আমি ষড়যন্ত্রের শিকার : নাছির
চট্টগ্রাম ব্যুরো | ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০
আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে করছেন বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। অবশ্য মনোনয়ন না পাওয়ায় তার কোনো ক্ষোভ, রাগ বা অভিমান নেই বলেও গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জানিয়েছেন তিনি।
আ জ ম নাছির বলেন, ‘কেউ যদি আমাকে এসে বলত যে ভাই, আমার মেয়রের পদ দরকার আছে, তুমি সরে যাও। আমি তো উইলিংলি ছেড়ে দেব। এত মিথ্যাচার, অপপ্রচার-অপরাজনীতির প্রয়োজন ছিল না। এগুলো করতে গিয়ে দলই তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আরেকজন আ জ ম নাছির উদ্দীন তৈরি করা তো অনেক বছরের সাধনার বিষয়। আমরা তো দুঃসময়ের পরীক্ষিত কর্মী। আমাদের নতুন করে পরীক্ষা দেওয়ার তো কোনো কিছু নাই।’
চসিকের বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির ফের মেয়রপ্রার্থী হতে চাইলেও গত শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় চট্টগ্রাম নগর কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। এর আগে কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাছিরের একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে তার সঙ্গে দুজনকে কেক কাটতে দেখা যায়। তাদের বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল শাহরিয়ার রশিদ খানের ছোট ভাই মামুনুর রশিদ খান হেলাল ও মামাতো ভাই আকরাম খান হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়। খান ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের এই ছবির দুই ব্যক্তির সঙ্গে সখ্যের কারণে মেয়র পদে নাছির মনোনয়ন পাননি বলে ইঙ্গিত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে আলোচনা হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, আ জ ম নাছির মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৫ সালের ১৮ মে চট্টগ্রাম নগরীর অক্সিজেন এলাকায় খান ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি ওয়াশিং প্ল্যান্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এটি ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সহসভাপতি আকরাম খানের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। মূলত সেখানেই ছবিটি তোলা হয়।
মতবিনিময় সভায় নিজের রাজনৈতিক অতীতের বিশদ বিবরণ দেওয়ার পাশাপাশি ওই ছবিটির ব্যাখ্যা দেন আ জ ম নাছির। বলেন, ‘মেয়র পদ নয়, রাজনীতিই আমার কাছে বড়। ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই, রাজনীতিকে আমি এবাদত হিসেবে নিয়েছি। চট্টগ্রাম কলেজকে শিবিরমুক্ত করতে গিয়ে নির্মমভাবে আক্রান্ত হয়েছিলাম। নির্যাতন ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে জীবনবাজি রেখে আমি সংগ্রাম করেছি। অনেকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘আমি চরম দুঃসময়ে রাজনীতি শুরু করেছিলাম। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড আমাকে নাড়া দিয়েছিল। ’৭৫-এর পর সর্বপ্রথম জানুয়ারি মাসে আমরা চার-পাঁচজন ছেলে কলেজে একত্রিত হয়ে মিছিল করেছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে চন্দনপুরা দিয়ে চলে গেছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনী এসে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেছিল।’ মেয়র নাছির বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। এরপর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। আমার কোনো রাগ, ক্ষোভ, অভিমান নেই। আমি রাজনৈতিক কর্মী, মাঠের কর্মী। মাঠ থেকে আজ এ পর্যায়ে এসেছি। এখনো পর্যন্ত আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজনীতি করছি, সেই জায়গায় ছোট্ট একটা মেয়র পদের জন্য এতকিছু করা হলো। আমার কাছে মেয়র পদটা তো বড় না, রাজনীতিটাই আমার কাছে বড়। আমি গত চার বছরে সিটি করপোরেশন থেকে কোনো কিছুই নিইনি। নগরবাসীর সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে কাজ করেছি।’
