চট্টগ্রামে নাছির-শাহাদাৎ দ্বৈরথ!
রেজাউল করিম লাবলু ও পাভেল হায়দার চৌধুরী | ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ও তার সমর্থকরা। চসিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন অনেকটা নিশ্চিত। আওয়ামী লীগে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকলেও তাকে ঠেকাতে একাট্টা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। শেষ পর্যন্ত নাছির মনোনয়ন পেলে চসিকে লড়াই হতে পারে নাছির-শাহাদাতের। এদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন। তবে বিএনপি গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু করেনি।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এক বৈঠক শেষে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো চসিকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট। নির্বাচনি আইন অনুযায়ী, ৫ আগস্টের আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
চসিক নির্বাচনে কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সে বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, চসিক নির্বাচনে আ জ ম নাছিরকে ঠেকাতে একাট্টা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। এ কারণে আ জ ম নাছিরবিরোধী বলয় এখন শক্তিশালী। ফলে এখন পর্যন্ত নাছিরের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত। তবে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ নৌকার টিকিট নাছিরের হাতে তুলে দিতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য বলেন, একটি বড় শক্তি অবশ্য চান চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীকে। ওই শক্তির তদবিরের কারণে আ জ ম নাছির এখনো নিশ্চিত নন। আগামীকাল শনিবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, স্থানীয় রাজনীতিতে একক আধিপত্য ধরে রাখতে চান নাছির। গ্রুপ রাজনীতি নিয়ে নাছিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। ফলে চট্টগ্রামের নেতারা নাছিরের ওপর বিরক্ত। তিনি বলেন, তাদের দাবি নাছির হটাও।
আওয়ামী লীগের সভাপতিণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিটি করপোরেশনের অবিভাবক হিসেবে আ জ ম নাছিরের বিরুদ্ধে তেমন অভিযোগ না থাকলে স্থানীয় রাজনীতির পরস্পর বিরোধীরা নাছিরকে বন্দরনগরীর অবিভাবক হিসেবে আর দেখতে চান না। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের রাজনীতিতে দ্বন্দ্ব-কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পার এই আশঙ্কায় দলটির মনোনয়ন বোর্ড নাছিরের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। আবার বিকল্পটিও ভাবা হচ্ছে, এখনই তাকে সরিয়ে দেওয়া হলে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতি কতটা কী হবে তা নিয়ে।
দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর একজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, চট্টগ্রামের মানুষের অন্তরের নেতা মরহুম এবিএম মহিউদ্দীন আহমেদের ছেলে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক নেতা মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ভাবা হয়েছিল, কিন্তু প্রস্তাব নওফেল নাকচ করে দেওয়ায় আ জ ম নাছিরের বিকল্প কাকে বেছে নেওয়া হলে ভালো হবে
তা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা দোটানায় পড়েছেন। তিনি বলেন, চসিকে নৌকা কার হাতে তুলে দেবেন সেটা চূড়ান্ত করতে না পারার অন্যতম কারণ হলো এখানে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতির কথাও ভাবতে হচ্ছে কেন্দ্রকে। তিনি বলেন, নাছিরের বাইরে নতুন কিছু নাম আলোচনায় এলেও স্থানীয় রাজনীতি তারা কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন সেটাও মাথায় নেওয়া হচ্ছে। ফলে কার হাতে নৌকা তুলে দেওয়া যায় সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো কেন্দ্র নিতে পারেনি।
সম্পাদকম-লীর আরেক সদস্য বলেন, আলোচনায় আ জ ম নাছির পিছিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেও পেয়ে যেতে পারেন চূড়ান্ত মনোনয়ন। তিনি বলেন, মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে বসে নেই নাছির। সর্বোচ্চ দৌড়ঝাঁপ করছেন তিনি। ওই নেতা বলেন, অবশ্য মাসখানেক আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চসিক মেয়র হিসেবে নাছির ও আবদুুুচ ছালাম দুজনের কাউকেই মনোনয়ন দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। অবশ্য ওই নেতা আরও বলেন, এখন সেই অবস্থানে নেই প্রধানমন্ত্রী। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে দলের নিয়ন্ত্রণ রাখার ব্যপারটিও আমলে নিয়েছেন শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, চট্টগ্রামের রাজনীতি, তাদের চাওয়া-পাওয়া এসব বিবেচনা করে মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন যাকেই দেওয়া হবে তার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। স্থানীয় রাজনীতির বিরূপ প্রভাব যেন নির্বাচনে না পড়ে সেটা নিশ্চিত করা হবে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডি কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে দলীয় ফরম বিতরণ শুরু হয়। গত বুধবার পর্যন্ত ৩ দিনে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন ১৩ মেয়র ও ৩৩২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী।
