্রমিকরা। অনেকে স্বেচ্ছায় গাড়ি ছেড়ে চলে যান। দিন যত গড়াচ্ছে আন্দোলন তত ছড়িয়ে পড়ছে। গতকাল দেশের অন্তত ১২টি জেলায় গাড়ি চালানো বন্ধ রাখেন শ্রমিকরা। এমনকি ঢাকা থেকে কোনো গাড়ি ওইসব জেলায় গেলে তা ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন মালিক সমিতি এবং বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়ন গত সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সারা দেশের নেতাদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। এ বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে গতকাল সকালে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন নেতারা। সেখানে জানানো হয়, নতুন পরিবহন আইনের ভয়ে অর্ধেকেরও বেশি চালক ইতমিধ্যে গাড়ি চালানো ছেড়ে দিয়েছেন। এতে মালিক-শ্রমিক উভয়পক্ষই বেকায়দায় পড়েছেন। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে ওই আইন আপাতত স্থগিত করে কিছু ধারার সংশোধনী না আনা পর্যন্ত বুধবার সকাল ৬টা থেকে কর্মবিরতি চলবে।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ৯ দফা দাবি জানানো হয়। লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস ও সড়কে শৃঙ্খলা আনতে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ মোটরযান আদেশ-১৯৮৩ এবং মোটরযান বিধিমালা-১৯৮৪ এর যুগোপযোগী পরিবর্তন চায়। তবে ১ নভেম্বর ২০১৯ থেকে কার্যকর হওয়ায় সড়ক পরিবহন আইন পরিবহন শিল্পকে ধ্বংসের একটি সূক্ষ্ম নীল নকশা এবং পরিবহনসংশ্লিষ্ট বিশাল জনগোষ্ঠীকে বর্তমান স্থিতিশীল সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর পাঁয়তারা করছে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য শুধু চালক বা শ্রমিক একা দায়ী নন, এজন্য বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তাই শুধু চালক বা শ্রমিকদের দোষারোপ করলে চলবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি ৯ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ সড়ক পরিবহন আইন স্থগিত করে মালিক শ্রমিকদের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জরিমানার বিধান ও দণ্ড উল্লেখ করে আইন সংশোধনের পর একটি যুগোপযোগী ও বিজ্ঞানভিত্তিক সঠিক আইন প্রণয়ন করা, সড়কসংশ্লিষ্ট যতগুলো কমিটি রয়েছে সেগুলোতে শ্রমিক প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা, সড়ক দুর্ঘটনাজনিত কোনো মামলায় চালক আসামি হলে তা অবশ্যই জামিনযোগ্য ধারায় হতে হবে, তদন্তসাপেক্ষে প্রকৃত দোষী নির্ণয় করতে মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের সংযুক্ত করে তদন্ত কমিটি গঠনপূর্বক গঠিত তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে হবে, সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় কোনো গাড়ির মালিককে হয়রানি করা যাবে না।
গতকাল রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় আইন সংশোধনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা গেছে পরিবহন শ্রমিকদের। মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, সেখান থেকেও পর্যাপ্তসংখ্যক গাড়ি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছেড়ে যাচ্ছে না। এই টার্মিনালে অঘোষিতভাবে বেলা ১১টার পর থেকে শ্রমিকরা কর্মবিরত পালন করেন। একই পরিস্থিতি দেখা যায় দেশের সবচেয়ে বড় বাস টার্মিনাল গাবতলীতেও। জানা গেছে, খুলনা বিভাগের বেশিরভাগ জেলায় পরিবহন শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করায় ঢাকা থেকে এসব জেলায় গাড়ি গেলে আর ফিরতে পারছে না। পাটুরিয়া ফেরিঘাট পার হলে ওই গাড়ি আটকা পড়ছে। এ অবস্থায় অর্ধেকেরও বেশি গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, আস্তে আস্তে শ্রমিকদের বড় চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। স্বেচ্ছায় অনেকে গাড়ি চালানো বাদ দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের চেয়ারম্যানকে (রমেশ চন্দ্র ঘোষ) বিআরটিএ চেয়ারম্যান ফোন করে চা খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছেন। তিনি গেছেন সেখানে। কী আলোচনা হচ্ছে বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি জানতে শ্যামলী পরিবহনের মালিক ও সংগঠনটির সভাপতি বাবু রমেশ চন্দ্র ঘোষকে বেশ কয়েকবার টেলিফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনে যেতে শ্রমিকদের একধরনের প্রচ্ছন্ন চাপ আছে ঠিকই। তবে এখন পর্যন্ত আমরা সব ধরনের আন্দোলনের বিপক্ষে। এমনকি যারা আন্দোলন শুরু করেছে তাদেরও আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি, যাতে আন্দোলন পরিত্যাগ করে।’
