করোনাঝুঁকিতে কারারক্ষী ও কয়েদিরা
ব্যবস্থা নিতে অধিদপ্তরের চিঠি
সরোয়ার আলম | ২৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকিতে রয়েছেন কারারক্ষী ও কয়েদিরা। সংক্রমণ থেকে রক্ষায় তাদের জন্য যেসব সরঞ্জাম থাকার কথা তা নেই বললেই চলে। গতকাল বুধবারও বসেনি থার্মাল স্ক্যানার। প্রায় ১৫ দিন আগে মেশিনটি ক্রয় করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল কারা অধিদপ্তর। তবে তা কেনার অনুমতি গতকালও মেলেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের ৬৮টি কারাগারে নতুন-পুরনো মিলে প্রায় দেড় লাখের বেশি বন্দি আছেন। কারাগারে করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে কারারক্ষীদের জন্য পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ১০ মার্চ অধিদপ্তর একটি নির্দেশনা পাঠায়। নির্দেশনা পেয়ে সবকটি কারা কর্র্তৃপক্ষ বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। নতুন কোনো কয়েদি কারাগারে এলে তাকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রেখে পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারারক্ষী ও কয়েদিদের সাবান দিয়ে হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কারারক্ষীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হলেও বন্দিদের দেওয়া হয়নি। বন্দিদের কোনো মাস্কও দেওয়া হয়নি।
নাটোরে এক কয়েদির করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরে কারারক্ষী ও অন্য কয়েদিদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাকে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ১০ মার্চের নির্দেশনার পর কারাগারে দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এক মাস পর কয়েদি ও ১৫ দিন পর হাজতির সঙ্গে দর্শনার্থীরা দেখা করতে পারছেন। আগে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা দেখা করতে পারতেন। বর্তমানে বন্দিদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বেশি। প্রতিদিনই বন্দিরা তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাস ঝুঁকিতে আছেন কারারক্ষী ও বন্দিরা। যা কিছু আছে তা দিয়েই প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে। কারাগারগুলোতে বিশেষ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত নির্দেশনাটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার, জেলার ও সংশ্লিষ্ট রেঞ্জের কারা উপমহাপরিদর্শকদের কাছে পাঠানো হয়। নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করতে ডিআইজি, জেল সুপার ও জেলারদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। কারাগারগুলোতে কোনো থার্মাল স্ক্যানার নেই। থার্মাল স্ক্যানার ক্রয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চেয়েছি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। এখনো পাওয়া যায়নি। ইনফ্রারেড টেম্পারেচার রিডার (শরীরে টাচ না করেই তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র) কেনা হয়েছে। সেগুলো দিয়ে সব কারাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। হাসপাতাল প্রস্তুত থাকলেও চিকিৎসক সংকট আছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কয়েক দিন আগে নাটোর জেলা কারাগারের এক কয়েদির শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ পাওয়া গেছে। একটি মারামারি মামলার আসামি জ্বর, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা, মাথাব্যথায় আক্রান্ত হন। প্রথমে তাকে কারা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তিনি সুস্থ হচ্ছিলেন না। অবস্থার আরও অবনতি হয়। কর্র্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর সারা দেশের কারাগারগুলোতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কারা হাসপাতালগুলোয় আইসোলেশন বেড না থাকায় বেশি দুশ্চিন্তায় পড়েছে কর্র্তৃপক্ষ। নাটোরের জেল সুপার আবদুল বারেক দেশ রূপান্তরকে বলেন, কয়েদির শরীরে করোনার উপসর্গ থাকায় একটু ভয় থাকবেই। কারাগারের অন্য কয়েদি ও কারাকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারাগারের ভেতরে পরিষ্কার রাখা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, দেশের ৬৮টি কারাগার এখন বন্দিতে ঠাসা। বন্দিদের নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে কারা কর্র্তৃপক্ষ। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে আন্ডারওয়ার্ল্ডের অপরাধীরাও আছে কারাগারে। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে। সব কারাগারের ধারণক্ষমতা ৭৮ হাজার ৯৯১ জন হলেও বর্তমানে বন্দি দেড় লাখের বেশি। মহিলা বন্দিদের জন্য থাকার জায়গা রয়েছে ৩ হাজার ১২৮ জনের; আছে ১০ হাজারের বেশি। কারাগারে রয়েছেন গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা ও বিডিআর বিদ্রোহ মামলার আসামিরা। রয়েছেন জঙ্গি সংগঠনগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতারাও। বন্দির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কারা কর্র্তৃপক্ষ রয়েছে খুব দুশ্চিন্তায়। করোনাভাইরাসের কারণে আতঙ্কের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নতুন বন্দিদের আমদানি ওয়ার্ড ও সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তরের আগে একটি বাফার বা অন্তর্বর্তীকালীন আমদানি ওয়ার্ডে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। এ সময়ে করোনার কোনো লক্ষণ প্রকাশ না পেলে তাদের সাধারণ ওয়ার্ডে নিতে হবে। পর্যবেক্ষণকালে পুরনো বন্দিরা যাতে নতুন বন্দিদের সংস্পর্শে আসতে না পারে সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কারাগারগুলোতে প্রতিদিন অনেক লোকের সমাগম হয়। প্রতিটি কারাগারের মূল ফটকে সাবান, হ্যান্ডওয়াশ বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুত রাখতে হবে। কারারক্ষীরা ডিউটিতে যাওয়ার সময় এবং আদালত থেকে আসা বন্দি ও নতুন বন্দিদের কারাগারে প্রবেশের আগে অন্তত ২০ সেকেন্ড হাত-মুখ ধোয়া নিশ্চিত করতে হবে। কোনো দর্শনার্থীর মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা গেলে তিনি যেন কারা এলাকায় প্রবেশ করতে না পারেন। কারাফটক, সাক্ষাৎকক্ষ, দর্শনার্থীদের অপেক্ষাগার ও ডিউটি বণ্টন রুমের সামনে দর্শনযোগ্য স্থানে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ সংক্রান্ত জাতীয় হটলাইন নম্বরসমূহ প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে। বন্দিদের জন্য ভিটামিন ‘সি’র দৈনিক চাহিদা পূরণ করা, রন্ধনশালায় সর্বোচ্চ পরিচ্ছন্নতা, খাদ্যসামগ্রী পর্যাপ্ত সিদ্ধ করার দিকটিও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। কোনো বন্দির জামিননামা এলে মুক্তি দেওয়ার আগে স্থানীয় সিভিল সার্জনকে অবগত করা ও তার নির্দেশনা অনুযায়ীই মুক্তির ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে নির্দেশনায়।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দর্শনার্থীরা এলে ভালোভাবে হাত ধুয়ে ভেতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। ১৪টি ওয়ার্ড সার্বক্ষণিক পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে। কারারক্ষী ও বন্দিদের সচেতনতা করা হচ্ছে। কারারক্ষীরা ভেতরে ঢুকলে জুতা পর্যন্ত ধোয়া হচ্ছে। বন্দিদের হাত ধোয়া বাড়ানো হয়েছে। তবে তাদের মাস্ক দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, নতুন বন্দি এলে তাকে ১৪ দিন আলাদা রেখে তারপর ওয়ার্ড বা সেলে পাঠানো হচ্ছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের কথা বলা বাড়ানো হয়েছে। দর্শনার্থী প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কারা হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
শেয়ার করুন
সরোয়ার আলম | ২৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকিতে রয়েছেন কারারক্ষী ও কয়েদিরা। সংক্রমণ থেকে রক্ষায় তাদের জন্য যেসব সরঞ্জাম থাকার কথা তা নেই বললেই চলে। গতকাল বুধবারও বসেনি থার্মাল স্ক্যানার। প্রায় ১৫ দিন আগে মেশিনটি ক্রয় করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল কারা অধিদপ্তর। তবে তা কেনার অনুমতি গতকালও মেলেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের ৬৮টি কারাগারে নতুন-পুরনো মিলে প্রায় দেড় লাখের বেশি বন্দি আছেন। কারাগারে করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে কারারক্ষীদের জন্য পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ১০ মার্চ অধিদপ্তর একটি নির্দেশনা পাঠায়। নির্দেশনা পেয়ে সবকটি কারা কর্র্তৃপক্ষ বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। নতুন কোনো কয়েদি কারাগারে এলে তাকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রেখে পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারারক্ষী ও কয়েদিদের সাবান দিয়ে হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কারারক্ষীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হলেও বন্দিদের দেওয়া হয়নি। বন্দিদের কোনো মাস্কও দেওয়া হয়নি।
নাটোরে এক কয়েদির করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরে কারারক্ষী ও অন্য কয়েদিদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাকে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ১০ মার্চের নির্দেশনার পর কারাগারে দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এক মাস পর কয়েদি ও ১৫ দিন পর হাজতির সঙ্গে দর্শনার্থীরা দেখা করতে পারছেন। আগে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা দেখা করতে পারতেন। বর্তমানে বন্দিদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বেশি। প্রতিদিনই বন্দিরা তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাস ঝুঁকিতে আছেন কারারক্ষী ও বন্দিরা। যা কিছু আছে তা দিয়েই প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে। কারাগারগুলোতে বিশেষ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত নির্দেশনাটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার, জেলার ও সংশ্লিষ্ট রেঞ্জের কারা উপমহাপরিদর্শকদের কাছে পাঠানো হয়। নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করতে ডিআইজি, জেল সুপার ও জেলারদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। কারাগারগুলোতে কোনো থার্মাল স্ক্যানার নেই। থার্মাল স্ক্যানার ক্রয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চেয়েছি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। এখনো পাওয়া যায়নি। ইনফ্রারেড টেম্পারেচার রিডার (শরীরে টাচ না করেই তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র) কেনা হয়েছে। সেগুলো দিয়ে সব কারাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। হাসপাতাল প্রস্তুত থাকলেও চিকিৎসক সংকট আছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কয়েক দিন আগে নাটোর জেলা কারাগারের এক কয়েদির শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ পাওয়া গেছে। একটি মারামারি মামলার আসামি জ্বর, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা, মাথাব্যথায় আক্রান্ত হন। প্রথমে তাকে কারা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তিনি সুস্থ হচ্ছিলেন না। অবস্থার আরও অবনতি হয়। কর্র্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর সারা দেশের কারাগারগুলোতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কারা হাসপাতালগুলোয় আইসোলেশন বেড না থাকায় বেশি দুশ্চিন্তায় পড়েছে কর্র্তৃপক্ষ। নাটোরের জেল সুপার আবদুল বারেক দেশ রূপান্তরকে বলেন, কয়েদির শরীরে করোনার উপসর্গ থাকায় একটু ভয় থাকবেই। কারাগারের অন্য কয়েদি ও কারাকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারাগারের ভেতরে পরিষ্কার রাখা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, দেশের ৬৮টি কারাগার এখন বন্দিতে ঠাসা। বন্দিদের নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে কারা কর্র্তৃপক্ষ। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে আন্ডারওয়ার্ল্ডের অপরাধীরাও আছে কারাগারে। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে। সব কারাগারের ধারণক্ষমতা ৭৮ হাজার ৯৯১ জন হলেও বর্তমানে বন্দি দেড় লাখের বেশি। মহিলা বন্দিদের জন্য থাকার জায়গা রয়েছে ৩ হাজার ১২৮ জনের; আছে ১০ হাজারের বেশি। কারাগারে রয়েছেন গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা ও বিডিআর বিদ্রোহ মামলার আসামিরা। রয়েছেন জঙ্গি সংগঠনগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতারাও। বন্দির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কারা কর্র্তৃপক্ষ রয়েছে খুব দুশ্চিন্তায়। করোনাভাইরাসের কারণে আতঙ্কের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নতুন বন্দিদের আমদানি ওয়ার্ড ও সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তরের আগে একটি বাফার বা অন্তর্বর্তীকালীন আমদানি ওয়ার্ডে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। এ সময়ে করোনার কোনো লক্ষণ প্রকাশ না পেলে তাদের সাধারণ ওয়ার্ডে নিতে হবে। পর্যবেক্ষণকালে পুরনো বন্দিরা যাতে নতুন বন্দিদের সংস্পর্শে আসতে না পারে সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কারাগারগুলোতে প্রতিদিন অনেক লোকের সমাগম হয়। প্রতিটি কারাগারের মূল ফটকে সাবান, হ্যান্ডওয়াশ বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুত রাখতে হবে। কারারক্ষীরা ডিউটিতে যাওয়ার সময় এবং আদালত থেকে আসা বন্দি ও নতুন বন্দিদের কারাগারে প্রবেশের আগে অন্তত ২০ সেকেন্ড হাত-মুখ ধোয়া নিশ্চিত করতে হবে। কোনো দর্শনার্থীর মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা গেলে তিনি যেন কারা এলাকায় প্রবেশ করতে না পারেন। কারাফটক, সাক্ষাৎকক্ষ, দর্শনার্থীদের অপেক্ষাগার ও ডিউটি বণ্টন রুমের সামনে দর্শনযোগ্য স্থানে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ সংক্রান্ত জাতীয় হটলাইন নম্বরসমূহ প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে। বন্দিদের জন্য ভিটামিন ‘সি’র দৈনিক চাহিদা পূরণ করা, রন্ধনশালায় সর্বোচ্চ পরিচ্ছন্নতা, খাদ্যসামগ্রী পর্যাপ্ত সিদ্ধ করার দিকটিও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। কোনো বন্দির জামিননামা এলে মুক্তি দেওয়ার আগে স্থানীয় সিভিল সার্জনকে অবগত করা ও তার নির্দেশনা অনুযায়ীই মুক্তির ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে নির্দেশনায়।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দর্শনার্থীরা এলে ভালোভাবে হাত ধুয়ে ভেতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। ১৪টি ওয়ার্ড সার্বক্ষণিক পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে। কারারক্ষী ও বন্দিদের সচেতনতা করা হচ্ছে। কারারক্ষীরা ভেতরে ঢুকলে জুতা পর্যন্ত ধোয়া হচ্ছে। বন্দিদের হাত ধোয়া বাড়ানো হয়েছে। তবে তাদের মাস্ক দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, নতুন বন্দি এলে তাকে ১৪ দিন আলাদা রেখে তারপর ওয়ার্ড বা সেলে পাঠানো হচ্ছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের কথা বলা বাড়ানো হয়েছে। দর্শনার্থী প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কারা হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।