মেয়র পদে তার দলীয় মনোনয়ন ঠেকাতেই তার বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রচার হয়েছে দাবি করে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সুতরাং আমার যদি কষ্টও হয়ে থাকে বলব এ জায়গায় আমি কষ্ট পেয়েছি। একশতে একশভাগ একটা মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার তো কোনো মানে হতে পারে না। পারলে বিষয়টা আপনারা তুলে ধরেন। পুরোপুরি একটা ষড়যন্ত্রের শিকার এটা।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে নাছির বলেন, ‘তিন দিন আগে আমাকে একটা ছবি দেখানো হলো। সেখানে দেখলাম, একটা ছবিতে গোল চিহ্ন করা হয়েছে, পাশে আকরাম খান নামে একটা ছেলে। সে ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিল। ছাত্রলীগের শাহজাহান-কলিম কমিটির এক নম্বর সহসভাপতি ছিল। সে এখন তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় একটি কলেজের অধ্যক্ষ। সেখানে থানা আওয়ামী লীগের মেম্বার এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি। আমি তাকে চিনি এভাবে, আমার চরম দুঃসময়ে একজন ব্যাংকারের (টিপু) মাধ্যমে, যিনি তার সঙ্গে একই কমিটিতে ছিলেন। দুঃসময়ে একদিন রাতে আকরামের বাড়িতে গিয়ে একনাগাড়ে প্রায় দেড়-দুই মাস একটা কক্ষে ছিলাম, সূর্যের আলোও দেখিনি। কক্ষটিতে সবসময় তালা মারা থাকত। শুধু ভাত-নাশতার সময় সেটা দিয়ে যেত। সেভাবেই যোগাযোগ।’ চট্টগ্রামে আকরাম খানের একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল জানিয়ে মেয়র নাছির বলেন, ‘আমি জাস্ট ওকে চিনি, সে হিসেবেই নগরীর অক্সিজেনের ওখানে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে একটা কেক কেটে চলে এসেছি। আমার পাশে কে দাঁড়িয়েছে, না দাঁড়িয়েছে আমি দেখিওনি। ছবিতে আরেকটা যেটা বলা হচ্ছে শাহরিয়ার রশিদ খানের ভাই, তাকে আমি চিনিও না, জীবনে কোনোদিন দেখিওনি। সেই লোকের পাশে দাঁড়ানোর ছবি কীভাবে এসেছে, সেটা যারা ছড়িয়েছেন, তারাই বলতে পারবেন। আমি শুধু এতটুকু বলতে পারি, তার সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র কোনো সম্পর্ক, যোগাযোগ, দেখা-সাক্ষাৎ নেই। এই যে অপপ্রচার, অপরাজনীতির শিকার।’
ছবিটির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমানে কসবা শাহ আলম ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আকরাম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই নাছির ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয়। অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় দীর্ঘদিন তার জীবন রক্ষার জন্য আমাদের বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছিলাম। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আমার অনুরোধেই তিনি আমাদের প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করতে যান। মামুনুর রশিদ খান একজন গাড়ি ব্যবসায়ী হিসেবে তার ব্যবসার জন্য সেখানে গিয়েছিলেন।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কয়েক অনলাইন গণমাধ্যমে আকরাম খানকে বঙ্গবন্ধুর খুনি শাহরিয়ার রশিদ খানের আত্মীয় উল্লেখ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি একটি ডাহা মিথ্যা। খুনি শাহরিয়ার রশিদ খানের বাড়ি আমাদের একই গ্রামে। তবে তার সঙ্গে আমার আত্মীয়তার কোনো সম্পর্ক নেই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন কর্মী হিসাবে এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে ছিল আমার লড়াই সংগ্রাম। এর জন্য বিভিন্ন সময় আমাকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। আমাকে মিথ্যা মামলার আসামিও করেছে তারা।’
সভায় চসিকের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া রেজাউল করিম চৌধুরীকে জয়ী করতে শতভাগ কাজ করবেন জানিয়ে নাছির বলেন, ‘আমি সবাইকে বলছি, তোমরা আমাকে নির্বাচিত করার জন্য যেভাবে কাজ করতে, সেইভাবে প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থীর জন্য কাজ করব। আমি শতভাগ উজাড় করে দেব।’
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আব্বাসের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি মোহাম্মদ আলী, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সিইউজের সাধারণ সম্পাদক ম. শামশুল ইসলাম, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কলিম সরওয়ার, বিএফইউজের সাবেক সহসভাপতি শহীদ উল আলম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী, প্রেস ক্লাবের ক্লাবের নির্বাহী সদস্য কাজী আবুল মনসুর প্রমুখ।