এদিকে নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাতিল, স্থগিত বা সংশোধন দাবিতে দিনাজপুর, বগুড়া, গাজীপুর, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বরিশাল, সাতক্ষীরা, যশোর, ঝিনাইদহ, নেত্রকোনাসহ ১২টিরও বেশি জেলায় কর্মবিরতি পালন করছেন শ্রমিকরা। প্রতিনিধিদের পাঠোনো খবর :
টানা চতুর্থ দিনের মতো দিনাজপুর জেলার হিলি স্থলবন্দর থেকে বগুড়া রুটে চলাচলকারী সব বাস বন্ধ রেখেছেন চালকরা। ধর্মঘটের কারণে স্থলবন্দর এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাক সংকটে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। পরিবহনের ভাড়াও বেড়েছে কয়েকগুণ। গতকাল সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তায় গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন পরিবহন শ্রমিকরা। সাতক্ষীরার সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা। এতে কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পুরো সাতক্ষীরা জেলা। নতুন আইন সংশোধনের দাবিতে গতকাল সকাল থেকে মাদারীপুরের অভ্যন্তরীণ সব রুটে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেন চালক ও শ্রমিকরা। নেত্রকোনায় গতকাল সকাল থেকেই পরিবহন চালকরা কর্মবিরতি শুরু করেন। পৌর শহরের আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ বাস চালু থাকলেও দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। বাগেরহাটের মোংলা বন্দর থেকে খুলনা, মোংলা-রূপসা, মোংলা-বাগেরহাটসহ অন্য সব রুটে বাস-মিনিবাস চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো পরিবহন ধর্মঘটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েন এসব রুটে যাতায়াতকারী যাত্রী সাধারণ। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গতকাল বরিশালের অভ্যন্তরীণ আট রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেন চালক, চালকের সহকারী ও শ্রমিক নেতারা। হঠাৎ বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ওইসব রুটের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো পরিবহন ধর্মঘট পালিত হয়েছে। শ্রমিকরা বলছেন, নতুন আইন সংশোধন না করা পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে। কুষ্টিয়া থেকে খুলনা, মেহেরপুর ও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে চলাচলকারী সব যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন মালিক শ্রমিক সংগঠন। গত সোমবার সকাল থেকেই কুষ্টিয়া থেকে এসব রুটের কোনো পরিবহন ছেড়ে যায়নি। তবে ঢাকাগামী দূরপাল্লার পরিবহন যথারীতি চলাচল করছে বলে নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি আজগর আলী। এদিকে খুলনায় দুদিন ধর্মঘটের পর আজ বুধবার থেকে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা বাসমালিক ও শ্রমিক নেতারা। গতকাল খুলনা সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর এমন সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
শেয়ার করুন
আশরাফুজ্জামান মণ্ডল | ২০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০

নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের প্রতিবাদে আঞ্চলিকভাবে শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলছিল কয়েক দিন ধরেই। এর মধ্যে খবর আসে ভেতরে-ভেতরে দেশব্যাপী বড় শ্রমিক ধর্মঘট করার চেষ্টা করছে মালিক ও শ্রমিকপক্ষ। আশঙ্কাজনক সে খবর সত্যি হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। আনুষ্ঠানিকভাবে সারা দেশে পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ৬টা থেকে এই ধর্মঘট শুরু হওয়ার কথা। গণপরিহন মালিক ও শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় সংগঠনগুলো গতকাল পর্যন্ত এ ধর্মঘটের সঙ্গে একাত্মতা না জানালেও শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আন্দোলনে যাওয়ার চাপ সৃষ্টি হয়েছে বলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন শীর্ষ নেতারা। দেশের বৃহত্তম পরিবহন শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন
শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী গতকাল সন্ধ্যায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ট্রাক-মালিক শ্রমিকদের ডাকা এই আন্দোলনের পক্ষে আমরা নই। তবে আমাদের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। গায়ের চামড়া থাকছে না। এ পরিস্থিতিতে ২১ ও ২২ নভেম্বর আমরা সারা দেশের নেতাদের ডেকেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে কী করা উচিত।’
সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংসদে পাস হওয়ার এক বছর পর চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে তা কার্যকর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে আইনটিতে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের স্বার্থ বড় আকারে ক্ষুণœ হয়েছে দাবি করে কয়েক দিন ধরেই দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘোষণা ছাড়াই কর্মবিরতিতে যান শ্রমিকরা। অনেকে স্বেচ্ছায় গাড়ি ছেড়ে চলে যান। দিন যত গড়াচ্ছে আন্দোলন তত ছড়িয়ে পড়ছে। গতকাল দেশের অন্তত ১২টি জেলায় গাড়ি চালানো বন্ধ রাখেন শ্রমিকরা। এমনকি ঢাকা থেকে কোনো গাড়ি ওইসব জেলায় গেলে তা ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন মালিক সমিতি এবং বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়ন গত সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সারা দেশের নেতাদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। এ বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে গতকাল সকালে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন নেতারা। সেখানে জানানো হয়, নতুন পরিবহন আইনের ভয়ে অর্ধেকেরও বেশি চালক ইতমিধ্যে গাড়ি চালানো ছেড়ে দিয়েছেন। এতে মালিক-শ্রমিক উভয়পক্ষই বেকায়দায় পড়েছেন। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে ওই আইন আপাতত স্থগিত করে কিছু ধারার সংশোধনী না আনা পর্যন্ত বুধবার সকাল ৬টা থেকে কর্মবিরতি চলবে।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ৯ দফা দাবি জানানো হয়। লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস ও সড়কে শৃঙ্খলা আনতে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ মোটরযান আদেশ-১৯৮৩ এবং মোটরযান বিধিমালা-১৯৮৪ এর যুগোপযোগী পরিবর্তন চায়। তবে ১ নভেম্বর ২০১৯ থেকে কার্যকর হওয়ায় সড়ক পরিবহন আইন পরিবহন শিল্পকে ধ্বংসের একটি সূক্ষ্ম নীল নকশা এবং পরিবহনসংশ্লিষ্ট বিশাল জনগোষ্ঠীকে বর্তমান স্থিতিশীল সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর পাঁয়তারা করছে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য শুধু চালক বা শ্রমিক একা দায়ী নন, এজন্য বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তাই শুধু চালক বা শ্রমিকদের দোষারোপ করলে চলবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি ৯ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ সড়ক পরিবহন আইন স্থগিত করে মালিক শ্রমিকদের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জরিমানার বিধান ও দণ্ড উল্লেখ করে আইন সংশোধনের পর একটি যুগোপযোগী ও বিজ্ঞানভিত্তিক সঠিক আইন প্রণয়ন করা, সড়কসংশ্লিষ্ট যতগুলো কমিটি রয়েছে সেগুলোতে শ্রমিক প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা, সড়ক দুর্ঘটনাজনিত কোনো মামলায় চালক আসামি হলে তা অবশ্যই জামিনযোগ্য ধারায় হতে হবে, তদন্তসাপেক্ষে প্রকৃত দোষী নির্ণয় করতে মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের সংযুক্ত করে তদন্ত কমিটি গঠনপূর্বক গঠিত তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে হবে, সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় কোনো গাড়ির মালিককে হয়রানি করা যাবে না।
