পঙ্গু স্ত্রীকে হত্যায় বৃদ্ধের স্বীকারোক্তি
‘আমি মরে গেলে কে দেখবে তাই মেরে ফেলেছি’
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০
প্রতীকী ছবি
‘আমি মরে গেলে তাকে কে দেখবে; তাই ছুরি দিয়ে তাকে মেরে ফেলেছি।’ ১৬ বছর ধরে প্যারালাইজড ৬৫ বছর বয়স্কা স্ত্রীর মাথায় ছুরি মেরে হত্যার পর এভাবেই স্বীকারোক্তি দিলেন ৭৩ বছরের বৃদ্ধ গোপাল চন্দ্র কুরি। আরামবাগের বাসায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে মানসিক হতাশা থেকে স্ত্রীকে হত্যার পর গোপাল চন্দ্র কুরিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নিহত স্ত্রী ছবি কুরির লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ দম্পতির তিন মেয়ে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী।
মতিথিল থানার এসআই শফিকুল ইসলাম আকন্দ দেশ রূপান্তরকে জানান, গতকাল সকালে ১৮২/এ আরামবাগের বাসা থেকে ছবি কুরি নামে ওই বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃদ্ধার মাথায় স্বামী গোপালের ধারালো ছুরির আঘাতে স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানায়, আরামবাগের চারতলা বাড়ির নিজ ফ্ল্যাটে থাকত এ দম্পতি। গোপালের বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলায়। মতিঝিলে কুরি অ্যান্ড কোংয়ের কেমিক্যাল রিচার্জ কোম্পানির মালিক তিনি। তাদের তিন মেয়ের মধ্যে দুজন ভারতে ও একজন অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। স্বামী বয়সজনিত নানান রোগে ও স্ত্রী ব্রেন স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে অসুস্থ ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে মানসিক হতাশা থেকেই তিনি স্ত্রীকে হত্যা করেছেন।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর থানায় জিজ্ঞাসাবাদে গোপাল পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি নিজেও অনেক দিন থেকে অসুস্থ। তার স্ত্রী ছবি গত ১৬ বছর ধরে প্যারালাইজড। স্ত্রীও নিজের বাকি জীবন নিয়ে সবসময় দুশ্চিন্তা করতেন। তিনি সবসময় বলতেন ‘তুমি মারা গেলে আমাকে কে দেখবে।’ এ হতাশা থেকে তিনি ভোরে তার স্ত্রীকে মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে একাধিক আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই স্ত্রীর মৃত্যু হয়। পুলিশ আরও জানায়, এলোপাতাড়ি আঘাতের সময় ছুরিতে গোপালের ডান হাতেও সামান্য কেটে গেছে। তাকে ঢাকা মেডিকেলে প্রাথমকি চিকিৎসা দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবার থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মতিঝিল থানার পরিদর্শক (ওসি-তদন্ত) মনির হোসেন মোল্লা জানান, গত ১৬ বছর ধরে ওই নারী প্যারালাইজড অবস্থায় ছিল। বৃদ্ধ স্বামীও শারীরিকভাবে অসুস্থ ও মানসিক ভারসাম্যহীন বলে মনে হয়েছে। নিহতের মরদেহের সুরতহাল করা হয়েছে। নিহত নারীর মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তমাখা ছুরি জব্দ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ছুরি দিয়েই খুন করা হয়েছে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, বৃদ্ধের স্বীকারোক্তির পরও এ বিষয়ে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। এখানে সম্পত্তিগত বিরোধ বা অন্য কোনো ঘটনা আছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মতিঝিল থানার ওসি ইয়াসির আরাফাত দেশ রূপান্তরকে বলেন, বৃদ্ধাকে হত্যার ঘটনায় রাতেই থানায় একটি মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তদন্তে সম্পত্তিগত বা পারিবারিক কোনো বিরোধ আছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০

‘আমি মরে গেলে তাকে কে দেখবে; তাই ছুরি দিয়ে তাকে মেরে ফেলেছি।’ ১৬ বছর ধরে প্যারালাইজড ৬৫ বছর বয়স্কা স্ত্রীর মাথায় ছুরি মেরে হত্যার পর এভাবেই স্বীকারোক্তি দিলেন ৭৩ বছরের বৃদ্ধ গোপাল চন্দ্র কুরি। আরামবাগের বাসায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে মানসিক হতাশা থেকে স্ত্রীকে হত্যার পর গোপাল চন্দ্র কুরিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নিহত স্ত্রী ছবি কুরির লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ দম্পতির তিন মেয়ে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী।
মতিথিল থানার এসআই শফিকুল ইসলাম আকন্দ দেশ রূপান্তরকে জানান, গতকাল সকালে ১৮২/এ আরামবাগের বাসা থেকে ছবি কুরি নামে ওই বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃদ্ধার মাথায় স্বামী গোপালের ধারালো ছুরির আঘাতে স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানায়, আরামবাগের চারতলা বাড়ির নিজ ফ্ল্যাটে থাকত এ দম্পতি। গোপালের বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলায়। মতিঝিলে কুরি অ্যান্ড কোংয়ের কেমিক্যাল রিচার্জ কোম্পানির মালিক তিনি। তাদের তিন মেয়ের মধ্যে দুজন ভারতে ও একজন অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। স্বামী বয়সজনিত নানান রোগে ও স্ত্রী ব্রেন স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে অসুস্থ ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে মানসিক হতাশা থেকেই তিনি স্ত্রীকে হত্যা করেছেন।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর থানায় জিজ্ঞাসাবাদে গোপাল পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি নিজেও অনেক দিন থেকে অসুস্থ। তার স্ত্রী ছবি গত ১৬ বছর ধরে প্যারালাইজড। স্ত্রীও নিজের বাকি জীবন নিয়ে সবসময় দুশ্চিন্তা করতেন। তিনি সবসময় বলতেন ‘তুমি মারা গেলে আমাকে কে দেখবে।’ এ হতাশা থেকে তিনি ভোরে তার স্ত্রীকে মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে একাধিক আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই স্ত্রীর মৃত্যু হয়। পুলিশ আরও জানায়, এলোপাতাড়ি আঘাতের সময় ছুরিতে গোপালের ডান হাতেও সামান্য কেটে গেছে। তাকে ঢাকা মেডিকেলে প্রাথমকি চিকিৎসা দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবার থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মতিঝিল থানার পরিদর্শক (ওসি-তদন্ত) মনির হোসেন মোল্লা জানান, গত ১৬ বছর ধরে ওই নারী প্যারালাইজড অবস্থায় ছিল। বৃদ্ধ স্বামীও শারীরিকভাবে অসুস্থ ও মানসিক ভারসাম্যহীন বলে মনে হয়েছে। নিহতের মরদেহের সুরতহাল করা হয়েছে। নিহত নারীর মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তমাখা ছুরি জব্দ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ছুরি দিয়েই খুন করা হয়েছে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, বৃদ্ধের স্বীকারোক্তির পরও এ বিষয়ে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। এখানে সম্পত্তিগত বিরোধ বা অন্য কোনো ঘটনা আছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মতিঝিল থানার ওসি ইয়াসির আরাফাত দেশ রূপান্তরকে বলেন, বৃদ্ধাকে হত্যার ঘটনায় রাতেই থানায় একটি মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তদন্তে সম্পত্তিগত বা পারিবারিক কোনো বিরোধ আছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।