শেয়ার করুন
চট্টগ্রাম ব্যুরো | ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০

আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে করছেন বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। অবশ্য মনোনয়ন না পাওয়ায় তার কোনো ক্ষোভ, রাগ বা অভিমান নেই বলেও গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জানিয়েছেন তিনি।
আ জ ম নাছির বলেন, ‘কেউ যদি আমাকে এসে বলত যে ভাই, আমার মেয়রের পদ দরকার আছে, তুমি সরে যাও। আমি তো উইলিংলি ছেড়ে দেব। এত মিথ্যাচার, অপপ্রচার-অপরাজনীতির প্রয়োজন ছিল না। এগুলো করতে গিয়ে দলই তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আরেকজন আ জ ম নাছির উদ্দীন তৈরি করা তো অনেক বছরের সাধনার বিষয়। আমরা তো দুঃসময়ের পরীক্ষিত কর্মী। আমাদের নতুন করে পরীক্ষা দেওয়ার তো কোনো কিছু নাই।’
চসিকের বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির ফের মেয়রপ্রার্থী হতে চাইলেও গত শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় চট্টগ্রাম নগর কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। এর আগে কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাছিরের একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে তার সঙ্গে দুজনকে কেক কাটতে দেখা যায়। তাদের বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল শাহরিয়ার রশিদ খানের ছোট ভাই মামুনুর রশিদ খান হেলাল ও মামাতো ভাই আকরাম খান হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়। খান ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের এই ছবির দুই ব্যক্তির সঙ্গে সখ্যের কারণে মেয়র পদে নাছির মনোনয়ন পাননি বলে ইঙ্গিত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে আলোচনা হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, আ জ ম নাছির মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৫ সালের ১৮ মে চট্টগ্রাম নগরীর অক্সিজেন এলাকায় খান ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি ওয়াশিং প্ল্যান্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এটি ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সহসভাপতি আকরাম খানের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। মূলত সেখানেই ছবিটি তোলা হয়।
মতবিনিময় সভায় নিজের রাজনৈতিক অতীতের বিশদ বিবরণ দেওয়ার পাশাপাশি ওই ছবিটির ব্যাখ্যা দেন আ জ ম নাছির। বলেন, ‘মেয়র পদ নয়, রাজনীতিই আমার কাছে বড়। ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই, রাজনীতিকে আমি এবাদত হিসেবে নিয়েছি। চট্টগ্রাম কলেজকে শিবিরমুক্ত করতে গিয়ে নির্মমভাবে আক্রান্ত হয়েছিলাম। নির্যাতন ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে জীবনবাজি রেখে আমি সংগ্রাম করেছি। অনেকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘আমি চরম দুঃসময়ে রাজনীতি শুরু করেছিলাম। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড আমাকে নাড়া দিয়েছিল। ’৭৫-এর পর সর্বপ্রথম জানুয়ারি মাসে আমরা চার-পাঁচজন ছেলে কলেজে একত্রিত হয়ে মিছিল করেছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে চন্দনপুরা দিয়ে চলে গেছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনী এসে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেছিল।’ মেয়র নাছির বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। এরপর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। আমার কোনো রাগ, ক্ষোভ, অভিমান নেই। আমি রাজনৈতিক কর্মী, মাঠের কর্মী। মাঠ থেকে আজ এ পর্যায়ে এসেছি। এখনো পর্যন্ত আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজনীতি করছি, সেই জায়গায় ছোট্ট একটা মেয়র পদের জন্য এতকিছু করা হলো। আমার কাছে মেয়র পদটা তো বড় না, রাজনীতিটাই আমার কাছে বড়। আমি গত চার বছরে সিটি করপোরেশন থেকে কোনো কিছুই নিইনি। নগরবাসীর সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে কাজ করেছি।’