গতকাল রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় আইন সংশোধনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা গেছে পরিবহন শ্রমিকদের। মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, সেখান থেকেও পর্যাপ্তসংখ্যক গাড়ি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছেড়ে যাচ্ছে না। এই টার্মিনালে অঘোষিতভাবে বেলা ১১টার পর থেকে শ্রমিকরা কর্মবিরত পালন করেন। একই পরিস্থিতি দেখা যায় দেশের সবচেয়ে বড় বাস টার্মিনাল গাবতলীতেও। জানা গেছে, খুলনা বিভাগের বেশিরভাগ জেলায় পরিবহন শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করায় ঢাকা থেকে এসব জেলায় গাড়ি গেলে আর ফিরতে পারছে না। পাটুরিয়া ফেরিঘাট পার হলে ওই গাড়ি আটকা পড়ছে। এ অবস্থায় অর্ধেকেরও বেশি গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, আস্তে আস্তে শ্রমিকদের বড় চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। স্বেচ্ছায় অনেকে গাড়ি চালানো বাদ দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের চেয়ারম্যানকে (রমেশ চন্দ্র ঘোষ) বিআরটিএ চেয়ারম্যান ফোন করে চা খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছেন। তিনি গেছেন সেখানে। কী আলোচনা হচ্ছে বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি জানতে শ্যামলী পরিবহনের মালিক ও সংগঠনটির সভাপতি বাবু রমেশ চন্দ্র ঘোষকে বেশ কয়েকবার টেলিফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনে যেতে শ্রমিকদের একধরনের প্রচ্ছন্ন চাপ আছে ঠিকই। তবে এখন পর্যন্ত আমরা সব ধরনের আন্দোলনের বিপক্ষে। এমনকি যারা আন্দোলন শুরু করেছে তাদেরও আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি, যাতে আন্দোলন পরিত্যাগ করে।’
এদিকে নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাতিল, স্থগিত বা সংশোধন দাবিতে দিনাজপুর, বগুড়া, গাজীপুর, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বরিশাল, সাতক্ষীরা, যশোর, ঝিনাইদহ, নেত্রকোনাসহ ১২টিরও বেশি জেলায় কর্মবিরতি পালন করছেন শ্রমিকরা। প্রতিনিধিদের পাঠোনো খবর :
টানা চতুর্থ দিনের মতো দিনাজপুর জেলার হিলি স্থলবন্দর থেকে বগুড়া রুটে চলাচলকারী সব বাস বন্ধ রেখেছেন চালকরা। ধর্মঘটের কারণে স্থলবন্দর এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাক সংকটে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। পরিবহনের ভাড়াও বেড়েছে কয়েকগুণ। গতকাল সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তায় গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন পরিবহন শ্রমিকরা। সাতক্ষীরার সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা। এতে কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পুরো সাতক্ষীরা জেলা। নতুন আইন সংশোধনের দাবিতে গতকাল সকাল থেকে মাদারীপুরের অভ্যন্তরীণ সব রুটে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেন চালক ও শ্রমিকরা। নেত্রকোনায় গতকাল সকাল থেকেই পরিবহন চালকরা কর্মবিরতি শুরু করেন। পৌর শহরের আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ বাস চালু থাকলেও দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। বাগেরহাটের মোংলা বন্দর থেকে খুলনা, মোংলা-রূপসা, মোংলা-বাগেরহাটসহ অন্য সব রুটে বাস-মিনিবাস চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো পরিবহন ধর্মঘটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েন এসব রুটে যাতায়াতকারী যাত্রী সাধারণ। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গতকাল বরিশালের অভ্যন্তরীণ আট রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেন চালক, চালকের সহকারী ও শ্রমিক নেতারা। হঠাৎ বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ওইসব রুটের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো পরিবহন ধর্মঘট পালিত হয়েছে। শ্রমিকরা বলছেন, নতুন আইন সংশোধন না করা পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে। কুষ্টিয়া থেকে খুলনা, মেহেরপুর ও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে চলাচলকারী সব যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন মালিক শ্রমিক সংগঠন। গত সোমবার সকাল থেকেই কুষ্টিয়া থেকে এসব রুটের কোনো পরিবহন ছেড়ে যায়নি। তবে ঢাকাগামী দূরপাল্লার পরিবহন যথারীতি চলাচল করছে বলে নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি আজগর আলী। এদিকে খুলনায় দুদিন ধর্মঘটের পর আজ বুধবার থেকে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা বাসমালিক ও শ্রমিক নেতারা। গতকাল খুলনা সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর এমন সিদ্ধান্ত জানানো হয়।