বিএনপির যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী : ঢাকায় অবস্থানরত চট্টগ্রামের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্ভাব্য মেয়র পদে তিনজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন, মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর ও এরশাদ উল্লাহ।
মেয়র প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে থাকা শাহাদাৎ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এখন তারা কাকে চসিকের মেয়র পদে মনোনয়ন দেবেন তা দেখতে হবে। দল মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচন করতে ইচ্ছুক।’
এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বক্কর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের জন্য কাজ করছি। দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব।’
বিএনপির মেয়র পদে আলোচনায় থাকা চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এরশাদ উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে জানান, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তিনি তদবির করবেন না। তবে দল মনোনয়ন দিলে মেয়র পদে নির্বাচন করবেন।
শাহাদাতের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, চসিক নির্বাচন করার জন্য শাহাদাৎ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ ছেড়ে দিয়ে মহানগর বিএনপির সভাপতি হয়েছেন। সে লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করছি, চসিকে শাহাদাৎই দলের মনোনয়ন পাবেন।
গত সোমবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত। বৈঠক শেষে মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চট্টগ্রামে যান। ঐদিন বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম নেতৃবৃন্দের সঙ্গে চলমান সরকারবিরোধী এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন এবং আসন্ন চসিক নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা করেন।
বিএনপির দপ্তর সংশ্লিষ্ট নেতারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়নপত্র নেওয়া ও জমা দেওয়ার সময় তফসিল ঘোষণার পর জানিয়ে দেওয়া হবে।
শেয়ার করুন
রেজাউল করিম লাবলু ও পাভেল হায়দার চৌধুরী | ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ও তার সমর্থকরা। চসিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন অনেকটা নিশ্চিত। আওয়ামী লীগে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকলেও তাকে ঠেকাতে একাট্টা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। শেষ পর্যন্ত নাছির মনোনয়ন পেলে চসিকে লড়াই হতে পারে নাছির-শাহাদাতের। এদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন। তবে বিএনপি গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু করেনি।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এক বৈঠক শেষে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো চসিকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট। নির্বাচনি আইন অনুযায়ী, ৫ আগস্টের আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
চসিক নির্বাচনে কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সে বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, চসিক নির্বাচনে আ জ ম নাছিরকে ঠেকাতে একাট্টা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। এ কারণে আ জ ম নাছিরবিরোধী বলয় এখন শক্তিশালী। ফলে এখন পর্যন্ত নাছিরের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত। তবে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ নৌকার টিকিট নাছিরের হাতে তুলে দিতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য বলেন, একটি বড় শক্তি অবশ্য চান চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীকে। ওই শক্তির তদবিরের কারণে আ জ ম নাছির এখনো নিশ্চিত নন। আগামীকাল শনিবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, স্থানীয় রাজনীতিতে একক আধিপত্য ধরে রাখতে চান নাছির। গ্রুপ রাজনীতি নিয়ে নাছিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। ফলে চট্টগ্রামের নেতারা নাছিরের ওপর বিরক্ত। তিনি বলেন, তাদের দাবি নাছির হটাও।
আওয়ামী লীগের সভাপতিণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিটি করপোরেশনের অবিভাবক হিসেবে আ জ ম নাছিরের বিরুদ্ধে তেমন অভিযোগ না থাকলে স্থানীয় রাজনীতির পরস্পর বিরোধীরা নাছিরকে বন্দরনগরীর অবিভাবক হিসেবে আর দেখতে চান না। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের রাজনীতিতে দ্বন্দ্ব-কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পার এই আশঙ্কায় দলটির মনোনয়ন বোর্ড নাছিরের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। আবার বিকল্পটিও ভাবা হচ্ছে, এখনই তাকে সরিয়ে দেওয়া হলে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতি কতটা কী হবে তা নিয়ে।
দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর একজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, চট্টগ্রামের মানুষের অন্তরের নেতা মরহুম এবিএম মহিউদ্দীন আহমেদের ছেলে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক নেতা মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ভাবা হয়েছিল, কিন্তু প্রস্তাব নওফেল নাকচ করে দেওয়ায় আ জ ম নাছিরের বিকল্প কাকে বেছে নেওয়া হলে ভালো হবে
তা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা দোটানায় পড়েছেন। তিনি বলেন, চসিকে নৌকা কার হাতে তুলে দেবেন সেটা চূড়ান্ত করতে না পারার অন্যতম কারণ হলো এখানে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতির কথাও ভাবতে হচ্ছে কেন্দ্রকে। তিনি বলেন, নাছিরের বাইরে নতুন কিছু নাম আলোচনায় এলেও স্থানীয় রাজনীতি তারা কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন সেটাও মাথায় নেওয়া হচ্ছে। ফলে কার হাতে নৌকা তুলে দেওয়া যায় সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো কেন্দ্র নিতে পারেনি।
সম্পাদকম-লীর আরেক সদস্য বলেন, আলোচনায় আ জ ম নাছির পিছিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেও পেয়ে যেতে পারেন চূড়ান্ত মনোনয়ন। তিনি বলেন, মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে বসে নেই নাছির। সর্বোচ্চ দৌড়ঝাঁপ করছেন তিনি। ওই নেতা বলেন, অবশ্য মাসখানেক আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চসিক মেয়র হিসেবে নাছির ও আবদুুুচ ছালাম দুজনের কাউকেই মনোনয়ন দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। অবশ্য ওই নেতা আরও বলেন, এখন সেই অবস্থানে নেই প্রধানমন্ত্রী। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে দলের নিয়ন্ত্রণ রাখার ব্যপারটিও আমলে নিয়েছেন শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, চট্টগ্রামের রাজনীতি, তাদের চাওয়া-পাওয়া এসব বিবেচনা করে মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন যাকেই দেওয়া হবে তার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। স্থানীয় রাজনীতির বিরূপ প্রভাব যেন নির্বাচনে না পড়ে সেটা নিশ্চিত করা হবে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডি কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে দলীয় ফরম বিতরণ শুরু হয়। গত বুধবার পর্যন্ত ৩ দিনে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন ১৩ মেয়র ও ৩৩২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী।
বিএনপির যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী : ঢাকায় অবস্থানরত চট্টগ্রামের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্ভাব্য মেয়র পদে তিনজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন, মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর ও এরশাদ উল্লাহ।
মেয়র প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে থাকা শাহাদাৎ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এখন তারা কাকে চসিকের মেয়র পদে মনোনয়ন দেবেন তা দেখতে হবে। দল মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচন করতে ইচ্ছুক।’
এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বক্কর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের জন্য কাজ করছি। দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব।’
বিএনপির মেয়র পদে আলোচনায় থাকা চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এরশাদ উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে জানান, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তিনি তদবির করবেন না। তবে দল মনোনয়ন দিলে মেয়র পদে নির্বাচন করবেন।
শাহাদাতের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, চসিক নির্বাচন করার জন্য শাহাদাৎ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ ছেড়ে দিয়ে মহানগর বিএনপির সভাপতি হয়েছেন। সে লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করছি, চসিকে শাহাদাৎই দলের মনোনয়ন পাবেন।
গত সোমবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত। বৈঠক শেষে মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চট্টগ্রামে যান। ঐদিন বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম নেতৃবৃন্দের সঙ্গে চলমান সরকারবিরোধী এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন এবং আসন্ন চসিক নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা করেন।
বিএনপির দপ্তর সংশ্লিষ্ট নেতারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়নপত্র নেওয়া ও জমা দেওয়ার সময় তফসিল ঘোষণার পর জানিয়ে দেওয়া হবে।