মেয়র পদে তার দলীয় মনোনয়ন ঠেকাতেই তার বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রচার হয়েছে দাবি করে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সুতরাং আমার যদি কষ্টও হয়ে থাকে বলব এ জায়গায় আমি কষ্ট পেয়েছি। একশতে একশভাগ একটা মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার তো কোনো মানে হতে পারে না। পারলে বিষয়টা আপনারা তুলে ধরেন। পুরোপুরি একটা ষড়যন্ত্রের শিকার এটা।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে নাছির বলেন, ‘তিন দিন আগে আমাকে একটা ছবি দেখানো হলো। সেখানে দেখলাম, একটা ছবিতে গোল চিহ্ন করা হয়েছে, পাশে আকরাম খান নামে একটা ছেলে। সে ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিল। ছাত্রলীগের শাহজাহান-কলিম কমিটির এক নম্বর সহসভাপতি ছিল। সে এখন তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় একটি কলেজের অধ্যক্ষ। সেখানে থানা আওয়ামী লীগের মেম্বার এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি। আমি তাকে চিনি এভাবে, আমার চরম দুঃসময়ে একজন ব্যাংকারের (টিপু) মাধ্যমে, যিনি তার সঙ্গে একই কমিটিতে ছিলেন। দুঃসময়ে একদিন রাতে আকরামের বাড়িতে গিয়ে একনাগাড়ে প্রায় দেড়-দুই মাস একটা কক্ষে ছিলাম, সূর্যের আলোও দেখিনি। কক্ষটিতে সবসময় তালা মারা থাকত। শুধু ভাত-নাশতার সময় সেটা দিয়ে যেত। সেভাবেই যোগাযোগ।’ চট্টগ্রামে আকরাম খানের একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল জানিয়ে মেয়র নাছির বলেন, ‘আমি জাস্ট ওকে চিনি, সে হিসেবেই নগরীর অক্সিজেনের ওখানে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে একটা কেক কেটে চলে এসেছি। আমার পাশে কে দাঁড়িয়েছে, না দাঁড়িয়েছে আমি দেখিওনি। ছবিতে আরেকটা যেটা বলা হচ্ছে শাহরিয়ার রশিদ খানের ভাই, তাকে আমি চিনিও না, জীবনে কোনোদিন দেখিওনি। সেই লোকের পাশে দাঁড়ানোর ছবি কীভাবে এসেছে, সেটা যারা ছড়িয়েছেন, তারাই বলতে পারবেন। আমি শুধু এতটুকু বলতে পারি, তার সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র কোনো সম্পর্ক, যোগাযোগ, দেখা-সাক্ষাৎ নেই। এই যে অপপ্রচার, অপরাজনীতির শিকার।’
ছবিটির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমানে কসবা শাহ আলম ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আকরাম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই নাছির ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয়। অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় দীর্ঘদিন তার জীবন রক্ষার জন্য আমাদের বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছিলাম। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আমার অনুরোধেই তিনি আমাদের প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করতে যান। মামুনুর রশিদ খান একজন গাড়ি ব্যবসায়ী হিসেবে তার ব্যবসার জন্য সেখানে গিয়েছিলেন।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কয়েক অনলাইন গণমাধ্যমে আকরাম খানকে বঙ্গবন্ধুর খুনি শাহরিয়ার রশিদ খানের আত্মীয় উল্লেখ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি একটি ডাহা মিথ্যা। খুনি শাহরিয়ার রশিদ খানের বাড়ি আমাদের একই গ্রামে। তবে তার সঙ্গে আমার আত্মীয়তার কোনো সম্পর্ক নেই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন কর্মী হিসাবে এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে ছিল আমার লড়াই সংগ্রাম। এর জন্য বিভিন্ন সময় আমাকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। আমাকে মিথ্যা মামলার আসামিও করেছে তারা।’
সভায় চসিকের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া রেজাউল করিম চৌধুরীকে জয়ী করতে শতভাগ কাজ করবেন জানিয়ে নাছির বলেন, ‘আমি সবাইকে বলছি, তোমরা আমাকে নির্বাচিত করার জন্য যেভাবে কাজ করতে, সেইভাবে প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থীর জন্য কাজ করব। আমি শতভাগ উজাড় করে দেব।’
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আব্বাসের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি মোহাম্মদ আলী, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সিইউজের সাধারণ সম্পাদক ম. শামশুল ইসলাম, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কলিম সরওয়ার, বিএফইউজের সাবেক সহসভাপতি শহীদ উল আলম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী, প্রেস ক্লাবের ক্লাবের নির্বাহী সদস্য কাজী আবুল মনসুর প্রমুখ।